নিশাপতির দুর্দিন

নিশাপতির দুর্দিন

রাদিফা সুলতানের বুকে শুয়ে,বলতে চায়, সুলতান তুমি কি আমাকে করুনা করছ, কিন্তু তা মুখ ফুটে বলতে পারে না,  সে মুখ গোমরা করে বসে থাকে, সে এই ঘটনারর জন্য নিজে দায়ি না, সবাই তাকে দোষ দিয়েছে, রাদিফার বিয়ে ঠিক হয়েছিল সুলতানের সাথেই,আগামী মাসের ২৬ তারিখ বিয়ে, সবাই হাসি -খুশি, সুলতান ও খুশি কারন রাদিফার মতো সুন্দর আর ভাল মেয়ে পাওয়া যায় না, এই সময়ে তাদের বন্ধুত্ব ও হয়ে যায়,

একদিন রাদিফা রিক্সা দিয়ে নাসিরনগর কলেজে যাচ্ছিল, রিক্সা চলতেছে আপন গতিতে, কলেজের প্রায় কাছাকাছি,
রাদিফার ওরনার একটি অংশ বাতাশে গিয়ে রিক্সার চাকার সাথে গিট লেগে যায়, ওরনা পেচিয়ে তার গলায় ফাঁস লেগে রিক্সা থেকে রাস্তায় পড়ে যায়, রিক্সার একটি চাকা তার পায়ের উপর দিয়ে যাওয়াতে,তার একটি পা ভেঙ্গে যায়, আরো অনেক যায়গায় ব্যাথা পায়, কিছু দিন চিকিৎসার ফলে কিছুটা সুস্থ হয়, কিন্তু পা টা সারেনি, তার বিয়ের দিন তারিখ ও ঘনিয়ে আসছে,তার হবু শশুর বাড়ির লোকেরা এই খবর শুনে,তারা বিয়ে করাতে নারাজ, পুরো পাড়ার মহিলারা তাকে অপয়া, কলংকিনী বলে অপবাদ দিচ্ছে, তার মা,বাবার ও তাকে আর সহ্য হচ্ছে না, তার জন্য তার বাবা -মা কথা শুনতে হচ্ছে, রাদিফা কি করবে ভেবে পায়না, তার পা টাও অচল, সে কয়েক বার চেষ্টা করেছে আত্যহত্যা করতে কিন্তু পারে নি, সুলতান রাদিফাকে অনেক বুঝায়, সুলতানের মা-বাবা রাজি না থাকলে ও সে রাদিফাকে বিয়ে করবে,কিন্তু রাদিফার উত্তর, না, কারন সে করুনার প্রার্থী নয়,

এক পর্যায়ে সুলতান রাদিফাকে জোর করে বিয়ে করে, বাসর রাতে রাদিফা কান্না করতে করতে জিজ্ঞেস করে সুলতান তাকে কেন বিয়ে করেছে, তার উত্তর ভালবাসি তাই বিয়ে করেছি, তবুও রাদিফা ভাবে তাকে করুনা করেছে,  সে রাগে বালিশ বিছানা নিয়ে ফ্লোরে ঘুমিয়ে পড়ে,সকালে ঘুম থেকে উঠে দেখে সুলতান তার পাশে শুয়ে আছে, সে কিছু না বলে উঠে হাতল দিয়ে ভর করে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে আসে, সুলতানের সাথে তেমন কথা বলে না, সুলতান তার বাবা মা কে বুঝায়,  তাদের মেয়েরও যদি এই অবস্থা হতে পারত, কারন দূর্ঘটনা সবার জন্য আসে না,সুলতানের বাবা- মা তার কথা শুনে সব কিছু মেনে নেয়। রাদিফাকে তারা তাদের মেয়ের মতো দেখে, সব ঠিকঠাক থাকে সুলতার ঘরে আসলেই রাদিফা অন্য রকম হয়ে যায়,  রাদিফা রুমে আনমনা হয়ে বসে আছে সুলতান রুমে প্রবেশেই সে সুলতানের দিকে চাইল, রাদিফা তোমাকে একটি কথা বলার আছে, হুম বলেন,

আমার বাবা-মা আমাকে ছোটথেকে বড় করেছে,আজ তাদের জন্যেই এই পর্যন্ত আসতে পেরেছি, ,তুমি আমার সাথে যত অভিমানই কর আমি কিছু মনে করব না,  কিন্তু তাদের কে তুমি মা-বাবার মত সম্মান করবা,শাসনের সময় শিক্ষক মনে করবা,তর্কেতে জিবনেও যাবা না,তারা জিতে যাক,তাদের জয় মানে আমাদের জয়, মনে থাকবে?,  হুম,  অনেক রাত হয়েছে ঘুমিয়ে পড়, রাদিফা শুয়ে পড়ে, সুলতান তার চুলে বিলি কেটে দেয়,  সকালে উঠে সুলতান ড্রয়ার খুলে দেখল রাদিফার ঔষধ শেষ, সে প্রেসক্রিপশন টা নিয়ে ঔষধ আনে, রাদিফা ঘুম থেকে উঠে নামতে পারছে না, সুলতার রাদিফার কপালের ভাজ দেখেই বুঝতে পারল যে রাদিফার পায়ে ব্যাথা করতেছে, সে এগিয়ে এসে পা টা মালিশ করতে লাগল, রাদিফার চোখ দিয়ে পানি পড়ছে, রাদিফা আসা করে নি এই সুখ,

কারন সবাই থাকেই কলংকিনী বলে অপবাদ দিত, সুলতান তাকে ঔষধ এনে খাওয়ায়,রাদিফা বুঝতে পেরেছে সুলতান সকালে গিয়ে ঔষধ এনেছে,  কিছুদিন পর ডাক্তারের কাছে গেলে ডাক্তার জানায় কয়েক দিন যত্ন নিলেই পা টা সুস্থ হয়ে যাবে, সুলতান রাদিফাকে গোছল করায়,মাথা পর্যন্ত আছরিয়ে দেয়,নিজের হাতে ভাত খাইয়ে দেয়, তাকে কুলে তুলে ছাদে দুলনায় বসায়, তাকে দুলা দেয়,আর তার নিশাপতিকে চেয়ে চেয়ে দেখে, ঘুমানোর সময় সুলতানের বুকে ঘুমায় সুলতান তার চুলের ঘ্রান নেয় আর বিলি কেটে দেয়, তার পর ও বলে সুলতান তুমি আমাকে করুনা করছ না তো,  অবশ্যই না, আমি জানি তুমি আমাকে ভালবাস, আর তুমি, ,সে আমার বুকে নাক দিয়ে ঘষাদিয়ে বলে আমি ও ভালবাসি আমার প্রেমিক বর টাকে……

গল্পের বিষয়:
ভালবাসা
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত