—- এই নিশু, নিশু শুনছ।(আমি)
—- হুম, বলো।(নিশু)
—- এই নাও। ( শপিং ব্যাগ দেখিয়ে বলল)
—- এখানে কি আছে???
—- খুলেই দেখ না। তার মাঝে আমাদের পরিচয়টা দিয়ে নি আমি তৌকি আর যার সাথে কথা হচ্ছিল সে আমার স্ত্রী নিশু।
—- আচ্ছা,,,,ওয়াও! শাড়ী!! বৈশাখীর শাড়ী!!!(নিশু)
—- হুম। আরও আছে,, খুলে দেখ। নিশু একে একে সব গুলো ব্যাগ খুলল।
—– ওয়াও চুড়ি, কানের দুল, চুলের খোপা, গলার হার। এতকিছু ম্যাচিং করে আনলে।
—— হুম আনলাম।
—— এত কিছু আনার কি দরকার ছিল??
—— কেন তোমার পছন্দ হয় নি??
—— কেন পছন্দ হবে না। আমার জামাই আমার জন্য ভালবেসে এনেছে আমার পছন্দ না হয়ে যাবে কোথায়??
—— তো বললে কেন, এত কিছু কেন আনলাম?
—— আরে বাবা, আমার তো সবই ছিল। তাই বলেছি।
——- তো কি হয়েছে। আমার বউকে আমি সব সময়ই দিব। তাতে তোমার কোন সমস্যা?
——– হি হি হি!! আচ্ছা আচ্ছা দিও।। আমার কোন সমস্যা নেই। আরও বেশি করে দিও তোমার বউ কে!!!
——– হুম!!!
——– আচ্ছা একটু ওয়েট কর আমি এখনই আসছি।
——— ওকে। নিশু ভেতরে গেল।গিয়ে একটা শপিং ব্যাগ নিয়ে এল।
—— এই নাও।
——- কি এটা??
——- নিজেই খুলেই দেখে নাও!!!
——- আচ্ছা দেখছি।(পাঞ্জাবী দেখে বলল) এটা কেন কিনতে গেলে?
——- তো কি হয়েছে?
——- আমার তো ছি বলতে গিয়ে আটকে গেল। কারন এখন এই কথা বললে নিশু ওই কথাটার বিপরীত বলবে। তাই বলতে গিয়ে বলতে পারলনা।
——— কি হল থামলে কেন? বল না কথাটা??
——— হা হা হা!! না থাক না। পাঞ্জাবী কখন কিনলে?
——— এই তো দু দিন হল কিনলাম। পছন্দ হয়েছে কিনা তাই বল?
——— হুম বেশ পছন্দ হয়েছে। কিন্তু তুমি টাকা পেলে কোথায়? আমি তো তোমাকে কোন টাকা দিয়ে যাই নি?
——— আমি একটু একটু করে টাকা জমিয়ে ছিলাম। আমাকে সংসার চালানোর জন্য যা দিতে তার থেকে একটু একটু করে জমিয়েছি।
— আমি হত বাক হয়ে গেলাম। এই মেয়ে আমাকে এত ভালবাসে। যার কারণে আমার জন্য সংসার খরচ থেকে টাকা জমিয়ে পাঞ্জাবি কিনেছে। আমি নিশুকে জড়িয়ে ধরলাম।
——– এই কি হল তোমার(নিশু)
——– না কিছু হয় নি। তুমি আমাকে এত ভালবাসো।
——– হুম। আমার এই জীবনের থেকেও বেশি। তুমি চাইলে আমার এই প্রানটা ও দিয়ে দিতেও রাজি।
———- এই পাগলি চুপ!! এই সব বলে না। আমি কেন চাইব। আমি চাই তুমি আমাকে এইভাবে সারা জীবন ভালবেসে যাও।
———- হুম আমি ভালবাসলেই হবে। আপনার ভালবাসতে হবে না!!!! আমাকে তো ভালই বাসেন না??
———- আমি তোমাকে অনেক ভালবাসি। যদি আমার বুক চিরে দেখাতে পারতাম তোমার জন্য কতটুকু ভালবাসা আছে।
——— হুম হইছে। কখনও তো দেখি না একটুও ভালবাসতে।( অভিমান করে বলল)
——— তাই বুঝি। আচ্ছা এখন ভালবেসে দেখাব নাকি।
——– না না থাক। এখন ভালবাসতে হবে না।
——– আচ্ছা। এই তুমি কষ্ট করতে গেলে কেন? আমাকেই বললেই পারতে আমি তোমাকে টাকা দিতাম।
——— একেই বলে ভালবাসা বুঝেছ। চাইলে তোমার থেকে টাকা নিতে পারতাম। নেই নি কারণ আমি নিজের টাকা দিয়ে তোমাকে কিনে দিব বলে ঠিক করেছিলাম। নিজের কষ্টের টাকা দিয়ে নিজের ভালবাসার মানুষকে কিছু দিলে তার মাঝে লুকিয়ে থাকে অজস্র ভালবাসা।
———– হুম। I love u নিশু। আমারর জীবনে তোমাকে পেয়ে সত্যি ধন্য।
———– আমিও তোমার মত স্বামী পেয়ে অনেক সুখি। আমার চেয়ে সুখি এই পৃথিবীতে দুটো আছে বলে মনে হয় না।(চোখের জল ছেড়ে দিয়ে বলল)
———– আরে পাগলি কাদে না।
———– না তো কাদছি না।
———– মিথ্যে বলছ কেন?? আমি দেখেছি তো।
———– এটাই ভালবাসা।
———– আহারে এত ভালবাসা আমি কই যে রাখি।
———– এখন আপাতত ভালবাসা মনের মধ্যে রাখ। খেতে আসো তো। কখন থেকে ক্ষুধা লেগেছে আমার তোমার জন্য অপেক্ষা করতে করতে শেষ আমি।
———- তো খেয়ে নিলেই তো পারতে। নিশু আমার দিকে বড় বড় চোখ করে তেড়ে এল। আর আমার কলার চেপে ধরে বলল
———- ওই তোকে ছাড়া কখন ও কি খেয়েছি।হুম!!!!
———- না না তা খাও নি।
———- তো বললি কেন খেতে???
———- না তোমার তো বেশি ক্ষুধা লেগেছে তাই বললাম।
———- হুম লেগেছে তো। তাই তোকে বললাম তাড়াতাড়ি খেতে বসতে।
আর তুই বলছিস খেয়ে ফেলতে। যা আর খাবই না। এই বলে নিশু বেড রুমে গিয়ে শুয়ে পরল। আমিও আর কথা না বলে সোজা ওয়াশ রুমে চলে গেলাম। ফ্রেশ হয়ে এসে দেখি নিশু ঘুমের ভান করে ওপাশ ফিরে শুয়ে রয়েছে। আমি টেবিলে গিয়ে বসলাম। আর নিশুকে শুনিয়ে শুনিয়ে বললাম,,,
—— আমি খেতে বসে গেলাম। আহহহহ খাবারটা খুব স্বাদ হয়েছে। এতো মজা করে রান্না করতে পারও কি করে তুমি। কাল আবার এই খাবার গুলো রান্না করো তো। দেখি ম্যাডামের কোন সাড়া শব্দ নেই।
নাহ আমি আসলে আমি প্লেটে খাবার নিচ্ছিলাম। আমিও কি এভাবে খেতে পারি। আমিও কখনও নিশুকে ছাড়া খাই নি। যাই ম্যাডামের রাগ ভাঙ্গাই গিয়ে। প্লেটটা পাশের টেবিলে রেখে ওর পাশে গিয়ে শুয়ে পরলাম। আমি নিশুকে ডাকছি কিন্তু কোন কথা বলে না।
———- নিশু, নিশু,এই নিশু
———-(No reply)
———- নিশু জেগে আছো তুমি। নাকি ঘুমিয়ে গেলে।
———(No reply)
——— কথা বল না প্লীজ।
ও কথা বলছে না, তাই ওকে শুয়ে জড়িয়েছি। ওকে ওপাশ থেকে এপাশে ফিরানোর চেষ্টা করছি। শক্ত করে শুয়ে আছে নিশু। আমিও নাছোড়বান্দা আমিও ওকে জড়িয়ে ধরে আছি। ওর মুখটা ফিরাতেই দেখলাম ও কাদছে। ও পেটে হাত দিয়ে কাদছে। উফফফ আমি তো ভুলই গিয়ে ছিলাম নিশুর একটা সমস্যা আছে। ও ক্ষুধা সহ্য করতে পারে না। ক্ষুধায় ওর পেটে ব্যথা হয়। এই ভুল তো আমারই।
——— সরি নিশু সরি”!!!!
——— আমার ভুল হয়ে গেছে। আমার মনে ছিল না তুমি ক্ষুধা সহ্য করতে পারও না। আর তাই তো তোমাকে বলেছিলাম আগে খেয়ে নিতে।
——— কেন তুমি জান না আমি তোমাকে ছাড়া কখনও খাই নি।
———- উফফ নিশু এমন পাগলামি কর কেন???? খেয়ে নিলে কি সমস্যা। আমি কখনও রাগ করব না।
———- তাহলে তো আমি খাবই না। যাও তুমি খেয়েছ তো এখন ঘুমাও।
———– না ঘুমাব না।
———– কেন?
———– এমনি।
———— উফফ!!! আআআআআআআআ( পেটে হাত দিয়ে)
———– এমন পাগলামি করছ কেন নিশু। তোমার এমন কষ্ট আমি সহ্য করতে পারি না। তুমি খাও নি বলে আমিও খাই নি।
———– কেন খাও নি। সব খাবারই বেরে রেখেছি।
———– তোমাকে ছাড়া আমিও কি খেতে পারি নাকি।
———- কেন পার না?
———- ভালবাসি যে তাই।
———- তাহলে আমাকে কেন বললে যে আগে খেয়ে নিতে?
———- আচ্ছা সরি। আর এমন হবে না। আমার ভুল হয়েছে। এই বারের মত মাফ করে দাও।প্লীজ।
———- হুম।
———- হুম বললে হবে না। মুখে বল।
———- আচ্ছা মাফ করলাম।
———– এই বার হা কর।।
———– হুম।। এই বার তুমিও কর। আমিও খাইয়ে দিচ্ছি। দুজন দুজনকে খাইয়ে দিলাম। খাওয়া দাওয়ার পর আমি নিশুকে বললাম।
——– কাল আমরা সারাদিন ঘুড়ব।
——– হুম। তাহলে আমরা রমনা বটমূলে যাব কেমন।
——– হা যাব। আর মঙ্গলশোভা যাত্রায় ও যাব।
——– সত্যি। উম্ম্ম্ম্ম্ম্ম্ম্ম্মা।
——– নিশু আমাকে খুশিতে একটা চুমো দিয়ে দিল।। তুমি খুশি তো।
——– হা অনেক। আমি কখনও যাই নি। অনেক ইচ্ছে ছিল। পরে ভেবেছি আমার জামাইয়ের সাথে যাব।
——– আচ্ছা কালকে যাব। তোমার যেখানে যেতে ইচ্ছা করবে সেইখানে যাবে।
——– লাভ ইউ বাবু।
——– লাভ ইউ টু। চল তাড়াতাড়ি ঘুমিয়ে পড়।
——– হুম চল।
আমরা দুজনই শুয়ে পরলাম। নিশু আমার বুকের মাঝে ঘুমায়। আমাকে ছাড়া ওর ঘুমই আসে না। আমার নিশু আসলেই একটা পাগলি। আবার পাগলিকে জড়িয়ে না ধরলেও আমারও ঘুমও আসে না। পরেরদিন খুব ভোরে দুজনের ঘুম ভাঙ্গল। নিশু গোসল করে তৈরি হতে লাগল। আমিও গোসল করে নিশুর দেয়া পাঞ্জাবি পরে তৈরি হচ্ছি। নিশুর পাঞ্জাবিটা সত্যি খুব পছন্দ হয়েছে আমার। নিশুও খুব সুন্দর করে সাজল। ওকে এতো সুন্দর লাগছিল যে বলে বুঝাতে পারব না। নিশু এমনিতে অনেক সুন্দরি। তার মধ্যে হালকা সাজ। উফফ কি দারুণ লাগছে। চোখ ভর্তি করে কাজল দিল, হাত ভর্তি চুড়ি, খোলা চুলের কি শুভাস, খোলা চুলে মাথায় ফুলের টায়রা। ঠোট জোড়া তো আর ও বেশি সুন্দর লাগছে।কড়া লাল লিপস্টিক লাগিয়েছে। দেখতে একটা অপ্সরি লাগছে। নিশুর ডাকে ধ্যান ফিরল….
—— কি হল যাবে না..
—— ওহহহ চল।
—— হুম চল।
একটা রিক্সা নিয়ে দুজনে বাসার থেকে বের হলাম। প্রথমে রমনা বটমূলে গেলাম। নিশু আর আমি দুজনই অনেক ছবি বললাম। নিশু তো ছবি তুলায় ব্যস্ত। পরে চারুকলা থেকে মঙ্গলশোভা বের হওয়ার আগে চলে গেলাম। সেই খানে নিশুকে নিয়ে গেলাম। নিশু তো পাগলি নিজের সেলফি আমার সাথে সেলফি তুলছে। ও যা ইচ্ছা করুক। আমি ওর সব দুস্টমিকে ভালবাসি। পান্তা ইলিশ খেয়ে আমরা বৈশাখি মেলায় গেলাম। ওর মন যে খানে চেয়েছে সেখানে নিয়ে গেলাম। আমরা মেলার এক কোনে বসে বসে গল্প করে সময়টা কাটিয়ে দিলাম। নিশু আজকের দিনটির জন্য বেশ খুশি। ওর খুশিতে আমার খুশি। এভাবেই সময়টা কেটে গেল কখন তা বুঝতেই পারি নি। বাসায় আসার আগে আমরা খেয়ে আসলাম।
–বাসায় এসে দুজন ফ্রেশ হয়ে বিছানায় শুয়ে শুয়ে গল্প করছি। নিশু আমার বুকে মাথা দিয়ে শুয়ে আছে।
—— আজকের দিনটি কেমন কেটেছে তোমার??
—— অনেক ভাল। বিশেষ করে তোমার সাথে ভাল।
——- আমারও বাবু। আজকের দিনটি আমার সেরা দিন ছিল। আগে তুমি ছিলে না আজ তুমি আছো।
——- আমার জীবনেরও সেরাদিন ছিল এটি।
——- হুম বাবু। লাভ ইউ।
—— লাভ ইউ টু।
——- পাগলি আমার।
——- পাগল।
——- তা ও তো তোমারই।
——- হিহিহি!!! আমি নিশুকে জড়িয়ে ধরে আছি। নিশুও আমাকে ধরে আছে। আমি আমার নিশুকে অনেক ভালবাসি।।