– নিধীর বাবা মা এসেছিলো।
– মানে!কেনো?
– তোর নামে বিচার দিতে।
– কিসের বিচার।
– ইফটিজিং।
– এর চেয়ে থাপড়ানোর বিচার দিতো।কমপক্ষে সম্মানটা বাঁচতো।
– চুপ থাক,তুই নাকি নিধীকে রাস্তায় ডিস্টার্ব করিস?
– ওর মতন মেয়ের চেয়ে বাসার কাজের বুয়াকে ডিস্টার্ব করা বেশী পছন্দ করবো।
– দেখা যাবে,পরবর্তীতে আর একবার এমন কথা শুনলে তোকে বাসা থেকে বেড় করে দিবো।
– তুমি ওই মেয়ের জন্য আমায় এমন কথা বললে।আর এক মুহূর্তও এই বাসায় থাকার মানে হয় না।আমি এখনি বাসা থেকে চলে যাবো।
– কোথায় যাবি!কি খাবি!দুনিয়া এতো সোজা না।বাপের টাকায় প্রাইভেট কারওঘুরা যায়।বাসা থেকে চলে গেলে জিবনের আসল মানে বুঝবি।
– সেটাই বুঝতে চাই।ত্রিশ হাজার টাকা দেউ তারপর বুঝাবো রফি কি করতে পারে।
– কি করবি?
– রিক্সা কিনবো।
– রিক্সা দিয়ে কি করবি?
– চালাবো।
– তারপর!
– চালিয়ে যা টাকা পাবো তার অর্ধেক দিয়ে খাবো বাকি টাকা দশতলা বিল্ডিং করতে জমাবো।
– এক লক্ষ টাকা দিচ্ছি।তুই এক মাসে জাস্ট দশ টাকা লাভ করে দেখা।
– চ্যালেঞ্জ কইরো না।আজ পর্যন্ত আমার সাথে কেউ চ্যালেঞ্জে জিততে পারেনি।
– তোর বাপ জিবনে হারতে শিখেনি।
– ওকে ডান।এখন সাইড দেউ ক্লান্ত লাগছে,ঘুমাবো।
– তুই না এই মুহূর্তে বাসা থেকে বেড় হয়ে যাস?
– আমি বললেই কি তুমি বেড় হতে দিবা নাকি!
– তুই চাইলে বেড় হতে পারিস,আমার পক্ষ থেকে মানা নাই।
– নাহ্ থাক,কাল সকালে একবারে বেড় হবো।
এখন বাইরে খুব গরম।বলে রফি টেবিল থেকে খাবার নিয়ে রুমে গিয়ে দরজা আটকে দিলো। দরজা খুললো সকাল দশটায়,একবারে ব্যাগ ব্রিফকেস সহ। সেগুলো নিয়ে রফি ওর বাবার কাছে গিয়েবললো “আব্বু টাকা দেউ?”
– সত্যি চলে যাবি?
– হুম।
– ওকে,এই নে টাকা।[টাকার ব্যাগ এগিয়ে দিয়ে] রফি টাকা হাতে পেয়ে খুশি মনে হাঁটা দিবে তখনি তার বাবা বলে উঠলো “দাঁড়া,যদি চ্যালেঞ্জে হেরে যাস তবে আমার লাভ কি?”
– কি লাভ চাও তুমি সেটা বলো।[কনফিডেন্সে র সাথে]
– আমি যা বলবো তাই করবি।
– ওকে,আর তুমি হেরে গেলে?
– যা চাস তাই দিবো।
– ডান এন্ড টাটা।
বেচারা বালক বাসা থেকে বেড়িয়ো অসহায়ের মতন দুই হাতে আর কাঁধে ব্যাগ নিয়ে হাঁটছে। ত্রিশ মিনিট হেঁটে অনেকটা পথ যাওয়ার পর হঠাৎ কোথা থেকে একটা বাইক এসে ছোঁ মেরে টাকা ভর্তি ব্যাগ নিয়ে চোখের পলকে হারিয়ে গেলো। রফি তখন কিছুক্ষণ থমকে দাঁড়িয়ে ওর বাবা কে কল দিলো…
– হ্যালো আব্বু।
– হুম বল।
– হিহিহি।
– হাসছিস কেনো?
– তুমি কি চাও বলো?
– কি চাবো!
– মনেকরো তুমি চ্যালেঞ্জে জিতে গেছো।
– জানতাম এমন কিছু হবে।আচ্ছা তুই বাসায় আয় তারপর বলছি।
– ওকে আসছি। তারপর রফি আবার পেছন পথ হাঁটা শুরু করলো। বাসায় ফিরে বেচারা ভেজা বেড়ালের ন্যায় বাবার সামনে দাঁড়িয়ে আছে।
– কি হলো এতো ভদ্র বিহেভ করছিস যে?
– তুমি আমার বাবা বলে কথা,ভদ্র বিহেভ না করে পারি!
– বুঝছি,এবার আমার টাকা গুলো ফেরত দে।
– [নিশ্চুপ নিচের দিকে তাকিয়ে]
– কি হলো!
– ব্যাগ চুরি হয়ে গেছে।[নিচু স্বরে]
– কিইই।[চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে]
– হুম।
– সামান্য একটা ব্যাগ সামলাতে পারিস না আর বড় বড় কথা।টাকা কি পানিতে ভেসেআসে!এক টাকা কামানোর ক্ষমতা নেই আর এক লক্ষ টাকা হারিয়ে ফেললি।
– আজ আম্মু থাকলে [কান্নার সুরে]
– আম্মু থাকলে কি!তোকে বকা খাওয়া থেকে বাঁচাতো।আর কতবার বলবি এক কথা।তোর আম্মুরকথা ভেবে এতদিন কিছু বলিনি কিন্তু আজ যা করলি ভাবার বাইরে।
– ওকে আর এক লক্ষ দেউ এইবার শিওর জিতবো। [দাত সবগুলো বেড় করে]
– চুপ থাক।[ধোমক দিয়ে]
– আচ্ছা।[মাথা নিচু করে]
– লজ্জা লাগছে না সামনে দাঁড়িয়ে থাকতে! আমার তো ইচ্ছা হচ্ছে এখনি বাসা থেকে বেড় করে দিই।কিন্তু কি করার জন্ম দিয়ে ভুল একটা করে ফেলেছি।যার মাসুল আজ গুনছি।
– আব্বু জন্ম তো আম্মু…
– আবার কথা বলছিস!এখন যা বলি মন দিয়ে শোন।
– হুম।
– তোকে আমি আর মানুষ করতে পারবো না।তাই নিধীর ঘারে চাপিয়ে দিয়ে একটু শান্তি পেতে চাই।
– কিইই!এর চেয়ে তুমি বাসা থেকে বেড় করে দেউ।
– বুঝিস?
– না না থাক।তুমি যেটা ভালো মনে করো সেটা করো।[কিছুক্ষণ ভেবে]
– ওকে,তবে আগামীকাল তোদের বিয়ের সবব্যবস্থা করছি।
– কিন্তু…..
– যেই টাকা কামাতে আমার…
– আব্বু আমি রুমে যাচ্ছি।
বলে বালক লেজ গুটিয়ে রুমে পালালো। পরেরদিন ছোটখাটো আয়জনের মধ্য দিয়ে রফি আর নিধীর বিয়ে হয়ে গেলো। তারপর দুজন নিশ্চুপ বাসর ঘরে বসে।কেউ কিছু বলতে নারায।তবে এভাবে আর কতক্ষণ! তাই শুরুটা নিধী করলো “ভালবাসবে আমায়?”
– কিসের ভালবাসা!তুমি আমার আব্বু কে মিথ্যা বলছো কেনো!আমি তোমায় কবে ইফটিজিং করছি?
– তোমার এই মোটা মাথায় এগুলো কিছু ঢুকবে না।
– আগে বলো কেনো বলছো!তারপর দেখাযাবে।
– যদি বলি “আমি কিছু বলিনি,তবে তুমি বুঝবা?”
– কিছু না বললে আব্বু এমনি এমনি বললো?
– যদি বলি “হ্যা!”
– মানে!
– তুমি যদি তোমার বাবার এক অংশও বুদ্ধি পাইতা তবে আজ তোমায় বিয়ে করতে হতো না।
– তুমি আমায় অপমান করলা?
– যে যেটার যোগ্য!ইফটিজিং,চ্যালেঞ্জ,চুরি,বিয়ে সবকিছু ছিলো তোমার বাবার প্লানিং।
– কিইইইই!তারমানে তোমরা সবাই আমার সাথে ধোকা করছো?
– হুম,গাধাটাকে বিয়ে যে করার ছিলো আমার।
– কে গাধা!কিসের গাধা!
– যতটা বোকা সাজতে চাইছো ততোটাও বোকা তুমি না।ভালোভাবে বুঝতে পারছো গাধা তোমাকে বলছি।
– ভালো,ডিভোর্স কবে দিবা সেটা বলো।
– “ঠাসসস।”
– ভালবাসা না কি যেন চাইলা প্রথমে? [গালে হাত দিয়ে]
– হাহাহা,নেক্সটে যেন “ডিভোর্স” শব্দটা না শুনি।
– আচ্ছা।
তারপর দুজন কিছুক্ষণ নিশ্চুপ থেকে হঠাৎ রফি বলে উঠলো চলো ছাদে যাই। রফির মুখে এমন কথা শুনে নিধী থমকে গেলো। কিন্তু চমক যে আরো বাকি ছিলো,এরপরি রফি নিধীকে কোলে তুলে ছাদে নিয়ে গেলো।
নিধী রফির কাঁধে মাথা রেখে কালো আকাশে রঙিন চাঁদ-তারা দেখছে। সেই সুযোগে রফি নিধীর মায়াবী মুখখানার দিকে তাকিয়ে খুব ভালোভাবে মনের ছবি এঁকে নিচ্ছে।এই ছবি অনুসরণ করে যে বাকিটা পথ পারি দিতে হবে তাকে। এভাবে কিছুক্ষণ চলার পর রফি নিধীর চুল গুলো খুব যত্নসহকারে ঘারের থেকে সরিয়ে ভালবাসার ছোঁয়া এঁকে দিলো,যেটা দেখে নিধী মুচকি হেসে বললো “এভাবে সারাজীবন ভালবাসবেতো আমায়?” রফি তখন নিধীকে একহাত দিয়ে আলতো ভাবে জড়িয়ে ধরে বললো “এটা তো ট্রেলার ছিলো ম্যাডাম,রুমে চলেন ভালবাসার ফুল মুভি দেখাবো।”
সমাপ্ত