-কিরে রওনা হয়েছিস?
-না। আমি আসতে পারবো নারে।
-দেখ অবনি এসব ফাজলামো বাদ দিয়ে আয় তো তাড়াতাড়ি।
-না দোস্ত, সত্যিই আসতে পারবো না।
– তুই আসবি নাকি আমি গিয়ে তোকে নিয়ে আসবো!
-আচ্ছা দেখি!
– এত দেখা-দেখির কিছু নেই যলদি আয়।
এটা বলেই তারিন ফোন রেখে দিলো। আজকে তারিন এর বার্থডে। তাই সে একটা পার্টি দিচ্ছে আমাদের ফ্রেন্ড সার্কেল এর মাঝে। এর জন্যেই রেস্টুরেন্টে যাওয়ার জন্যে কল দিচ্ছে। যদিও আমাদের আগেই বলে রেখেছে। আমারো যেতে কোনো সমস্যা ছিলো না। কিন্তু পার্টিতে নাকি আশিক ও আসবে। এই জন্যই আমি যেতে চাচ্ছিলাম না। আশিক! এই ছেলেটাকে আমি খুব করে চাই। কিন্তু বলতে পারি না। আমি কেনো আমাদের ভার্সিটির অনেকরেই ক্রাশ আশিক। এর মাঝে তারিন ও আছে। তবে অন্য সবার সাথে আশিকের সম্পর্ক না থাকলে ও তারিনের সাথে বেশ ভালই সম্পর্ক। যদিও এমনিতে ফ্রেন্ড ই তবে তারিনের নাকি মনে হয় যে আশিক ওকে ভালবাসে। শুধু আশিক থেকে নাকি শুনার অপেক্ষায় আছে। তারপর থেকেই আশিকের থেকে মোটামুটি দুরত্ত বজায় রেখে আমি চলি। এই দেখা হলে ফরমাল কিছু কথা বার্তা এতটুকুই। এর বেশি কিছু না।
-এতক্ষন লাগে তোর আসতে?
-সরি রে।আসলে রাস্তায় একটু জ্যাম ছিল।
– আচ্ছা আয়।
– হুম।
-এই আশিক। এই যে অবনি। তুমি তো বলছিলে যে ও নাকি আসবে না। আমার বন্ধু আমি চিনি না নাকি! আমার বার্থডে আর ও আসবে না তা আবার হয় নাকি?
– হুম।এসেছে দেখা যায়।আমিতো ভাবছিলাম আসবে না। কারন আমি যেখানে যাই ওখানে তো অবনি যায়-ই না। তাই না অবনি?
– না, মানে! আসলে…
-আচ্ছা থাক। বাদ দাও। কেমন আছো বলো?
– হুম। ভালো। তারিন বললো।
– এই চল এখন কেক কাটি। সবাই-ই এসে পরেছে।
– হুম চল।
কেক কাটার সময় তারিন আশিকের হাত ধরে কেক কাটছিলো। কেনো জানি খুব অসস্তি লাগছিলো তখন। কেক কাটা শেষ হতেই আমি তারিন কে বললাম
-শরীরটা ভালো লাগছে নারে। আমি বরং চলে যাই। তোরা ইনজয় কর আর আমার কাবাব মে হাড্ডি হওয়ার ও দরকার নেই।
– কি বলছিস খাওয়া দাওয়া করে যা।
– না রে। ভালো লাগছে না। আসি।
প্রায় রেস্টুরেন্ট থেকে বের হয়েই গিয়েছিলাম হটাৎই পিছন থেকে আশিকের ডাক শুনতে পেলাম।সাথে তারিন ও আছে।
– অবনি!
– হুম বলো।
ওর হাতে থাকা দুটো গিফট বক্স এগিয়ে দিয়ে বলল -একটা তোমার আর একটা তারিন এর জন্যে। ভাবছিলাম একসাথে খাবার এর পরে দিবো কিন্তু শুনলাম তুমি নাকি চলে যাচ্ছো। তাই দিতে এলাম।
– হুম
– নাও। যেকোনো একটা নাও। তারিন বললো
– আরে নিয়ে নে।তুই আমার বেষ্ট ফ্রেন্ড তাই তোর জন্যে ও এনেছে।
আমি একটা নিয়ে চলে আসছিলাম যখনি রাস্তায় বের হয়ে রিকশায় উঠতে যাবো আবার তারিন এর ডাক শুনলাম। দৌড়ে আমার রিকশার সামনে এসে থামলো।
– ওই কিছু মনে করিস না।তুই আমার গিফট বক্সটা নে।আমার তর বক্স টা পছন্দ হয়েছে। ওখানে ভেবেছিলাম ও আমাকে ফার্স্ট চয়েজ করতে দিবে! বাট তোকে দিলো।
– ওকে বাবা সমস্যা নেই। নে এটা।
– আচ্ছা। সাবধানে যাস।
রাতে এসে গিফট বক্সটা খুললাম। একটা লকেট ছিলো সাথে একটা চিঠি। চিঠিটা খুলে পড়তে লাগলাম। “যখন সমুদ্র দিগন্তে সূর্য উদিত হয়, তোমার কথা আমি ভাবি। যখন বসন্তে জোৎস্না নরম আলো ছড়ায়, তোমার কথা আমি ভাবি।” চিঠিটা আমি তারিনকে কল করে শুনালাম। তারিন বললো
– সত্যি! সত্যি বলছিস? আশিক একথা লিখেছে।
– হুম
-তোকে বলেছিলাম না ও আমাকে লাভ করে।দেখেছিস মিললো তো আমার কথা। ইস ওই গিফট টাই আমার জন্যে ছিলো আর আমি কিনা এটা চেঞ্জ করলাম। শোন কাল গিফট টা আমায় দিবি ঠিক আছে।আর এটা নিয়ে যাবি।
– আচ্ছা।
ইদানিং প্রায়ই বৃষ্টি হচ্ছে। এই যেমন আজকেই বলা নেই কওয়া নেই। হটাৎ করেই যেনো নেমে পড়লো। মাত্র ক্যাম্পাসে ঢুকেছি আর বৃষ্টি শুরু। আবার আজকে ছাতাও আনিনি। কোনোমতে দৌড়ে বড় আমগাছটার নিচে দাড়ালাম। কিছুক্ষন পরেই দেখলাম আশিক এদিকেই দৌড়ে আসছে এই বৃষ্টির মাঝে। আমার হার্টবিট যেনো বেড়ে গেলো। আমি উল্টো দিকে ফিরে দাঁড়িয়ে রইলাম। ও আসতেই আমি চলে যেতে যাচ্ছিলাম তখনই আশিক বললো।
– অবনি! যেও না।
– হুম।
– তোমার তো আজকাল কোন খোজখবরই নেই। শরীর ভালো না নাকি?
– না তেমন কিছু না।ভালোই আছি।
– আচ্ছা। তো কোথায় যাচ্ছিলে?
-এইতো লাইব্রেরিতে।
– ও। আচ্ছা চলো আমি তোমাকে আমার আমার স্পেশাল ছাতা দিয়ে লাইব্রেরিতে পৌছে দেই।
এটা বলতে বলতে আশিক তার শার্ট এর উপর থেকে জ্যাকেট টা খুলে ফেললো। আমার কাছে এসে দুই হাত দিয়ে আমার আর ওর মাথার উপরে জ্যাকেট টা ধরলো। একবার ভাবলাম বলি যে আমি যাবো না। তবে কেনো যেনো বলতে পারলাম না। আশিক আবার বললো।
-এক দৌড়ে সামনের বিল্ডিং এ যাবো পরে ওখানে একটু থেমে আবার অন্য বিল্ডিং এ যাবো। এভাবে করে লাইব্রেরিতে পৌছাবো। ঠিক আছে?
– হুম। ঠিক আছে।
– ওকে। ১,২,৩ রান।
দৌড়ের সময় ওর সাথে আমার টাচ হচ্ছিলো মাঝে মাঝে।এর আগে আমি ওর এত কাছে কখনো আসি নি। তবে ভালোই লাগছিলো ওর সাথে এভাবে বৃষ্টির মাঝে দৌড়ানোতে। এ এক অন্যরকম অনুভূতি। যখন লাইব্রেরিতে পৌছালাম। তখন শুধু একটা কথাই মনে এলো যে লাইব্রেরিটা এত কাছে কেনো হতে হলো। আর একটু দূরে হলে কি এমন ক্ষতি হত?আর একটু ওর কাছাকাছি থাকতে পারতাম। আশিক আমাকে লাইব্রেরিতে দিয়ে আবার বৃষ্টির মাঝে বের হয়ে গেলো।
-ছাতা টা অনেক সুন্দর না? প্রায় ওই ঘটনার সপ্তাহ খানেক পরে। আজকেও বৃষ্টি হচ্ছে। তবে আজকে আমি আমগাছ তলায় নয়। ক্যান্টিনে বসে আছি। আর আজকে ছাতাও এনেছি সাথে। বসে কফি খাচ্ছিলাম তখনই রফিক ভাই একটি ছাতা দেখিয়ে উপরের কথা টা বললেন। রফিক ভাই এই ক্যান্টিনের দায়িত্বে আছে। আমি বললাম।
– হুম সুন্দরই তো। কার ছাতা?
– আশিক ভাই এর। গত সপ্তাহে বৃষ্টির সময়ে এই যে ঠিক এই জানালাটার পাশে বসে ছিলো আর কাচ দিয়ে বাইরে তাকিয়ে ছিলো। হটাৎই আমাকে বললো।
– রফিক ভাই। আজকে ছাতা এনেছেন?
– না। আজকে আনতে মনে ছিলো না।
– তো আপনি আজকে আমার ছাতা টা নিয়ে চলে যান। আমি আজকে বৃষ্টিতে ভিজবো।
এটা বলেই আশিক বের হয়ে গেলো এই বৃষ্টির মাঝেই। আমি জানালাটা দিয়ে বাইরে তাকালাম স্পষ্ট আমগাছ তলাটা দেখা যাচ্ছে এখান থেকে। তারমানে কি? ওইদিন এর ওই ঘটনাটা কাকতালীয় ছিলো না।আশিক আমার জন্যে এই বৃষ্টির মাঝে বের হয়েছিলো। আমার জন্যে!হটাৎই আমার মনটা অনেক ভালো হয়ে গেলো। আমি রফিক ভাইকে বললাম।
– সত্যিই ছাতা টা অনেক সুন্দর। আমি ছাতা টা নিয়ে যাচ্ছি। ওর কাছে পৌছে দিয়ে আসি। বের হতে হতে রফিক ভাই কে বললাম
– আজকে ছাতা এনেছেন ভাই?
– এনেছি।
– সত্যি?
– হুম।
– আচ্ছা তারপরেও আপনি আমার ছাতাটা রেখে দিন।
এটা বলেই আমি বৃষ্টির মাঝে ওর ছাতাটা নিয়ে বের হয়ে গেলাম। তবে ছাতাটা খুললাম না। ছাতা হাতে নিয়েই আশিকের ডিপার্টমেন্ট এর দিকে দৌড় দিলাম। যখন ওর সামনে পৌছালাম তখন আমি ভিজে গেছি পুরো। আশিক কিছুক্ষন আমার দিকে তাকিয়ে রইলো এক দৃষ্টিতে। তারপর বললো
– তোমার হাতে তো ছাতা আছে। তবুও তুমি ভিজলে কেনো।
– এটা আমার না। এটা আমি তোমাকে ফেরত দিতে এসেছি।তুমি এটা ক্যান্টিনে রেখে এসেছিলে। আর আমি নিশ্চয়ই একা নই যে ছাতা থাকা স্বত্তেও ইচ্ছে করে বৃষ্টিতে ভিজে! ভুল বললাম কি? আমি ওকে ছাতা দিয়ে চলে আসতেছিলাম তখনই আশিক আবার বললো
– যেও না।
এখন তুমি সবই জেনে গেছো। ওইদিন আমি যখন দেখলাম তুমি বৃষ্টির মাঝে দৌড়ে যাচ্ছো তখনই আমি আমার ছাতাটা ওখানে রেখে বৃষ্টির মাঝে বেরিয়ে যাই।ওইদিন খুব ইচ্ছে করছিলো তোমার সাথে ভিজার।তোমাকে মনের কথা বলার। এমন কি তারিনের বার্থডেতে ও আমি গিফট এর ভিতরে চিঠিতে আমার মনের কথা লিখে দিয়েছিলাম।আমি চাচ্ছিলাম তুমি চিঠি যেটাতে আছে ওই গিফটটা নাও কিন্তু তুমি ওই গিফটটা নাও-ই নি। ভেবেছিলাম হয়ত তোমাকে আর আমার ভালবাসার কথা জানানো হল না। কিন্তু তারিন বললো ও নাকি তোমার সাথে গিফট বদল করেছে। আর তুমি আমার চিঠিটা পেয়েছো। কিন্তু তুমি ভাবলে এটা আমি তারিনকে লিখেছিলাম। পরে তারিন এসে বললো পরেরদিন
-আমি জানতাম তুমি আমাকে ভালোবাসো।
– কি বলছো এসব। তুমি আমার খুব ভালো ফ্রেন্ড তারিন। বাস এতটুকুই। এর বেশি কিছু না।
– তো ওই চিঠি তুমি কাকে লিখেছো?
– আমি ওটা অবনির জন্যেই লিখেছিলাম। আমি অবনিকে ভালবাসি। তুমি আমার বন্ধু ছিলে আর বন্ধুই থাকবে। আর এসব কথা তুমি অবনিকে জানাবে না।
-তো তারিন এসব মেনে নিলো।
-হুম।সেদিন ওখান থেকে কিছু না বলেই চলে গেছিলো বাট এর দুই দিন পরে এসে সব সহজ ভাবেই মেনে নিলো।
আমার সাথে আগের মত ফ্রেন্ড এর মতই চলতো। আর তোমাকেও এ ব্যাপারে কিছু জানায়নি। আশিক আমার দিকে হাত বাড়িয়ে দিয়ে বললো।
– ভিজবে কি তুমি আমার সাথে এই ভালবাসার বৃষ্টিতে? আমি তোমার সাথে প্রতিটা বসন্ত কাটাতে চাই। প্রতিটা বৃষ্টিতে তোমার সাথে থাকতে চাই, তোমার বৃষ্টি বিলাসের সঙ্গি হতে চাই। আমি কিছু বললাম না। সব কিছু বলার দরকার ও পরে না। আমি আমার হাত দুটো তার হাতে রাখলাম।বৃষ্টি ও যেনো তার একটু তেজ বাড়ালো।বৃষ্টি ও যেনো চাচ্ছে আজ আমাদের ভিজিয়ে দিতে। তার হাত ধরে বৃষ্টিতে নেমে গেলাম। আজ যে আমাদের দিন- আমাদের বৃষ্টি বিলাসের দিন।