একটা পুরোনো বই কিনেছিলাম। সেকেন্ড বা থার্ড/ফোর্থ হ্যান্ড হবে। কিছুটা দুষ্প্রাপ্য বই, তাই কিনে নিয়েছিলাম।
সেই বইয়ের ভেতরে হুট করে এই চিঠিটা পাই। জানিনা চিঠিটা তার প্রাপকের কাছে পৌঁছেছিলো কিনা… …
–
সুহৃদ,
আপনার পাঠানো বইটা পেলাম আজ। আকুল আগ্রহে অপেক্ষায় ছিলাম। নতুন বই তো আনন্দের বটেই, তারচেয়ে বেশি আগ্রহ ছিলো,
আপনি পাঠাচ্ছেন বলে। আর সবচাইতে বেশি অপেক্ষা ছিলো, বইয়ের প্রথম পাতায় আপনি কী লিখে দেন, সেটা জানার!
বইটা পাঠানোর সময় বলেছিলেন, আমার জন্য কিনে নিজেই আগে পড়েছেন, তাই যেনো কিছু মনে না করি।
আমি যে তাতেই বেশি খুশি হয়েছি, সেটা কি করে জানাই বলুনতো! সদ্য বাদামী মোড়ক খোলা বইয়ে আঁঠার গন্ধ,
কালির গন্ধ আর সব ছাপিয়ে আপনার হাতের স্পর্শ পেলাম যেনো!
আপনি কি জানতেন, ঐ গন্ধটাই আমি খুঁজে নিবো? আপনি কি জানতেন এই বইটা আমার আগেই পড়া? জানতেননা জানি।
নইলে কি আর পাঠাতেন! নইলে কি আর জানতাম যে বইয়ের প্রথম পাতায় আপনি আমাকে গোটা একটা আকাশ চিনিয়ে দিবেন!
এই আকাশটার লোভেই মিথ্যে করে বলেছিলাম, পড়িনি এই বই, খুঁজেই পাইনি কোথাও!
সেদিন বইয়ের দোকানে দেখা হলো আপনার সাথে। তারপর আমি আরো দুদিন গিয়েছিলাম সেখানে।
যে বইগুলো ওদের এনে দিতে বলেছিলাম, সেগুলোর জন্য নয়, আপনার জন্যই। দেখা হয়নি আপনার সাথে, হওয়ার কথাও ছিলোনা।
শুধু একটা প্রত্যাশা ছিলো , যদি দেখা হয়ে যায়!
সেদিন কবিতা পাঠের আসরে আপনি জীবনানন্দের কবিতা পড়ছিলেন, আমি একদম পেছনের সারিতে ছিলাম।
একবার চোখে চোখ পড়েছিলো হয়তো। পরে ভীড় ঠেলে সামনে গিয়ে বসলাম ভালো করে শুনবো বলে।
তখন মনে হচ্ছিলো, আপনি ঐ পেছনের সারির ভীড়ের দিকেই বারবার তাকাচ্ছেন! ভুলও হতে পারে আমার,
কিন্তু সেদিন ওরকম ভেবে খুউব ভালো লাগছিলো। ওরকম ভাবতে আমার এখনো ভালো লাগে…
আপনার বাড়ির ঠিকানা যোগাড় করেছিলাম পত্রিকা অফিস থেকে। অনেক আগেই ঠিক করেছিলাম, চিঠি লিখবো একটা।
হয়ত পোস্ট করবো না। কিন্তু ডোরাকাটা বর্ডারের একটা খামে আপনার ঠিকানা লেখা একটা চিঠি আমি লিখতাম ঠিকই।
আপনাকে একটা চিঠি লেখার খুব ইচ্ছে ছিলো। আপনাকে একটা চিঠি প্রায়শই লিখি, মনে মনে…
আপনার পাঞ্জাবীটা একটু পুরোনো হয়ে গেছে। ইচ্ছে হয়, আপনাকে একটা নীল পাঞ্জাবি দেই।
এবার টিউশনির টাকা পেলে কিনে দিবো একটা, ঠিক ওরকমই। জানি দেয়া হবে না। আপনিও নিতে চাইবেন না হয়ত।
কিংবা হয়ত চাইবেন, কিন্তু অযথা অযুহাতে আবার ফিরিতেও দিতে পারেন। থাক, দিলাম না নীল পাঞ্জাবী।
আপনার প্রত্যাখ্যান ভালো লাগবে না আমার। তা সে যাইই হোক না কেনো।
বইটার জন্য ধন্যবাদ। আর ভেতরের প্রথম পাতায় যে শুভেচ্ছা বাণি জানালেন, তার জন্য আজীবন কৃতজ্ঞতা।
খুব বেশি না, শুধু ঐটুকুই প্রয়োজন ছিলো আমার। এর বেশি চাইবার অভ্যাসই হয় নি কখনো। এর কমও হয়ত মানতে পারতাম না।
ঠিক ঠিক এরকমই চাই আমি। মাঝে মাঝে নতুন বা পুরাতন বইয়ের প্রথম পাতায় একটা দুই লাইনের চিঠি, একটা আকাশ, ব্যস…
“সুরঞ্জনা, আপনার চোখে আকাশ দেখতে পাই।
মেঘ না জমুক আমার আকাশে, রোদ্দুর হয়ে ভরিয়ে রাখুন সব সময়…..”
ইতি,
সুরঞ্জনা