বিরিয়ানিময় ভালবাসা

বিরিয়ানিময় ভালবাসা

বাসা থেকে বের হয়ে রিক্সার জন্যে অপেক্ষা করছিলাম।তখনি কেও একজন উপর থেকে পানি ঢেলে আমাকে একদম ভিজিয়ে দিল।

এমনিতেই দেড়ি হয়ে হয়ে গেছে।এখন আবার এই কাজটা কোন মহান ব্যাক্তি করলো।আমি সেই মহান ব্যাক্তিকে দেখার জন্যে উপরে তাকিয়ে দেখি নিধি দাঁড়িয়ে।হাতের বালতিটা নাড়িয়া নাড়িয়ে বললো,
-আমার কথা না শুনলে এমনি হবে।
আরে বাবা।উনি কি ই বা বললো আর আমি কি ই বা শুনলাম না।

এদিকে অফিসের সময় হয়ে গেলো।আমি চেঞ্জ করার জন্যে রুমে ঢুকতেই ফোনের মেসেজ টোনটা বেজে উঠলো।আমি চেক করতেই দেখি নিধির মেসেজ।খুব ছোট্ট করে লেখা,
-কালো শার্ট আর কালো ব্লেজার পড়তে বলেছিলাম।পড়েছিলে অন্যটা।আর যদি ভিজতে না চাও কালোটা পড়েই অফিস যাও।

আমি পড়ার জন্যে হাতে রাখা ব্লু শার্টটা রেখে দিলাম।আমি আর ভিজতে চাই না।কালো শার্টটার পড়ে নিলাম।কি ডেঞ্জারাস মেয়েরে বাবা।”

নিধি আমাদের পাশের ফ্লাটেই থাকে।যেদিন থেকে এই বাসায় উঠেছি সেদিন থেকেই মেয়েটা আমার পিছু নিয়েছে।তবে মেয়েটা ফাজিল হলেও মিষ্টি আছে।বেশ সুন্দর দেখতে।”
:-সাবধানে যেও।

‘রিক্সায় উঠতেই কেও একজন কথাটি বললো।আমি উপরে তাকিয়ে দেখি নিধি বেলকুনিতে দাঁড়িয়ে হাত নাড়ছে আর কথাটি বলছে।
আমি নিধিকে কিছু না বলে শুধু হাত নাড়ালাম।হাত না নাড়ালে যদি আবার পানি ঢেলে দেয় তাহলে আরেক বিপদ।”

অফিসে বসে কাজ করছিলাম।তখনি ফোনটা বেজে উঠলো।এদিকে প্রায় দুপুর হয়ে গেছে।সবাই হয়তো ক্যান্টিনে গেছে খাওয়ার জন্যে।আমি ফোনটা তুলতেই দেখি নিধির ফোন।মেয়েটা আবার এই সময় কেন ফোন দিল।
আমি ফোন ধরতেই নিধি বললো,

-অনেক কাজ হইছে।যাও এখন খেয়ে নাও।
নিধির কথায় আমি কিছুটা অবাক হলাম।ও কিভাবে জানলো আমি এখনও খাইনি।তাছাড়া খাওয়ার সময়ও তো চলে গেছে।আমি বললাম,
-খেয়েছি তো।
-মিথ্যা বলবা না আমার সাথে।আমি কিন্তু সব বুঝতে পারি।
আমি আর কিছু বলতে পারলাম না।মেয়েটা কিভাবে সব বুঝে যায় সেটাই বুঝি না।আমি নিধিকে বললাম,
-মনে হচ্ছে তুমিও খাওনি এখনও?
নিধি আমার কথায় একটু চুপ থেকে বললো,
-তোমার অপেক্ষায় ছিলাম।
-তাহলে চলো খেয়ে নেই।
-আচ্ছা।
কথাটি বলেই নিধি ফোনটা কেটে দিল।মেয়েটা দুষ্টু হলেও ভালবাসতে জানে।”

বাসায় এসে ফ্রেশ হয়ে বের হতেই বিরিয়ানির গন্ধে একদম পেট ভরে গেলো।
আম্মা কি বিরিয়ানি রান্না করলো নাকি।আজ বেশ মজা করে খাওয়া হবে।বিরিয়ানি।একটা ভালুবাসার নাম।আমি রুম থেকে বের হতেই আম্মা বললো,
-টেবিলে বস,আমি খাবার দিচ্ছি।
-হু তাড়াতাড়ি দাও।গন্ধে এমনিতেই পেট ভরে যাচ্ছে।
আমি টেবিলে বসতেই আম্মা প্লেটে বিরিয়ানি দিয়ে বললো,
-খেয়ে বল কেমন হইছে?
আমি কোনমতে হাতটা ধুয়ে খাওয়া শুরু করলাম।উম্ম অনেক মজা।মনে হচ্ছে এত স্বাদের বিরিয়ানি কোনদিনও খাই নি।
-মেয়েটা কিন্তু বেশ ভাল।বিয়ে করে নিলেই তো এমন রান্না প্রতিদিন খেতে পারিস।
আম্মার কথায় আমি ওনার দিকে তাকালাম।তার মানে রান্নাটা আম্মা করেনি।অন্য কেও করেছে।আমি আম্মাকে বললাম,
-তুমি রান্না করোনি?
-না।
-তাহলে কে রান্না করলো?
-নিধি।
আম্মার মুখে নিধির নাম শুনে আমি একটু অবাকই হলাম।এই মেয়ে আমার জন্যে বিরিয়ানি রান্না করেছে।আমি আম্মাকে কিছু বলার আগেই আম্মা বললো,
-জানিস মেয়েটা কিন্তু তোকে একটু বেশীই ভালবাসে।

সেটা তো আমি ভাল করেই জানি।আমি যে ওকে ভালবাসিনা এরকমও তো না।
আমি খাওয়া শেষ করে উঠতেই আম্মা বললো,
-মেয়েটার হাতের এখন কি অবস্থা আল্লাহই জানে।
আমি আম্মার কথায় বললাম,
-কেন হাতে কি হইছে?
-বিরিয়ানির মাংস কাটতে গিয়ে হাত কেটে গেছে।আমি কত করে বললাম যে,আমিই রান্না করি কিন্তু মেয়েটা কাটা হাত নিয়েই রান্না করলো।
আম্মার কথায় আমার মনটা একটু খারাপই হলো।
মেয়েটা আমার জন্যে কাটা হাত নিয়েই রান্না করলো।তার মানে ও রান্না করেই চলে গেছে।হয়তো এখনও কিছু খায়নি।

আমি প্লেটে বিরিয়ানি নিয়ে রুম থেকে বের হতেই আম্মা বললো,
-কই যাস,আর এটা কার জন্যে?
-নিধির জন্যে।
আমার মুখে নিধির নাম শুনে আম্মা মুচকি হেসে বললো,
-এত প্রেম।

আমি আর কিছু না বলে নিধিদের বাসার কলিংবেলে চাপ দিলাম।একটু পর নিধির মা এসে দরজা খুলে দিয়ে বললো,
-বাবা তুমি,আসো ভেতরে আসো।
আমি ভেতরে গিয়ে নিধির মা কে বললাম,
-নিধি কই?
-ওর রুমেই আছে।দাড়াও ডেকে দিচ্ছি।
-ডাকতে হবে না, আমিই যাচ্ছি।

রুমে ঢুকে নিধিকে দেখতে পেলাম না।হয়তো বেলকুনিতে আছে।আমি প্লেটটা টেবিলে রেখে বেলকুনির দিকে যেতেই ওর ল্যাপটপের উপর চোখ পড়লো।খুলেই রেখেছে।হয়তো কিছু করছিল।আমি স্ক্রিনে তাকিয়ে দেখি আমার ছবিই দেওয়া।হয়তো ফেসবুক থেকে নিয়েছে।

আমি বেলকুনিতে গিয়ে দেখি মেয়েটা চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছে।আমি নিধির পেছনে গিয়ে ওর কানের কাছে মুখ নিয়ে বললাম,
-ভালবাসো।
আমার কথায় নিধি পেছনে তাকিয়ে আমাকে দেখে চমকে উঠলো।তবে সেটা কিছু সময়ের জন্যে।আমি আবারও বললাম,
-ভালবাসো?
নিধি এবার আমাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বললো,
-একটু বেশীই ভালবাসি।
আমি আর কিছু না বলে মেয়েটাকে জড়িয়ে নিলাম।

নিধিকে খায়িয়ে দিচ্ছি আর মেয়েটা একমনেই আমার দিকে তাকিয়ে আছে।

থাকুক না এভাবে তাকিয়ে তাতে আপনাদের সমস্যা কি।বিয়েতে অবশ্যই দাওয়াত পাবেন।তবে শুধু বউ দেখার দাওয়াত।
(সমাপ্ত)

গল্পের বিষয়:
ভালবাসা
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত