অদ্ভুত ভালোবাসা

অদ্ভুত ভালোবাসা

তিতী অনেকক্ষণ ধরে আবীরের জন্য অপেক্ষা করছে। কিন্তু আবীরের আসার কোন নাম গন্ধই নেই। আবীর বরাবরই এমনটা করে।  তিথীকে বসিয়ে রাখতে আবীরের যেন অভ্যাসে পরিণত হয়েছে। এভাবে টানা দুই ঘন্টা বসে থাকতে তিথীর খুব বিরক্ত লাগছে সাথে খুব রাগ হচ্ছে আবীরে উপর। তবুও নিজের রাগটাকে কন্ট্রোল করে বসে আছে আর মনে মনে আবীরকে হাজারটা গালি দিচ্ছে। ঠিক তখনই তিথী দেখতে পেল আবীর আসছে।  তিথী জানে আবীর ওর কাছে এসেই হাজারটা অজুহাত দেখাবে।

— সরিগো আজ একটু দেরি হয়ে গেল। আসলে হয়েছে কি,, তিথী তখন আবীর দিকে রাগি চোখে তাকিয়ে বললো;

— আমি কি জানতে চেয়েছি তুমি কি করেন দেরি করে এসেছো।
— আরে শোনোই না আজকে তোমার জন্য দুইটা খুশির সংবাদ আছে।
— আমার কোন সংবাদ শোনার দরকার নেই।

বলেই তিথী অন্য দিকে মুখ ঘুরিয়ে নিলো। আবীর বুঝতে পারলো পাগলীটা অনেক রেগে আছে।  কিন্তু আবীরই বা কি করবে আবীর তো চায় ওর সাথে সময় মতো এসে দেখা করতে । কিন্তু নানান কারণে সেটা আর হয়ে ওঠে না।  আবীর তখন তিথীর পাশে বসলো। তার পর তিথী হাতটা আলতো করে ধরলো। আর তিথী এক ঝাটকায় হাতটা ছাড়িয়ে নিয়ে বললো।

— আমাকে একদম ছোবে না তুমি।  তোমাকে কে আসতে বলেছে আমার সাথে দেখা করতে। না আসলেই তো পারতে। তুমি আসলেই খুব খারাপ।
— এই পাগলী আমি তো ইচ্ছে করে দেরি করে আসিনি, আমি তো ,,,,
— একদম চুপ তুমি আমার সাথে আর একটা কথাও বলবা না।

আমি জানি তুমি ইচ্ছে করেই এমনটা করো।  আসলে আমাকে অপেক্ষা করিয়ে রাখতে তোমার খুব ভালো লাগে। বলেই আবার মুখটা অন্য দিকে ঘুমিয়ে নিল। আর বেচারা আবীর অসহায় ভাবে তিথীর ঝাড়ি খাচ্ছিল।  কিন্তু আবীর যে কারণে দেরি করে এসেছে সেই কারণটাই তো তিথী শুনতে চাচ্ছে না।

— এই মামা এদিকে আসো তো।
— জে ভাইজান।
— একশ টাকার বাদাম দাও তো।
— এই যে এই নেন। আবীর তখন একশ টাকার বাদাম কিনে খেতে থাকলো আর তিথী তো অন্য দিকে মুখ ঘুরিয়ে আছে তো আছেই।

— এই যে মিস অভিমানী এইভাবে আর কতক্ষণ অন্য দিকে মুখ ঘুরিয়ে থাকবে। আমার দিকে তো একটু তাকাও। আচ্ছা আজকে দেরি হওয়ায় জন্য আমি অনেক অনেক সরি। আর কখনো দেরি করে আসবো না এই তোমাকে ছুঁয়ে বলছি।  তবুও তিথী আবীরের দিকে তাকালো না।

— আচ্ছা এই নাও বাদাম খাও, খুব মজা দেখবা তোমার সব অভিমান শেষ হয়ে যাবে। তিথী তখন অসহায় দৃষ্টিতে আবীরের দিকে তাকালো তার পর বললো;
— বলতে পারো আমাদের রিলেশনটা কতদিন ধরে চলছে।
— হুম অবশ্যই বলতে পারবো পাঁচ বছর কি রাইট বললাম তো।
— হুম ঠিকই বলেছো আচ্ছা এই পাঁচ বছরে কি কখনো তুমি আমার বিষয়ে সিরিয়াস হয়েছো। আমাদের সম্পর্কটাকে কি কখনো তুমি সিরিয়াস ভাবে নিয়েছো।
— হুম নিয়েছি তো এই যে ঘন্টার পর ঘন্টা তোমার সাথে ফোনে কথা বলা। প্রতি মাসে তোমার সাথে দুইবার করে দেখা করা। তোমার সাথে বসে বাদাম খাওয়া। সিরিয়াস ছিলাম বলেই তো এগুলো করেছি না কি। কথাটা শুনে তিথীর চোখ দিয়ে পানি গড়িয়ে পড়তে শুরু করলো।

— এই পাগলী কান্না করছো কেন আচ্ছা এই যে বাদাম খাও দেখবা মনটা একদম ভালো হয়ে যাবে। তখন তিথী অনেকটা রেগে; নিকুচি করি তোর বাদাম খাওয়ার, তোর বাদাম তুই খা এই নে এইটা ধর।
— কি এইটা?
— আমার বিয়ের কার্ড, আমার বিয়ে ঠিক হয়ে গেছে।
— সত্যি বলছো কনগ্রেচুলেশন, আগে বলবানা আমাকে।

যাক বাবা এতো দিনে তাহলে তোমার হিল্লেটা হবে। আর আমারও দাওয়াত খাওয়ার ইচ্ছেটা পূরণ হবে। আচ্ছা তোমার বিয়েতে কি বিরিয়ানি খাওয়ানো হবে। বিরিয়ানি হলে কিন্তু কোন কথায় নেই। কব্জি ডুবিয়ে তোমার বিয়েতে বিরিয়ানি খাবো।  তিথী তখন কষ্টজড়িত কন্ঠে বললো

— আচ্ছা আবীর তুমি কি একটুও আমাকে ভালবাসোনি তাহলে কি সব মিথ্যা ছিল।
— না তো আমি তোমাকে অনেক ভালোবাসি। এই বাদামের থেকেও বেশি তবে বিরিয়ানির থেকে একটু কম।

তিথীর খুব কান্না পাচ্ছিল, এমনকি আবীর কথা গুলো শুনে তিথীর চোখ দিয়ে অঝোরে পানিও পড়ছিল। সাথে খুব অভিমান আর রাগও হচ্ছিল।

— তুই থাক তোর বিরিয়ানি নিয়ে তুই একটা পাসান, ভেবেছিলাম আমার বিয়ের কথা শুনে তুই আমাকে বলবি;
আমি ছাড়া তুমি অন্য কারো হতে পারো না তুমি শুধু আমার। কিন্তু আমার ধারণাটা ভুল ছিল।

— আরে আমি তো তোমাকে ভালবাসি তুমি শুধু শুধু আমাকে ভুল বুঝতেছ।
— না তুই আমাকে ভালবাসিস না, যদি বাসতি তাহলে তুই আমার বিয়ের কথা শুনে এভাবে বলতে পারতি না।

তুই যদি আমাকে ভালবাসতি তাহলে আমার কথা শুনতি। তোকে কতো করে বলেছিলাম একটা চাকরি করতে। কিন্তু তুই বললি চাকরি করতে আমার ভালো লাগে না।  তোকে কত করে বললাম আমার বাবার সাথে কথা বলতে। কিন্তু তুই তাও করলি না আবার বলিস আমাকে ভালবাসিস। কথা গুলো একনাগাড়ে বললো তিথী।

— আচ্ছা মাথা ঠাণ্ডা করো আচ্ছা তুমি বল চাকরি কি মুড়ির মোয়া যে চাইলেই পেয়ে গেলাম।

চাকরির জন্য তো অনেক চেষ্টা করেছি কিন্তু চাকরি না হলে আমি কি করব বল। আর তোমার বাবার সাথে কথা বলব আচ্ছা তুমি বল আমার মত একটা বেকার ছেলের সাথে কি তোমার বাবা তোমায় বিয়ে দিতে রাজি হতো বল।

— আমি আর কোন কথা শুনতে চাইনা আজ এখন থেকে তোমার সাথে আমার সব সম্পর্ক শেষ ভালো থেকো। কথাটা বলেই তিথী কান্না করতে করতে বাড়ির উদ্দেশ্যে হাটা দিল।
—এই মেয়ে দাড়াও বলছি কথাটা বলেই আবীর তিথীর পথ আটকে দাড়াল।
— এই মেয়ে আমাকে এভাবে একা ফেলে কোথায় যাচ্ছো শুনি।
— জাহান্নামে যাচ্ছি তোর কোন সমস্যা।
— না আমার কোন সমস্যা নেই কিন্তু আমি এতো কষ্ট করে তোমার সাথে দেখা করতে এসেছি। আর তুমি কিনা আমাকে ফেলে চলে যাবে এটা কি ঠিক।

— কোনটা ঠিক আর কোনটা বেঠিক সেটা তোমার কাছ থেকে আমার জানতে হবে না তুমি পথ ছাড়ো।
— আচ্ছা ঠিক আছে তুমি যেখানে খুশি যেও তবে এখন আমার কিছু কোথা তোমাকে শুনতে হবে।
— আমি তোমার কথা শুনবো না আমার পথ ছাড়ো।
— ওই বলছি না এখন আমার কিছু কথা তোমায় শুনতে হবে। কথাটা আবীর একটু ঝাড়ি দিয়ে বলল। তার পর তিথীর হাতটা ধরে বেঞ্চিতে গিয়ে বসল।
— আচ্ছা তোমার যার সাথে বিয়ে হবে তুমি কি তার নামটা জান?
— নাহ আজ সকালে আম্মু আমার রুমে এসে বলে;
— দেখতো তিথী বিয়ের কার্ডটা কেমন হয়েছে।
— হুম সুন্দর কিন্তু এইটা কার বিয়ের কার্ড।
— তোর বিয়ের কার্ড, পরশু তোর বিয়ে।  ছেলেটা দেখতে শুনতে খুব ভালো। নতুন চাকরি পেয়েছে তুই খুব সুখী হবি দেখিস।

— মায়ের মুখে কথাটা শুনে তো আমার দমবন্ধ হয়ে যাচ্ছিল। সবকিছু অন্ধকার মনে হচ্ছিল। তার পর মা রুম থেকে বের হতেই আমি তোমাকে ফোন দিয়ে দেখা করতে বলি।
— আচ্ছা বুঝলাম তা এতো সুন্দর একটা কার্ড একটা বার তো খুলে দেখতে পারতে।
— আমার তখন কার্ড দেখার মতো অবস্থা ছিল না।

তুমি বলো হঠাত্ করে যদি কেউ এসে বিয়ে কথা বলে তা মেনে নেওয়া কি সহজ।  আর তাছাড়া আমি তোমাকে ভালবাসি। তুমি ছাড়া অন্য কাউকে স্বামী হিসেবে মেনে নেওয়া আর মৃত্যুকে বরণ করা একি কথা।  বলেই তিথী কন্না করতে থাকলো।

— আবার কান্না করে আচ্ছা এখন একবার কার্ডটা খুলে দেখতো।

আর যেখানে বরের নামটা লেখা আছে ওইখানটা ভালো করে দেখবা যে ওখানে কার নামটা লেখা আছে। তখন তিথী আবীরের কথা মতো কার্ডা খুলে দেখলো। আর বরের নাম যেখানে লেখাছে সেইখানটায় চোখ পড়তেই তিথী বড় বড় চোখে আবীরের দিকে তাকালো। আর আবীর তো মুচকি মুচকি হাসতেছে।

— কি এখন এভাবে হ্যাং হয়ে গেলা কেন।

আমাকে আরো কথা শোনাও। আরো বলো যে আমি খুব খারাপ।  আমি সেদিন Appointment Letter টা হাতে পেয়েও তোমাকে জানাইনি ভেবেছিলাম তোমাকে চমকে দেব। বাড়িতে গিয়ে তোমার ব্যাপারে বাবা মাকে বলি আর তারাও রাজি হয়ে যায়।  এর পর বাবা মাকে নিয়ে তোমাদের বাসায় যাই কিন্তু তুমি সেদিন বাসায় ছিলে না। তার পর তোমার তোমার বাবা মার সাথে কথা বলে বিয়ের দিনক্ষণ ঠিক করে আসলাম। সেই বিষষটাও তোমাকে বলেনি।  কারণ আমি চেয়েছিলাম দুইটা সুখবর তোমাকে এক সাথে দেব। কিন্তু বলার সুযোগ হলো কোই এখানে এসেই দেখি পরিস্থিতি অন্যরকম। তিথী তখন হুহ হুহ করে কেঁদে দিয়ে আবীর কে জড়িয়ে ধরলো।

— আমাকে ক্ষমা করে দাও আমি কিছু না জেনেই তোমার সাথে খারাপ ব্যবহার করে ফেলেছি তোমাকে ভুল বুঝেছি।
— এই পাগলী তুমি কি করে ভাবলে যে তোমাকে আমি অন্যের হতে দেব, বড্ড ভালবাসি তো তোমাকে।  তিথী তখন আবীরকে খুব শক্ত ভাবে জড়িয়ে ধরল।
— এই কি করছো এভাবে জড়িয়ে ধরলা কেন পাবলিক প্লেস সবাই দেখছে তো।
— একশ বার জড়িয়ে ধরবো, সবাই দেখলে দেখুক তাতে আমার কি আমি আমার বরকে জড়িয়ে ধরেছি হুম। তিথী কান্না করতে করতে কথাটা বললো।

— আচ্ছা এবার কান্না থামাও আর কতো কন্না করবা চোখদুটো তো ফুলিয়ে ফেলেছো কান্না করতে করতে।
আচ্ছা এখন ছাড়ো বাসর রাতে যতখুশি জড়িয়ে ধরো। এখন আসো দুজনে মিলে এই বাদাম গুলো খেয়ে শেষ করি। তার পর দুজনে মিলে অনেক রোম্যান্স করব কি বলো। আর একশ টাকা দিয়ে বাদ কিনেছি নষ্ট হলে আমার একশ টাকাই জলে যাবে। তিথী তখন আবীর কে ছেড়ে দিয়ে রাগি চোখে তাকালো।

— ওই তুমি আবার আমার সাথে মজা করতেছ।  খালি খাওয়া আর খাওয়া, খাওয়া ছাড়া আর কিছুই বুঝোনা তাই না।  দ্বারাও তোমার বাদাম খাওয়া আমি আজ ছুটাচ্ছি।  আবীর তখন পরিস্থিতি খারাপ বুঝতে পেরে বাদাম ফেলে দিলো এক দৌড়। আর তিথীও আবীরকে ধরার জন্য আবীরের পেছন পেছন দৌড়াচ্ছে আর বলছে;

— ওই কোথায় পালাচ্ছিস তোর একশ টাকার বাদাম ফেলে। একশ টাকা যে নষ্ট হয়ে যাবে তাই না। ওই থাম বলছি থাম আজ তোর একদিন কি আমার একদিন। অনেক কাঁদিয়েছিস আমায়। আজ তোকে জন্মের বাদাম খাওবো আমি।
— কে শোনে কার কথা আবীর দৌড়াচ্ছে তো দৌড়াচ্ছে।

আবীর জানে এখন দাড়ালেই আর রক্ষে নেই। চাচা আপন প্রাণ বাচা বেচে থাকলে অনেক বাদাম খাওয়া যাবে। কিন্তু এখন থামার কোন প্রশ্নই আসে না। আবীর থামবে না আবীরকে কেউ থামাতে পারবে না। দৌড়া আবীর দৌড়া, আরো জোরে দৌড়া,,,,,,,,,

গল্পের বিষয়:
ভালবাসা
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত