– দুপুরে কোনো মহিলা মনে হয় লাঞ্চ করিয়ে দিয়েছে। বাসার মধ্যে প্রবেশ করতেই অন্বয়ী উপরোক্ত কথাটি বলে উঠল। আমি আফরান শেখ,একটা প্রাইভেট কোম্পানিতে চাকরী করি! আর অন্বয়ী হলেন আমার স্ত্রী।
– এ কথা কেন বলছ?
– তাইলে কি বলব,
– কি বলব মানে?
– দুপুরে কল দিলি না কেন?
– একটু ব্যস্ত ছিলাম!
– কোনো নতুন মাইয়াকে নিয়ে!
বলেই ঠাস করে রুমের দরজা লাগিয়ে দিল। আর আমি অত্যাচারিত পুরুষের মত ড্রয়িংরুমে টিভির পর্দায় অসহায় এতিমের মত বসে রইলাম। এর এইরকম করার কারণ একটাই দুপুরে প্রতিদিনের মত আজ আমি কল করে কথা বলতে পারিনি, ব্যস্ত থাকার কারণ। যার ফলে এরকম অত্যাচার। প্যান্টের পকেটে হাত পড়তেই ধরা পড়ল,অফিস থেকে ফিরার পথে আনা চকলেট গুলা। যা ওর অভিমান ভাঙ্গানোর একটা উদ্দেশ্য সরূপ। আমি ভয়ে ভয়ে চকলেট গুলা হাতে নিয়ে রুমের মধ্যে ঢুকলাম। দেখি মেয়েটা বিছানায় মুখ ঘুরিয়ে শুয়ে আছে। আমি চুপচাপ চকলেট গুলা ওর সামনে গিয়ে ধরলাম! মেয়েটা রাগান্বিত চোখে আমার ড্যাবড্যাব ওয়ালা চোখের দিকে চেয়ে আছে।
– এগুলা কেন?
– অভিমান ভাঙ্গাতে।
– কি? তুমি অভিমান ভাঙ্গাতেও পার!
– ঠিক তা না। আসলে,কাল না টিভিতে একটা বিজ্ঞাপন দেখেছিলাম, যে কিসমি চকলেট দিলে না কি অভিমান ভেঙ্গে যায়!
– কি?(রাগান্বিত চোখে চেয়ে আছে) সঙ্গে সঙ্গে আমার একটা গাল কাচা থেকে লাল পাকা টমেটো হয়ে গেল,মানে থাপ্পড়ে লাল হয়ে গেল। আমি অন্য গালে হাত দিয়ে মাটিতে বসে আছি।
– তর জীবনেও বুদ্ধি হবে না, আর থাপ্পড় মাড়লাম এক গালে তাইলে অন্য গালে হাত দিয়ে আছিস কেন?
– যাতে ওই গালটা না পাকে!
– মানে?
– মানে,এই গাল থাপ্পড়ের তাপ সইতে না পেরে কাচা থেকে পেকে গেছে,তাই অন্য গালটা যাতে না পেকে যায় সের জন্যই অন্য গালে হাত দেয়া।
– কি?
– হ্যা।
– আমার চোখের সামনে থেকে দূরহ!
ওর তুইতোকারিতে আমি কখনও কষ্ট পাইনা, কেননাওর রাগটা না সামলাতে পারলে তুইতোকারি, আর অভিমানটা বেশি হলে আপনি বলে সম্বোধন করে। যা আমার অভ্যস্ত হয়ে গেছে। কিন্তু আজও ওর অভিমানটা ভাঙ্গানোর কোনো সলুশন পাইলাম না। ও প্রতিবার অভিমান করে, যাতে আমি ওর অভিমানের দেয়ালটা ভেঙ্গে ফেলি। কিন্তু টিভি, ইউটিউব সবকিছুর হেল্প নেয়ার পরও ওর অভিমানটা ভাঙ্গাতে পারিনি।যার ফলে প্রতিবার একটা করে থাপ্পড় খেয়েছি, আজও ঠিক সেটাই হয়েছে। অন্ধকার রুমের মধ্যে প্রবেশ করলাম। আমি জানি মেয়েটা এখনও ঘুমাতে পারেনি। তাই আস্তে আস্তে ওর পাশে গিয়ে ওর নরম গালে আমার খসখসে হাত রাখলাম,ও শিউরে উঠল।
– জীবনে প্রেম করস নাই? অন্বয়ীর কথায় আমি হতবাক হয়ে মেয়েটারদিকে চেয়ে রইলাম, ও এখনও অন্য দিকে চেয়ে আছে।
– না!
– কেন?
– জানি না,মেয়েরা কেন আমার সাথে প্রেমকরে নাই!
– তর মত আনরোমান্টিক ছেলের সাথে কে প্রেম করবে। আমি নিশ্চুপ,কোন কথা নেই।
– কথা বলছিস না কেন?
এমন ভাবে ধমক দিল,যে ভয়ে আমি বিছানার ওপাশে সরে গেলাম। আর কোনো কথা বললাম না ঘুমানোর চেষ্টা করলাম। সকালে নিদ্রাটা ভাঙ্গেই দেখি মেয়েটা আমার বুকে মাথা রেখে ঘুমিয়ে আছে। আমি আলত করে ওর চুল গুলা মুখ থেকে সরিয়ে নিলাম। ঠিক সেই মুহূর্তে চোখ পড়ল দেয়াল ঘড়ির দিকে, আমার অফিসের দেরি হয়ে যাচ্ছে।তাই অন্বয়ীকে বুক থেকে সরাতেই ও ধমক দিয়ে উঠল।
– কি হয়েছে?
– আমার অফিসের টাইম হয়ে যাচ্ছে!
– তো, আমি ঘুমাব না!
– বালিশে ঘুমাও।
– তুই জীবনেও রোমান্টিক হবি না শালা!
বলেই ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দিল। আজ শালা হলাম, যদি আবার দুলাভাই ডেকে বসে, তাই আর কথা না বাড়িয়ে অসহায় অত্যাচারিত পুরুষের মত এককাপ চা বানিয়ে খেয়ে অফিসের উদ্দেশ্যে রওনা দিলাম। অফিস থেকে বাসার ফিরার পথেই রাস্তার দিকে চোখ পড়ল একটা ফুলের দোকানের দিকে, অবশ্য আমি ফুল তেমন পছন্দ করি না, তবে অন্বয়ী মেয়েটা ফুল বেশিই পছন করে। তাই রিক্সা থেকে নেমে ফুলের দোকান থেকে রজনীগন্ধা ফুলের একটা তোড়া নিয়ে বাসায় চলে আসলাম। কলিংবেল দিতেই মেয়েটা দরজা খোলে দিলি,যেন আমার অপেক্ষায় অপেক্ষারত ছিল। আমি রজনীগন্ধা ফুলের তোড়া ওর দিকে এগিয়ে দিলাম। অন্বয়ী মেয়েটা তোড়াটা হাতে নিয়ে অবাক দৃষ্টিতে আমার দিকে চেয়ে রইল।
– তুমি তো ফুল পছন্দ কর না!
– তুমি তো পছন্দ কর!
অন্বয়ী মেয়েটা আর কিছু না বলেই আমাকে জড়িয়ে ধরল। একটা ফুলের তোড়া বা মুখের দু একটা মিষ্টি কথায় কেউ এভাবে খুশি হবে সেটা অন্বয়ীকে না দেখলে জানা হত না।
– ভালবাসি,
– কাকে?
– আমার আনরোমান্টিক স্বামীকে।
– আমিও।
মেয়েটা এখনও আমাকে জড়িয়ে ধরে আছে। যেন সারাটা জনম এভাবে জড়িয়ে ধরে থাকবে। মেয়েটা এভাবে জড়িয়ে ধরায় আমার আলাদা একটা অনুভূতি হচ্ছিল,সেই সাথে কাতুকুতুটা।
– এভাবে নড়ছ কেন?
– আমার কাতুকুতু লাগছে!
– কি?
– হ্যা।
– আনরোমান্টিক কোথাকার। বলেই ওপাশে সরে গেল। কি না কি ভেবে আবার জড়িয়ে ধরল। তবে এখন আর কাতুকুতু লাগছে না,ভালই লাগছে।
সমাপ্তি