সেদিনের মতো আজকেও মেয়েটির পানে তাকিয়ে আছি। বেলকনিতে বসে মেয়েটি প্রত্যেকদিন এমন সময় বই পড়ে।পাশের একটা গলিতে টিউশনি শেষ করে এই পথ দিয়েই আমাকে যেতে হয়।সেই সুবাদে মেয়েটিকে আজ ৬ মাস ১২ দিন ধরে দেখে আসছি।আমি সাঁই দাঁড়িয়ে মেয়েটির পানে তাকিয়ে থাকি।প্রথমে প্রথমে মেয়েটি বিরক্ত বোধ করলেও এখন দিন দিন কেমন যেন আমার দাঁড়ানোটা মেয়েটির কাছে ভালো লাগে।
ঠোঁটে হালকা করে গোলাপি কালারের লিপিস্টিক, চুল গুলো খোলা, চোখে সামান্য কাজল, মেয়েটির চোখ দুটি বইয়ের পাতায় বিদ্যমান।এমন পরিবেশ মেয়েটিকে যেন আরো সুন্দর করে তুলছে।রাস্তায় ওপাশ থেকে মেয়েটির দিকে তাকিয়ে আছি।মেয়েটিও বার বার আড়চোখে আমার দিকে তাকাচ্ছে।আমি লজ্জায় নিচের দিকে তাকিয়ে আবার মেয়েটির দিকে তাকালাম, এমনি দেখি মেয়েটি বেলকনিতে নেই।কোথায় চলে গেল। ভাবতে ভাবতেই মেয়েটিকে দেখি আমার সামনে এসে হাজির।আমি তো রিতিমতো ভয় পেয়ে গেলাম।যখনি মেয়েটি কে পাশ কাটিয়ে চলে আসব ঠিক তখনি মেয়েটি বলল,
– এই ছেলে রোজ এখানে দাঁড়িয়ে কি করেন
– রাস্তার মানুষ দেখি
– মিথ্যে বলাটাও ভালো করে শিখতে পারেন নাই
– জ্বি কি বললেন
– আপনার মাথা
– ওহ
– তো জুবায়ের সাহেব এভাবে আর কতো মেয়ের পিছনে ঘুরেন
এই কথা শুনে আমার কপাল চোখে তুক্কু চোখ গুলো কপালে ওঠে গেল।এই মেয়ে আমার নাম জানে কিভাবে,আজব।আমি তো কখনো কথা বলে নি।আমতা আমতা করে বললাম,
– জ্বি না,কোনো মেয়ের পিছনে ঘুরি না
– না ঘুরলেই ভালো
– জ্বি
– গ্রাম থেকে এসে লেখাপড়া করেন,মেসে কি একাই থাকেন এবারও টাসকি খেলাম।এটা জানে কিভাবে আমার বাড়ি গ্রামে।মেসে থেকে লেখাপড়া করি।মেয়েটি আবারও বলল,
– টিউশনি তো এ সামনের গলিতে পড়ান
– জ্বি, একটা কথা জানতে পারি
– কি কথা
– আপনি আমার সম্পর্কে এত কিছু জানেন কি করে
– এমা এটা জানব না,যেই ছেলে আমাকে ৬ মাস ১২ দিন ধরে ফলো করে আসছে না মেয়েটি দেখি সব কিছু হিসাব করে রাখছে।মেয়েটি আবার বলল,
– আমার নাম কি জানেন
– জ্বি
– কি নাম আমার
– খাদিজাতুল কুবরা,ডাক নাম খাদিজা
– বাবাহ,ভালোই তো,আর কিছু জানেন
– জ্বি না,আপনে চাইলে বলতে পারেন
– না এখন না,আর আমি গেলাম প্রত্যেকদিন যেন আপনাকে এখানে দেখতে পাই,তা না হলে পা ভেঙ্গে ঘরে বসিয়ে রাখব
মেয়েটি চলে গেল।অবাক পানে তার দিকে তাকিয়ে আছি।কিছুটা বোকা মনে হচ্ছে আমাকে।মেয়েটির শেষ কথাটি আমি বুঝতে পারি নাই।মেয়েটি কি তাহলে ভালোবাসার সংকেত দিয়েছে।না এভাবে আর থাকা যাবে না।মেয়েটিকে মনের কথা খুলে বলতে হবে।কালকেই এর একটা ব্যবস্থা নিতে হবে।
প্রতি দিনের মতো আজকেও বেলকনির দিকে তাকিয়ে আছি।কোথাই, খাদিজাকে তো দেখতে পাচ্ছি না।২০ মিনিট হয়ে গেল এখনো আসল না।সময়টা ক্ষনে ক্ষনে পার হয়ে যাচ্ছে।সূর্যটা পশ্চিম দিগন্তে ডুবে যাওয়ার জন্য ব্যস্ত।আমারও মেসে ফেরার সময় গনিয়ে আসছে।না মেয়েটি কে আজকে আর দেখতে পারলাম না।ঘুমরা মুখ করে ফিরে আসলাম।
খাদিজা কি আমার সাথে খেলা করছে।না কিছুই ভাবতে পারছি না।মাথাটা কেমন যেন ঝিম ধরে আছে।বুকের বা পাশটা চিন চিন ব্যথা অনুভব হচ্ছে।৬ মাস ১৩ দিন খাদিজাকে দেখে আসছি।কখনো বলা হয়ে ওঠে নি “আমি তোমাকে ভালোবাসি খাদিজা” হয়তো আর বলা হয়ে ওঠবে না।মাথাটা প্রচুর ব্যথা করতেছে।হেলান দিতেই চোখ দুটি পরম সুখে ঘুমের ঘরে আচ্ছন্ন হয়ে গেল। আজকে চার দিন হয়ে গেল শুয়াত থেকে ওঠতে পারি না।জ্বরে গা পুড়ে যাচ্ছে।চোখ দুটি দরজার পানে দিতেই কাউকে দেখতে পেলাম।আমার রুমে মেয়ে আসবে কোথাই থেকে।চোখ দুটিকে কচলিয়ে আবার তাকালাম।দেখি খাদিজা।কিছু বলার আগেই মেয়েটি আমার পাশে বসে গেল।কপালে হাত দিয়েই বলল,
– কবে থেকে জ্বর
– ৪ দিন ধরে
– ঔষুধ খাচ্ছেন তো
– হুম
– জানেন আপনাকে এত দিন না দেখতে পেরে আমার খুব কষ্ট হচ্ছিল।
কত অপেক্ষায় ছিলাম বেলকনিতে আপনি আসেন নাই।আপনাকে না দেখতে পেরে আমার বাসায় বসে থাকাটা অনেক কষ্ট হচ্ছিল।কেন কষ্ট হচ্ছিল জানি না।তবে আপনাকে আমার জীবনে খুবই প্রয়োজন,শুধু আপনার বোকা চেহেরার দিকে তাকিয়ে থাকানোর জন্য। আর শুনেন এখন থেকে প্রত্যেকদিন আমি বেলকনিতে দাঁড়ানো থাকব।আপনি রাস্তার ওপাশে থাকবেন।” মেয়েটি ঠোঁটের কোণায় হাসি এনে শেষ একটা কথা বলল,
– সারা জীবন এভাবেই আপনি আমাকে দেখে রাখবেন,যেন কখনো না হারিয়ে যায়।”
হোক না একটু ভিন্ন রকম।প্রত্যেকদিন রাস্তার উপারে দাঁড়িয়ে বেলকনিতে বসা মেয়েটির দিকে দুই নয়নে বিরামহীন তাকিয়ে থাকব।রাস্তা দিয়ে কত শত গাড়ি আসা যাওয়া করবে।আমার সেদিকে কোনো ভ্রুক্ষেপই থাকবে না।আমি তো কেবল তাকিয়ে থাকব বেলকনিতে বসা খাদিজা নামের মেয়েটির দিকে।চুল গুলো খোলা রেখে হাতে গল্পের বই নিয়ে পড়বে।তাকিয়ে থাকব সহস্র বছর।এই তাকিয়ে থাকা যেন কখনো শেষ না হয়, কোনো ভাবেই না,কোনো মতেই না।