দুষ্টুমি ভালোবাসা

দুষ্টুমি ভালোবাসা

-শেষবারের মত বলছি মায়া আমার কবুতর আমায় ফিরিয়ে দে!
-যা আমিও শেষবারের মত বলছি,দিব না কি করবি কর।
-দিবি না মানে কি?ভাল হবে না কিন্তু মায়া।
-আরে যা যা হুলো বিড়াল একটা তুই আবার কি দেখবি আমায় যা তো।
-দেখ মায়া তোর সাথে ঝগড়া করার কোন ইচ্ছাই আমার নেই তাই….
-তাই কি হুম…
-আমার কবুতর আমায় ফিরিয়ে দে?

-কি তখন থেকে বাচ্চাদের মত করছিস,আমার কবুতর আমার কবুতর, তোর নাম লেখা আছে।
-দেখ মায়া ভাল হচ্ছেনা কিন্তু তুইও জানিস আমিও জানি ওটা আমার কবুতর।
-না জানিনা।এটা এখন আমার কাছে তাই এটা এখন আমার।
-বললেই হল দেখ আমি তোকে অন্য একটা দিয়ে দিব প্লিজ ওটা আমায় দিয়ে দে।
-দিব মানে কি? আমার কবুতর তোকে দিব কেন?
-উফফ মায়া প্লিজ তুই না আমার দোস্ত এরকম করিস না।
-আমি কারও দোস্ত-টোস্ত না আর আমি তো তোকে আগে কখনও দেখিও নি।
-মায়া আমি কিন্তু আংকেল আন্টিকে জানাতে বাধ্য হব।
-হ্যা যা যা পারিস তো ওই একটাই কাজ ভীতুর ডিম একটা।

-আমি ভীতুর ডিম হলে তুই চোরনী।
-কি চোরনী??? চোরনী মানে কি হ্যা?
-তুই আমার কবুতর চুরে করেছিস তাই তুই চোরনী।
-এই অভ্র একদম চোরনী বলবি না ভাল হবেনা কিন্তু।
-কি করবি হ্যা কি করবি একশতবার বলব।
-অভ্র তোর মাথা ফাটায় দিব কিন্তু…
-চুপ ফইন্নি, চোরের মায়ের আবার বড় গলা।
-অভ্র চোর বলবিনা কইলাম।
-আচ্ছা বলবনা এবার দে আমার কবুতর আমায় দিয়ে দে?
-দিব না দূর হ শয়তান।ঘুষি মেরে তোর নাক ফাটিয়ে দিমু।

-মায়া
-মা মা দেখ অভ্র বজ্জাতটা না আমার পিছে (মুখ চেপে ধরলাম)
-যা শয়তানী তোরে দেখে নিব।
-হুম আমিও দেখে নিব যা দূর হ।
-মায়া এখনো ভেবে দেখ প্রতিশোধ কিন্তু আমি নিব।
-সাহস থাকলে নিস ভয় পাই নাকি তোকে।
-এর ফল কিন্তু ভাল হবে না বলে দিলাম।
-যাবি না মাকে ডাকব।
-যাচ্ছি তো এত চিল্লাস কেন গরুর মত।
-আমি গরু তুই তো বলদ
-হ এই বলদই একদিন তোকে বোঝাবে কত ধানে কত চাউল।
-দুর হ শয়তান পোলা।(হি হি হি)

হে আমার সবথেকে আদরের কবুতরটা চুরি করে নিজেকে কি মনে করেছে মহারানী। খুশিতে একেবারে গদগদ। জ্বলছি ২০টি বছর ধরে জ্বলছি এ জ্বালার শেষ নেই।কে বলেছিল ত্যাগেই প্রকৃত সুখ তাকে পাইলে যে কি করতাম। বুঝতে শেখার পর থেকেই এই মেয়েটির জন্য নিজের সবকিছু ত্যাগই করে গেলাম। সুখ তো পাই অনেক সুখ সবথেকে প্রিয় জিনিসগুলো এক এক করে যখন ওর দখলে চলে যায় কত যে সুখ পাই মনে হয় মাথার চুলগুলোই ছিড়ে ফেলি।

সবসময়ই শয়তানী মার্কা হাসি দেখিয়ে বিজয়ের হাসি হাসবে দেখলে মনে হয় গলা ধইরা এখনই পুকুরে চুবানি দেই।না সেটা তো করা সম্ভবই না শ্বশুর মশাই মানে হবু শ্বশুর মশাইয়ের একমাত্র মেয়ে বলে কথা তারপর আমার কলিজার টুকরা। অবিশ্বাস্য হইলেও ইহাই সত্যি ক্লাস টু থেকে বুকের বামপাশে জায়গা দখল করে বসে আছে। নাহ টু থেকেই প্রেম করিনা অতটা পাকা ছিলাম না, তবে শৈশবে ছিল কৌতুহল,কৈশোরে ভাললাগা এখন যৌবনে ভালবাসা।মানুষের দৈহিক বৃদ্ধির সাথে সাথে মানসিকতাও বদলে যায় যার স্বরূপ এখন আমরা প্রেমিকযুগল।তবে আমার নিজেরই কেমন লাগে ভাবতে আসলে আমরা প্রেমিক তো সারাদিন তুই করে কথা বলি,ঝগড়া করি দেখলে কেউই বুঝতে পারবে না আমাদের ভিতর একটা গভীর সম্পর্ক আছে ভালবাসা নামক।

আজকের ঝগড়াটার সাধারন বিববরন দেই। আমরা গ্রামে থাকি।ছোটবেলা থেকেই আমার কবুতর পোষা শখ।মহারানী ছোটবেলা থেকেই আমার বাসায় অনায়াসে যাওয়া আসা করে।আমার পছন্দের জিনিসগুলোই ওর ভাল লাগে আর ওগুলোই সে গুম করে নিজের কাছে রেখে দিবে।আজ বিকেলে ক্রিকেট খেলে বাসায় ফিরে দেখি আমার সবথেকে প্রিয় কবুতরটি হাওয়া মানে ভ্যানিশ।বোনকে জিজ্ঞাসা করতেই ভ্যাংচি কেটে বলল আমার ভাবী ক্রাশ খাইছে তাই আদর করতে নিয়ে গেছে।এতদিন মনে মনে যা ভেবেছি কবে নজর পড়ে আমার এটার উপর আজই পড়ল।দেরি না করে দৌড়ে ওর বাসায় গিয়ে উপস্থিত হলাম।কিন্তু আশ্চর্য এটাই এতক্ষন আন্টির সাথে হেসে হেসে গল্প করছিল আমায় দেখেই মাথাব্যাথার নাটক শুরু হল। আমি সহজে ছেড়ে দেবার পাত্র নই ওদের বারান্দায় গিয়ে দেখি আমার আমার কবুতরটিই তো।ইসস ডানাগুলো ছেটে দিয়েছে জল্লাদের মত।আনতে যাব ঝগড়া শুরু হল।শেষমেষ না নিয়েই তো ফেরত এলাম যদিও হুমকি দিয়েছি তবুও কিছুই করতে পারব না।

দুইবছর পর একটু আগে পঁচা ডিম আমার মাথায় ভাজি করার চেষ্টা হয়েছিল বোধহয়।নাক চোখ মুখ বেয়ে গলে গলে পড়ছে।স্ট্যাচুর মত দাড়িয়ে আছি ওদিকে মায়া হো হো করে হাসছে।হাসার কারন একটাই আমি বাজার করতে পারিনা পঁচা ডিম এনেছি বলে মাথায় ফাটিয়েছে।আমি কি কম যাই একটা ফাটিয়েছে আমার মাথায় আমি দুটো ফাঁটিয়েছি।কিছুক্ষন চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে ছিল তারপর হো হো করে হেসে উঠেছে।এই যা ভুলেই গেলাম মায়া তো এখন আর আমার শুধু প্রমিক নয় বউ হয়েই ঘরে এসেছে।সব ঝগড়ার অবসান ঘটাতেই আমাদের বিয়ে দিয়েছিল বোধহয় পরিবার থেকে কিন্তু যেটা হবার নয় সেটাতো কিছুতেই হবেনা। সত্যি বলতে আমরা এখনো ঝগড়া করি তবে মাঝে মধ্যে।ওকে বউ হিসেবে পাওয়া আমার কাছে বড় কিছু। জীবনের সবথেকে বেশি যাকে ভালবাসা হয় তাকে জীবন সঙ্গীনি হিসেবে পাওয়ার মত সুখের আর কিছু হতে পারেনা। আমার কাছেও ঠিক তাই।যতনে আগলে রেখেছি আমার রাগকুমারীকে। সেদিনের সেই কবুতর আর পাইনি তবে যৌতুক হিসেবে বিয়ের পরেরদিনই কবুতরটি আমার বাড়ি হাজির।জিজ্ঞাসা করলাম শেষমেষ আনলে তাহলে?

এই যে শোন ওটা আমার হুম আমার কাছেই থাকবে টাচ করবানা।যা বাবা কি বুদ্ধি গো তোমার।সে যাই হোক মায়া থুক্কু বউ তোমার মানে আমার মানে তোমারই তো। উহু মোটেও না।কেন?তোমার মানে আমার আমার মানে তোমার নয়।এতটুকুও ছাড় নেই। ক্লাস টু থেকে জ্বলছি এখনো জ্বলব জ্বলে যাব।তবে ভালইতো লাগে সারাদিন পাগলীটার পাগলামী।ভালবাসি খুব ভালবাসি এই পাগলীটাকে।।।

গল্পের বিষয়:
ভালবাসা
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত