অবশেষে দেশ ত্যাগ করতেই হবে। নতুবা এই বেকারত্বের অবসান ঘটবে বলে মনে হচ্ছে না। অবশ্য আমার মতো অলস আর অপদার্থকে দিয়ে যে কিছু হবে না এটা বারংবার আমার পরিবারের কানে আশেপাশের আন্টিরা, চাচা মামারা, এবং প্রতিবেশীরা সবাই দিয়েছিলো। তাও আচানক কিছু একটা ঘটবে হয়তো এমন ভরসায় আমার পরিবার আশা নিয়ে বসে ছিলো এতোদিন। আপাতত আমি নিজেই নিজের উপর থেকে আস্থা হারিয়ে ফেলেছি, ফেডআপ। শেষে বলেই ফেললাম, “আম্মা বিদেশ চলে যাবো। তুমি কি বলো?” আম্মা ইনিয়ে বিনিয়ে বুঝালো এটা আগে বললে সংসারের অনেক আয় হতো। খামোখাই অন্ন ধ্বংস করেছো।
যাইহোক, এই ব্যাপারটা নিম্মি কোন ভাবেই নিতে পারেনি। সে সম্পর্কের শুরু থেকেই একটা ব্যাপারে সতর্ক করে দিতো আর এটা বলতো; “খবরদার বিদেশ যাওয়ার চেষ্টা করেছো তো আমার চেয়ে খারাপ আর কেউ হবেনা। ভালো করে পড়ে দেশে কিছু করবা।” এবার নিম্মিও আর এই বাক্যে অটল থাকতে পারলো না। নিজ থেকেই ছোট স্বরে মন ভেঙ্গে যাওয়ার মতো করে বললো; “আর তাহলে উপায় নাই কোন, তাই না রবিন? আমার কি হবে তাহলে, ভেবেছো?”
নিম্মি মেয়েটা বোকাদের চেয়েও আরো বেশি বোকা। তা’না হলে আমার মতো গাধাকে কেনো ভালোবাসবে বলেন তো? অমায়িক মায়াবিনী একটা মেয়ে, প্রকৃতির মতো সুন্দর। যার চুল মেঘের মতো। যার চোখের দিকে তাকালে ঘন সবুজ বনের ভেতর হারিয়ে যাওয়ার মতো সুখ অনুভূত হয়। যার চুলের ঘ্রাণে আকাশের মেঘে ভেসে যাওয়া যায়। এই মেয়ে কেনো আমাকে এতো ভালোবাসবে! এটার মানে আজো আমি বুঝিনি।
মাসখানেকের মধ্যেই চলে যাচ্ছি মালয়েশিয়া। নিম্মি আর আমার আট বছরের সম্পর্ক ছিলো। এই সম্পর্কে আসলে ভালোবাসা জিনিসটা কি কিংবা কাকে বলে এটা জানতে চাইলে আমি বলতে পারবো না। ভালবাসার মানে আমি বুঝিনা। নিম্মি সর্বদাই এই অগোছালো আমাকে ঘোচাতে ব্যাস্ত ছিলো। মেয়েটা ছায়ার মতো সাথে আছে এতোদিন। ওরে মর্যাদা দিতে না পারলে সয়ং বিধাতাও আমায় ছাড় দিবেন বলে মনে হচ্ছেনা। বিয়েটা করে যাওয়াই উচিত। আমি চাচ্ছি আমি মালয়েশিয়া যাবো অন্তত এই কোটাতে হলেও ওর পরিবার যেনো আমাকে মেনে নিয়ে নিম্মিকে আমার হাতে তুলে দেয়। আম্মাকে মিন মিন করে কিচেনে গিয়ে বললাম; “আম্মা আমি বিদেশ চলে গেলে তো তুমি একা। আম্মা বললো, “কেনো? ফৌজি তো আছেই।” আহা আম্মা বুঝো না কেন, ওর বিয়ে দিলে তুমি একা না? তোমার তো সবসময়ের জন্য কাউকে কাছাকাছি থাকার দরকার। আম্মা এবার খুন্তি দিয়ে দৌড়ানি দেয় নাই। আগে এমন ইংগিত দিয়ে দাঁড়িয়ে থাকা যেতো না। খুব স্বাভাবিক ভাবেই বলেছিলো, “নিম্মির পরিবার তকে মানবে তো?”
আম্মাকে নিম্মির সাথে কখনো পরিচয় করে দেইনি। একদিন নিম্মির সাথে রাগ করে ফোন বেডে রেখে ঘর থেকে বের হয়ে গিয়েছিলাম। সেদিন আম্মা ব্যাপারটা লক্ষ্য করে আমার ফোন থেকে নিম্মিকে ফোন দিয়ে আলাপ করেছিলো। পরেরদিন সকালে দেখি আমার ফোন কাছে নাই। কিচেনে গিয়ে দেখি আম্মা আমার ফোন কানে লাগিয়ে বলতেছে, “হ্যাঁ ছানা কি দুধে চুবিয়ে দিবো? পাতিল বসিয়েছি এখন কোনটা ঢালবো?” আমি অবাক হয়ে দাঁড়িয়ে ছিলাম। ঘন্টা খানেক পর ফোন হাতে এনে দেখি নিম্মির সাথে কথা বলতেছিলো। তারপর থেকে আম্মার সাথে ওর খুব খাতির। কিন্তু আজো সাহস করে বলিনি তার সাথে আমার কি সম্পর্ক। আম্মা সেটা ঠিকই বুঝেছিলেন।
অনেক কাহিনীর পর বিয়েটাও করে ফেললাম। সবকিছুর জন্য নিজেকে ভাগ্যবান বলেই মনে হচ্ছে। পৃথিবীটা খুব সুন্দর মনে হচ্ছিলো। ছোঁ মেরে কিছু নিয়ে যাওয়ার মতো করেই যেনো আমার বিদেশ যাওয়ার সময়টা চলে আসলো। সুখের সময় দীর্ঘায়িত হয়নি। দুটো মানুষ যে কি পরিমান কেঁদেছিলো সেদিন তা বলে বুঝাতে পারবো না। একটা ক্ষেত্রেই নিঃস্বার্থ ভালোবাসা পৃথিবীতে আছে বলে মনে হতো। সেটা আমার আম্মা আর নিম্মিকে দেখে।
বিদেশ চলে আসি। শুরু হলো আসল জীবন। এখানে এসে বুঝতে পেরেছিলাম এই যগৎ, সংসার আর পৃথিবী এতো সহজ নয়। এতো কষ্ট কোনদিন করবো তা কল্পনাতেও আসেনি কখনো। মাঝে মাঝে ছোটে দৌড়ে সাত সমুদ্র তেরো নদী সাতরে চলে আসতে মন চাইতো। থাকতাম, খুব ভালো বুঝ জন্মেছিলো এই মনে। দুটো শক্ত রুটি উপুড়জুপুড় মুখে পুরে ভোরে বের হয়ে ডিউটিতে যেতাম আর রাজ্যের ক্লান্তি মাথায় বয়ে সেই রাতে ফিরতাম। আবার এসে রান্না করে খাওয়া। উফফ! কতো রাত! কতো রাত না খেয়ে অজ্ঞানের মতো ঘুমিয়েছি তার ইয়ত্তা ছিলো না। স্বপ্নে দুটো মানুষের মুখ ভেসে উঠতো বারবার। রাতে ঘুম ভেঙ্গে উঠে কাঁদতাম বসে। একদিন নিম্মি কল দিয়ে চিৎকার করে কেঁদে কেঁদে ফোনে বলেছিলো তার মা মারা গিয়েছেন। আমার দ্বিতীয় মা ছিলেন আমার শাশুড়ি। একজন শাশুড়িও যে মা হন তা এই ভদ্রমহিলাকে না দেখলে বিশ্বাস করতাম না। যার জন্য এই নিম্মিকে আমি সহজেই পেয়েছিলাম। মা’রা মা’ই। তাদের তুলনা পৃথিবীতে নেই। খুব কষ্ট পেয়েছিলাম। নিজের আপনজনদের হারানোর আতংক আরো বেড়ে গিয়েছিলো।
আজকে ঈদ। আর চার পাঁচটা দিনের মতোই কাটিয়ে দিলাম। কিছু টুকটাক কাজ করে বাসায় সারাদিন শুয়েছিলাম। ছোটবেলা থেকে বড় হওয়া অবধি প্রতিটি ঈদের দিনের স্মৃতি ঘেটে দেখলাম আজকের দিনটার মতো অসহায় আমি কোনদিন ছিলাম না। কষ্ট হতো জানেন! খুব বেশি।
দেশ থেকে খবর পেয়েছি আমি বাবা হতে যাচ্ছি। প্রতিটা মুহূর্ত নিম্মির মুখটা ভেসে উঠছিলো। পাগলিটাকে খুব বেশি দেখতে ইচ্ছে করতো। এখন তার পাশে থাকাটা উচিত ছিলো। পারতাম না। এই ব্যাবস্থা আমার ছিলো না। সারাক্ষণ ভাবতাম। রাতে একটু একটু কথা হতো। নিম্মি বলতো, “আচ্ছা বলোতো ছেলে হবে নাকি মেয়ে হবে আমাদের?” আমি বলতাম আমি একটা পরীর বাবা হতে চাই। বাকিটা উনার ইচ্ছে। নিম্মি হাসতো। মাঝে মাঝে ওমা! বলে চিৎকার দিয়ে উঠতো। সাথে আমার কলিজাটাও মোচড় দিয়ে উঠতো। আতংকিত হয়ে বলতাম, “কি হয়েছে নিম্মি?” নিম্মি বলতো, “পেটে লাথি না দিয়ে থাকতে পারে না। বাপটাও ফাজিল, তেমনি হচ্ছে তার বেবি।” আমি বলতাম, “আমি কি করলাম আবার?”
খুব খুনসুটিতে থাকতে থাকতে একদিন সুখবর আসে এক রাতে। আমি ডিউটি থেকে ক্লান্ত হয়ে ফিরে শুয়ে পড়েছিলাম। হঠাৎ কল আসলো আর শুনতে পেলাম ছোট একটা বাচ্চার কান্না। আমি সত্যি সত্যিই একটা পরীর বাবা হয়ে গিয়েছি। এটা শুনে চিৎকার দিয়ে এতো জোরে লাফ দিয়েছিলাম। আমার রুমমেট মাসুম ভাই থতমত খেয়ে আমাকে কলার চেপে ধরেছিলো। বলেছিলো, “ওই পাগল তর সমস্যা কি? সারাদিন পরিশ্রম করে এসে ঘুমোতে পারবো না নাকি?” সেদিন আমি বলেছিলাম, “ভাই আমাকে কয়েকটা ঘুষি মারেন। আমি তাও কিছু বলবো না।” আমি আজ পৃথিবীর সবচেয়ে বেশি খুশি। আজ আমি একটা পরীর বাবা হয়েছি। সেদিন মাসুম ভাই আমাকে জড়িয়ে ধরে কেঁদেছিলো আর দোয়া করেছিলো। বলেছিলো, “আমার বউটাও পোয়াতিরে।” সে রাতে মাসুম ভাইকে নিয়েই বের হয়েছিলাম। একটা লেকের পাশে বসে বসে সারারাত ভবিষ্যৎ নিয়ে প্ল্যানিং করেই কাটিয়ে দিলাম।
আমি এক অন্য পৃথিবীতে সদ্য জন্ম নেয়া মানবের মতোই উপলব্ধি করছিলাম সবকিছু। এভাবেই কতশত দিন কেটে যাচ্ছিলো। একদিন সকালে নিম্মি ফোন দিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদতেছিলো আর তোতলাচ্ছিলো। বারবার এটা বলে আটকে যাচ্ছিলো, “জানো রবিন কি হয়েছে? জানো রবিন…” আমি বললাম, “বলোতো শুনি। কোন ক্ষতি হয়নি তো? আমার স্পর্শ কোথায়? আম্মা কেমন আছে?” নিম্মি ধমক দিয়ে বলেছিলো, “আরে শুনোনা আগে! আমার মেয়েটা আজকে আমাকে মা’ বলে ডেকেছে।” এটা বলে আর কোনভাবেই কান্না থামাতে পারছিলো না পাগলিটা। বারবার বলেছিলো, “আমার লাইফে সবচেয়ে দামী গিফট তুমি আমাকে দিয়েছো রবিন।” সেদিন অজান্তে চোখ বেয়ে কয়েক ফোঁটা অশ্রু আমারও ঝরেছিলো। আমিও অভিমান করে বলেছিলাম, “বাপ ডাকাটা তো আর শেখাও নাই।” নিম্মি খিলখিল করে হাসছিলো তখন। আমি সুখে ছিলাম জানেন? খুব সুখ আমার কলিজায় ভেদ করতো এসে প্রতি রাতে।
তারও অনেকদিন পর আবার নিম্মি কল করে বলতেছে, “তোমার মেয়েকে আমি বাপ ডাকা শেখাতে পারবো না।” আমি বলেছিলাম, “কেনো নিম্মি, কি করেছে আমার মেয়ে?” বললো, “দেখোনা আমি শেখাচ্ছি বাপি বলে ডাকতে আর ও আব..আব…আব্বা উচ্চারণ করতেছে। শোনো কি বলে।” বলেই ফোনটা কাছে রেখে বলতেছিলো, “মা বলোতো বাপি।” “আব..আব…আব্বা।” আমি উড়তেছিলাম যেনো আকাশে। এতো সুখ আমি কোথায় রাখবো! বাপি ডাকলে হয়তো এতো কলিজায় ভেততো না যতটা আব্বা ডাকটা শুনে ফিল করছি।
একদিন রাতে নিম্মি ফোন করে পাগলের মতো হাউমাউ করে কাঁদতেছিলো আর বলতেছিলো, “রবিন আমার মেয়েটা খাট থেকে পরে গিয়ে অনেক ইনজুর, নাক দিয়ে রক্ত বের হচ্ছে অনরবত। আমি কাউকে পাচ্ছিনা খুঁজে এই ঝড় রাত্রিতে ওরে নিয়ে ডাক্তারের কাছে যেতে। আমি কি করবো? রবিন আমি কিন্তু মরে যাবো আমার মেয়ের কিছু হলে। আমি তোমাকে না জানিয়ে পারছিলাম না আর। কেউ নাই এখানে, তোমার আব্বুও বাড়িতে নেই” আমি সেদিন নিম্মিকে উল্টো ধমক দিয়ে বলেছিলাম, “আমার মেয়ের কিছু হলে তর খবর আছে বললাম, সব ধংস করে ফেববো।” হিতাহিত জ্ঞানটুকুও হারিয়ে ফেলেছিলাম।
দেশের মানুষ বুঝে না কতটা আতংক বুকে বয়ে প্রবাসীরা বেঁচে থাকে, তার পরেও এসব শুনলে কেমন লাগে? তারপর আর যোগাযোগ করতে পারিনি দুইদিন। টানা দু’দিন আমি কাজেও যাইনি। পরে শুনলাম ঝড় বৃষ্টিতে এলাকার বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন ছিলো। গ্রাম এলাকা। আমার মেয়েটা সুস্থ আছে। সেদিন নিম্মি ঝড় বৃষ্টির মধ্যে একাই বের হয়ে গিয়েছিলো ডাক্তারের কাছে। নিম্মির অবদান কতটা একটু ভেবে দেখুন। আমার পাগলিটাকে এভাবে বকা দেয়া মোটেও উচিত হয়নি। তারপর অভিমান করে পাগলিটা আর আগের মতো কথা বলতো না। অনেক অভিমান ছিলো। অভিমান ভাঙ্গাতে একরাতে ওর প্রিয় শ্যামল মিত্রের একটা গান গেয়ে শুনিয়েছিলাম; “আমি চেয়ে চেয়ে দেখি সারাদিন, আজি ওই চোখে সাগরে’রো নীল।
“আমি তাই কী গান গাই কী, বুঝি মনে মনে হয়ে গেলো মিল।” আমি চেয়ে চেয়ে দেখি সারাদিন…” আজ তিন বছর পর লম্বা একটা ছুটি পেয়েছি। অনেক অনুভূতি মরে গিয়েছিলো। আজ যেনো আবার একে একে জাগ্রত হচ্ছে। কাল দেশে যাবো। অনেক কিছু কেনাকাটা করলাম সবার জন্য। সারারাত মাসুম ভাই আমাকে হেল্প করেছে। যেনো আমার আপন ভাই ছিলেন উনি। এই দেশগুলোতে এভাবেই মানুষ বেঁচে থাকে। তা’না হলে এমনি হতাশায় মারা যেতো।
দুপুরে ফ্লাইট। বিমানে উঠে বসলাম। রিসিভ করার জন্য আব্বু, নিম্মি আর আমার ছোট্ট পরীটা এয়ারপোর্টে আছে। আমি ভাবতেই পারছি না কার সাথে কিরকম আচরণ করবো। মনে হচ্ছে ঢাকা শহরের কোন এক লোকাল বাসে উঠেছি। বিমান যেনো উড়ছেই না। অবশেষে লম্বা একটা জার্নি করে ফ্লাইট বাংলাদেশের মাটি ছুঁলো। সুন্দর একটা ভয়েস কানে বাজলো “ওয়েলকাম টু বাংলাদেশ।”
ইমিগ্রেশন কমপ্লিট করে বের হয়ে এসে দেখি আব্বু আর নিম্মি দাঁড়ানো। আমার ছোট্ট পরীটা লাল টুকটুকে একটা জামা পরে এসেছে। আমি ফ্লোরেই হাটু ভেঙে বসে পরলাম। আমার পরীটা ছোট ছোট পা দিয়ে আমার দিকে আসতেছে। এই পৃথিবীতে আর কি সুখ লাগে বলেন? সমস্ত কষ্ট ধুয়ে মুছে গেলো। মেয়েটাকে কোলে নিয়ে কপালে একটা চুমু খেলাম। আমার খোঁচা খোঁচা দাড়িতে হাত বুলাচ্ছিলো আমার পরীটা। ওর মা’ও এমনটা করতো যখন আমরা প্রেম করতাম। গাড়িতে উঠে বসলাম। আব্বু সামনের সিটে। আমি নিম্মি আর আমাদের পরীটা মধ্যভাগে বসেছি। নিম্মি পাগলিটা এখনো অভিমান করেই বসে আছে। ওর হাতের আঙুলগুলো আলতো করে ছুঁয়ে ওর চোখে তাকিয়ে ফিসফিস করে বললাম, “সরি লক্ষ্মীটা।” নিম্মি আমার বাহু জড়িয়ে ধরে আছে।
সিলেটের রাস্তায় গাড়িটা ছুটছে। জানালার গ্লাস খুলে মুখটা এগিয়ে হা করে বাতাস খাইলাম অনেক। চোখ বুজে প্রাণ ভরে নিঃশ্বাস নিলাম। আহ্ আমার দেশ! এ এক বেহেস্তি অনুভূতি। রাত নির্জন। পকেট থেকে চুপিচুপি পাসপোর্ট, রিটার্ন টিকেট এটা সেটা কোনরকম আস্তে করে বের করলাম। কাগজগুলোতে একটা চুমু দিয়ে জানালা দিয়ে ছুড়ে ফেলে দিলাম। আমি আর ব্যাক করবো না মালয়েশিয়া। আমার এই বেহেস্ত ছেড়ে কোত্থাও যাচ্ছি না আর। এ দেশেই ভালো কিছু এখন করতে পারবো। পরিবারের পাশে থাকাটা খুব বেশি জরুরী। নিম্মি আমার বাহু জড়িয়ে ঘুমিয়ে পড়েছে। আমার পরীটাও আমার গলায় ছোট্ট দুটো নরম হাত দিয়ে জড়িয়ে ঘুমিয়ে আছে। তিনটি আত্মা এক সুতোয় বাঁধা এখন।