এই নিহীন, তোর কি কোনো বয়ফ্রেন্ড আছে? থাকলে বল যেয়ে মেরে হাত পা ঘুড়া ঘুড়া করে দিয়ে আসি। আমার গার্লফ্রেন্ড এর দিকে চোখ দেয় কত বড় হারামি। আমার কথা শুনে নিহীন আপু চোখ বড় বড় করে আমার দিকে তাকিয়ে আছে। নিহীন আপু বলছি কারন সে আমার বয়সে বড় ২ বছরের। তাও আবার আমার এক দূর সম্পর্কের চাচাতো বোন মানে বড় আপু। আমার কথাগুলো শোনার পর সে এভাবে তাকাবে আমি জানি। কারন প্রথমত আমি তাকে নাম ধরে ডেকেছি। দ্বিতীয়ত তাকে আপু বলিনি। তৃতীয়ত তাকে আমি ইন্ডিরেক্লি প্রপোজ করেছি। আমি ওর দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসছি। কিন্তু সে চোখ আরো বড় করে বললো..
– নিলয় তুই কিন্তু সেই রকম মার খাবি। আর একবার যদি আমাকে নাম ধরে ডাকিস। ঐ হুনুমান তোর বয়সে কত বড় আমি জানিস? আর তুই কিনা নাম ধরে ডাকিস। আর তার উপর আমার সাথে কি সব কথা বলছিস। দাঁড়া আংকেল আনটিকে বলতে হবে।
– আমার কি দোষ বলো হে বালিকা, তোমার বিরহে বিলীন হয়ে যাচ্ছি হে বালিকা। তুমি কি জানো না “বড় আপুদের প্রেমে পড়ার জন্য যদি কোনো ক্লাস থাকে আমি সেই ক্লাসের প্রথম স্টুডেন্ট।”
– কিহহ? কি বললি তুই? এই সাইকেল রাখ।
– কেনো?
– তোকে রাখতে বলছি রাখ।
ধুম করে ব্রেক চাপলাম সাইকেল এ। সাথে সাথেই আমার কপাল ওর মাথায় যেয়ে লাগল। নিহীন চিৎকার দিয়ে ঝাড়ি দেয়। সাইকেল থেকে নেমে আমার দিকে রাগি দৃষ্টিতে তাকিয়ে আমার কান টেনে ধরে বললো..
– ঐ হুনুমান, জানিস আমি তোর কয় বছরের বড়?
– হুম দুইবছরের।
– আমাকে ভালোবাসার কথা বলতে তোর লজ্জা করে না বেয়াদপ ছেলে? কানের নিচে দুইটা দিলে ঠিক হয়ে যাবে বুঝলি?
– এহ কান ছাড়ো। তুমি জানো না ভালোবাসা বয়স মানে না।
– চুপপ শয়তান। আমাকে একদম জ্ঞান দিতে আসবি না। আনটিকে বলে তোর ভূত নামার ব্যবস্থা করছি।
– কোনো লাভ নেই। ভালো যখন বাসছি তখন আমার আম্মুর ছেলের বউ তোমাকে আমি বানাবোই। বুঝলে ভবিষ্যৎ বউ?
– কথা বলবি না একদম ফাজিল ছেলে কোথাকার। নিহীন আপু আরে ধুরর আপু টাপু কে বলছে নিহীন বলেই ডাকবো। তো নিহীন রাগ দেখিয়ে হেটে চলে যাচ্ছে। আমি ওর পিছনে সাইকেল চালাচ্ছি।
– আরে হেটে হেটে কয় যাও?
– জাহান্নামে।
– তাহলে তুমি একা যাও আমার সময় নেই।
– ধুরর হ।
– হুটট বউকে রেখে কি কেউ যায়। চলে এসো বউ।
– নিলয়….তুই যদি আর একবার আমাকে বউ বলছিস তোকে কিন্তু ময়দা চটকায় যেভাবে না ওভাবে চটকিয়ে রুটি বানাবো।
নিহীনের চিৎকার শুনে কান মাথা যেনো চাবিহীন লক হয়ে গেছে। আমি ভয়ে আর কিছুই বললাম না। তবে এবার আমার সাইকেলের পিছনে এসে চুপচাপ বসলো। যাক বাবা রাগ দেখালেও সাইকেলে তো উঠেছে। দুজনে যাচ্ছি। আসলে নিহীন আপু আর আমি প্রতিদিন বিকাল হলে সাইকেল নিয়ে ঘুরতে বের হই। একদিন ও চালাবে আরেকদিন আমি চালাবো। নিহীনের আব্বু আর আমার আব্বু দুজনে বন্ধু আর পাশেই বাড়ি। তাই নিহীন আপু যখন ঘুরতে বের হয় আমাকে সাথে নেবেই। কারন ওর কাছে আমি সেই এখনো ছোট বাচ্চা আছি। কিন্তু নিহীনের সাথে ঘোরাঘুরি, আড্ডা,ফাজলামো শয়তানি করতে করতে কখন যে হুদাই ক্রাশ খেয়ে ভালোবেসে ফেললাম তা আমি নিজেও জানিনা। অবশ্য ভালোবাসার পিছনে আরো একটি কারন আছে। সেটা হল নিহীন আপুকে ওর ভার্সিটির মাঠে বৃষ্টির দিন ওর বন্ধুরাসহ ও বৃষ্টিতে ভিজছিল সেদিন ওর কালো চুল, হাতে কয়েকগাছি চুড়ি হাত মেলে ভেজা বন্ধুদের সাথে কাদা মাখামাখি। সব মিলিয়ে যেন মনে হচ্ছিল সৌন্দর্যের গ্রীস নগরীর এন্জেল। সেখান থেকে ভালোবেসে ফেললাম।
– এই চলে এসেছি থাম নামবো।
– ইসসস এই পথ যদি না শেষ হতো কত ভালো হতো। (আমি)
– রাখ তোর ভালো। যা দুর হ।
– কেনো বউ?
– আবার? ধ্যাত..
নিহীন রাগ দেখিয়ে চলে গেল। আমি তা দেখে হাসছি। রাগলে তাকে বেশ লাগে। যখন রাগ করে গাল ফুলিয়ে বসে থাকে তখন মনে হয় আলতো করে ওর গাল দুইটা টেনে দিই। কিন্তু সাহস হয়নি কখনো। রাগটা যখন বিস্ফোরিত হতে শুরু করে তখন তো কথা বলায় দায়। অন্য সবার সাথে কত না হেসে কথা বলে আর আমার বেলাতে শুধু ঝাড়ি। কেনো যে বড় আপু আমার ভালোবাসা হয়ে দাঁড়ালো। এই তোর বন্ধুদের কাছে আমাকে নিয়ে কি বলেছিস?” ছাদে বসে বাদাম খাচ্ছি। তখনি নিহীন এসে কথাটি বললো। আমি বোকার মত চেয়ে আছি। ওর মুখে ঠোটের ঐ তিলটাকে ভালো করে দেখছি। ইসস তাকাতে কেমন যেন লজ্জ্বা করছে।
– এই নিলয় তোর বন্ধুদের কাছে কি বলেছিস আমাকে নিয়ে?
– কই কিছু না তো?
– মিথ্যে কথা একদমই বলবি না। মেরে না তোর লবন লাগাবো হারামি।
– কি হয়েছে গো জানু?
– তোর জানুর গুষ্টি কিলায়। তুই তোর বন্ধুদের বলে বেড়িয়েছিস যে আমি তোর বউ হয়?
কথাটি শুনে ওর দিক থেকে চোখ সরিয়ে অন্যদিকে তাকালাম।কি সব বন্ধু আমার। বলেছিলাম নিহীন যেন না জানে। কিন্তু জেনেই গেছে ধ্যাত। মনে হচ্ছে এবার মার নিশ্চিত খেতে হবে। আমি আমতা আমতা করে বললাম..
– মা মা মানে কি সব বলছো?
– কি সব বলছি? রিহান তোর বন্ধু না?
– হুম তো?
– আজ আমাকে দেখে কি বললো জানিস?
– কি বলেছে? প্রপোজ করছে? আচ্ছা তুমি চিন্তা করো না আমার বউকে প্রপোজ করার সাহস ওর হয় কি করে?
– নিলয়.. তোকে আর কত বলবো বউ বলবি না। আর তোর বন্ধুদের বলেছিস আমি তোর বউ। রিহান আজ আমাকে ভার্সিটি থেকে আসার সময় ভাবি বলে ডেকেছে।
আমি নাকি তোর বউ। দিয়েছি গালে চড় একটা। নিহীনের কথা শুনে দুহাত পিছিয়ে যেয়ে গালে হাত দিয়ে দাঁড়ালাম। ভয়ে ওর দিকে তাকাতে পারছি না। কি ডেন্জারেস মেয়ে ভাবি বলেছে বলে চড় মারতে হবে? তাহলে বউ বললে কি যে হবে। যদিও আমি বউ বলেছি। কিন্তু হাতের কাছে নেই এখন আমি। আমি ভয়ে দৌড়ে বাড়ির মধ্যে চলে আসলাম। পরেরদিন বিকালে বাড়ির সামনের ফাকা গলিতে ক্রিকেট খেলছি তখনি নিহীন আসলো। আমি ওকে দেখে দৌড় মারতে যাবো তখনি ও আমাকে ডাক দিল। আমি আস্তে আস্তে ওর দিকে গেলাম। গালে দুইটা হাত দিয়ে দাঁড়িয়ে আছি। আমার কাঁচুমাচু দেখে নিহীন হাসছে। আমি ওর হাসির দিকে চেয়ে আছি একদৃষ্টিতে। ওর হাসির মায়াতে পড়ে গেলাম নতুনভাবে। তবে ফাজলামোটা আবার করতে ইচ্ছে করছে। কিন্তু এখন চুপ করে আছি।
– কি করছিস? (নিহীন)
– কি আর করবো ব্যাট আর বল হাতে লুডু খেলি।
– শয়তান কোথাকার। চল আমার সাথে।
আমাকে টানতে টানতে গলি থেকে রাস্তার সামনে নিয়ে আসলো। আমি ওর দিকে চুপ হয়েই তাকিয়ে আছি। আমি আজ প্রথমবার ওর সাথে চুপ হয়ে আছি। আমার দিকে তাকিয়ে নিহীন বললো..
– চল ঘুরতে যাবো।
– ওকে সাইকেল আনি দাঁড়া।
– সাইকেল লাগবে না।
– তাহলে রিকশা ডাকি।
– রিকশাতেও ঘুরবো না। আজ আমরা পায়ে হেটে দুজন ঘুরবো।
– বাব্বাহ… আমার সিনিওর রাগি রিনা খান টাইপ বউটা বেশ রোমান্টিক হয়ে গেছে দেখছি।
– ঐ কি বললি? আবার ফাজলামো?
মনে মনে বললাম..”নিহীন এটা ফাজলামো না। সত্যিই তোমাকে আমি ভালোবাসি। আর ভালোবাসা থেকেই তোমার সাথে এভাবে কথা বলি। মাঝে মাঝে ইচ্ছে করে তোমার ঐ খোলা চুল হয়। যখন তোমার এলো চুল প্রকৃতির বাধাহীন বাতাসে তোমার মুখে এসে পড়ে তখন আমার খুব রাগ হয়। মনে মনে বলি ইসস উপরওয়ালা আমাকে যদি একটু সময়ের জন্য তোমার এলো চুল বানিয়ে দিত”
– ঐ কি ভাবছিস? যাবি, নাকি এখানে দাঁড়িয়ে মানুষ গুনবি?
নিহীন আমার হাত ধরে রাস্তার একপাশ দিয়ে হেটে যাচ্ছে। আমি একবার ওর হাত ধরার দিকে তাকিয়ে আছি,আরেকবার ওর মুখের দিকে তাকিয়ে আছি। নিহীন বকবক করে যাচ্ছে। কিন্তু আজ আমার কানে কোনো কথায় ঢুকছে না। যখন মহল্লার মোড়ে আসলাম তখনি চায়ের দোকান থেকে কয়েকটি ছেলে আমাদের দিকে তাকিয়ে আছে। তাকানোটাই স্বাভাবিক। কারন নিহীনকে পছন্দ করে না এমন ছেলে এলাকাতে নেই। তবে একটা ছেলে বেশ মনোযোগ দিয়ে দেখছে। তখনি নিহীন আমার একদম পাশে জাপটে এসে হাটতে লাগল। আজ আমি প্রথমবার ওর দিকে তাকিয়ে এতটা অবাক হচ্ছি। ওর মাথা ঠিক আছে তো?
– নিহীন আপু কি করছো এসব? (সবার সামনে আপু বলি না হলে শাস্থি দেবে)
– চুপ থাক তো।
– কিন্তু কেনো? কি হয়েছে তোমার?
– কিছু না। চুপচাপ সামনে হেটে চল।
আমি আর কোনো কথা বললাম না। একটু সময় পর খেয়াল করলাম দুইটা ছেলে আমাদের পিছনে পিছনে সাইকেল চালিয়ে আসছে। আমি নিহীনকে থামালাম। সে আমার দিকে তাকিয়ে বললো…
– কি হলো?
– অনেক্ষন তো হাটলাম। এবার রিক্সায় উঠি।
– নাহ আজ হেটে যাবো।
– আমি আর হাটতে পারবো না।
– আমি মেয়ে হয়ে হাটতে পারছি আর তুই ছেলে হয়ে বলছিস আর পারবি না।
– না। আমি আর পারবো না।
– ওকে চল রিক্সায় উঠি।
দুজনে রিকশাতে করে যাচ্ছি। নিহীন আমাকে এক হাত দিয়ে জড়িয়ে ধরে আছে শক্ত করে। ছেলে দুজন জোরে সাইকেল চালিয়ে আমাদের সামনে গেল। নিহীন মুচকি হাসছে। আমিও মুচকি হাসলাম। নিহীন আপুকে প্রতিদিন বিকালে ঘুরতে নিয়ে যেতাম। রোজ ওর বাড়ির সামনে ঘুরঘুর করতাম। ছাদে উঠে ওকে রোজ দেখতাম। ওর সাথে চোখাচোখি হলে মাথা নিচু করে নিতাম। রোজ সকালে,রাতে মেসেজ দিয়ে খোজ নিতাম। এভাবে সময়গুলো পার হয়ে যাচ্ছিল। দিনে দিনে আপুর প্রতি আমি আরো উইক হয়ে পড়ি। ওকে চুরি করে দেখার জন্য বকা খেয়েছি অনেক। আপুর সাথে এখন কেমন জানি কথা বলতে জড়তা চলে আসে। আগের মত আর ফাজলামো করতে পারি না। আপুকে দেখলেই কেমন যেন বুকে কাঁপুনি দিয়ে ওঠে।
– নিহীন আপু?
– ওরে বাবা..আজ একা আপু বলে ডাকলি? আশে পাশে তো কেউ নেই। (নিহীন)
– না মানে আসলে তোমাকে একটা কথা বলতে আসছি।
– অনুমতিও নিচ্ছিস? যাক এতদিনে তোর উন্নতি হলো। কথাটি শুনে ফাজলামোর মুড চলে আসছে। আমি শয়তান মার্কা হাসি দিয়ে বললাম..
– ভেবে দেখলাম আমার বন্ধুদের ভাবি হলে তোমাকে বেশ মানাবে।
– কি বললি?
– ওহ বুঝোনি? বললাম যে আমার বউ হলে কিন্তু তোমাকে বেশ মানাবে।
– নিলয় আবার শুরু করলি তো ফাজলামো?
– ফাজলামো না নিহীন। তোমাকে আমি সত্যিই ভালোবাসি। আর বিয়ে যদি করি তবে তোমাকেই করবো। দেখো নিহীন আমি সবার মত রোমান্টিক করে প্রপোজ করতে পারবো না তবে এটাই বলছি লং জার্নিতে তোমার পাশে বসে কাধে মাথা রাখার জন্যে হলেও তোমাকে চাই।
সাইকেল চালাতে তোমাকে আমার সাইকেল এর সামনে বসিয়ে তোমার এলো চুল আমার মুখে এসে পড়ার জন্য হলেও তোমাকে চাই। তোমাকে পিছন থেকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরার জন্যে হলেও তোমাকে চাই। প্রতিশুক্রবার রাত বারোটায় দুজনে শুয়ে শুয়ে কানে হেডফোন গুজে ভূত এফএম শোনার জন্য হলেও তোমাকে চাই। রোজ আমার শোবার সময় তোমাকে কোলবালিশ বানানোর জন্য হলেও তোমাকে চাই। তুমি কি জানো, তোমার চোখের অগভীর সমুদ্রে ডুব দিয়েছে আমার রাতে ঘুম।” বিকেলে ছাদে দাঁড়িয়ে নিহীনকে এসে আমার মনের জমে থাকা কথাগুলো বলেই দিলাম।আর থাকতে পারছিলাম না এভাবে একতরফা ভালোবেসে। আমার কথাগুলো শুনে নিহীন আমার দিকে চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে আছে। হঠাৎ করেই আমার দুইগালে কষে দুইটা চড় বসিয়ে দিল। কিছুই মনে করলাম না। মারছে তো কাছেরই মানুষ। কিন্তু এরপর ও যা বললো আমি নিজের কানকে বিশ্বাস করতে পারছি না। ও বললো..
– তোকে নিয়ে আমি এসব ভাবিই না কোনোদিন।
– তাহলে সেদিন ঘোরাঘুরি, রোজ তোমাকে দেখলে মুচকি হাসতে সেসব কি ছিল?
– ওহ ওসব..আসলে সেদিন দুটো ছেলে আমাদের পিছনে ঘুরেছিল দেখেছিলি না?
যে চালাচ্ছিল ওর নাম সৈকত। আমাকে একদিন এসে বলেছিল.. “তুমি সুন্দর। তোমাকে সবাই ভালোবাসতে চাইবে। কিন্তু এই সৈকত তোমার দিকেকে ফিরেও তাকাবে না বুঝি না পাড়ার সব ছেলেগুলো কেনো তোমাকে ভালোবাসে। তোমাকে এই সৈকত ভালোবাসবে না বুঝেছো? এমন কথা শুনে আমি চমকে যায়। সৈকতের দিকে তাকিয়ে থাকি। এরপর ওকে দেখানোর জন্য তোর সাথে কয়েকদিন ঘুরেছিলাম। যাতে ও একটু জেলাস ফিল করে। ব্যস আর কিছু না। ওহ হা সৈকতও এখন আমাকে ভালোবাসে। বুঝেছিস?
– তুমি ভালো না বাসলেও আমি বাসবো।
– দেখ নিলয় পাগলামির একটা সীমা আছে। তোর এই বয়সটা পাগলামির না। সমাজ মানবেও না।
– আমি তোমাকে নিয়ে নতুন সমাজ গড়বো।
– সমাজ কেনো, আমিই এসব মানি না।
– কেনো?
– কেনো আবার? তোকে আমার অসহ্য লাগে।
– আর?
– আর আবার কি? আমার সাথে কখনি যেন তুই কথা বলবি না। দেখা করবি না।
কথাটি বলে ও চলে গেল। আমি রুমে এসে দরজা বন্ধ করে কাঁদলাম। সারাটা সময়।রুম থেকে বের হলাম না। নিহীন অনার্স ৪র্থ আর আমি দ্বিতীয়। তাই বলে কি ভালোবাসা যায় না? কিন্তু কি করবো সব তো শেষ হয়ে গেল। (৬ দিন পর) আমি ৬ দিন পর বাড়ির বাইরে আসলাম। ৬ দিনের মধ্যে নিহীন একবারো আসেনি আমার সামনে বা আমাদের বাড়িতে। এভাবে আর থাকা যাচ্ছে না। সোজা বাড়িতে ঢুকলাম। আম্মুকে বললাম..
– আম্মু আমি এখানে থাকবো না।
– মানে?
– আমি ঢাকাতে থেকে পড়বো না। সিলেট,চট্টগ্রাম,কুমিল্লা যেখানে খুশি আমাকে পাঠিয়ে দাও। আমি আর এখানে থেকে পড়বো না।
– কিন্তু কেনো?
– বললাম তো ভালো লাগছে না।
– ওকে চিটাগাং এ যা ওখানে তোর খালুর বাড়ি।ওখানে থেকে পড় যা।
পরেরদিনই সব কাজ কম্পিলিট করে চিটাগাং এ চলে আসছি। নিজেকে অনেক বোঝালাম। যে হবে না তাকে ভালোবাসাটা বোকামি ছাড়া আর কিছুই না। সমস্থ কন্টাক্ট বন্ধ করে কেবল নতুন সিম দিয়ে আম্মু আর আব্বুর সাথে কথা বলি। এভাবে কেটে যায় একটা বছর। একটা বছরে মাত্র হাতে গোনা কয়েকদিন বাড়িতে গিয়েছি। কিন্তু নিহীনের দিকে ফিরেও তাকায়নি। যদিও সে আমাদের বাড়িতে আসতো। একদিন রুমে শুয়ে আছি তখনি আম্মুর ফোন আসে। ধরতেই আম্মু বলে..
– নিলয় বাড়িতে আসবি কবে?
– কেনো আম্মু?
– নিহীনের বিয়ে ঠিক করেছি আয় তুই।
– নিহীনের বিয়ে?
কথাটি বলেই চুপ হয়ে গেলাম। চোখের কোন থেকে কয়েক ফোটা পানি পড়ে যেতে লাগল। আমি নিজেকে সামলিয়ে বললাম..
– তো আমার কেনো যেতে হবে?
– মানে কি? তুই আসবি না কেনো? তোর আসতেই হবে। কালই আসবি। আম্মুর জোরাজুরিতে আসতে হল বাড়িতে। দুইবাড়ি বেশ ভালোমতই সাজানো হয়েছে। হবে হয়ত নিহীনের ভালোবাসার মানুষের সাথে বিয়ে।
– আকাশে আজ অনেক তারা তাই না?
– হুম।
– কিন্তু চাঁদ ছাড়া তারাদের সুন্দর দেখায় না।
– হুম
– আবার চাঁদ আর তারা রাতের অপেক্ষাতেই থাকে।
– হুম।
– কি হুম হুম শুরু করছিস? ছাদ থেকে ফেলে দিবো শয়তান কোথাকার।
আমি এবার চমকে উঠি। সন্ধ্যার সময় বাড়িতে আসছিলাম। আম্মুর সাথে কথা বলে ছাদে চলে আসি। ছাদের একপাশে দাঁড়িয়ে আকাশের দিকে তাকিয়ে আছি। তখনি কোনো এক মেয়েলি কন্ঠ শুনতে পায়। এতটাই ধ্যানমগ্ন ছিলাম আকাশ দেখায় যে কে এসে কথা বলছে বুঝতে পারিনি। ঝাড়ি শুনে পিছনে তাকাতেই দেখি নিহীন দাঁড়িয়ে আছে সাদা কালো ড্রেস পরে।
– আপনি এখানে? (আমি)
– কেনো আবার, কে আসবে?
– না মানে আপনি এখানে আমার সাথে কথা বলছেন?
– চুপ। আমাকে আপনি করে কথা বলছিস কেনো?
– আপনি তো আমার বড়। আর আম্মু শিখিয়েছে বড়দের সম্মান করে কথা বলতে।
– আহারে…আসছে আমার সম্মানীয় ব্যক্তি।
দুজনেই চুপ হয়ে গেলাম। আমি বেশ অবাক হচ্ছি নিহীন আমার সাথে এসে কথা বলছে। হয়ত বিয়ের পর চলে যাবে তাই। আমি ছাদ থেকে চলে আসতে যাবো তখনি নিহীন বললো..
– নিলয়, তোকে একটা প্রশ্ন করি?
– হুম।
– আমার বিয়ে হয়ে যাচ্ছে তোর খারাপ লাগছে না?
– হেহেহেহে…
– হাসছিস কেনো?
– আমার কেনো কষ্ট হবে?
– তুই আমাকে ভালোবাসিস তাই।
কিছুই বললাম না। এই একটা জায়গাতেই আমার দূর্বলতা। আর মানুষগুলো এতটাই রিষ্ঠুর হয় যে যদি অন্য মানুষের দূর্বলতা জানে তবে সে কষ্ট দিতে থাকবে তার দূর্বলতার সুযোগও নেবে। আমি হেসে হেসে বললাম..
– কংগ্রেস আপনার বিয়ের জন্য। আর হা আপনি বলা অবদি কিন্তু আমি আপনার সাথে একদিনও কথা বলিনি সেদিনের পর থেকে। আপনি এখন নিজে থেকেই কথা বলেছেন। আর হা ভালোবাসি কিনা জানিনা তবে সেই সেদিন থেকে ঝুলে শূন্যের কাটা-তারে ; দিকভ্রান্ত, বিভ্রান্ত আমি মিথ্যে মরিচিকায় তোমাকে খুঁজেছি। কিন্তুু আজও দেখা মেলেনি। কথাগুলো বলে আর দাঁড়াতে ইচ্ছে করছে না ওর সামনে। রাগটা বেড়ে যাচ্ছে খুব। রাগ বাড়াটাি স্বাভাবিক। কারন যাকে আপনি ভালোবাসবেন সে ফিরিয়ে দেয়ার পরও যদি সে জানতে চাই তাকে ভালোবাসি কিনা রাগ তো হবেই। এক পা বাড়াতেই নিহীন বললো…
– আমার কার সাথে বিয়ে হচ্ছে জানিস?
– জানার প্রয়োজন বোধ করি না। তবে একটা কথা জানি পৃথিবীর যোগ্যতম মানুষটিই সুন্দরীর বক্ষে মাথা রেখে ঘুমানোর অধিকার রাখে। বাকিরা খরচের খাতায়।
– খুব কথা শিখেছিস দেখছি। তোকে যেটা প্রশ্ন করলাম উত্তর দে। আমাকে ভালোবাসিস?
– জানিনা।
কথাটি বলে ছাদের দরজার কাছে আসতেই নিহীন চিল্লিয়ে দাঁড়াতে বললো। আমি ঘুরে ওর দিকে ফিরলাম। সোজা আর কাছে গেলাম। আমার দিকে তাকিয়ে আছে অপলক।
– কোথায় যাচ্ছিস? (নিহীন) ঠাসসসস… জোরে একটা চড় দিলাম ওর গালে। ও হাত বোলাতে লাগল। আমি চিৎকার করে উঠে বলি..
– হা তোকে ভালোবাসি। তোর বিয়ের ব্যাপারটা মানতে পারছি না। তোকে নিয়ে অনেক স্বপ্ন ছিল। কিন্তু স্বপ্নটার সেদিনই মৃত্যু হয়েছিলো যেদিন বাস্তবতার নিচে আবেগটা চাপা পড়েছিলো। অনেক বেশি অবহেলিত হয়ে গেছি আমি। তাই এখন আর এসব বলে কি হবে?
– খুব হবে। কারন তোর সাথেই আমার বিয়ে হচ্ছে। কথাটা শোনা মাত্রই আমি হা হয়ে গেলাম। আমার নিজের কানও যেন আজ বেঈমানি করছে। কিভাবে সম্ভব?
– মজা করছেন আপু তাই না?
– মজা কেনো করবো? ডায়েরিটা বাসায় ফেলে চলে গেছিলি কেনো? সেদিন বাড়ি থেকে যাওয়ার সময় ভুলে হয়ত ডায়েরিটা ফেলে গিয়েছিলাম। কিন্তু এটা তো কেবল আমি জানি।
– সেদিন তোর আম্মু ডায়েরি পড়ে আমার আর তোর ব্যাপারে সব জানে। আমার আম্মুর সাথে কথা বলে তোর সাথে আমার বিয়ের ব্যবস্থা করে। কথাগুলো শুনে সব রাগ যেন কোথায় চলে গেল। কিন্তু অভিমানটা আমার মনের ঘরে এসে ধুলো হয়ে জমে আছে। তাই বললাম..
– ওহ চিন্তা করবেন না। এ বিয়ে হবে না। আমি ভেঙে দেবো।
– মানে? বিয়ে কি তোকে ভাঙতে বলেছি?
– না বললেও আমি জানি। আপনি আমাকে সহ্য করতে পারেন না।
– সেদিন ওসব রাগে বলেছিলাম। তুই ছোট তো তাই।
– ওহ তাই? কিন্তু সমাজ মেনে নেবে না। আমাদের তো সমাজ নিয়ে বাঁচতে হবে তাই না?
– তোর সমাজের গুষ্টি কিলাই।
– কেনো?
এখন সব মেনে নিচ্ছেন কেনো? পরিবার থেকে সম্মতি দিয়েছে তাই? আচ্ছা একটা কথা বলুন তো, যখন কোনো ছেলে বেকার থাকে তখন মেয়ের পরিবার সেই ছেলের সাথে মেয়ের রিলেশন রাখতে দেয় না। আবার সেই ছেলে যদি কদিন পর চাকরি পেয়ে ঐ মেয়েকেই বিয়ে করতে যায় তাহলে মেয়ের পরিবার কি বলবে?
– জানিনা আমি। ওসব জানতেও চায় না। কারন আমি তোকে ভালোবাসি। কথাটি শোনার পর আমি হাবার মত চুপ হয়ে গেলাম। এবার কি বলবো খুজে পাচ্ছি না। কেবল ফ্যাল ফ্যাল করে চেয়ে রইলাম ওর দিকে। সে বললো..
– যখন তুই চলে গিয়েছিলি সেদিন খুব খুশি হয়েছিলাম। কিন্তু একমাস যাওয়ার পর নিজেকে তোর কথা ভাবা থেকে আটকাতে পারিনি। কারনে অকারনে শুধু তোর কথা মনে পড়ত আমার। নিজেকে বাস্তবতা,সমাজ দিয়ে বুঝিয়েছিলাম। কিন্তু শেষে বুঝতে পারি ভালোবাসা আর বাস্তবতা এক না। তোকে বারবার বলতে চেয়েছিলাম কিন্তু সব ভেবে বলা হয়ে ওঠেনি। তোর যদি মনে হয় পরিবার মেনে নিয়েছে বলে আমি তোকে ভালোবাসছি তবে যা বিয়েটা ক্যানচেল কর। আর এরপর আমার অন্য কোথাও বিয়ে হলে তুই যেন আমার বিয়েতে আসবি না।
কথাগুলো বলে নিহীন কাঁদতে কাঁদতে চলে গেল। আমি এখন কি করবো বুঝতে পারছি না। তবে কেনো জানিনা নিজেকে কেমন অন্যরকম মনে হচ্ছে। হয়ত নিহীনকে পাচ্ছি বলে বা হয়ত আমার ভালোবাসাটা স্বার্থক বলে? কি জানি? তবে নিহীনকে বিয়ে করতেই হচ্ছে। কেমন যেন সব ম্যাজিকের মত হয়ে গেল। যাক উপরওয়ালা যা করে তা ভালোর জন্যই করে হয়ত জাদুর মত সব ঘটে যায়।
ছাদে দাঁড়িয়ে এসব ভাবছি। নিহীন কখন যে আমার সামনে আসলো টের পায়নি। শুধু আমার পাশে এসে আমার ডান হাতের আংগুলের উপর ওর বাম হাতের আংগুল খেলা করতে লাগল। আমি মুচকি হাসছি। সে সামনের দিকে তাকিয়ে হয়ত ভাবছে অবশেষে শয়তান হুনুমানের কথায় ঠিক হল। নিহীন আমার বউ হচ্ছে।