বোবা কাহিনী

বোবা কাহিনী

(পর্ব – ১)….

মেয়েটা বিছানার একপাশে শুয়ে পেট ব্যাথায় কাতরাচ্ছে, পাশেই তার বর শুয়ে আছে সেদিকে তার ভ্রুক্ষেপ নাই।

মেয়েটা ব্যাথায় ছটপট করছিল, এপাশ ওপাশ করতে করতে একসময় ঘুমিয়ে পড়ল।দিপ্তর যে খারাপ লাগছিলনা তা না তারো খারাপ লাগতেছিল, কিন্তু কি করবে সে?

এইমেয়েটার হাসিকান্না কিছুই যে তার ভাললাগেনা, ওর প্রতি কিছুতেই তার ভাললাগা ভাবটা আসেনা,

মেয়েটা যখন কাঁদে তার খারাপ লাগার পরিবর্তে বিরক্তি ভাব চলে আসে, কিন্তু মনে মনে সে চায় যে মেয়েটা যেন ভালথাকে,

কিন্তু তবুও মেয়েটার প্রতিতার ভালবাসা জিনিসটা তো দূরে থাক ভাললাগাটাও আসেনা, তারকাছে মনেহয় সবথেকে ন্যাকামেয়েটা হচ্ছে তার বউ,

অথচ এইমেয়ের জায়গায় আনিতা থাকলে তার ভাললাগতো, ন্যাকামিগুলোকেওভাললাগত।

খুব করে চেয়েছিল একদিন আনিতা তারঘরে বউ হয়ে আসবে,

ভালবেসে বিয়ে করবে আনিতাকে, কিন্তু ভালবাসার কথা তো থাক তারসাথে কখনো কথাও বলতে পারেনি দিপ্ত।

শেষে আনিতার বিয়েহয়েগেল তার চোখের সামনেদিয়েই, অথচ কিছুইকরার ছিলনা তার,অনেদিন ভেবেছিল যে সে আর বিয়ে করবেনা,

কখনো কোন মেয়েকে সে আনিকার মত ভালবাসতে পারবেনা,

কিন্তু তারবাবা যখন বলল যে তাকে এবার বিয় করতেই হবে তখন বাবার কথার অবাধ্য হতে পারেনি সে,

কিন্তু যতই বাধ্যহয়ে সে নেহাকে বিয়ে করুক না কেন নেহার প্রতিকোন ফিলিংস তার কাজ করেনা।

নেহা মেয়েটা সুন্দরি, তবুও তার ভাললাগেনা, ভাললাগেনা তার হাসি কান্না কিছুই।

শুধু মেয়েটাকেঅবহেলা করতে তার ভাললাগে, অথচ মেয়েটার কোনদোষছিলনা।

দোষ তো তার নিজেরি, কারণ সেই তো সাহস করে কখনো আনিতাকে বলতে পারেনি যে সে আনিতাকে ভালবাসে,

এমন কি বাবা যখন নেহার সাথে বিয়ে দিল তখনো সে মানা করতে পারেনি, মাঝখান থেকে নেহাকে সে কষ্ট দিচ্ছে।

…নেহা যখন কাতরাতে কাতরাতে ঘুমালো তখন দিপ্ত আস্তে করে একটা গরম কম্বল মেয়েটার গায়ে দিয়ে দিল,

তার ঘুমন্ত মুখেরদিকে তাকিয়ে বলল স্যরি নেহা, আমি পারছিনা, আমি পারছিনা তোমাকে তোমার প্রাপ্য দিতে।

বলে পাশ ফিরে শুয়ে পরল,সকালবেলার মিষ্টি রোদে দিপ্তর ঘুমটা হঠাৎ ভেঙে গেল,

পাশফিরে তাকাতেই দেখল যে মেয়েটা পাশে নাই, তারপর উঠে ওয়াশরুমে চলেগেল।

ওয়াশরুম থেকে যখন আসল ততক্ষনে নেহা ওরজন্য খাবার রেডি করেছে।

আবারো কালকের রাতের কথাটা দিপ্তর মনে পরলো, মেয়েটার তো পেট ব্যাথা, এই ব্যাথা নিয়েও সকাল সকাল উঠে আমার নাস্তা বানাতে গেছে। উফ!!

মেয়েটা এমন কেন? কে বলেছে ওকে নাস্তা বানাতে এখন যদি আবার ওসুস্থ হয়ে যায় তাহলে তো দিপ্তরিঝামেলা বাধবে।

ইচ্ছা করতেছে মেয়েটাকে থাপ্পড় দিয়ে রান্নাঘর থেকে নিয়ে এসে শুইয়ে দেয়,

কিন্তু সে যেমন মেয়েটার প্রতি ভালবাসা দেখায়না তেমন বিরক্তি ও দেখায়না।

বিরক্তি নিয়েই সে ব্রেকফাস্ট টা শেষ করল।যাওয়ার সময় নেহাকে বলে গেল যেন সে আর কোন কাজ না করে,

বাসায় এসে নিজেই সে বাকি কাজটুকু করবে।

কিন্তু কে শোনে কার কথা? নেহা মনেমনে ভাবছে আমি মরলেই বা কার কি? আমি যতখুশি কাজ করব তাতে আপনার কি?

কিন্তু যতই নেহা মনেমনে এভাবে বলুকনা কেন সে দিপ্তর সামনে কখনো মন খুলে কিছুবলে না, বলবে কিভাবে?

যে মানুষটা তারসাথে প্রয়োজনিয় কথা ছারা আর কিছুই বলেনা তার সাথে অন্তত মনের কথা শেয়ার করা যায়না।

দিপ্ত অফিসে যাওয়ার পর নেহা সারাদিন একা একাই বাসায় বসে থাকেটুকটাক কাজ করে,

মাঝেমাঝে একটু টিভি দেখে, কখনো বেলকনিতে গিয়ে বসে বসে আকাশ দেখে।

এই শহরের আকাশটা দেখতেই নেহার যা ভালো লাগে, তাছারা সবকিছু ওর কাছে পরপর মনেহয়, এশহরের প্রতিটি মানুষ স্বার্থপর।

স্বার্থপর দালানকোঠা রাস্তাঘাট সবকিছু, কোথাও প্রানের কোন বাঁধন নেই, বাঁধন নেই তার আর দিপ্তর জীবনে,

তাদের এই ছোট্ট সংসারটাকে তারকাছে মাঝেমাঝে বোঝা মনেহয়, মনেহয় সবকিছু ছেরে দূরে কোথাও চলে যাবে সে যেখানে কেউ থাকবেনা পরিচিত,

সে ইচ্ছামত ছুটবে, লাগামহীন ঘোড়ার মত যা ইচ্ছা তাই করবে, কিন্তু তার যে কিছুই করা হয়না, তার জীবনের কোন সখ কখনো পূরন হলনা,

তার বরকে নিয়ে তার সব জল্পনা কল্পনা বিয়ের পর হাওয়ায় মিলায় গেল।সে কিচ্ছুটি বলনা, চুপচাপ মেনেনিল, তারতো এটাই কপাল,

জীবনে সে কিছুই পাবেনা, শুধু একাকি একাকিত্বের মাঝে হাবুডুবু খাবে, কখনো ভাসবে কখনো বা ডুববে।

..রান্নাটা বসায় দেয়া উচিত, দিপ্ততো সেই সকালবেলা একটু খেয়ে বেরিয়েছে, ফিরবে সেই বিকেলে।

তার তো কিছুই খাওয়া হয়নি, ক্ষুধায় পেটটা কেমনযানি করছে, কিন্তু রান্নাটা যে বসাবে সেই শক্তিটুকু তার নাই,

ফ্রিজে খাবার আছে কিন্তু বেরকরে যে খাবে সেই ইচ্ছাটাও করছেনা তার, কোনরকমে বেলকোনি থেকে রুমে এসেই শুয়ে পরল,

তারপর তার কি হয়েছে আর বলতে পারেনা।

…দিপ্ত বাসায় ফিরে বারবার কলিংবেল বাজাচ্ছিল কিন্তু নেহা আসছেনা দরজা খুলতে।

বিরক্তিতে দিপ্তর নিজের ওপরি রাগ হচ্ছিল, কিন্তু পরক্ষনেই মনেপরল মেয়েটার তো পেটব্যথা ওর কিছু হলনা তো,

হঠাৎ তার হাতপা ঠান্ডা হয়ে আসতেছিল, দরজা খুলতেএতক্ষন তো লাগার কথানা।

দরজার আর কোনো চাবিও তারকাছে ছিলনা, সে দ্রুত দারোয়ারকে ফোন দিয়ে ডাকল,

দুজনমিলে অনেক ঝক্কিঝামেলা পেরিয়ে দড়জাটার লক ভাঙল।

দারোয়ানকে দরজার লক ঠিককরার ব্যাবস্থা করতে বলে সে দৌড়ে রুমে গেল, গিয়ে দেখল যে বিছানায় নেহা পরে আছে,

তারকপালে হাত দিয়ে দেখল যে জ্বরে মেয়েটার গা পুরে যাচ্ছে তার কোন সেন্স ও নেই, মুখটা দেখেমনে হচ্ছে যে সারাদিন কিছু খায়নি,

যেই মেয়েটার প্রতি তার এত বিরক্তি, এত রাগ সেই অসুস্থ মেয়েটাকে দেখেই তার খুব মায়া হচ্ছে, তার জন্যই তো মেয়েটার আজকে এই অবস্থা,

অফিসে গিয়ে মেয়েটাকে কখনো ফোন দিয়ে জিগ্যেস করা হয়না সে কি করছে বাসায়,

খেয়েছে কিনা, কালকে যদি সে কলদিয়ে জিগ্যেস করত তাহলে আজকে আর এই অবস্থায় তাকে পরতে হতনা,

মাহারা এইমেয়েটাকে তারহাতে তুলে দেয়ার সময় বারবার ওর বাবা বলছিল বাবা ওকে দেখে রেখ, আমার কলিজাকে তোমাকে দিলাম, ওকে কখনো কষ্ট দিওনা।

এখন কি করবে সে? কিভাবে নেহার বাবার সামনে দারাবে?? ওর নিজেরবাবার সামনে দাড়াবে? বাবাতো নির্ঘাত ওকে বাড়িথেকে বেরকরে দেবে।

হঠাৎ কলিংবেল বেজে উঠল,ডাক্তারকে আসার পরপরি ফোন দিয়েছিল, নিশ্চয় ডাক্তার আসছে, দরজাটা তো খোলাই থাকার কথা,

দিপ্ত দৌরে দরজাটা খুলেদিল, আসলে দরজাটা খোলা থাকলেও ভিতরে আসছিলনা,

ডাক্তার নেহাকে দেখে যা বলল তাহলো যে অনেকদিন থেকে ঠিকমত সে খায়না, না খেয়ে থাকতে থাকতে এ্যসিডিটি প্রবলেম হয়েছে,

তারকারনেই এই পেটব্যথা, আর প্রচন্ড পেটব্যথার কারনেই জ্বর, আসলে জ্বরটা ওর অনেকদিন থেকেই,

কিন্তু নেহা সেটাকে কিছুমনে না করে দিব্যি চলাফেরা করেছে শেষে আজকে এই অবস্থায় রুপ নিয়েছে।

ডাক্তার চলে যাওয়ার পর দিপ্ত নেহাকে একটু ডাকল নেহাকে কিছু খাওয়ানোর জন্য,

কিন্তু নেহার কোন সেন্স নেই সে জ্বরের প্রকোপে কিজানি বলছিল তা দিপ্তর বোধগম্য হলনা,

দিপ্ত রান্নাঘর থেকে একটা ছোট গামলায় পানি নিয়ে এসে নেহার মাথায় জলপট্টি দেয়া শুরু করল, ততক্ষণে রাত দশটা বেজেগেছে।

(পর্ব – ২)….শেষ পর্ব…

কতক্ষণে রাত দশটা বেজে গেছে। দিপ্তর এতটেনশনের মাঝে খাওয়ার কথা একদম মনেছিলনা। হঠাৎ পেটটা জানান দিল যে প্রচন্ড ক্ষিদে লেগেছে।
দিপ্ত নেহার মাথায় জলপট্টি দিয়ে গামলাটা নিয়ে রান্নাঘরের দিকে গেল, দেখি কিছু আছে কিনা রান্নাঘরে,

কিন্তু দিপ্ত কিছুই খুজে পেলনা, নেহা অসুস্থ থাকায় কিছুই রান্না করতে পারেনি। এতক্ষিদার মাঝে কি করবে কিছু ভাবতে পারছেনা,

সব ওই মেয়েটার দোষ, কে বলেছে ওকে না খেয়ে থেকে ওসুখ বাধাতে,

আজকে যদি ও ওর সাথে কথা বলতাম তাহলে আর আমাকে এইদিনটা দেখতে হতনা,

প্রচুর মেজাজ খারাপ হচ্ছে দিপ্তর।কিন্তু পরক্ষনেই মনে পরল যে নেহা তো কালকে রাত থেকে কিছুই খায়নি, ইশ নাজানি মেয়েটার কত কষ্ট হচ্ছে।

নেহার কথা ভাবতে ভাবতে দিপ্ত নিজেরি ক্ষিদার কথা ভুলে গেছে, দেখি বাইরে থেকে কিছু নিয়ে আসতে হবে।
দিপ্ত কেয়ারটেকার কে ফোন দিয়ে বাইরে থেকে কিছু খাবার নিয়ে আসতে বলল।

বলেই রুমের দিকে পা বারাল, দেখি নেহার কি অবস্থা,

রুমে এসেই দিপ্ত দেখছে যে নেহার গা পুরো ভিজে কাদাকাদা হয়ে গেছে, জ্বর মনেহয় ছেরেছে,

মেয়েটাকে কোনদিন দিপ্ত ভালোকরে দেখেইনি, কি করবে ও নেহার দিকে তাকাতে যে ওর ভালোই লাগেনা,

কিন্তু এতদিন পর আজ যখন নেহা অসুস্থ তখন সেই নেহাকেই তাকে দেখতে হচ্ছে তার যত্ন নিতে হচ্ছে,

বিরক্তিতে আবারো তার মুখটা বিকৃতি হয়ে গেল,

বিরক্তিটা তার নিজের প্রতি সে যদি এতদিন নেহার সাথে ভালভাবে কথা বলত তাহলে আজকে এইদিন দেখতে হতনা।

নেহার শরীর টা মুছিয়ে দিতে হবে যেভাবে ঘেমে একাকার হয়েছে,

কিন্তু যেমেয়েটার হত আজ এপর্যন্ত সে ধরেনি সে মেয়েটার শরীর কিভাবে সে মুছিয়ে দেবে,

লজ্জায় আর সংকোচে সে ভিতরে ভিতরে নুয়ে পরছিল, কিন্তু ও ছারা তো বাসায় অার কেউ নেই যে নেহার শরীর মুছিয়ে দেবে।

যখনি সে গামলাটা নিয়ে আসল তখনি কলিংবেল বেজে উঠল, দিপ্ত দ্রুত দরজাটা খুলে দিল, কেয়ার টেকার খাবার দিয়ে গেল,

দিপ্তর এতক্ষন রাক্ষসের মত যে ক্ষিদেটা লেগেছিল তা নেহার কথা ভাবতে ভাবতে ভুলেই গিয়েছিল,

খাবার দেখে আবারো ক্ষিদেটা মাথাচারা দিয়ে উঠল,

কিন্তু দিপ্ত খাবেনা, এটা ওর নিজের প্রতি নিজেরজন্য শাস্তি, সে খাবেনা যতক্ষণ নেহাকে কিছু খাওয়াতে পারবেনা ততক্ষণ সে কিছুই খাবেনা,
.
খাবারটা টেবিলে রেখে এসে দিপ্ত আবারো নেহার কাছে গেল, মেয়েটার শরীরটা মুছিয়ে দিতে হবে,

এখন না মুছলে ঘামে বেশি করে অসুস্থ হওয়ার সম্ভাবনা আছে।

দিপ্ত গামলায় একটা নরম কাপর ভিজিয়ে আস্তে আস্তে নেহার গা মুছিয়ে দিল, শাড়িটা চেন্জ করে দিতে হবে,

কিন্তু কোনভাবেই সে পারছিলনা ভিতরে ভিতরে সে অসস্তি বোধ করছিল।

তবুও ওকে তো পারতেই হবে, সে চোখ বন্ধ করে কোন রকমে নেহার শাড়ীটা চেন্জ করেদিল,

মনে হচ্ছে জীবনে যত কাজ করেছে সবথেকে কঠিন কাজ হচ্ছে নেহার শাড়ী চেন্জ করাটা,
মনে মনে হাফ ছেরে বাচঁল দিপ্ত, তারপর সে খাওয়ার টেবিল থেকে প্লেটে খাবারটা ঢেলে নিয়ে আসল…..,
.
নেহার জ্ঞান আসার পরথেকে সে কিছুটা সস্তি বোধ করছিল, চোখ খুলে সে দেখল যে দিপ্ত ওর কপালে জলপট্টি দিয়ে দিচ্ছে।

যে মানুষটা ওর সাথে ঠিকমত কথাই বলেনা সেমানুষটা ওর এতটা যত্ন নিচ্ছে দেখে সে অবাক হল,

ওর কেবলি মনে হচ্ছিল যে ও এই মানুষটাকে একদিন ঠিক আপন করে নেবে,

ততটা আপন যতটা আপন হলে একজন আরেকজনকে হারানোর ভয়করে।
দিপ্ত যখন ওর শাড়ীটা চেন্জ করে দিচ্ছিল তখন ওর খুব ভাললাগছিল, সেইসাথে প্রচুর হাসিও পাচ্ছিল,

কারন দিপ্ত চোখ বন্ধ করে কেমন যেন আরস্ঠ হয়ে মুখটা কাঁচুমাচু করে ওর শাড়ী চেন্জ করছিল, কিন্তু হাসি এইকারনে পাচ্ছিল যে বেশ হয়েছে,

তোমাকে জ্বালাতে পারছি এটাই অনেক, তুমি আমার সাথে এতদিন অনেক অবিচার করেছ,

এখন প্রতিটা অবিচারের শাস্তি হিসেবে আমার সেবা যত্ন কর।

সে অনেকটা সুস্থ হয়েও বেশিকরে অসুস্থ হওয়ার ভান করছিল।

দিপ্ত রুমথেকে যাওয়ার পর সে শোয়াথেকে অনেক কষ্টে উঠে বসল।
দিপ্ত খাবার নিয়ে এসে দেখল যে নেহা বসার চেস্টা করছে, সে দ্রুত বালিশটা নেহার পিঠে দিল,

তারপর নেহাকে বলল যে এখন কেমন লাগছে তোমার,

নেহা আস্তে করে বলল যে আগের থেকে কিছুটা বেটার।
দিপ্ত খাবারটা নেহার সামনে দিয়ে বলল যে অনেক ওষুধ খেতে হবে কিছু খেয়ে নাও, এমনেই তো নাখেয়ে খেয়ে অসুখ বাধিয়েছ।

এখন তোমার যদি কিছু হয়ে যেত কি বলতাম আমি তোমার বাবাকে?

নেহা কিছুনা বলে চুপকরে থাকল, মনে মনে বলল বেশ হয়েছে, কিন্তু নেহার যা অবস্থা তাতে সে খাওয়ার অবস্থায় নেই,

তবুও অনেক কষ্টে তুলে খাওয়ার চেষ্টা করল, কিন্তু হাতে শক্তি পাচ্ছিলনা ভালমত,

দিপ্ত নেহার এই অবস্থা দেখে চুপচাপ নেহার হাতথেকে খাওয়ার প্লেটটা নিয়ে খাইয়ে দিল।

তারপর ওষুধ এনে খাইয়ে দিয়ে বিছাসায় শুইয়ে দিল।
.
দিপ্তর এইসময় নিজেকে বেচারা বেচারা মনে হচ্ছিল। সে সবকাজ শেষ করে বেলকনিতে এসে হাফছেরে বাচঁল।

আজকের দিনটির কথা সে সারাজীবন মনে রাখবে কি একটে দিন না গেল, নাকের ওপর দম রেখে সবকাজ তার শেষ করতে হল,

বেলকনির মুক্ত বাতাসে নিজেকে অনেকটা হালকা মনে হচ্ছিল ওর…,

বাবামায়ের কথা ওর খুব মনে পড়ছে, আজকে যদি তারা এখানে থাকত তাহলে ওর এত ঝক্কি ঝামেলা পোহাতে হতনা।

আবার এটাও মনে হচ্ছে সে নেহার সাথে এত দিন যা করেছে আর আজকের নেহার যা অবস্থা…..,

সেটা একবার জানতে পারলে ওর যে কি অবস্থা করত বাবা সে ভেবেই দিপ্তর গায়ে কাটা দিয়ে উঠল।

কতক্ষণ সে বলকনিতে এভাবে দাড়িয়েছিল খেয়াল নাই, হঠাৎ খেয়াল করল কে যানি ওর পিছনে এসে দাড়িয়ে দাড়িয়ে আছে,

পিছনে তাকাতেই দেখল নেহা দাড়িয়ে আছে, মেয়েটা এই অসুস্থ শরীর নিয়ে আবার বেলকোনিতে আসতে গেল কেন,
নেহা আস্তে করে বলল অনেক রাত হয়েছ, কালকে আপনার অফিস আছে, শোবেন চলেন, দিপ্ত ঘোর কাটিয়ে বলল কটা বাজে?

তিনটা বলেই নেহা পেছন ফিরে চলে যাচ্ছিল, অন্ধকারে ফুলের টবটা দেখতে নাপেরে হোচট খেয়ে পরেই যাচ্ছিল,

দিপ্ত আচমকা নেহাকে ধরায় সে যাত্রায় বেচেগেল, নেহার শরীরে তখনো অনেকটা জ্বর সে হা করে দিপ্তর দিকে তাকিয়ে ছিল,

বাতাসের এলোমেলো দাপটে নেহার চুলগুলো মুখের উপরে এসে পড়ল..,

দিপ্ত আনমনে চুলগুচ্ছ মুখথেকে সরিয়ে কানের পিঠে গুজেদিতেই নেহা বল ছারুন আমাকে।
হঠাৎ নেহার ছারুন কথায় দিপ্তর সম্ভিত ফিরে আসল, সে নেহাকে ছেরে দিয়ে ভিতরে ভিতরে ভিষন লজ্বা পেল,

নেহা যখন চলে যাচ্ছিল দিপ্ত ভাবল মেয়েটার কাছে স্যরি বলা উচিত, কিন্ত সে বলতে পারছিলনা,

তবুও ভাবল যে না ওকে কিছু একটা বলাই উচিত, সে নেহাকে আস্তে করে ডাকল নেহা,
নেহা পিছন ফিরে দাড়াল, কিছু বলবেন?
নেহা স্যরি, আসলে….
আসলে কি? বলেই নেহা বলল স্যরির কি আছে? আমার কপালটাই তো এমন কখনো কারো ভালবাসা আমার কপালে ছিলনা,

তাই ছোটবেলা থেকেই কারো ভালবাসা নাপেয়ে পেয়ে আমার সয়েগেছে, মন খারাপ করার কিছুনাই।

আসুন শয়ে পরুন, অনেক ধকল গেছে আপনার, বলেই নেহা রুমে এসে শুয়ে পড়লো।
.
দিপ্ত তখনি রুমে আসলনা, সে আসলো আরো পরে, রুমে এসে সে দেখলো যে নেহা ঘুমিয়ে পরেছে, সে চুপচাপ নেহার পাশে শুয়ে পরল,

কিন্তু সারারাত সে ঘুমাতে পারল না, তার কেবলি মনে হচ্ছিল যে সে নেহাকে ঠকাচ্ছে,

ভিষনরকম অবহেলা করছে যা কখনোই কলো সাথে করা উচিতনা,

আনিকার কথা ভেবে কিবা হবে, ওতো বিয়ে করে সুখেই আছে, শুধুশুধু একটা মেয়েকে সে আনিকার জন্য কষ্ট দিতে পারেনা,

এসব হাজারো ভাবনায় ছটপট করতে করতে রাত ভোর হল, সে সারারাত দিধাদন্দে কাটিয়ে বিছানা থেকে উঠে বসল,

তারপর নেহার দিকে তাকিয়ে ওর বুকসেল্ফ থেকে একটা খাতা নিয়ে এসে একটা চিরকুট লিখল, লিখে নেহার দিকের বেডসাইডে সেটা রাখল,
নেহা সকালে ঘুম থেকে উঠে দেখল পাশে দিপ্ত নেই, তারপর ফোনটা নিয়ে দেখল যে নয়টা বেজে গেছে,

ইশ সে এতক্ষন ঘুমালো, দিপ্ত নিশ্চই অফিসে চলেগেছে এতক্ষনে।

তারপর বেডসাইডের দিকে তাকাতেই দেখল যে মগে কফি থেকে ধোয়া উরছে নিচে একটা চিরকুট,

চিরকুটটা নিয়ে সে দেখল যে সেখানে লেখা ‘নেহা অনেক অনেক দুঃখিত তোমাকে এভাবে কষ্ট দেয়ার জন্য।

আমি সত্যি মনথেকে গিল্টি ফিল করছি, তুমি কি আমাকে ক্ষমা করে দিয়ে আমার হবে?

যেখানে তোমার নিজের বলতে কিছু থাকবেনা সবকিছু আমাদের দুজনের হবে।’

চিরকুটটা পড়ে নেহার মুখে সেই হাসিটা ফুটেউঠল যেটা কালকে রাতে দিপ্ত ওকে শাড়ী পরানোর সময় সে হেসেছিল,

আসলেই সামনে ওর সুদিন আসছে, যেখানে নেহা একা থাকবেনা ওরসাথে দিপ্তও থাকবে ওর সাথে রাতজাগার জন্য।

গল্পের বিষয়:
ভালবাসা
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

সর্বাধিক পঠিত