-এই এই তোমাকে কে বলছে কাপড় ধুইতে। জানো না তুমি প্রেগন্যান্ট। কাপড় ধোয়ার জন্য আমি আছি না। যাও একদম যাও রেস্ট করো। (আমি)
-ইয়ে মানে তবুও ধীরে ধীরে করার (বউ)
-চুপ একদম চুপ যাও তুমি খাটে শুয়ে থাকো। (আমি)
-রায়হান কি হয়েছে, বউকে ধমকাচ্ছিস কেন? বউ প্রেগন্যান্ট নাহ!! সুন্দর করে কথা বল। (আমার মা)
-না আম্মা কিছু না ও কাজ করতে গিয়েছে তাই দমক দিয়েছি একটু, বলছিলাম রেস্ট নিতে।(আমি)
-বউ মা কি হয়েছে আমরা থাকতে তুমি কেন কাজ করতে যাও আমাদের জানাবা তো। আসো আসো বিছানায় বসো, বলো এখন কি খেতে মন চাই তোমার। (মা)
-আম্মা তেমন কিছু না। (বউ)
-আরে বলো তো লজ্জার কি আছে বলো, নইলে বাপের বারি পাঠিয়ে দিবো। (মা)
-আম্মা কি বলেন, ভুলেও না একটু টক খেতে মন চাই কিছুক্ষন পরপর। (বউ)
-এই রায়হান শুনছস তোর বউয়ের জন্য ১ কেজি তেঁতুল নিয়ে আয় ভালো দেখে। (মা)
-জ্বি আম্মা যাচ্ছি। (আমি)
-শোনো বউমা বড় কিছু লাগলে আমাদের বলবা, এখানে ভয়ের কিছু নেই, তুমি এমন কাজে হাত দিয়ো না যাতে ক্ষতি হয়। সবকিছু আমাদের জানাবা, নইলে আমার মিঃ ও মিসেস বেয়াইসাব দের অভিযোগ দিব তুমি ভালো না কি মেয়ে দিলে আমাদের। (মা)
-ইয়ে শাশুড়ি আম্মা ঠিক আছে, যা বলবেন তাই করব। (বউ) (২ঘন্টা পরে….)
-শোনো বউ, সবসময় খালি তেঁতুল খাবা না। আমি জানি মেয়েদের টক খাওয়া অভ্যাস আনলিমিটেড। সো মাঝেমাঝে খাও সবসময় না বুঝলে? (আমি)
-হুম বুঝছি। (বউ)
-এই রায়হান তুই বউমাকে কি বলছিস কি কম খেতে নিষেধ করছিস, খবরদার!! যা মন চাই এনে দিবি বউকে, নইলে পিটানি খাবি। (মা)
-আম্মা তেমন কিছু বলছি না, একটু মানে দেখেশুনে আর কি। (আমি, ছোট করে বলতেছি, “ইশরে পেয়েছে একটা বউ আদর করলে ও দোষ একটু বুঝালেও দোষ, শাসন করলেও দোষ কই যে যায়”।)
-এই তুমি কি বলতেছ শাশুড়ি আম্মাকে বলে দেব, তুমি আমাকে মারতেছ। (বউ)
-খাইছে, আরে কই কিছু বলিনি তো। একটু ইয়ার্কি করলাম আর কি? এখানে আম্মাকেটানো কেন সোনা। (আমি)
-একদম মিথ্যা বলবা না যাও এখান থেকে। (বউ)
-আরে আর মাএ দুইটা দিন পর কিউট একটা বাচ্চা আসবে একটু যত্ন তো নিতে দাও, আমি গেলে দেখবে কে হুম। (আমি)
– যাও যাও দেখার শাশুড়ি আম্মা আছে তোমাকে লাগবে না। (বউ)
-এহহহহহ আসছে ওকে গেলাম আমার ফ্রেন্ডের ভাবির বাসায় যায়, ভাবি দাওয়াত দিয়েছে অনেকদিন ধরে যেতে বলছে আজ গিয়ে খেয়ে আসি। ভাবিকেও দেখে আসি। (আমি)
-ঐ কি বললা কি বললা তুমি আরেকবার বলো তো কই যাবা ঐ যে চাকু দিয়ে খুন করে ফেলব একদম। (চোখ কপালে তুলে আমার শার্টের কলার চেপে ধরে বলছে বউ)
-ইয়ে মানে কোথাও না, মজা করলাম কলারটা ছাড়ো সোনা ছিঁড়ে যাবে তো, বউ তো না যেন একটা….?। (আমি)
-ঐ কি বলতেছ আবার খুন কিন্ত করেই দিব বলছি। (বউ)
-উহু কিছুনা তো। (আমি)
-এবারের মতো ছাড়লাম আরেকবার দেখবা কি করি। (বউ) (এই মুহূর্তে আমার চাচা বিদেশ থেকে ফোন দিলো ডুবাি তে থাকে, ফোন রিসিভ করলাম)
-হ্যালো চাচা আসসালামু আলাইকুম, কেমন আছ চাচাজান? (আমি)
-আরে রাখ তোর চাচাজান তোর বউকে ফোন দে। (চাচা)
-ওওও বুঝছি এখন সবাই আমার বউরে ভালোবাসে আমি কেউ না, চাচাজান তুমিও এখন আমারে। (আমি)
-ফোন দে ভাতিজা তোরে আমি চিনি না,
তোর বউরে চিনি তারাতারি দে। (আমি) (ফোনটা নিয়ে বউরে দিলাম, উহু কি কষ্ট লাগতেছে সবাই শুধু বউয়ের সাইড নিয়ে কথা বলছে আমার দিকে তাকিয়ে ও দেখছে না।)
-হ্যালো আসসালামু আলাইকুম ছোট আব্বা কেমন আছেন? (বউ)
-ভালো আছি বউ মা, তুমি ঠিক আছ তো আমার শয়তান ভাতিজা টা তোমার যত্ন নিচ্ছে ঠিকমতো। না নিলে বলো, সন্ত্রাস দিয়ে পিঠিয়ে সোজা করি। (চাচা)
-ইয়ে নিচ্ছে ছোট আব্বা, মাঝেমাঝে শয়তানি একটু করে। (বউ)
-কিহহহহ এত বড় সাহস! আমি আসতেছি ৭দিন পর তুমি টেনশন করো নাহ!! উরাধুরা মারব হারামজাদা কে। তা বলো তোমার কি লাগবে। ঝটপট বলো নিয়ে ফেলি আজকে। (চাচা)
-ইয়ে ছোট আব্বা, কিছু লাগবে না। আপনি সুস্থভাবে ফিরে আসুন। (চাচা)
-বুঝছি তুমি বলবে না লজ্জা লাগতেছে। আচ্ছা যা আনার ঐ শয়তান, ইতর ভাতিজা রায়হান থেকে জানব তারপর নিয়ে আসব। নিজের যত্ন নাও বেশি করে, এখন রাখি বাই কেমন? (চাচা) (বউয়ের কাছ থেকে ফোন টা নিয়ে কানে লাগালাম।)
-হ্যালো হ্যালো চাচাজান ও চাচাআআআআআ ধ্যাততত ফোনটা দিল কেটে চাচা হারামি। (আমি) (বউ হাসতেছে খুব হাসতেছে মন চাই মাটি খুঁড়ে ডুকে পড়ি।)
-বউ একদম হাসবা না একদম না, অফিস থেকে চারদিনের ছুটি নিছি কই একটু শান্তিতে থাকব, মজা করব তা না এখন আমাকে কেউ চিনেই না, টাকা আমার, বউ আমার, কেয়ার করছি আমি অথচ ক্রেডিট নিচ্ছে আম্মা, চাচা, আব্বা! কেন যে ছুটি নিলাম। রাগ ঝারি আমার উপর। (আমি)
-আহারে আমার বরটার কষ্ট বেশি হয়ে দাড়িয়েছে। আসো আমি যত্ন করি, আদর করি। (বউ)
-একদম সিম্প্যাথি দেখাবা না যাও আমি কেউ না। (আমি) (রাত হয়েছে, আব্বা দোকান শেষ করে আসলো এসেই বকবক করতেছে)
-রায়হান হারামজাদা তুই বউমাকে মারছিস কি জন্য। বউমা কি শুধু তোর একার। আমাদের আর কারো না নাকি। বউমাকে কিচু বলছিস তো পিঠে গরম কুন্তি দিয়ে লাল করে দেব। (আব্বা)
-আসছে আমার বাপ। করছি যত্ন তার বদলে খাচ্ছি বাঁশ। কেমন যে লাগে এখন। (আমি) (রাগ করে বউয়ের জন্য ফল কাটছিলাম, তখনি জোরে হাত কাটা গেল। বউ খাটেই শোয়া।)
-ও মাগো আম্মা, আব্বা একটু আসো দেখো। (আমি)
-কি হয়েছে বউমার কি হয়েছে। (আব্বা আম্মা) আব্বা আম্মা আমার হাত কাটা দেখেও বউমার দিকে দৌড় দিল। আমার হাত দিয়ে রক্ত পড়ছে দেখছেই না। ও আল্লাহ উঠিয়ে নেয় না কেন?)
-আমার কিছু হয়নি তো আপনার ছেলের হয়েছে। (বউ)
-ওওওও কিছুই তো হয়নি। ও কিছুনা আমি ভাবছি তোমার কিছু হয়েছে। (আম্মা)
-হাদারাম দাড়িয়ে থাক, বউ মা এই নাওও খাও। (আব্বা) (আমার পাশ থেকে ফল গুলো নিয়ে বউকে খাইয়ে দিচ্ছে। আব্বা একপাশে আম্মা এক পাশ বসে খাইয়ে দিচ্ছে। আমি চেয়ে আছি অবলার মতো। মনে হচ্ছে আমি গাঙের জলে ভেসে আসা গরু ছাগল। আমার কথা শুনতে পায় না কেউ। বউ আমার দিকে তাকাচ্ছে আর খাচ্ছে মুচকি হাসিতে। দুই দিন পর)
-কনগ্রেচুলেশন মিঃ রায়হান আপনার মেয়ে হয়েছে, এখন ভিতরে যেতে পারেন। (নার্স)
-এই হাদারাম তুই কই যাস এখানে দাড়া আমরা যাই আগে। (আব্বা)
-কই, কই গো আমার নাতনি টা দেখি ওলে রে।
(আব্বা) (রুমের দরজা থেকে উঁকি দিয়ে দেখছি ভ্যাবলার মতো। কারন প্রেসিডেন্ট পুতিন (আব্বা) আর রাণী এলিজাবেথ(আম্মা) ভিতরে আছে যাওয়া নিষেধ। বিকালে রিলিজ দিলে বাসায় কোলে গাড়ি করে নিয়ে আসলাম বউকে, অন্যদিকে আমার হাতে ব্যান্ডেজ। আমার হাত টা দেখছি ব্যাথা লাগতেছে। আমাকে কেউ কিছু খেতে বলছে না।)
-বউমা বলো কি খাবে এনে দেয়। (আব্বা)
-আরে বলো বলো তুমি কি খাবে। (চাচী) নাহ আমাকে কেউ দেখবে না। রাত হলো বউয়ের পাশে বসে আছি বিপরীত মুখ হয়ে। হঠাৎ দেখলাম বউ কাঁদছে আর চোখের পানি মুছছে।
-কি বউ কি হলো হঠাৎ কাঁদছ কেন? (আমি)
-আমি এমন ফ্যামিলি পেয়েছি ভাবতেও পারিনি প্রেগন্যান্সিকালীন এত কেয়ার করবে শশুড়, শাশুড়ি, তুমি ছোট বাবা, ছোট মা এক একটা যেন আমার রক্তের মতো। আর তুমি সে তো আল্লাহ দিয়েছে। সত্যি প্রেগন্যান্ট এর ব্যাথা আমিই ফিলই করি নি। এই ফ্যামিলি হারালে (বউ)
-হয়েছে চুপ!! আর বলবা না এমন কথা। আমরা আছি থাকব। কেঁদো না তো হয়ছে। (আমি) (বউয়ের কান্না দেখে বউকে জড়িয়ে নিলাম খুব ভালোবাসি তো বউটাকে।)