__আচ্ছা যাও। ( আকাশ)
-বাপের বাড়ি। ( ইশা)
—আমিও যাবো। (আকাশ)
—কই যাবা। (ইশা)
—তোমার বাপের বাড়ি। (আকাশ)
—ঐটাতো আমার বাপের বাড়ি। ( ইশা)
—ঐটাতো আমারো শ্বশুর বাড়ি। ( আকাশ)
—আগে আমার বাপের বাড়ি। ( ইশা)
—পরে আমার শ্বশুর বাড়ি। ( আকাশ)
—তুমি যাবা না। ( ইশা)
—আমি যাবো। ( আকাশ)
—বলছি না। ( ইশা)
—আমি বলছি হ্যা। ( আকাশ)
—যাও তাহলে। ( ইশা)
—যাবোই তো। ( আকাশ)
—আমি যাবো না। ( ইশা)
—আমিও যাবো না। ( আকাশ)
—কেন? তোমার তো শ্বশুর বাড়ি। ( ইশা)
—তোমারও তো বাপের বাড়ি। ( আকাশ)
—তোমাকে এখন যেতেই হবে। যাও। ( ইশা)
—তুমি যাও। ( আকাশ)
—তুমি যাবে এটাই ফাইনাল। ( ইশা)
—আমি যাবো না। ( আকাশ)
—ঠিকা আছে তাহলে তুমি থাকো। আমিই যাবো।( ইশা)
—তাহলে আমিও যাবো। ( আকাশ)
—চোখ তুলে ফেলবো, আমার পেছন পেছন আসলে।( ইশা)
–তাহলে লোকে তোমাকেই কানার বউ বলবে (আকাশ)
—বলুক। তাতে তোমার কি? আমি তোমার কে? ( ইশা)
—তুমি আমার বউ। তুমিই তো আমার সব। ( আকাশ)
—এহ! আর দরদ দেখাতে হবে না।
তুমি যাচ্ছো না, বলেই লাগেজটা নিয়ে বেরিয়ে গেল ইশা । আমি আর পিছু নিলাম না। কারন জানি আমি ওর পিছু নিলে রাস্তায় কি করে বসে তার ঠিক নেই। ওর রাগটা একটু বেশিই। কিন্তু ওকে ছেড়ে একা থাকাও সম্ভব না। তাই ওর পিছু না নিলেও পরের বাসেই আমি রওনা দিলাম। উদ্দেশ্য জয় নগর। ইশার বাপের বাড়ি, আর আমার শ্বশুর বাড়ি। এসে পড়েছি ঘাটারচোর। ঐ তো ইশা দাড়িয়ে আছে। ও জানতো আমি আসবোই। কথা না বাড়িয়ে ওকে নিয়ে অটোতে চড়ে শ্বশুর বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা দিলাম। এসে পড়েছি শ্বশুরবাড়ি। আমার শালিকা তিশা আগিয়ে আসছে আমাদের নিতে। আমি আমার বউকে রাগাতেই ওর দিকে হা করে তাকিয়ে থাকলাম।
—দুলাভাই কি দেখেন? (তিশা)
—তোমাকে। (আকাশ)
—আমাকে দেখার কি আছে? ( তিশা)
—তুমি আগের থেকে অনেক সুন্দর হইছো। ( আকাহইছো। ( আকাশ)
—থেংকু। ( তিশা)
—ওয়েল ( আকাশ) শেষ না হতেই আমার হাত ধরে নিজের রুমে নিয়ে গেলো ইশা। চোখে-মুখে রাগের ভাব।
—কি হলো। ( আকাশ)
—কি হয় নাই। ( ইশা)
—কি হয়ছে ? ( আকাশ)
—তিশার দিকে এভাবে তাকিয়ে ছিলে কেন? ( ইশা)
—তো কি হয়েছে? ( আকাশ)
—ও আমার বোন। ( ইশা)
—আমার শালী। ( আকাশ)
—তাই বলে তাকিয়ে থাকতে হবে? ( ইশা)
—থাকবোই তো তোমার কি? ( আকাশ)
—আমার কি মানে? আমি তোমার বউ।( ইশা)
—এহ! বউ। যে বউ নিজের স্বামীকে একা ফেলে চলে আসে সে নাকি বউ? ( আকাশ)
—আমি কখন তোমাকে রেখে চলে আসলাম? ( ইশ)
—আসোনি? আমাকে রেখে চলে আসোনি? ( আকাশ)
—আমি জানতাম তুমি আসবেই তাই চলে এসেছি। কিন্তু বাড়িতে তো একা আসিনি। তোমার জন্যই তো একঘন্টা দাড়িয়ে ছিলাম অটো স্ট্যান্ডে। ( ইশা)
—আমি তো ভালোবাসি বলে এসছি। আর তুমি রাস্তা চিননা বলে দাড়িয়ে ছিলে। ( আকাশ)
—কি আমার বাড়ির রাস্তা আমি চিনি না। ( ইশা)
—চেনই না তো। বার বার আমাকে নিয়ে আসতে হয়। ( আকাশ)
—ভালো হইছে আমাকে আর নিয়ে আসতে হবে না। ( ইশা)
—কেন? তুমি একা একা আসবে? ( আকাশ)
—না। আমি আর যাবোই না। তাহলেই আর আসাও লাগবে না। ( ইশা)
—কি হলো সত্যিই রাগ করলে নাকি?
আরে আমিতো মজা করছিলাম। আসলে আমি তোমাকে অনেক ( আকাশ) বাকিটা না শুনেই চলে গেলো। ওর মা মানে আমার শ্বাশুরি এতক্ষন বাড়িতে ছিলেন না। তিনি চলে এসেছেন। এসে আমার খোঁজ খবর নিতে লাগলেন। যাইহোক খাওয়া- দাওয়া শেষ করতে করতে রাত হয়ে গেলো। আমি ইশার ঘরে বসে তিশার সাথে গল্প করছিলাম।
—তারপর দুলাভাই কি খবর? ( তিশা)
—এই তো ভালো। ( আকাশ)
—কেমন কাটছে দিনকাল। (তিশা)
—ভালো। ( আকাশ) এমন সময় ঘরে এলো ইশা । ঘরে ঢুকতেই তিশাকে দেখে আবার বেরিয়ে গেলো।
—এই আপা কই যাও। ( তিশা)
—তোরা গল্প কর আমার কাজ আছে। ( ইশা)
বলেই চলে গেলো। একেবারে চলে যায়নি। দরজার আড়ালে দাড়িয়ে আছে। লাইটের আলোয় ওর ছায়াটা দেখা যাচ্ছে। আমি আর তিশা কি বলি সেটা আড়ি পেতে শুনতে চাচ্ছে হয়তো। আমিও ওকে রাগানোর জন্য শুনিয়ে শুনিয়ে বললাম।
—জানো তিশা মাঝে মাঝে আমার না খুব আফসোস হয়। ( আকাশ)
—কেন? ( তিশা)
—তোমার আপার আগে কেন তোমার সাথে দেখা হয়নি। তাহলে আমি তোমার আপাকে বিয়ে না করে তোমাকেই বিয়ে করতাম। ( আকাকরতাম। ( আকাশ)
—কেন? আমি কি আপার চাইতেও সুন্দরী? ( তিশা) তিশাও বিষয়টা বুঝতে পারছে তাই আমার সাথে তাল মিলাচ্ছে।
—এহ! তোমার আপা আবার সুন্দরী হলো কবে থেকে? কালো পেত্নি একটা। ( আকাশ)
—কিহ? আমি কালো পেত্নি? দাড়াও আজ তোমার একদিন কি আমার একদিন। ( ইশা) বলেই হাতে কাছে যা পাচ্ছে তাই আমার দিকে ছুড়ে মারছে। বালিশ, কাথা, বই যা পাচ্ছে তাই। আমি তখন সেগুলো ফেরাতে ব্যাস্ত।
—তিশা বাচাও! ( আকাশ)
—তিশা কেন বাচাবে? ও আমার বোন আমার পক্ষে থাকবে। ( ইশা)
—না আমার শালী আমার পক্ষে থাকবে।( আকাশ)
—আমার পক্ষে। ( ইশা)
—না আমার পক্ষে। ( আকাশ)
—তিশা তুই বল কার পক্ষে থাকবি ?
—আমি দুলাভাইয়ের পক্ষে। ( তিশা)
বলেই দৌড় দিলো তিশা । কিন্তু যাবার সময় আমার মানিব্যাগটা ছুড়ে দিয়ে গেলো। আমি তাড়াতাড়ি সেটা লুফে নিলাম। কিন্তু এতক্ষনে আমার স্বাস্থবান মানিব্যাগ অপুষ্টির রোগী হয়ে গেছে। তার মানে আমি যখন বউয়ের মার ফেরাতে ব্যাস্ত তখন আমার শালিকা আমার মানিব্যাগ নিয়ে ব্যাস্ত। তাইতো বলি আপন বোনকে সমর্থন না করে শহালিকা আমাকে কেন সমর্থন করবে। যাই হোক তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ শেষ। আমি আর ইশা বিছানায় শুয়ে আছি। দুজনেই ক্লান্ত। আমি আমার ডান পাশ ঘুরে শুয়ে আছি। ইশা উল্টোপাশে। বিবাহিত লোকেরাই জানে এটা কতটা কষ্টের একটা মুহুর্ত। রাত বারোটা বাজে। আমার চোখে ঘুম নেই। ঘুম আসবে কি করে। এমন মিষ্টি একটা বউ থাকতেও যে সিঙ্গেল তার কি ঘুম আসে। কিন্তু মহারানী মনে হয় ঠিকই ঘুমাচ্ছেন। হঠাত করেই আমি কবিতা আবৃত্তি শুরু করলাম খুব আওয়াজ করে বল বীর, বল উন্নত মম শির, শির নেহারি আমারি, নতশির ওই শিখর হিমাদ্রীর। বল বীর, বল উন্নত মম শির।
—আহ! আকাশ কি হচ্ছে? ( ইশা) যাক তাহলে সেও জেগে আছে। ( মনে মনে, আকাশ)
—বিরহের কবিতা আবৃত্তি করছি। ( আকাশ)
—এটা বিরহের কবিতা নাকি বিদ্রোহী কবিতা। ( ইশা)
—যার বউ থেকেও নেই তার কাছে বিরহী আর বিদ্রোহী একই কথা। ( আকাশ)
—বউ নেই মানে? এই তো আমি আছি। ( ইশা)
—আছ তো তবে মাঝখানে বিশাল মহাকাশ আছে। ( আকাশ)
—তাহলে জড়িয়ে ধরে রাখতে হবে? ( ইশা)
—কেন আমি কি তোমার সথ স্বামী? ( আকাশ)
—সথ স্বামীই তো। সথ স্বামী না হলে কি আর আমাকে ছেড়ে অন্য মেয়ের দিকে তাকাতে? আমাকে একা ছেড়ে দিতে? (ইশা)
—অন্য মেয়ের দিকে তাকাইছি মানে? কার দিকে তাকাইছি? ( আকাশ)
—ইশার দিকে। ( ইশা)
—ও তো আমার শালিকা। বউয়ের ছোট বোন। ( আকাশ)
—বউয়ের ছোট বোন বউ তো আর না। ( ইশা)
—পার্থক্য কি? ( আকাশ)
—এটাই হলো পার্থক্য। ( ইশা)
বলেই আমাকে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরলো। আমি ও এবার ওর দিকে ফিরলাম। আমার একদম কাছে ইশা। আমার মুখের কাছে ওর মুখ। দুজনের নিঃশ্বাস একাকার হয়ে মিশে যাচ্ছে। আমি আলতো করে ওর কপালে আমার ঠোঁট ছোয়ালাম। ও আমাকে আরো শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো।
—যাক অবশেষে আমার পিচ্চি বউ এর রাগ ভাঙলো তাহলে। ( আকাশ)
—পিচ্চি? কে পিচ্চি? ( ইশা)
—কে আবার তিশার বোন আমার পিচ্চি বউ। ( আকাশ)
—তাই? ( ইশা)
—এখন থেকে আমি তোমাকে পিচ্চি বউ বলেই ডাকবো। ( আকাশ)
—হহু। মনে থাকে যেন। আমি ছাড়া আর কোন মেয়ের দিকে তাকাবা না। ( ইশা)
—ঠিক আছে। ( আকাশ)
—ঠিক আছে। আমি ঘুমাবো। ( ইশা)
আমার বুকে মাথাটা গুজে দিলো ইশা । স্যরি ইশা না পিচ্চি বউ। আমার পিচ্চি বউ।