নিশু ও সিয়াম ভালবাসা

নিশু ও সিয়াম ভালবাসা

সংকুচিত ভাব নিয়ে নিশিদের ড্রয়িংরুমে বসে আছি ! নিজেকে কেমন যেন বেমানান লাগছে এখানে। আমি চারিদিকে তাকিয়ে নিজের সাথে আসেপাশের সব কিছুর সাথে মিল খুজতে শুরু করলাম ! মোটা গদির সোফা টা এতোই আরামদায়ক যে, মনে হচ্ছে এখানেও শুয়ে পড়ি ! আমাদের বাসার শোবার গদিও এমন আরামদায়ক না ! আমি একটু হাত দিয়ে টিপেটুপে দেখার চেষ্টা করলাম ! দেওয়া টাঙ্গানো ৫৬ ইঞ্চি টিভিটার দিকে তাকিয়ে ভাবছি এরা কি টিভি দেখে নাকি সিনেমা দেখে ! আশ্চর্য ! আমি টিভির দিকে তাকিয়ে ভাবছি এটাতে টিভি দেখতে কেমন লাগবে ঠিক তখনই নিশির মাকে ড্রয়িং রুমে ঢুকতে দেখালম ! পিছনেই কাজের মেয়ে গোছের একজন ট্টে হাতে ঘরের ভিতর ঢুকছে ! আমি নরম সোফা থেকে উঠে দাড়ালাম ! নিশির মা বলল

-আরে বস বস ! আমি স্কুলের টিচার নাকি যে উঠে দাড়াতে হবে ?

মহিলা আমার অস্বস্তি নিশ্চই ভাল করেই টের পাচ্ছিলেন ! এবার মনেও হয়েছিল যে এখানে আসা টা ঠিক হচ্ছে না ! কিন্তু নিশির কথা ভেবে কেন জানি না এসে পারলাম না ! কেমন করে না এসে পারি ? যে মেয়েটার কথা না ভেবে একটা সময়ও থাকা যায় না সেই মেয়েটাকে যখন দুদিন ধরে চোখের সামনে না দেখি তখনই কি ভাল লাগে ? তার উপর যখন শোনা যায় মেয়েটার শরীর খারাপ, এবং সেই শরীর খারাপ হওয়ার পিছনে আমার নিজের কিছুটা হাত আছে তখন তো আসতেই হয় ! যখন দরজায় বেল বাজাচ্ছিলাম তখনও নিজের মনের ভিতর একটু ইতস্তত লাগছিল ! একবার মনেও হল যে দরজা থেকেই ঘুরে যাই ! আরও মনে মনে কত কথাই না আসছিল ! কিন্তু তখনই দরজা খুলে গেল ! দরজা নিশির মা-ই খুলে দিলেন ! আমাকে দেখে হাসি মুখে বললেন

-কাকে চাই ? আমি একটু ইতস্তর করে বললাম
-এটা নিশিদের বাসা ?
-হুম ! নিশিদের বাসা !
-আমি আসলে আমি নিশির সাথে পড়ি ! ওর বন্ধু !
-ও ! তাই নাকি ! এসো ভেতরে এসে ! আমি নিশির মা !

আমি তো ভেবেছিলাম আমাকে দেখে নিশির পরিবার খানিকটা বিরক্তই হবে কিন্তু নিশির মায়ের চেহারায় বেশ আন্তরিকতা দেখলাম ! এটা বেশ ভাল লাগলো ! আমাকে ড্রয়িং রুমে বসিয়ে রেখে নিশির মা ভেতরে চলে গেল ! আমি নিশিদের ড্রয়িং রুম টা দেখতে লাগলাম ! নিশির মা সোফার উপরে বসতে বসতে বলল

-তো তুমি নিশুর সাথে পড় ! তোমার নাম কি সিয়াম ?
-জি !
-তোমার কথা নিশু প্রায়ই বলে !
-বলে ?
-হুম ! তবে যা বলে সত্যিই বলে মনে হয় !
-কি বলে ?

এই কথার উত্তর নিশির মা না দিয়ে কেবল হাসলো কেবল ! আমি একটু আস্বস্তির ভিতরে পড়ে গেলাম ! কি জানি নিশি কি না জানি বলে আমার নামে !নিশির মা বলল

-সেটা তুমি ওর কাছ থেকে শুনে নিও ! নিশির শরীর খারাপ ! পরশু থেকে ! তুমি ওকে দেখতে এসেছো ?
-জি !
-ওকে ! সমস্যা নেই ! ওর অবস্থা এখন ভাল বেশ ! তুমি আগে নাস্তা কর !
-না না আন্টি ঠিক আছে ! আমি ওকে একটু দেখেই চলে যাবো ! নাস্তার দরকার নেই !
-আরে কি বল ! আমাদের বাসায় এই প্রথম এসেছো ! কিছু না খেলে কি চলে !! তারপর পাশে দাড়ানো মেয়েটার দিকে তাকিয়ে বলল
-এই সুফিয়া ! এতোক্ষন সুফিয়া আমাদের পাশেই দাড়িয়ে ছিল ! নাম ধরে ডাকতেই ট্রে টা সামনের টি টেবিলের টার উপরে রাখলো! সেখানে দেখতে পেলাম বেশ কয়েক রকমের খাবার । যার কয়েকটা তো আমি চিনলামই না !

-কই ? নাও ।
-জি !
-আরে লজ্জা পেও না । নাও নাও । আমি একটা পেস্ট্রী মুখে নিলাম ! বাহ ! বেশ মজার তো !
-ভাল লাগছে ?
-হুম ।
-আরেক টা নাও ।
-না ঠিক আছে ।

খাওয়া দাওয়া পর্ব শেষ করে আন্টি নিজেই আমাকে নিশির ঘরে নিয়ে গেল ! আমি ভেবেছিলাম নিশিকেই মনে হয় ড্রয়িং রুমে নিয়ে আসবে কিন্তু আমাকে নিয়ে গেল ওর কাছে ! নিশি তখনও বিছানায় শুয়ে আছে চেহারায় একটা অসুস্থ ভাব তখনও আছে ! মনে হয় ফুড পয়জেনিংটা বেশ ভুগিয়েছে ! একদিনেই বেশ কাহিল বানিয়ে দিয়েছে !
আমার আসার খবর আগেই পেয়েছে মনে হয় আমাকে দেখে মৃদু স্বরে হাসলো !

-হেই হিরো ! একেবারে হাজির ! আমি খানিকটা লজ্জা পেয়ে গেলাম ! নিশির মা তখনও আমার পিছনেই দাড়িয়ে ! অবশ্য তিনি বেশিক্ষন থাকলেন না ! আমাদের কথা বলতে দিয়ে নিজে চলে গেলেন ! আমি ওর বিছানার উপর বসতে বসতে বললাম

-আমি কিন্তু মানা করেছিলাম !
-কি ?

নিশি এমন একটা ভাল করলো যেন কিছুই জানে না ! গতপরশু আমার হঠাৎ কি মনে যেন রাস্তায় ধারের আখের রস খেতে মন চাইলো ! আমি সাধারোন নিশি পাসে থাকলে এসব খারার খাইনা ! কারন আমি কিছু খেলে কিংবা কিছু কিনতে চাইলে নিশির সেইটা করতেই হবে ! আমি কিছু খাবো সেও সেইটা খাবে ! খাবে মানে খাবেই ! আমাকে খেতে দেখে নিশিও জেদ ধরলো যে সেও খাবে ! আমি কঠিন করে মানা করলাম ! বললাম

-এই জিনিস তোমার পেটে সহ্য হবে না কিছুতেই !
-না হোক !
-আরে আশ্চার্য ! এটা কি ধরনের কথা ?
-এটাই কথা !
-আচ্ছা যাও ! আমি খাবো না ! নিশি আমার দিকে তাকিয়ে বলল
-তুমি না খেলেও আমি খাবো ! আমি খুব ভাল করেই জানি তোমার একবার কিছু মনে হলে তুমি সেইটা করবেই ! আমি চলে গেলে তারপর খাবে, তাই না ?
-খাবো না !
-না খাও ! আমি এখন খাবো ! তারপর শরবৎ মামাকে বলল
-মামা আমাকে এক গ্লাস দাও ! ভাল করে বানিয়ে দিও !

আমি আরও কত করে মানা করলাম, কিন্তু কে শোনে কার কথা ! সে খাবেই ! আমি কত করে মানা করলাম কিন্তু ও কিছুতেই শুনলো না ! ও খেলো সাথে আমিও খেলাম ! তবে বলতেই হবে শরবৎ টা বেশ স্বাধের ছিল ! আমার থেকে নিশিই বেশি খেলো ! তার নাকি খুব মজা লাগছে ! আমি জানতাম কিছু একটা হবেই ওর ! বিকেল বেলাতেই ওর ফোন পেলাম যে ওর পেট এ ট্রাবল দেখা দিছে ! ও নাকি অসুস্থ বোধ করছে ! রাতে নাকি অবস্থা আরোও খারাপ হয়েছিল ! আমার কারনে এমন টা হয়েছে ! ঐ দিন যদি ওর সামনে না খাওয়ার কথা তুলতাম তাহলে এসবের কিছুই হত না ! নিশির দিকে তাকিয়ে বললাম

-এমন বোকামী আর করবা না ! মনে থাকবে ?
-কি ? তুমি হঠাৎ আমাকে দেখতে চলে এলে !
-এমনি ? আমার কারনে তোমার শরীর খারাপ হল আর আমার আসা টা তোমার কাছে এমনি মনে হচ্ছে ? আমার কথা শুনে নিশি আমাকে আমাকে চুপ করতে ইশারা করলো ! বলল

-আস্তে ! আস্তে ! আমি চুপ করলাম !
-মা যদি জানতে পারে আমি বাইরের খাবার খেয়েছি আমাকে আস্ত খেয়ে ফেলবে !
-তাহলে কেন খেলে ?
-ইচ্ছা হয়েছে ! তাই !
-মানে কি ?
-মানে হচ্ছে আমার যা ভাল লাগবে আমি তাই করবো !
-এটা কোন কথা ? নিশির আমার দিকে অদ্ভুদ চোখে তাকিয়ে বলল
-সামনে তোমার কপালে আরও দুঃখ আছে ! বুঝছো কোন মেয়ের প্রেমে পড়েছো হাড়ে হাড়ে টের পাবে ! আমি নিশির ঘরের চারিদিক টা দেখতে লাগলাম !

-এই কি দেখো ?
-তোমার ঘর ।
-তুমি কি আমার ঘর দেখতে এসেছো নাকি আমাকে ?
-তোমাকে ?
-তাহলে ? আমাকে দেখো !
-তোমাকে তো দেখবোই ! দেখার জন্য সারা জীবন পরে আছে ! এখন অন্য কিছু দেখি ! তুমি না সেদিন বলছিলে তোমার জানলা দিয়ে একটা মেয়ের ঘর দেখা যায় !
-এই খবরদার কিন্তু ! একেবারে খুন করে ফেলবো !
-আরে ক্ষেপতেছো কেন ! আমিবিছানা থেকে উঠতে গেলেই নিশি আমার হাট চেপে ধরলো !
-চুপ করে বসে থাকো ! একদম নড়বা না বললাম ! নিশি এবার আমার কোলে নিজের মাথা রাখলো ! তারপর আমার হাতটা নিজের চুলে উপর দিয়ে বলল

-কোন মেয়ের দিকে যদি তাকাও কোন দিন, খবর আছে ! আমি হাসি ! ওর চুলে বিলি কাটতে কাটতে ভাবি আসলেই আমার কপালে সামনে দুঃখই আছে ! তবে এখন একটা চিন্তার বিষয় যে নিশির মা যদি এখন চলে আসে তাহলে আমাকে দেখে কি ভাববে ! এই অস্বস্তি নিয়ে আমি বারবার দরজার দিকে তাকাতে লাগলাম ! আর নিশি চোখ বন্ধ করে চুলে বিলি কাটার মজা নিতে লাগলো!!!!

সমাপ্ত

গল্পের বিষয়:
ভালবাসা
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত