মান-অভিমান

মান-অভিমান

আমার মনে আছে মাসের বিশেষ দিনগুলোতে সে বাড়তি টেক কেয়ার করত। রাতে অফিস থেকে ফিরে নক করত,

– বেলা,তুমি ঠিক আছ?
-হুম।
-পেট ব্যথা আছে?
-নেই।
-আচ্ছা,ঘুমাও। শুভরাত। কোনদিন মেয়েলি ব্যাপারগুলো গিয়ে বাড়তি কৌতুহল দেখায় নি৷ তর্ক করলে হেসে বলত,

-শুনেছিলাম এসময় মেয়েদের মেজাজ তিরিক্ষি থাকে বইয়ে যা লিখে সব মিথ্যে নয় দেখছি।

একজন ২৭-২৮ বছরের যুবক যে জীবনের কোনো পরীক্ষায় সেকেন্ড হয় নি৷ তার কোয়ালিফিকেশন আর সাকসেস দেখে মেয়েদের ফ্রেন্ড রিকুয়েস্টের পাহাড় জমত। বিয়ের সম্বন্ধের যন্ত্রনায় গ্রামের বাড়ি যেতে চাইত না। যে কথায় কথায় আওড়াত কাজই ধর্ম। তুমি সফল হও সারা পৃথিবীর তোমার পিছে দাঁড়াবে।মায়ের ভালোবাসা, স্ত্রীর প্রেম টাকা দিয়ে কিনতে পাওয়া যায়।ভীষণ একরোখা এই ছেলেটা ভোর পাঁচটায় কল করে ঘুম ভাঙাত

-বেলা, মায়ের সাথে কথা বলতে ইচ্ছা করছে।

-ফোন করো।

-দিব না,রাগ করেছি।

– মায়ের সাথে আবার রাগ কি!

-তুমি গিয়ে একটু দেখে আসবে?লুকিয়ে ছবি তুলো। কতদিন মাকে দেখি না।

শৈশব! ছোট একটা নাম অথচ বুকের ভেতর কেমন কাঁপন ধরায়৷ যার ছবি কাউকে দেখাতাম না পাছে কেউ আমার কাছ থেকে ওকে চুরি করে নিয়ে যায়। ভুবনভোলানো হাসি আর নেশা ধরা চোখ৷ প্রথম দেখেছিল লাল,নীল-সাদা মিশেল স্ট্রেপ টি-শার্টে। মুখভর্তি হাসি চোখে সানগ্লাস। দূরের মানুষ ছিলাম তাই বলতে পারি নি

-চশমাটা খোলাও, চোখে চোখ রেখে কথা বলি। লোকে বলে আমি দেখতে মন্দ নই সে বলেছিল,
-শাড়িতে ভীষণ সুন্দর লাগে।
-তাই? যখন জব করব প্রতি মাসে শাড়ি কিনব।
-কিনতে হবে না।
-কেন?
-আজ থেকে আপনার শাড়ি কেনার দায়িত্ব আমি নিলাম।

চোখে চোখ রেখে তাকাতে পারি নি, যদি সে হৃদয়ের রক্তক্ষরণ টের পেয়ে যায়। তারপর কতদিন কেটে গেছে। সে ফোন রাখার শেষে জিজ্ঞেস করত,

-বেলা, আর কিছু বলবে?
-কি বলব!
-কিছুই বলার নেই?
-তুমি বলো।
-আমি?না থাক।
-ভালো থেকো।রাখলাম।

আমাদের এমন স্মৃতি নেই কথা বলে রাত ভোর করে ফেলেছি, ঘণ্টার পর ঘণ্টা তার কাঁধে মাথা রেখে কাটিয়ে দিয়েছি। কিন্তু এই অদ্ভুত সম্পর্কে ভালো লাগার কমতি ছিল না । দুজন দুই প্রান্ত থেকে কেউ একজন ডেকে বলবে এই যে শুনছ আমার ভীষণ কষ্ট হচ্ছে।এবার ছুঁয়ে বলো ভালোবাসি,ভালোবাসি। কিছু অপেক্ষা কাছে থাকার চেয়েও সুন্দর হয়৷ সে না ডাকলে বুঝতাম না। শৈশব,খেতে ভালোবাসে খুব৷ ৩০০ টাকার ঝালমুড়ি এক বসায় খেয়ে ফেলে,ফুচকা খেতে বসলে আট-দশ প্লেট শেষ। তার পছন্দের খাবার বাসমতি চালের বিরিয়ানি, বেশি করে কাঁচা মরিচ ফালি করে দিবে। ঝাল হবে খুব।তার জন্যে শখ করে বিরিয়ানি রান্না করে নিয়ে গেছিলাম। সে খুশি হয় নি বরং রেগে গিয়েছিল

-বেলা,আশির দশকের মেয়েদের মত বিহেভ করো না। রান্না করে, শাড়ি পরে প্রিয়জনকে সুখী করার চেয়েও মেয়েদের একটা জীবন আছে।

-কি করতে হবে আপনার জন্যে সাহেব?

-অফসাইড গোল কাকে বলে এখনও চিনলা না। তুমি আবার নাকি রিয়াল মাদ্রিদের ফ্যান,শত্রুপক্ষ। বার্সায় চলে আসো।আপাতত এইটুকু হলেই চলবে।

-কখনও না।

-তাহসানের গান চলবে?

-একদম না।

– তাহলে ঝগড়াটা কম করো। সারাদিন বসের ঝাড়ি শুনে বউয়ের ঘ্যানঘ্যান শুনলে মেজাজ গরম হয়ে যাবে।তারপর খাবে মাইর।

-তুমি আমার গায়ে হাত তুলবে?

-অবশ্যই। ছোটবেলার শখ বউ পেটাব।

-অসভ্য লোক।

-জ্বী ম্যাম। মাতাল হয়ে বাড়ি ফিরব তুমি রাগ করে বলবে কাছে আসবে না, দূরে যাও। হেলতে দুলতে বিছানায় শুয়ে পড়ব। তুমি কাঁদতে কাঁদতে মাকে ফোন দিবে।

-থাকবই না তোমার সাথে। আর কোনদিন কল করবে না আমাকে। আমি যত রাগি শৈশব হাসে।শেষে বলে,
-এমন স্মোকি আই কাছে থাকতে মদ খেয়ে নেশা করতে হবে?সে গভীর চোখে তাকায়। আড়ষ্ট হয়ে চোখ সরিয়ে নেই৷ কি গভীর সম্মোহন!  আমি তাতে আবেশিত না হয়ে পারি না।

গল্পের বিষয়:
ভালবাসা
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত