সারাদিন ক্লান্তি শেষে সন্ধ্যায় মাত্র বিছানায় শরীর মেলে দিয়েছে রাব্বি এমন সময় প্রিয়তা এসে পানি ঢেলে দিলো।
– এটা কি হলো?
– যা হবার হয়েছে,এখন গিয়ে গোসল করে আসো।
– এখন!
– হুম,নয় রাতে পাশে ঘুমাতে দিবো না।
– মাথায় জ্ঞান বুদ্ধি কিছু আছে?এটা গোসল করার সময়?
– তো কি!
– তো কি মানে!ক্লান্ত লাগছে বলে একটু শুলাম আর তুমি এসে ফাজলামি শুরু করে দিয়েছো,অসহ্য।
“সরি।” বলে প্রিয়তা টলমল চোখ নিয়ে অন্য রুমে চলে গেলো।রাব্বি জানে বালিকা এখন গিয়ে অঝর বৃষ্টি ঝরাবে।কিন্তু কি করার রাগ যে তারো চরম সীমা অতিক্রম করে গিয়েছে।অফিসে কাজের ঝামেলা এর মূল কারণ। সন্ধ্যা পেরিয়ে রাত হতে প্রিয়তা এসে বালিশ নিয়ে অন্যপাশে ঘুরে শুয়ে পরলো। রাব্বি তখন আলতো করে হাতটা ধরতে বালিকা এক ঝারা দিয়ে ফেলে দিলো। রাব্বি দ্বিতীয়বার আবার চেষ্টা করলেও প্রতিফলন একি ছিলো। মেয়েটা এমনি,নিশ্চুপ মায়াবী এক পরী।যাকে ভালবাসে হাজার কথা বললেও নীরবতায় সব শুনে নিবে কিন্তু রেগে আস্তে একটা ঝাড়ি দিলে অবস্থা খারাপ।
– প্রিয়তা।
– কি হইছে।[জোর গলায়]
– রাগ করছো।
– এখন একদম আলগা প্রেম দেখাতে আসবেন না। আমার ঘুম পাইছে,ঘুমাবো।
– কিন্তু আমার যে ঘুম পাচ্ছেনা না।
– জেগে থাকেন।
– তোমায় একটু জড়িয়ে ধরি?
– নো,ডন্ট টাচ্ মি।
– প্লিজ।
– আমি কিন্তু অন্য রুমে চলে যাবো।
প্রিয়তার মুখে এরূপ কথা শুনে রাব্বির বুকে অভিমান বাসা বাঁধলো,তাই সেও আর কিছু না বলে অন্যপাশ ফিরে শুয়ে পরলো।আর ভাবতে লাগলো ফেলে আসা অতীতের কথা বন্ধু মহলে সময় কাটিয়ে বাড়ি ফিরছে,এমন সময় চোখে আটকে গেলো অভূত সুন্দরী এক কন্যা। দেখে বোঝা যাচ্ছে মেয়েটা অন্য মেয়েদের মতো চনচল নয়,সাধাসিধা নিশ্চুপ ভাবনা প্রবণ মনের মালিক।যেটা কোনোভাবে রাব্বির হৃদয়ে স্পর্শ করে যায়। তবে এগিয়ে গিয়ে কথা বলা হবে সবচেয়ে বড় বোকামি,তাই রাব্বি মেয়েটাকে এড়িয়ে বাড়ি চলে গেলো।
ভাগ্যক্রমে রাতের ঘুম তার জন্য হারাম। পরেরদিন মেয়েটার খোঁজে সকাল সকাল বেড়িয়ে দেখা প্রথম হওয়ার স্থানে অপেক্ষা করতে লাগলো।তবে পথের কোনো ধারে মেয়েটার দেখা নেই।এদিকে সময় দু-ঘণ্টা পেরিয়ে গিয়েছে। অতঃপর অধীর অপেক্ষা শেষে ব্যগ কাঁধে মেয়েটার দেখা মিললো। সময় তখন এগারোটা ছুঁই ছুঁই। রাব্বি বুঝে নিলো এই সময়টায় বালিকা কোচিং করতে কলেজে যায়।ব্যস,জীবনে চলার পথে সময়টা তাঁর রুটিনে যোগ হয়ে গেলো।
যেটা অনুসরণ করে রাব্বি প্রতিদিন একি স্থানে এক ঝলক দেখায় আশায় অপেক্ষা করতে থাকতো।যা,আপন গতিতে অনুরূপ পর্যায়ক্রমে চলতে লাগলো। তবে এর মাঝে যোগ হলো ভার্চুয়াল জগত “ফেসবুক।” যেখানে রাব্বি-প্রিয়তা উভয়ের বসবাস ছিলো। ব্যস,সেখানে দুজনের মাঝে গড়ে উঠলো কথা বলার ছোট্ট এক মত বিনিময় কেন্দ্র। ফেসবুকে কথা আর প্রিয় সেই পথে দেখা এই নিয়ে রাব্বি ও প্রিয়তার মাঝে এক বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে উঠে।এবং এর মাঝে রাব্বি কতবার প্রিয়তাকে “ভালবাসি” বলেছে এর কোনো হিসাব নেই।ভাগ্যক্রমে উত্তর কিছুই মিলেনি। তবে সেও নাছোড় বান্দা,ইঞ্জিনিয়ারিং কম্পিলিট করে ভালো একটা জব পেতেই মেয়েটার বাড়ি বিয়ের প্রস্তাব পাঠায়। ছেলের স্বভাব চরিত্রে কোনো খুত না দেখতে পেয়ে মেয়ের বাড়ি থেকেও রাজি হয়ে যায়। চোখের সামনে সবকিছু ঘটে চললেও প্রিয়তা মুচকি হাসি আর লোনাজল ছাড়া কিছু উপাহার দিতে পারেনি।
এভাবে চলতে চলতে ধুমধাম করে দুজনের বিয়ে হয়ে যায় এবং পালা এলো বাসর ঘরের। রাব্বি ঘরে প্রবেশ করতে প্রিয়তা উঠে এসে সালাম করলো। তারপর দ-ুরাকাত নফল নামাজ আদায় করে খাটে দুজন পাশাপাশি বসে আছে। এভাবে কিছুক্ষণ চলার পর রাব্বি মজার ছলে বললো “তোহ্,ডিভোর্স নিবা কবে?” এমন কথায় প্রিয়তা অল্প সময় নিশ্চুপ ভাবনায় প্রবেশ করে নিমেষে কান্না শুরু করে দিলো। রাব্বি তখন ঘাবড়ে গিয়ে নিজ হাতে চোখের পানি মুছে দিয়ে বললো “কান্না করছো কেনো,আমি তো মজা করছিলাম।তোমার মতন এরূপ পরীকে কেউ ডিভোর্স দিতে চায় বলো?”
– বললেন কেনো তবে?
– আর বলবোনা।
– ভুলে আর একবার এই কথা উচ্চারণ করলে আমি মরে যাবো।
– কিইইই?
– হুম।
– আচ্ছা এখন কান্না থামাও।
কথাগুলো কল্পনা করতে করতে খেয়াল করলো পাশে প্রিয়তা ফুঁপিয়ে কান্না করছে। রাব্বি তখন সব রাগ অভিমান চাপা দিয়ে প্রিয়তাকে নিজের দিকে ঘুরিয়ে কপালে আলতো ছোঁয়া এঁকে দিলো।
– আপনি আমায় টাচ্ করলেন কেনো?
– সরি।
– রাগ করার সময় মনে থাকেনা?[অভিমানী সুরে]
– ভুল হয়ে গেছে।
– আর এমন করবেন নাতো।
– না।
– সত্যি!
– সত্যি।
– ওকে,তবে এখন আদর করেন।[এক মুঠো মন ভুলানো হাসির সাথে]
চাইলে তো ফুলকে ছিরে ফেলে দেওয়া যায়। কিন্তু কি লাভ তাতে! বরং, তাকে আলতো করে ছুঁয়ে সুভাষ নিয়ে দেখো,বুঝবে এর মর্ম। আর নারী!সেতো ফুলের বাগান তাই তাকে অবহেলা না করে ভালবাসা দিয়ে পরিচর্যা করো। দেখবে সেও কিভাবে তোমার বাড়ি ফুলে ফুলে সাজিয়ে তোলে।
সমাপ্ত