সময়টা ৫ই মে ২০১৬,তোমার সাথে আমার প্রথম দেখা কলেজে।সেদিন কলেজে আমার প্রথম দিন। প্রথম ক্লাস শুরু হলো,সবাই একে ওপরের সাথে পরিচিত হতে ব্যাস্ত।স্যার যখন তোমার নাম বলতে বললো,তখন প্রথমবারের মতো তোমার ওপর আমার চোখ গেলো।অস্বস্তি নিয়ে চারপাশে তাকাচ্ছি। বারবার শুধু মনে হচ্ছিলো সবাই বুঝি আমার দিকে তাকিয়ে আছে,তুমি যখন নাম বললে,তোমার কাজল কালো চোখ দেখার সাথে সাথে আমার হৃৎস্পন্দন বেড়ে গেল, মন হলো নিজের হার্টবিট নিজেই শুনতে পাচ্ছি।অনেকক্ষণ পর্যন্ত আমি এক দৃষ্টিতে তোমার দিকে তাকিয়ে রইলাম।তুমি বসে যাওয়ার যাওয়ার কয়েক সেকেন্ড পর সংবিত ফিরে পেলাম।প্রথম দেখাতেই প্রেম হয়ে যায়, এটা আমি আগে বিশ্বাস করতাম না।কিন্তু তোমার কাজল কালো চোখ দেখার পর আমি বুঝতে পারলাম প্রথম দেখাতেও প্রেম হয়। খুব ভালোভাবেই হয়।তোমার ওই চোখ,কি আছে ওই চোখে? আমি জানিনা, সত্যিই জানিনা।আমি যতবারই চোখ বন্ধ করে দৃশ্যটা কল্পনা করি, ততবারই আমার চোখ ভিজে যায়, বুকে একটা ব্যথা অনুভূত হয়। কী জানি, এই হয়ত রবীন্দ্রনাথের ভাষায় “সুখের মত ব্যথা।”
সেদিন তুমি চলে যাবার পর হণ্যে হয়ে খুঁজতে লাগলাম তোমাকে।কিন্তু কোথায় তুমি? নাম ধাম কিচ্ছু জানিনা। মন টা এত খারাপ হলো! এরপরে কেটে গেল ২ দিন।২ দিন পর ক্লাসে তোমার নাম জানতে পারলাম।”ফারিন” নাম টা শুনে অনেক টা খুশি হলাম,আর তার পর থেকেই আমি তোমাকে অনুসরণ করতে শুরু করলাম।নিয়মিত বোরকা পরার কারণে তখনো তোমার মুখ দেখার সৌভাগ্য আমার হয়ে উঠল না।কিন্তু প্রেমে পড়ার জন্য তোমার “কাজল কালো চোখ” দুটি যথেষ্ট ছিলো।নিয়মিত ক্লাস শুরু হবার সাথে সাথে তোমার প্রতি আমার আগ্রহ বাড়তে থাকলো।ছাএ হিসেবে আমি খুব বেশি একটা ভালো ছিলাম না।SSC তে ৪.৭৫ নিয়ে কলেজে পড়া শুরু করলাম,আর তুমি GPA ৫ পেয়ে।আস্তে আস্তে বুঝতে পারলাম ছাএী হিসেবে তুমি অনেক পরিশ্রমী।আর খুব অল্প সময়ে তুমি ক্লাসের সবার মধ্য-মণি হয়ে উঠলে।আর তোমার এক মাএ প্রতিদ্বন্ধী হয়ে গেলাম আমি।কেমন করে যেন তোমাকে হিংসে করতে শুরু করলাম।কিন্ত আমার ভালবাসার কাছে হিংসে করাটা হার মানলো।মনের কাছে ভালোবাসাটাই বেশি প্রাধান্য পেলো।৩ মাস অতিক্রান্ত হবার পরো তোমার মুখ দেখতে পেলাম না,তবুও ভালোবাসাটা বাড়তে লাগলো।তোমার মুখ দেখার প্রয়োজন অনুভব করলাম না।
আমার শরীরের ভিতরে যখন অলস ছায়াটা ঘিরে ধরে তখন আমি এই শহরের ধুলোমাখা রাস্তায় একা হেটে শরীরকে জাগ্রত করার চেষ্টা করি।এই নগরীর যন্ত্রগুলোর শব্দকে অনুভব করি।মানুষের মন খারাপ থাকলে আমি এখন জানি সে একা থাকার চেষ্টা করে কিন্তু আমি কবিতা পড়তাম।কবিতা পড়া মানুষগুলোর মন বা ভিতরটা বুঝা যায় না।তাদের ভিতরটা এই জরাজীর্ন শহরের মত হয়।তোমাকে ভালোবাসার পর থেক আমার মন খুব খারাপ থাকতো।ছেলে হিসেবে আমি কখনো সুন্দর ছিলাম না।যাকে বলে একে বারে অযোগ্য।ভয় করতো যদি তোমাকে হারিয়ে ফেলি।অন্য দিকে তোমার ফ্যামিলি ছিলো অনেক উচ্চ শ্রেণীর,তোমার আব্বু ছিলো মাদ্রাসার শিক্ষক।রক্ষণশীল পরিবারে থাকায় তুমি তখন মোবাইল ফোন ব্যবহারের সুযোগ পেতে না।কলেজে কথা বলাই ছিলো এক মাএ মাধ্যম।দিন অতিক্রান্ত হবার সাথে সাথে তোমার সাথে আমার একটা বন্ধুত্ব তৈরি হলো।তবে প্রতিদিন কলেজ শেষ হবার পর লুকিয়ে তোমার পিছু নেওয়াটা আমার দৈনিক কাজ হয়ে পড়লো।
ততো দিনে তুমিও বুঝে গেলে যে আমি তোমাকে ভালোবাসি।কিন্তু তুমি বুঝেও না বোঝার অভিনয় করতে লাগলে,আমিও বলার সাহস পেতাম না।এই কথাটি বলতে গেলেই সব ভয় আমার মাঝে এসে ভর করতো।যদি তুমি আমার সাথে কথা বলা বন্ধ করে দাও।ইয়ার চেইন্জ এক্সাম শেষে রেজাল্ট আসলো তুমি প্রথম আর আমি তৃতীয়।আমার মন খারাপ হলো না বরং তুমি প্রথম হওয়াতে সুখ অনুভব করলাম।এক্সাম শেষে রমজান মাস চলে আসায় কলেজ এক মাসের জন্য বন্ধ দিয়ে দিলো।টানা ১৫ দিন যখন তোমাকে দেখতে পেলাম না,তখন নিজেকে পাগল মনে হতে লাগলো।তারপর আরো বাকি পনেরো দিন,তোমাকে এক পলক দেখার জন্য অনেকটা পথ হেটে তোমার বাড়ির সামনে গিয়ে হাটা-হাঠি করতে লাগলাম।কিন্তু কখনো তোমার দেখা পেতাম না।এই একটা মাস ছিলো আমার জীবনের সবচাইতে কষ্টের দিন।
কেউ কোনোদিন আমাকে ভালোবাসার কথা বলেনি, আমি সুন্দর না তো তাই হয়ত।আমি কিন্তু সত্যিই তোমাকে ভালোবাসি।ভরা পূর্ণিমায় তোমার কাধে মাথা রেখে জ্যোৎস্নাস্নান করতে ইচ্ছে হয়, শ্রাবণ মাসের উথাল পাথাল বৃষ্টিতে খুব ইচ্ছে হয় একগুচ্ছ কদমফুল হাতে ভিজতে ভিজতে তোমার বাড়ির উঠোনে যাওয়ার।আমার সবটা জুড়েই তুমি।ভালোবাসাও কিন্তু একটা অসুখ। ততক্ষণই অসুখ, যতক্ষণ ভালোবাসাটা এক পাক্ষিক থাকে। তুমি কি আমার অসুখ সারিয়ে দিতে পারবে? প্রচন্ড কষ্ট হয় ইদানীং।ঘুমোতে পারি না। ভালোবাসার ব্যথা সহ্য করার ক্ষমতা ছেলেদের একটু বেশি থাকে।আমার সহ্য ক্ষমতা প্রায় শেষের দিকে।
ইদানিং আকাশ থেকে কিছুক্ষন পর পর বৃষ্টিরা নেমে আসে। এই বৃষ্টিকে বরণ করতে মাঝে মাঝে আমার খুব ইচ্ছে হয়। কিন্তু আমি পারি না।আমি জানালা দিয়ে তাকিয়ে দেখি বৃষ্টিটা এবার কমে গেছে। ইদানিং বৃষ্টিকে বুঝা যায় না। এই বৃষ্টির মাঝে আমার কল্পনা গুলো চোখের সামনে ভাসতে থাকে। কিন্তু আমি এই গুলা মনে করতে চাই না। মনে করলেই ভিতরটা ধক করে ওঠে।১ মাস পর যখন কলেজে তোমাকে আবার দেখতে পেলাম, তখন মনে হলো আমার অন্তর-আত্নায় নতুন করে প্রাণ উজ্জীবিত হয়েছে।দিন যাওয়ার সাথে সাথে তোমার সাথে মনের মিলটা অনেক গভীরতায় রুপ নিয়ে নিলো।পড়া-শোনায় একে ওপর কে সাহায্য করতে লাগলাম।দিনের পরিক্রমে আমরা দু’জন ক্লাসের সেরা হয়ে উঠলাম।যদিও প্রথম স্থান টা সব-সময় তোমার আয়ওে ছিলো।টেষ্ট এক্সাম শুরু হয়ে গেলো,ভাগ্য ক্রমে তোমার পিছনেই আমার সিট পড়লো।দু’জন ভালো-ভাবেই পরীক্ষা দিতে লাগলাম।একদিন তাড়া-তাড়ি করে হল থেকে বের হয়ে যাওয়ায়, আমার কিছু কাগজপএ ভুলে সিটে রেখে চলে গিয়েছিলাম।পরের দিন যখন তোমাকে প্রশ্ন করলাম, ফারু তুমি কী আমার কাগজপএ গুলো পেয়েছো ? তুমি যখন ব্যাগ থেকে কাগজপএ গুলো বের করে দিয়ে,আমার ভুলে যাবার জন্য আমাকে বকতে লাগলে,তখন আমার মনে অনেক প্রশান্তি আসলো।মনে হলো আমার জন্য তুমি ভাবো অনেক ভাবো।
পৃথিবী যখন ঘুমিয়ে থাকে আমি তখন জেগে থাকি। আকাশের তারা গুনি। আমি জানি এটা পাগলের কাজ ছাড়া কিছু হতে পারে না। তারা গুনা যায় না।কিন্তু মাঝে মাঝে পাগল হতে ইচ্ছে করে।রাতের আকাশের দৃশ্যপট আমার নয়নে ছড়িয়ে গেলে আমার চোখে এক বিশাল ঘুম এসে হাজির হয়। আমার এই ঘুম ঘুম চোখে এক অদ্ভুত ইচ্ছে জাগে।আজকে পরীক্ষার সময় তুমি যখন তুমি আমার কাছে কলম চাইলে,কলম টা দেওয়ার কিছুক্ষণ পর ফ্লোর থেকে কুড়িয়ে তোমার পুরোণো কলম টা নিয়ে নিলাম।এখনও তোমার লেখার নোট খাতার দুটি পাতা আর কলম টা আমার কাছে স্বযত্নে রয়ে গেছে।কলম দেওয়ার সময় ঐদিন আমি প্রথম তোমার হাতের ছোঁয়া পাই।তখনই মনে হলো আমি আর আমার মাঝে নেই,জীবনের সব কিছু যেন তখনই পেয়ে গিয়েছিলাম।এই সময়ে হঠাৎ করে ভালো লাগার বিষয়টা স্বাভাবিক ছাড়া আমি আর কিছু মনে করি না।এই ভালো লাগা বিষয়টা আমাকে অন্য জগতে নিতেও একটুও কার্পণ্যবোধ করে না। এই পৃথিবীর আবছা নীল ছায়ায় আমি হারিয়ে যাই যখন তুমি আমার সম্মুখে আসো। নিজেকে কল্পনা করি নীল দিগন্তে।
টেষ্ট এক্সাম আজই শেষ,ইতিমধ্যই ২০ মিনিট হয়ে গেছে।কিন্তু তোমার কোনো উপস্থিতি নেই।আমার মনটা হঠাৎ করে কালো মেঘে ছেয়ে গেলো।তারপর হঠাৎ করে তুমি আসলে,রুমে স্যার না থাকায় পেপার টা নিয়ে আমার কাছে দিয়ে তুমি চলে গেলে অফিস রুমে প্রশ্ন আনার জন্য।আমিও বুঝে গেলাম আমার কী করতে হবে,আমি আমার লেখা রেখে তাড়াতাড়ি তোমার রোল লিখে,বৃও ভরাট করে খাতা স্কেল করা শেষ করে আবার আমার লেখা শুরু করলাম।তুমি এসে খুব সহজেই লিখতে লাগলে।তোমার ইশারা ও ইঙ্গিত গুলো আমি খুব বুঝতে পারতাম,খুব ভালোভাবেই বুঝতে পারতাম।কারণ এই চোখ দু’টাই আমার পৃথীবি ছিল।
আস্তে আস্তে ক্লাসের সবাই বুঝতে লাগলো যে তোমার আমার প্রেম চলছে।কিন্তু ততো দিনে আমার তোমাকে বলা হয়ে উঠে নি যে আমি তোমাকে ভালোবাসি।এই বিষয় নিয়ে যখন তোমার বন্ধুরা মজা করতে লাগলো তখন তুমি আমার সাথে কথা বলাটা একটু কমিয়ে দিলে।আমিও একটু দূরত্ব নিয়ে তোমাকে ভালোবাসতে লাগলাম।তোমার সাথে কথা কম হওয়াতে মনটা সব সময় খারাপ থাকতো,এই মন খারাপের সময় আমি প্রতিদিন চুপচাপ হাটতে বের হতাম।আমার চারপাশটায় থাকতো শো শো শব্দ।বিশাল সমুদ্রের শব্দ।আমি সমুদ্রের দিকে তাকাই। তার বিশাল ঢেউ এর পানি একটু পর পর আমার পা কে স্পর্শ করে যায়। যখন স্পর্শ করে যায় তখন আমার আশ্চর্য রকমের অনুভূতি হয়।মনে হয় এই সমুদ্রটা আমাকে কিছু জানাতে চায়।জানাতে চায় যখন মাঝ রাতে এই সমুদ্রটা একলা হয়ে যায় নির্জন রাতে এই সমুদ্রের মাঝে কেউ থাকে না। শুধু থাকে বিশাল আকাশটার উপর একা চাঁদটা। চাঁদের রুপালি আলোয় সমুদ্রটা কি রুপালি ভাবে সাজে তখন? তখন নিশ্চয় সমুদ্র আর চাঁদ এই দুজনের মাঝে অনেক কথা হয়।আচ্ছা তাদের আবার কি কথা থাকতে পারে? আমি ভেবে কিছু বের করতে পারি না।
শুভ্র ভাই মানুষ টা অনেক ভালো।এই সাদা সিধে মানুষটা আমাকে নিজের ছোট ভাইয়ের মত ভালোবাসে।শুধু আমি না, সবার সাথেই এই লোকটা খুব তাড়াতাড়ি মিশতে পারে। তার একটা গুন আছে। অনেক ভালো ছবি আঁকে।কলেজের প্রোগ্রামের বেশ কিছু ছবি আছে আমার মোবাইল ফোনে।যার মধ্য অন্যতম “ফারিন” এর বোরকা পরিহিত একটি ছবি।আমার কেন জানি মনে হলো এমন একটা ছবি শুভ্র ভাইকে দিয়ে আকালে মন্দ হয় না।কোন কিছু না ভেবে শুক্রবারে চলে গেলাম শুভ্র ভাইয়ের বাসায়।
অনেক সুন্দর করে শুভ্র ভাই আমাকে একটি ছবি একেঁ দিয়েছিল।পরেরদিন ক্লাস এ যখন তোমাকে ছবিটা দেখালাম,তখন তুমি অনেকটাই শিহরিত হয়েছিলে!আমার মনে হলো এই প্রথম আমি তোমাকে বিস্মিত করতে পেরেছি।কিন্তু আমি তোমাকে কখনো মিথ্যা বলতে চাই নি,তখন কেনো জানি তোমাকে বলে দিয়ে ছিলাম শুভ্র ভাইয়ের কথা।আর তখন থেকেই আমার প্রতি তোমার বিশ্বাস জন্মাতে লাগলো।মূলত আমি এই রকম ভাবেই বুঝাতে চাইতাম তোমাকে আমি ভালোবাসি, খুব ভালোবাসি!!!আমি তো সব সময় তোমাতে মও ছিলাম।পরীক্ষার সময় কলম দেওয়ার জন্য যখন প্রথম বারের মতো তোমার হাতের স্পর্শ পাই, তখন আমার মনে হয়েছিল পৃথীবিতে পাবার মতো সব কিছু পেয়ে গেছি।আমার জীবনে তখনি প্রেমের শিহরণ প্রথম বারের মতো এসেছিলো।
০৫ ই আগষ্ট ২০১৭,কলেজে গিয়ে শুনলাম তুমি ওয়ার্ল্ড ভিশন এ তিন মাস মেয়াদী একটা জবে রিটেন এ পাশ করে গেছো।জব টা পেয়ে গেলে তিন মাস আর কলেজে আসবে না,তখন আমার মনটা খুব খারাপ হয়ে গেলো।আকাশে যখন মেঘ করে তখন আমার মনের ভিতরও এই মেঘের মত একটা ছাপ তৈরি হয়। সেই মেঘ জানান দেয় মানুষের মনের মাঝে জমে থাকা বিষণ্নতাকে।তখন শুধু মনে হচ্ছিল তিন মাস তোমাকে না দেখে থাকা আমার পক্ষে অসম্ভব!একে বারেই অসম্ভব।তখন থেকে আমি তোমার খারাপ চাইতে লাগলাম,মনে মনে ঈশ্বরের কাছে বলতে লাগলাম যেনো তোমার চাকরী টা না হয়।তখন কার মতো ঈশ্বর আমার কথা টা রেখেছিল!আর আমিও আমার নিজের মধ্য প্রাণ ফিরে পেয়েছিলাম।আমার অপূর্ণতার কল্পনার ঘরে তোমার ছায়া ভেসে বেড়ায় কিন্তু আমি আর তোমায় দেখতে পাইনা। দেখতে পাই না তোমার কাজল কালো চোখ গুলো।আমার নিজের ভিতর যে নিশব্দ সুরের জন্ম হয় সে শব্দ দিয়ে তোমাকে আমি এপথ ওপথ খুঁজতে থাকি। কিন্তু আমি কোথাও তোমার ছায়ার দেখা পাই না।আমার পথে শূন্যতা নামক বাতাস শো শো করে ধেয়ে আসে, আর সে বাতাস যখন আমার শরীরকে ছুয়ে যায় তখন নিশব্দ কান্নায় আমি কুকড়ে উঠি।এর পরে এভাবেই অনেকটা সময় অতিবাহিত হয়ে গেলো।
০৫ জানুয়ারী ২০১৮,এইচ এস সি এক্সাম এর আর ৩ মাস বাকী।তাড়া তাড়ি করে সবাই একটা কোচিং এ এডমিট হলাম,আর পরীক্ষার জন্য ভালো ভাবে প্রিপারেশন নিতে থাকলাম।প্রতিদিন কোচিং শেষ হবার পর লুকিয়ে তোমার পিছু নেওয়াটা চলতেই থাকলো।এর মধ্য তুমি আমার সাথে কথা বলাটাও কমিয়ে দিলে।দেখতে দেখতে বিদায় অনুষ্ঠান চলে আসলো।আমার মনে নতুন করে বিষাদের আগমন ঘটল!ওই দিন মনে হলো “তুমি” নামক মানুষ টা কে আমি হারিয়ে বসতে চলেছি।ওই দিন তুমি আমার সাথে এক বারো কথা বললে নাহ্।অনেক টা চাপা অভিমান নিয়ে বাড়ি চলে এসেছিলাম।আজকে প্রথম পরীক্ষা,ভাগ্যক্রমে এক হলেই দু’জনের সিট পরেছিল।তোমার দুই সিট পরেই আমি বসেছিলাম।হয়তো,এই কয়দিন ঈশ্বর তোমাকে শেষ বারের মতো দেখার সুযোগ করে দিয়েছিল।এই কয়দিন একে ওপর কে সাহায্য করে পরীক্ষা গুলো দিতে লাগলাম।”পরীক্ষা গুলোর” কয়টা দিন তোমার সাথে আমার কাটানো সব চাইতে ভালো সময়!এই কয়টা দিন আমি সারা জীবনেও হয়তো ভুলতে পারবো নাহ্।
মাঝে মাঝে আমার খুব খারাপ লাগে!আমি ভাবি আসলে আমি মানুষটা এমন কেন? এই প্রশ্নটা আমাকে প্রায় মানুষ করে থাকে। আমার ভিতরে জমা থাকা শিশির বিন্দু গুলোর হয়তো কোন কষ্ট নেই।থাকলেও কষ্টের ছাপটা আমাকে ছুয়ে দিতে পারে না বলে খুব সহজে আমি মানুষের মনে প্রবেশ করে তাদেরকে ছুয়ে দিতে পারি, ভালোবাসতে পারি।যে মানুষ অপর মানুষকে গভীর চোখে এঁকে ভালোবাসতে পারে তার কষ্ট থাকার কথা না।কিন্তু আমি মানুষটা ছন্নছাড়া কেউ আমাকে আঁকতে চায় না। তখন আমার ভিতরে ভীষন অভিমান জমা হয়।অসীম ভালোবাসার অভিমান।এ সব কিছুর মাঝেই আমার জীবন। আমার জীবনে যা কিছু করতে মন চায় তাই করি। এই জীবনে চলার মাঝে নিজেকে বুঝতে পারলেও আমি বুঝতে পারি না আমার ভিতরে লুকিয়ে থাকা ছায়াটাকে। আসলে আমি মানুষটা কেমন? মাঝে মাঝে ফারিন কে নিয়ে ভাবি আমার উদ্ভট আচরন, কথা গুলো ও কিভাবে হজম করে?
সময় স্রোতের মতো বয়ে চলে।দেখতে দেখতে পরীক্ষা গুলো প্রায় শেষ।আর মাএ তিন টা পরীক্ষা বাকী।আজ পরীক্ষা শেষে যখন তুমি আমাকে দাড়াতে বললে,তখন আমি ভাবলাম হয়তো তুমি আমাকে কিছু বলবে।অদ্ভুত ভাবে তুমি আমাকে প্রশ্ন করলে, আমার কাছে শুভ্র ভাইয়ের আঁকা ছবিটা আছে কী না ?আমি হ্যা বলার সাথে সাথে তুমি আমার কাছে ছবিটা চেয়ে বসলে।
ওই দিন আমিও অনেক টা খুশি হয়েছিলাম।কারণ ছবিটি আমি তোমার জন্যই রেখে ছিলাম।কিন্তু ১১ মাস পরেও এই ছবিটার কথা তোমার মনে থাকবে আমি ভাবতেও পারি নি! পরের দিন তাড়া তাড়ি করে আমি আমার জীবনের প্রথম প্রেম পএটা লিখে ফেলে ছিলাম- প্রিয় ফারিন, তোমার অধরা মনের আকাশে অভিমানী চাঁদের প্লাবিত অশ্রুতে স্নান করে শুদ্ধ হই প্রতিনিয়ত; কোন একক উপমার সমষ্টির শিকলে বাঁধা হয়নি তোমাকে, তুমি বিস্তৃত উপমায় উদ্ভাস ছড়ানো মহিমা। প্রভাতের বুকে শিশিরের ভোর হাসে তোমার মুখেই, তোমার পবিত্র চলায় ভোর তৃপ্তি পায় স্নিগ্ধতার তৃষ্ণা মিটিয়ে। আমার অলক্ষ্যে ছেপে যাওয়া তোমার হরেক রুপায়ন খুঁজার তালাশী চোখ মেলে রাখি সময়ের স্রোতে, যেন না দেখেও এঁকে নেই তোমার রুপ,তোমার ভঙ্গিমার চিত্র! তুমি আবার আসবে পৃথিবীর এই ছোট মানচিত্রে, তুমি আসবে ভালোলাগা কয়েক যুগ দীর্ঘরাত নিয়ে! “ভালোবাসি” তোমাকে।
পরের দিন চিঠিতে আমার ফোন নাম্বার আর শুভ্র ভাইয়ের আঁকা ছবিটা একটা খামের ভেতরে ভরে তোমাকে দিতে পেরে আমি অনেক টা খুশি হয়ে ছিলাম।সত্যি বলতে তো সব প্রেমিকের কাছে এই সময় টা খুশি থাকার উওম সময়।এর পরের দিন সকালে তুমি আমাকে ফোন দিয়ে বললে যে তোমাকে প্রপোজ করার মানে কী ? আমি শুধু বললাম “ভালোবাসি”।তুমি শুধু বোঝাতে লাগলে যে তোমার পক্ষে আমার সাথে রিলেশন করা সম্ভব নাহ্।হয়তো তখন তোমার কাছে আমার প্রয়োজন ফুরিয়ে গিয়েছিল।এভাবেই দুই দিন তোমার সাথে আমার কথা চলতে লাগলো।সাথে সাথে আমি তোমাকে আমার ভালোবাসার কথা বোঝাতে লাগলাম!কিন্তু তুমি তোমার সিদ্ধান্তেই বহাল থাকলে।এই দিক দিয়ে কালকে শেষ পরীক্ষা,তাই আমি বাধ্য হয়ে শেষ পরীক্ষার দিন আমাকে ২০ মিনিট সময় দেওয়ার জন্য অনুরোধ করলাম।কিন্তু অদ্ভুত ভাবে তুমি আমাকে সরাসরি না করে দিলে।ওই দিন আমি মারাত্বক ভাবে বিস্মিত হয়েছিলাম।এত দিনে হয়তো এই গুলোই আমার প্রাপ্র ছিলো।
আজকে তাড়া তাড়ি করে পরীক্ষা টা শেষ করে তোমার আগেই হল থেকে বের হয়ে পড়লাম।প্রায় ১০ মিনিট পর তুমি বের হয়ে আমাকে দেখেও তোমার ফ্রেন্ড “তানিয়া” কে নিয়ে হাঠতে লাগলে।হয়তো তুমি বুঝে গিয়েছিলে যে আমি আজকে যে কোনো ভাবে তোমার সাথে কথা বলার চেষ্টা করবো।কিন্তু আমার যে কোনো ভাবে তোমার সাথে কথা বলতেই হতো।আমিও দ্রুত গতিতে হেটে তোমার সামনে দাঁড়ালাম।কিন্তু এই দিন তুমি আমাকে কোনো কথা বলার সুযোগ দিলে না।আমাকে “তানিয়ার” সামনে খুব বাজে ভাবে অপমান করলে।তুমি সামান্য ব্যাপারটাকে নিয়ে আমার সাথে এমন ব্যাবহার করবে আমি ভাবতেও পারি নাই।ব্যাপারটাকে হজম করতে আমার অনেক কষ্ট হয়েছিল।
মে ০৭,২০১৮-আজকে শেষ ব্যবহারিক পরীক্ষা।সবাই একে ওপরের সাথে শেষ বারের মতো কথা বলতে ব্যস্ত।কারণ আজকের পর হয়তো সবাই আর এভাবে একএিত হবে না কখনোই। এই দিন রাগে আমি তোমার সাথে কোনো কথা বলি নাই।সত্য বলতে ওই দিনের ব্যবহার টা আমাকে খুব কষ্ট দিয়েছিল।আজকে আমি তোমার চোখ দেখে বুঝেছিলাম যে তুমি আমার সাথে কথা বলতে চাও।তুমি অনেকটা দ্বিধার মধ্য ছিলে।শেষ পর্যন্ত তুমি তোমার জিদ নিয়েই থাকলে।আমিও কোনো কথা না বলে বাড়ি চলে আসলাম। আজ বিকেলে হঠাৎ তুমি আমাকে ফোন দিলে।আমি খুব চমকে গিয়েছিলাম,তুমি আমাকে ফোন দিবে এই ব্যাপারটা আমার কাছে কল্পনার বাইরে ছিল।যখন তুমি আমাকে প্রশ্ন করলে শেষ বারের মতো আজকে কেনো আমি তোমার সাথে কথা বলি নি ?
তখন আমি তোমাকে ওই দিনের কথা মনে করিয়ে দিলাম!আর তুমি শুধু আমাকে ফোন এ বোঝাতে লাগলে যে আমার সাথে “রিলেশন” করা তোমার পক্ষে সম্ভব নাহ্।ফ্রেন্ড হয়ে থাকতে চাইলে আমি তোমার মনে সারাজীবন থাকতে পারবো।আর রিলেশন করতে চাইলে তোমার মন থেকে ঘৃণা ছাড়া আর কিছুই পাবো নাহ্।শেষে আমি তোমার কথাই রাখলাম, তোমার বন্ধু হয়ে থাকার আশ্বাস আমি তোমাকে দিয়ে ছিলাম।শুধু মাঝে মাঝে আমার সাথে যোগাযোগ রাখতে বলেছিলাম।কিন্তু আমাকে অবাক করে দিয়ে এর পরের দিন থেকে এই সিমটা তুমি একবারে বন্ধ করে দিলে!এর পরে অনেক দিন এই নাম্বারে আমি ফোন দিয়ে ছিলাম,কিন্তু ফলাফল শূন্য।অন্য কোনো ভাবে আর তোমার সাথে যোগাযোগ করা সম্ভব হচ্ছিল নাহ্।তাই রাগে আস্তে আস্তে তোমাকে ভুলে যেতে শুরু করলাম।
তোমার হাতেই আমার হাসি-কান্নার নির্ভরতা- অনিচ্ছা বা সজাগ দৃষ্টিতেই হোক, এক-কালিনভাবে আমার মন বরাদ্দ থাকে তোমার চাওয়ার যোগফলে। কখনো আবার আবেগি শব্দব্যয়ে আমিই লিখে দেই তোমার শানে হাজারো কবিতা। কিংবা তোমার রুপ বর্ণনায় বিসর্জিত হয় ডজন খানেক কলম; তবুও বেলা শেষে অবহেলিত আমি।মাঝে মাঝে আমি আমার জীবন টা কে নিয়ে খুব ভাবি!আজ পরীক্ষার রেজাল্ট দেওয়ার পর আমি অনেকটা অবাক হলাম,তুমি জিপিএ ৫ পেলে আর আমি ৪.৯২ পেলাম।তখন হতাশা আমার চারদিক থেকে ঘিরে আসতে লাগলো।তারপর তুমি ইংলিশ নিয়ে জেলা শহরে পাবলিক এ ভর্তি হলে।আর আমি,আমার ফ্যামিলি প্রবলেম এর কারণে এলাকাতেই ন্যাশনাল এ ভর্তি হলাম।
দু’জন একদম আলাদা মেরুতে চলে গেলাম।যোগাযোগের সকল রাস্তা একেবারেই বন্ধ হয়ে গেলো ভালো লাগার কথা প্রিয় মানুষটাকে বলতে হয়। না হয় কোন এক সময় নদীর স্রোতে ভেসে চলে যায় আর তলিয়ে যায় গভীর তলদেশে।আমিও এইভাবে বলে দিয়েছিলাম আমার ভালোবাসার কথা..!কিন্তু আমি শুধু “অপমান” ছাড়া কিছুই পায় নি। এরপরে হঠাৎ করে আমার “ফারিন” এর সাথে দুই বার দেখা হয়েছিল।প্রথম বার চলন্ত রিকশায়,যেখানে আমার বলার মতো কিছুই ছিলো নাহ্।আর পরের বার স্টেডিয়াম মাঠে “বিজয় দিবসের” অনুষ্ঠানে তুমিই প্রথম বার আমাকে দেখেছিলে শুধু তাই নাহ্ আমাকে দেখে তুমি না দেখার অভিনয় করেছিলে।আমার মনে হলো এখন এই প্লাবিক প্লেইস এ কথা বলতে গেলে অপমান ছাড়া কিছুই পাবো নাহ্।দু’জন দুই ঘন্টা অবস্থান করার পরেও তুমি আমার সাথে কথা বললে নাহ্।মাস ছয়েক এ কী অদ্ভুত ভাবে আমাদের দূরত্ব বেড়ে গেলো।
আরো কয়েক মাস পরে আমাদের কলেজের বান্ধবী “আরফা” আমাকে ফোন দিয়ে বললো তুমি ফেইসবুক ইউজ করা শুরু করেছো।আমি তাড়াতাড়ি করে তোমাকে এড করলাম,কিন্তু তুমি রিকুয়েস্ট এক্সেপ্ট করলে নাহ্।আমি “আরফার” কাছ থেকে তোমার ফোন নাম্বার নিয়ে তোমাকে ফোন দিয়ে যখন আমার পরিচয় দিলাম,তখন তুমি আমার কল টা কেটে দিয়ে এক বারে ফোন বন্ধ করে দিলে।তারপর আমি বাধ্য হয়ে আরফা কে তোমার সাথে কথা বলতে বললাম।তুমি বললে,আমার সাথে কথা বলার তোমার কোনো ইচ্ছা নেই।আমি যেনো তোমাকে আর বিরক্ত না করি- তারপর আর কিছুই শোনার প্রয়োজন ছিলো নাহ্,তোমাকে মুক্তি দেওয়া টাই আমার প্রধান কাজ ছিলো।তাই বাধ্য হয়ে সারা জীবনের জন্য তোমার জীবন থেকে সরে দাড়ালাম আমি জানি না আমাদের মাঝে কী বাধা হয়েছিলো ?হয়তো বা ” হিন্দু আর মুসলিম ” নামে প্রচলিত দুটি ধর্ম আমার ভালোবাসাটা কে নিঃশেষ করার জন্য যথেষ্ট ছিলো। কারণ আমি তো সিঁথিতে সিঁদুর রাঙ্গাতে সীমাবদ্ধ ছিলাম আর তোমার সীমাবদ্ধতা ছিলো শুধুমাএ ” কবুল ” বলার মাঝে। নিজেকে বড্ড অপরাধী মনে হয় আমার- তোমার ভালো থাকার কামনা করি সারাক্ষণ, তবুও অপ্রত্যাশীত ঘটনা গুলোতে খুঁজে পাই তোমাকে।যদি দূরত্ব তোমায় নিরাপদ রাখে,কথা দিলাম, আগামী দিন গুলি হবে সুন্দর।
ফারিন নামের জীবনের অধ্যায়টা অতিক্রম করার পর কিছু দিনের মাথায় “অণু” নামের মেয়েটার সাথে আমার পরিচয় হয়।জীবনের প্রফুল্লতার সন্ধ্যান তখনো আমার হাতের মুঠোয় আসেনি। কাঠফাটা রোদের আলোটা যখন অণুর মুখমন্ডলে পরে আমি উদ্ভেগপূর্ণ হয়ে খুব তাকিয়ে থাকি। তার পায়ের নুপুরের ঝনঝন শব্দ আমার হৃদয়টাকেও নাড়া দেয়। এরপর আমার জীবনের সূচিপত্র ক্রমান্বয়ে বদলাতে থাকে। সূচিপত্রের প্রতিটা চ্যাপ্টারের নাম মনে হতো অণু।নির্দিষ্ট বয়সে প্রতিটা মানবের মনে কোন ভালো লাগার ছোয়া স্পর্শ পায় যার ব্যাতিক্রম আমারো হই নি।মেয়েটি আমাদের প্রতিবেশী ছিলো।
হঠাৎ করে ও আমার জীবনের কেন্দ্র বিন্দু হয়ে উঠলো!কারণ আমার বেচে থাকার জন্য একটা কেন্দ্রের খুব দরকার ছিলো।কেন্দ্র মনে করে আমি কখনো তার সাথে কথা বলতাম না। আমার মনও খুব চাইতো তার সাথে কথা বলতে। না বলা বাক্য গুলো আমাকে নিশ্তব্য রাতে শান্তিতে ঘুমাতে দিত না। একটা ছটফটের ছায়া তাড়া করে বেড়াতো কেন তার সাথে আমি কথা বলতে এতো দ্বিধাবোধ করি? কিসের এতো ভয়? কিন্তু এই দ্বিধাবোধ আর ভয়টা আমাকে বেশিদিন গ্রাস করতে পারে নি।অল্প কিছুদিনেই আমরা একে ওপর কে খুব ভালোবেসে ছিলাম,আমার সবসময় মনে হতো আমি তোমাতে বিলীন হয়ে গেছি।সেদিনের পর থেকে ওর অণুর সাথে আমার প্রতিদিন কথা হয়।এর মাঝে শহরে একটা ছোট খাটো চাকরীর পাই আমি।দু’জন এর মাঝে দূরত্ব বেড়ে গেলো অনেকটা!কিন্তু তখন আমাদের ভালোবাসা এক ফোঁটাও কমে নি।সব সময় মনে হতো বেচে থাকার মতো একটা উৎস আমি পেয়ে গেছি।
আরো কিছুদিন পরে আমার এক বন্ধু ফোন দিয়ে বললো, আমাদের গ্রামের অন্য একটা ছেলের সাথে তোমার রিলেশন আছে।এবং তোমাদের দু’জন কে নাকি ও একসাথে দেখেছে আমার পৃথীবিটা তখন থমকে গিয়েছিল।ও আমাকে উপযুক্ত প্রমাণ দেওয়াতে আমি পুরো বিষয় টা মেনে নিতে বাধ্য হয়েছিলাম।এরপর তোমাকে ফোন দিয়ে প্রশ্ন করলাম তুমি পুরো বিষয়টা স্বীকার করলে আর আমাকে বললে যে,এখন তোমার মনে হয় আমার চাইতে তুমি ওই ছেলেটাকে বেশি ভালবাসো। তখন তোমাকে ভালোবাসার আমারো কোনো ইচ্ছা ছিলো নাহ্! কারণ কোনো বিশ্বাস ঘাতক কে আবার বিশ্বাস করা কোনো ভাবেই ঠিক না।
আমি কেবল আমার জীবনটাকেই দেখে চলেছি এতোকাল- বিরতিহীন হাহাকারভরা সংলাপগুলো এখনো পায়ে জড়িয়ে আছে আমার; অভিযোগ স্থলে অনুরোধে কেটেছে অনেক গুলো দিন। অদম্য আশা জেগে থাকা আমার বুকে প্রতিদিন নির্মাণ হতো শখের মাত্রায় বেড়ে ওঠা নিষ্পাপ স্বপ্নের একটি কবরস্থান!সেদিন এর মতো আজো তামাটবক্ষে দাঁড়িয়ে আছি আমি- যে বক্ষে কখনো কেউ শীতল ছোঁয়ার আবেদনী স্পর্শ করেনি।আর আমিও জীবনের এ যাত্রায় হেসে যেতে পারি, যে জীবনের কোন বাঁকেই বলার মত আমার কিছু ছিলোনা!!!
এখন আর এইসব ভাবি নাহ্।আসলে,প্রকৃতি সবচেয়ে ফিট প্রজাতিকে বেছে নেয়, আনফিটকে বিলুপ্ত করে দেয়। স্ত্রী হায়েনা সবচেয়ে শক্তিশালী পুরুষ হায়েনা টিকে বেছে নেয় যে তার জন্য আর সব পুরুষের সাথে যুদ্ধে জিতে আসতে পারে।কোন মেয়ে আমার চেয়েও ভাল কাউকে যদি বেছে নেয় তো একটুও দুঃখ পাবার কিছু নেই! এটা তাই যা প্রকৃতির আর দশটা প্রজাতির মধ্যে ঘটে থাকে। ” This is Law of natural selection”.তাই এখন যখন দেখি কোন মেয়ে তার বহু পুরানো প্রেমের খ্যাতায় আগুন লাগিয়েছে বা নতুন কাউকে বেছে নিয়েছে, আমি একটুও অবাক হই না। সঙ্গী নির্বাচনে সমগ্র প্রাণী জগতে একটি দুর্বোধ্য স্বার্থপরতা আছে। এই স্বার্থপরতা আসলে স্ত্রী জাতীয় প্রাণীদের মধ্যে বেশি। কোন দয়ামায়া ছাড়াই এরা সবচেয়ে ভাল পুরুষ সংগী টি বেছে নেয়। সস্তা ভালবাসার যুগে মানুষ ভালবাসে একজনকে, আর প্রেমে পড়ে দশ জনের। এগুলোর নাম দিয়েছে ক্র্যাশ। ভালবাসা ছুটে গেলে এগুলোর দিকে হাত বাড়ায়। এই ক্র্যাশের যুগেও আপাত কঠিন কিছু মানুষ থাকে। এরা lock সিস্টেমে ভালবাসে। শুধু বাসতেই জানে, ভুলতে শিখে না।
সমাপ্ত