গার্লফ্রেন্ডের মা আমাকে খেতে দেবার আগে জিজ্ঞেস করলো- বাবা হালিম খাবা নাকি পায়েস?? আমি আন্টির দিকে তাকিয়ে শুধু বলেছিলাম- ইয়ে মানে আন্টি আপনাদের বাসায় কি প্লেট একটাই?? আন্টি থতমত খেয়ে খানিক বাদে বললেন- আরে না না, কি যে বলো তা হবে কেনো, আসলে অনেকে ঝাল খেতে পছন্দ করে, অনেকে শুরুতে মিষ্টি খেতে চায় , তাই তোমাকে জিজ্ঞেস করে নিলাম।। আমি মৃদু হেসে দিয়ে বললাম- আন্টি আমি টক, ঝাল, মিষ্টি সব পছন্দ করি।। এরপর বিড়বিড়িয়ে কেউ না শোনার মত করে বললাম- তাই তো আপনার মেয়েকে হাত করেছি।। হিয়া এমন এক মেয়ে, যায় মধ্যে টক ঝাল মিষ্টি সব আছে।।
হিয়াদের বাসা মানিকগঞ্জের সাটুরিয়াতে, যদিও আন্টির কাছে হিয়া আমাকে বন্ধু পরিচয় করিয়ে বাসায় এনেছে।। তাই আপাতত কোন সমস্যা দেখছি না, আন্টিও হিয়ার কথা বিশ্বাস করেছে বলেই মনে হচ্ছে।। উনি আমাকে ড্রইং রুমে বসিয়ে রান্না ঘরের দিকে গেলেন।। হিয়া আমার মুখোমুখি সোফায় বসে এতক্ষণ তার আম্মাজানের সাথে আমার সমস্ত বাৎচিত পর্যবেক্ষণ করছিলো।। আন্টি সরে যেতেই সে হুংকার ছেড়ে বললো- ওই শোভইন্ন্যা সব জায়গায় তোমার এত বাড়তি কথা না বললে হয় না!!
আমি সোফা ছেড়ে উঠে দাঁড়ালাম, হিয়ার দিকে দুষ্টমি মার্কা হাসি দিতে দিতে এগুতে থাকলাম, আর বললাম- হিয়া, তোমাদের বাসায় কি আর কেউ নাই, আন্টি ছাড়া?? হিয়া নির্লিপ্ত গলায় জবাব দিলো- আছে তো, আমার এক্স বয়ফ্রেন্ড ওই রুমে বউ নিয়ে ঘুমায়।। আমি হিয়ার কাছাকাছি এসে একদম ব্রেক কষে দাঁড়িয়ে গেলাম।। আমার মুখ দিয়ে কথা কি বেরুবে, একটু আগে হিয়ার মুখ থেকে কি শুনলাম তাই তো বুঝে উঠতে পারছি না।। আমি আমতা আমতা করে বললাম- এক্স বয়ফ্রেন্ড বউ নিয়ে ঘুমায় মানে, কি বলো!! এরমধ্যে আন্টিকে দেখলাম ট্রে হাতে রুমে ঢুকছে, আমি দ্রুত পিছনে ছিটকে আবার সোফার উপর বসে পড়লাম।।
আন্টি ট্রেতে সেমাই আর মিষ্টি নিয়ে এসেছে।। আমি বুঝলাম না, উনি আমাকে জিজ্ঞেস করলেন পায়েস আর হালিমের কথা আর আনলেন সেমাই আর মিষ্টি।। ব্যাপার না, এইগুলাও আমার বেশ পছন্দ।। আন্টি আমাকে বললেন- তুমি খাও তাইলে বাবা, আমি পায়েস রান্না করছি, হালিম হিয়া খুব ভালো বানাতে পারে।। বাসায় মেহমান আসছে তো, ওরাই টাংগাইল থেকে চমচম নিয়ে আসছে।। আন্টি আমার সামনে খাবার রেখে আবার ড্রইং রুম ত্যাগ করলেন।। আমি ততক্ষণে তব্দা খেয়ে ভাবছি, হিয়ার এক্স বিএফকেই কি আন্টি মেহমান বলছেন!! কি যে কাহিনী, কে জানে।। হিয়া সোফা থেকে উঠতে উঠতে আমাকে বললো- খাও তুমি, আমি তাহলে হালিম বানাই গিয়ে।। আমি হিয়াকে বাঁধা দিয়ে বললাম- ওই শুনো, এক্স বিএফ মানে কি? আবার বউ নিয়ে শুয়ে আছে মানে, কি বলো!!
হিয়া আমার কথাকে তোয়াক্কা না করে চিকন কোমড়ে একটা আকর্ষণীয় ঝাঁকি দিয়ে রুম থেকে বের হয়ে গেলো।। আমি নির্বাক দর্শকের মত সেদিকেই তাকিয়ে রইলাম।। খানিক বাদে এক লোক চোখ কচলাতে কচলাতে রুমে ঢুকলেন, মনে হলো উনাকে সদ্য কেউ ঘুম থেকে টেনে তুলে এলিয়েন দেখতে পাঠিয়েছে।। আমি সেই এলিয়েন, কিন্তু উনি আমাকে দেখে হতাশ, আমাকে দেখতে অবিকল মানুষের মত, এই চিন্তায় সম্ভবত সে শেষ।। হিয়ার খালি করা সোফায় বসতে বসতে উনি আমার দিকে তাকিয়ে বললেন- আপনি কে ভাই??
আমি এই ঘুমু ঘুমু মানবের আসা দেখে চামচে গাঁথা মিষ্টি মুখের সামনে থেকে নামিয়ে বললাম- আমি শোভন, হিয়ার ফ্রেন্ড।। লোকটা এবার পকেট থেকে একটা মালেশিয়ান রিঙ্গিত বের করলেন।। আমি দেখেই বুঝলাম, এটা মালেশিয়ার রিঙ্গিত, কারণ আমার এককালে বিদেশি কারেন্সি জমানের শখ ছিলো।। এরপর আমাকে অবাক করে দিয়ে লোকটা সেই রিঙ্গিত ভাঁজ করে মুখে ঢুকিয়ে দাঁত খুচাচ্ছেন।। কি আজব এক দৃশ্য!! লোকটা এদিক ওদিক তাকাচ্ছেন, আমি এই সুযোগে চামচে গাঁথা মিষ্টিটা চট করে মুখে গুঁজে নিলাম।। গবগব করে চাবাচ্ছি, উনি আমার দিকে কৌতূহলী দৃষ্টি নিয়ে তাকিয়ে বললেন- হিয়া কি প্রেম করে, জানেন কিছু??
আমি মিষ্টি চাবাতে চাবাতে বললাম- না ভাই, কিছু জানি না।। আমার চাজ্ঞুম চাজ্ঞুম শব্দের সাথে বুলি আওড়ানো উনি মনে হয় ভালোভাবে বুঝতে পারলেন না।। চোখ মেলে আরও বড় করে তাকিয়ে বললেন- আপনি খাওয়া শেষ করে কথা বলেন।। আমি দ্রুত চাবিয়ে মিষ্টি গিলে বললাম- জ্বী ভাই, বলেন?? উনি আমাকে আঙ্গুল দিয়ে পিরিচে রাখা আরেকটা মিষ্টি দেখিয়ে বললেন- ওইটাও গিলেন, তারপর কথা বলেন।। আমি একটু বিব্রত হয়ে বললাম- না ভাই ঠিক আছে।। লোকটা আমাকে এক প্রকার ধমকের সুরে বললেন- কিচ্ছু ঠিক নাই, খাইতে বলছি খান।। আমি কিছুটা অপ্রস্তুত হয়েই মিষ্টিটা মুখে দিলাম, এমন সময় হিয়ার আম্মা পুনরায় রুমে ঢুকলো।। ও রিপন তুই কখন উঠলি, বউমা উঠে নাই।। ওরে চিনোস, ও হইলো হিয়ার বন্ধু।।
আন্টি লোকটার দিকে তাকিয়ে কথাগুলো বললেন।। এবার উনি আমার দিকে তাকিয়ে বললেন- বাবা আর কিছু খাবা?? আমি মিষ্টি ভর্তি ফোলা মুখে জবাব দিলাম- না আন্টি, কিছু লাগবে না।। আন্টি আমাকে বললো- আচ্ছা আরও মিষ্টি এনে দেই, মিষ্টি মনে হয় তোমার অনেক পছন্দ, এই রিপনে আনছে, ও হইলো আমার বড় বোনের ছেলে।। বিয়ে করছে এই জানুয়ারীতে, এই প্রথম বউমাকে নিয়ে আমাদের বাড়িতে আসলো।। আমি হাঁফ ছেড়ে বাঁচলাম, যাক্ বাবা হিয়া দুষ্টমি করেছে আমার সাথে।। এই লোক ওর খালাতো ভাই, বয়ফ্রেন্ড না।। আবার একটু পরেই ভাবলাম, অনেকে তো কাজিনের সাথেও রিলেশন করে, সেরকম কিছু না তো।।
যাই হোক, সেই রহস্য নিয়ে আর মাথা ঘামালাম না।। দুপুরে খেয়ে দেয়ে হিয়াদের বাসা থেকে বিদায় নিলাম, হিয়াও আমার সাথে বের হলো।। আন্টি তেমন কিছু মনে করলেন না।। হিয়া শুধু বললো- আম্মা আমি একটু আসতেছি শোভনকে এগিয়ে দিয়ে আসি।। বাসা থেকে বের হয়ে বাইক স্ট্যার্ট দিলাম, সোজা হিয়াকে নিয়ে জেলা শহরের পার্কে গেলাম।। আমার জানতে হবে ওর কি আসলেও খালাতো ভাইয়ের সাথে প্রেম ছিলো কিনা।।
পার্কে বসতে যাবো, এমন সময় একটা গাছে সেঁটে দেয়া নোটিশ ঝুলানো দেখলাম- “গাছের গায়ে প্রেমিকের নাম খোদাই করার বদলে, নিজের প্রেমিকের নামে একটা গাছ লাগান।” এই কথাটা আমার তীরের মত অন্তরের অন্তঃস্থলে গিয়ে আঘাত করলো, আমি হিয়াকে বললাম- লেখাটা দারুণ না।। হিয়া মাথা নেড়ে সায় দিলো।। হিয়াকে বললাম- তোমাদের এখানে আশেপাশে কোথাও নার্সারী আছে? চলো, তোমার নামে একটা গাছ কিনবো, বাসায় খালি টব আছে, লাগিয়ে বারান্দায় রাখবো।।
হিয়া খুশি মনে সম্মতি দিয়ে বললো- আচ্ছা আমিও তবে তাই করবো, প্রেমিকের উদ্দেশ্যে গাছ রোপন করা সত্যি জোস আইডিয়া।। আমি নার্সারী ঘুরে ঘুরে সুন্দর একটা গোলাপের চারা কিনে, হিয়ার কাছে এলাম।। হিয়া এরমধ্যে নয়টা গাছ কিনে ফেলেছে, আরও নাকি কিনবে!! আমার ভিতরটা সাথে সাথে চিৎকার দিয়ে বলে উঠলো- ওরে আন্টি রে, আপনার মেয়ে তো শুধু টক ঝাল মিষ্টি না, এরমধ্যে তো তিঁতাও আছে, ভীষণ তিতা।। সে এতগুলো গাছ কার উদ্দেশ্যে কিনলো!!