আজ ৫ দিন হতে চললো, অনু আমার সাথে কথা বলে নি। যে মেয়ে ৫ টা মিনিট আমার সাথে কথা না বলে থাকতে পারতো না। সে ৫ দিন থাকছে কেমনে ভাবছি। জর টা খুব বেড়েছে কাপুনি উঠেছে। কিন্তু কিছুই করার নেই। নাপা এক্সট্রা খেয়েছি ২ ঘন্টা হতে চললো কিন্তু কোন উন্নতি দেখছি না, শুধু অবনতিই হচ্ছে। হাবিব টাও নেই, ক্লাসে গিছে হইতোবা। সারারাত জরের মধ্যে ছিলাম, হাবিব ছেলেটা আমায় বড় ভাই হিসেবে দেখে, ভালোও বাসে হইতো অনেক। কে পারে নিজের স্বাধের ঘুম নষ্ট করতে?? হ্যা হাবিব পেরেছে, সারারাত একটুও ঘুমাই নি মাথার কাছে বসে জলপট্টি দিছে। ওর জলপট্টি দেউয়া টা দেখে মায়ের কথা খুব মনে পড়ছিলো চোখ বেয়ে কয়েক ফোটা জল গড়িয়ে পড়লো। মুখ টা বার বার পানি দিয়ে ধুয়ে দিচ্ছিলো হাবীব।
তাই কান্না টা কারর চোখে পরার কথা না, কিন্তু নাহ আমায় অবাক করে দিয়ে হাবীব বলে উঠলো,
-ভাইয়া, কান্না করছেন??
-অবাক হয়ে চেয়ে আছি
-কষ্ট হচ্ছে ভাইয়া( দেখলাম ওর চোখেও পানি)
-নারে ভাই, ( আমিও ওকে আমার ছোট ভাই এর জায়গা টাই দিয়েছি যদিও আমার আপন ছোট ভাইটা আমায় সহ্য করতে পারে না)
-তাইলে কান্না করছেন কেনো ভাইয়া??
-পাগল ভাই আমার, হাসার অনেক চেষ্টা করলাম কিন্তু ২দিনের জরে সেই শক্তি টুকু হারিয়ে ফেলেছি।
সকালে উঠে হাবিব কে দেখতে পেলাম না। আজ ত সোমবার ওর ত টিউশনি আছে, পড়তে গিছে হইতোবা। পড়ার কথা বলতেই আমার টিউশনি টার কথা মনে পড়ে গেলো। জরের মধ্যে ত মনেই নেই, ফোন টা কোথাই রাখলাম, শরীরে এক বিন্দু পরিমান ও শক্তি নেই, অনেক কষ্টে আশে পাশে খুজে পেলাম। ফোন টা অন করতেই ওয়াল পেপারে অনুর ছবি টা ভেসে উঠলো, হাসি মাখা মুখ খানা দেখেই আমার মন টা ভরে যেত কিন্তু আজ, আর কিছু না ভেবে তিথির আম্মুর নাম্বারে ফোন দিলাম।
-হ্যালো আন্টি
-হ্যা, বলো( কন্ঠ টা রুক্ষ লাগছে)
-আন্টি আমি আজ যেতে পারবো না যদি কিছু মনে না নেন। কাল কিছু সময় এক্সট্রা পড়ায়ে দিবো
-ওর ত পরীক্ষা আর তোমার মাসের মধ্যে ৩৫ দিন ই কি অসুখ হই নাকি, এমন টা করলে আমি অন্য টুটোর কে খুজে নিবো। বলেই কেটে দিলো।
-কিছু মনে করলাম না, উনি আমার সাথে এমন আচরন শুরু থেকেই করে আসছেন তাই কষ্ট হই না। কাল থেকে কিছু খাই নি, পেটের ভেতরে মোচর দিচ্ছে। অনেক কষ্টে উঠলাম, দাড়াতে গিয়ে পড়ে যাচ্ছিলাম ঠিক তখনি কেউ আমায় ধরলো, পারফিউম টার গন্ধে বুঝতে পারলাম কে এসেছে
-তুমি
-হ্যা, কেনো আসা কি বারন নাকি??
-নাহ বারন হবে কেনো,
-তাইলে ওইটা বললা কেন??
-৫ দিন পরে বুঝি মনে পড়ছে প্রান্ত নামের কেউ আছে??
-নিচু হয়ে আছে
-হাসার চেষ্টা করলাম, কি বলতে এসেছো বলো। ওর মুখ দেখে বুঝতে পারছি কিছু বলবে, ৫ বছর ধরে ওকে চিনি, তাই চোখের ভাষা টা বুঝতে পারি।
-প্রান্ত,
-শুনছি
-বাসা থেকে বিয়ে ঠিক করে ফেলেছে, সামনে ৮ তারিখে।
-কথাটা শুনতে বুকের ভেতরের হ্রদস্পন্দন টা বুঝি কয়েক মুহুর্তের জন্য থেমে গেলো। কিছু বলতে পারছিলাম না,
-বাবা অনেক জোরাজুরি করছে আর
-আর??
-আর আমি বাবার কথা ফেলতে পারবো না, এই নাও বলেই হাতে বিয়ের খাম টা দিয়ে, পারলে এসো বলে উত্তর না নিয়ে চলে গেলো।
-হতবম্ভের মতো চেয়ে রইলাম ওর যাওয়ার দিকে। হাতে ধরে রাখা খামের উপর কয়েক ফোটা জল পড়লো। আর ভাবতে লাগলাম কিছু দিন আগের কথা
-প্রান্ত,
-হুম পাগলি বলো
-এইবার কিছু ত একটা করো
-মুখ টা নিচু করে বললাম, হুম চেষ্টা করছি
-আর কত দিন?? ২ বছর ধরে চেষ্টা করছো।আমি ত আর পারছি না। আর কতগুলা বিয়ে ভাংবো বলো?? প্রতিবার বাবার হাতে থাপ্পর খাইতে হই, কষ্ট টা বোঝো??
-আমি কিছু বললাম না
-কান্না কন্ঠে আমার হাত টা ধরলো তারপর বললো,
-প্রান্ত, এই হাত আমি ছাড়তে চাই না জান টা। সব মার সহ্য করে যাবো কিন্তু প্লিজ কিছু একটা করো
-আমি ২ হাত দিয়ে চোখের পানি মুছিয়ে দিয়ে বললাম আর একটু ধৈর্য্য ধরো সব ঠিক হয়ে যাবে
-হুম বলে বুকের সাথে লেপ্টে গেলো
-বিয়ের খামটাতে ২ জনের ছবি এক আমার পরী টার আর ২ যে আমার পরীটাকে নিজের করে নিবে।
– কিছু করার নেই আমার, নাহ, কিছুই না। ২বছর যাবত চাকরি খুজছি, কিন্তু সেই সোনার হরিণ টা পাওয়া আমার মতো পিপড়ার পক্ষে সম্ভব না। গ্রামে, বাবার ঔষুদের টাকা, ছোট বোনের পড়াশোনার আর ছোট ভাইয়ের ইচ্ছা পুরন করার জন্য রাত নেই দিন নেই খেটে চলেছি। সারাদিন, একটা ফ্যাক্টরি তে কাজ করে রাত্রে যায় টিউশনি করাতে, এই ভাবেই আমার জীবন চলছে, তারপর ও বাবার অভিযোগ, বোনের অভিযোগ, ভাইয়ের অভিযোগ শুনতে শুনতে আমি শেষ। নিজে ২বছর যাবত একি শার্ট পড়ে রাস্তায় চলাফেরা করি বাসায় বোন, ভাইদের মুখে হাসি ফোটানোর জন্য, কিন্তু নাহ, এত কিছু করেও আমি অপরাধী। কিছু করি না, শুনতে হই ফোন দিলে।তাই অনেক দিন হলো বাসায় ফোন দেই না। শুধু বিকাশের মাধ্যমে টাকা পাঠায়ে দেই। আবার চোখ পড়লো খাম টার উপর, তুমিও ওদের মতো স্বার্থপর হয়ে গেলে??অনু
-নাহ আর পারছি না, বলেই জোর করে উঠার চেষ্টা করতেই পড়ে গেলাম, মাথা টার এক পাশ গিয়ে লাগলো ভাংগা টেবিল টার উপর তারপর আর কিছু মনে নেই।
-যখন চোখ খুললাম ১মে দেখতে পেলাম হাবিব কে, চোখ মুখ ফুলে গিছে, আমি চোখ খুলতে ও বুঝি বেশি খুশি হয়েছে ডাক্তার ডাক্তার, ভাইয়া চোখ খুলেছে বলেই দৌড়ায়ে গেলো। নিজেকে হাসপাতালের বেডে আবিষ্কার করলাম, কিন্তু আমাকে এখানে নিয়ে এলো কে??
হাবিব, হাবিব নিয়ে এসেছে?? কিন্তু ও ত নিজেই চলতে পারে না,আমাকে এখানে বলতেই ডাক্তার কে নিয়ে হাজির হলো হাবিব
ডাক্তার কিছু চেক করে বললো
-এখন উনি ঠিক আছে নিয়ে যাইতে পারেন,
-হাবিব খুশিতে আত্মহারা হয়ে গিছে চোখ মুখ উজ্জল হয়ে উঠলো,
৩দিন পরে হাসপাতাল থেকে মেসে এসেছি, এসেই দেখি সব গোছানো। হাবিবের দিকে তাকালাম
-জি ভাইয়া আমি গুয়াছে রেখেছি
-কিছু বললাম না
-হাবিব
-জি ভাইয়া
-এত টাকা কোথাই পেলি??
-কাঁচুমাচু করে বললো, আমার কাছে ছিলো
-বড় ভাইয়ের কাছে মিথ্যা বলছিস??
-না মানে
-কোথাই পেলি??
-মায়ের ২ টা বালা ছিলো অখান থেকে এক টা…
-বলার আগেই একটা চড় মেরে দিলাম ওর মুখে
-চোখ বেয়ে পানি গড়িয়ে পড়ছে
-ওইটা তোর মায়ের সম্পত্তি, তোর জন্য রেখেছে ভবিষ্যতে যাতে কিছু করতে পারিস।
-মাকে ফোন দিয়েছিলাম
-অবাক হয়ে তাকায়ে রইলাম
-মা বললো আগে তোমায় হাসপাতালে নিতে, আর টাকা না থাকলে ওইটা বিক্রি করে দিতে
-কিছু বলার ভাষা খুজে পাচ্ছি না।
-তোমার বাসায় ফোন দিয়েছিলাম,
-কি বললো তারা
-কিছু না ভাইয়া
-আমি জানি কিছু বলছে তাই বলে ফেল
-তোমার বাবা বললো আমাদের হাতে টাকা পয়সা কিছুই নেই, সব শেষ হয়ে গিছে, তাই আসতে পারবে না, আর টাকাও দিতে পারবে না
-কথা টা শুনে কষ্ট পায় নি। বরং হেসে উঠলাম হো হো হো
-হাবীব আমার দিকে চেয়ে রইলো হউতো ভাবছে একটা মানুষ এতটা কষ্টের মাঝেও হাসতে পারে কেমনে??
-ভাইয়া
-হুম বল
-অনু, আপু তোমায় ভালোবাসে
-আবার সেই হাসিটা দিলাম
-খামের মধ্যে একটা চিঠি ছিলো তুমি পড়ো নি,কিন্তু আমি…..
-কোন ব্যাপার না,
আমার ভাল্লাগছে নারে হাবিব, একা ছেড়ে দে আমায়
-ভাইয়া তোমার কি শরীর খারাপ লাগছে?? উতলা হয়ে উঠলো
-ওর এমন ভাবে উতলা হতে দেখে আর কান্না আটকে রাখতে পারলাম না।জরিয়ে ধরে কেঁদে দিলাম।
হাবিব রে, আমার আপন ভাই, বোন, বাবা সবাই আমায় ছাড়া দিব্বি ভালো আছে, আমায় ছাড়া সুখে আছে। তুই কেন আমার আপন ভাই হলি না??
-হাবিব ও কান্না করছে, ভাইয়া, ভালোবাসা টা পেতে বা দিতে কখনো আপন আর পর হিসেব করতে হই না। হ্রদয়ের গভীর থেকে আসে। তোমায় আমি আমার বড় ভাইয়ার সন্মান নেই আর সারাজিবন দিবো।
-এই চিঠি টা অনু আপু দিয়েছিলো, খামের ভেতরে, বলে আমার হাতে দিয়েই চলে গেলো।
চিঠি টা নিয়ে, অনেক্ষন বসে ছিলাম, তারপর খুললাম
প্রান্ত আমি জানি তুমি আমায় ছাড়া থাকতে পারবা না, আমি পারবো কিনা জানি না। কিন্তু ছেড়ে থাকার অভ্যাস টা করে নিয়ো। যদি সম্ভব না হই ত তিথি ত আছেই। ও তোমাকে আগলে রাখবে, আমার ভালোবাসা না পেলে তোমার কোন আফসুস হবে না। শুধু মনে রেখো আমার মতো করে তিথি তোমায় ভালবাসতে পারবে না
অনু
-চুপ হয়ে বসে রইলাম, তিথি। কিছু বুঝতে পারছিলাম না, তখনি হাবিব রুমে এলো, সাথে তিথি কে নিয়ে
-ভাইয়া, অনু আপু তোমায় ভুল বুঝেছে তিথির জন্য,
-আমি চুপ করে আছি
-সরি ভাইয়া আসলে আমার সব দোষ আমার বলেই পুরো ঘটনা বলতে লাগলো।
(তিথির সাথে অনুর পরিচয় করায়ে দিয়েছিলাম, তারপর থেকে অনু আর তিথি কথা বলতো, ফোন।, বা ফেসবুকে। একদিন তিথি ওর প্রোফাইলে আমার আর ওর একটা পিক আপ্লোড দিয়ে দেই। যেখানে আমি ওকে বোনের মতো জড়িয়ে ধরে ২গাল টিপে দিচ্ছিলাম। ওইখানে তিথি আরো কিছু লেখে লেখাটা ছিলো,
নায়িকা উইথ……..বি
এইটা দেখেই নাকি অনু তিথিকে ফোন করে অনেক কথা শুনায়ে দেই। তিথি অনেক বার বলছে, আপু আমার সাথে ভাইয়ার কোন রিলেশন নেই,উনি ত আমার বড় ভাইয়ার মতো। কিন্তু নাহ, অনু তিথির একটা কথাও শুনে নি। ও যেইটা দেখেছে ওইটাই ভুল বুঝে রেখেছে)
-তিথি কান্না করছে, ভাইয়া আমি বুঝি নাই এমন টা হবে বুঝলে এমন টা কখনো করতাম না
-আরে বোকা মেয়ে কান্না করছো কেনো।
-হাবিব বলে উঠলো ভাইয়া আপুকে নিতে যাবা না??
-আমি ওর দিকে তাকিয়ে হালকা একটা হাসি দিয়ে বললাম,
যে চলে যেতে চাই তাকে যেতে দিতে হই
-আমার কথাতে ওরা ২ জন বিশ্ময় দৃষ্টিতে তাকায়ে রইলো। হইতোবা বুঝতে পারে নি, বা বুঝতে পেরেও ছে।
বাহিরে এসে টুল টা নিয়ে বসে পড়লাম, আর ভাবলাম, অনু কি সত্যি আমায় ভালোবাসিতো?? যদি সত্যি বাসতো তাহলে একবার হলেও আমায় এই ব্যাপারে প্রশ্ন করতে পারতো, হা হা হা মুক্তি পেতে চাইছিলো, আমার মতো অপয়ার থেকে তাই এই নাটক, হা হা হা।
-দুর পানে তাকিয়ে, বললাম, প্রেয়সি, তুমি বড় অভিনেত্রী।