– আব্বু আমি বিয়ে করব।
– মানে?
– মানে আমার বিয়ের বয়স হয়েছে তাই বিয়ে করব।
ছেলে জারিফের কথা শুনে বাবা হাবিব সাহেব অনেকটা হতবাক! দশম শ্রেণিতে পড়ুয়া ছেলের মুখে এমন কথা তিনি কল্পনাও করতে পারেননি। হাবিব সাহেব ভ্রু কুঁচকে জিজ্ঞেস করলেন, তা বউকে খাওয়াবে কি? চাকরি-বাকরি কিছু জোগাড় করেছ?
– ইয়ে মানে, আমি যা খাই, ও তা-ই খাবে। আর ও তো রাক্ষসী না যে আমাদের সহ খেয়ে ফেলবে।
– হুম। সেটাতো বুঝলাম। কিন্তু যা খাওয়াবে তা কেনার টাকা তোমার আছে ?
– কেন আব্বু! তুমি কেন আছ তাহলে। তোমাদের তো মেয়ে নাই। ওকে মেয়ের মতো করে রাখবে।
– বাহ! খুব সুন্দর যুক্তি।
– হিহি। আব্বু তাহলে তুমি রাজি?
– যাও পড়তে বস। পরীক্ষার পর চিন্তা করব।
– না আব্বু। আমি দুইদিনের ভিতর বিয়ে করতে চাই।
– আগে বলো কার পাল্লায় পড়ে এমন ভুত মাথায় চাপলো ? জারিফ একবার ভেবেছিল সত্যিটা বলেই দিবে কিন্তু যদি ঝামেলা হয়! তাই বলতে গিয়েও থেমে গেল।
– কি হল ? এমন বোবা হয়ে গেলে কেন ? আন্সার মি!
– ইয়ে মানে! আব্বু এটা আমার ইচ্ছে। কারো কথায় বলতেছি না।
– উহু। বিশ্বাস হচ্ছে না। তোমার চোখ অন্য কথা বলছে।
– কি বলছে আব্বু ?
– স্যাট আপ! তুমি কি আমার সাথে মজা করছো ?
– ছিঃ ছিঃ! না আব্বু।
– তাহলে এটাই তোমার শেষ কথা ?
– জ্বি আব্বু।
– তাহলে পড়ালেখার দরকার নেই আর। এইবার সংসার নিয়ে ভাবো। জারিফের আম্মুর আগমন কি ব্যাপার? বাপ-বেটা মিলে কিসের এত পরামর্শ হচ্ছে ? আমি কি যোগ দিতে পারি ?
– হুম আম্মু।
– তা কি নিয়ে আলোচনা হচ্ছে ?
– কি নিয়ে আবার ? তোমার ছেলে বিয়ে করতে চাচ্ছে।
– হাহা। ও নাহয় একটু মজা করছে আর তুমি এতে সিরিয়াস হয়ে গেলে! তুমিওনা পারোও বটে!
– সুমাইয়া এটা সিরিয়াস ব্যাপার। তোমার ছেলে সিরিয়াস। জিজ্ঞেস করো ওকে। সুমাইয়া এইবার কিছুটা চিন্তিত হয়ে বললেন, জারিফ এটা কি সত্যি ?
– জ্বি আম্মু, সত্যি। উত্তর শুনেই সুমাইয়া জারিফের হাত ধরে তাড়াতাড়ি রুমে নিয়ে গেল।
– জারিফ এসব কি বলছো ? তুমি এখনো ছোট।
– আম্মু তুমিও! তুমি না আমার বেস্টফ্রেন্ড!
– হ্যাঁ তা তো অবশ্যই। আচ্ছা আসল কাহিনো বলোতো?
– আসলে আম্মু আমার স্কুলের একটা মেয়েকে পছন্দ হয়েছে। ওর নাম জারা। অনেক সুন্দরী একটা মেয়ে। প্রথম দেখাতে আমি আর আমার মাঝে নেই আম্মু।
– আচ্ছা! তাহলে এই ব্যাপার! আমার ছেলে প্রেমে পড়েছে। তা বাবা তাকে কি বিয়ে করতেই হবে? এরকম তো ভালো লাগতেই পারে, তাইনা? তোমার এই বয়সে সেটা খুব স্বাভাবিক একটা বিষয়।
– না আম্মু। আমি ওকে সারাজীবনের জন্য পেতে চাই। আমি এখন যদি তার সাথে রিলেশন করি তাহলে আমার গুনাহ এবং সময় নষ্ট উভয়টাই হবে। তুমি তো জানো আম্মু, ইসলামে বিবাহ বহির্ভুত প্রেম হারাম।
– হুম তা ঠিক বলেছ। কিন্তু তোমার বাবা তো ইসলামিক না যে, তোমার এসব কথা কানে নিবে। আর তাছাড়া জারার পরিবার কি তাদের মেয়েকে এত ছোট বয়সে বিয়ে দিতে রাজি হবে ?
– আম্মু তুমি রাজি করাওনা!প্লিজ প্লিজ আম্মু!
– আচ্ছা বাবা! ভাবতে দাও। এই জারিফ! আরেকটা কথা!
– কি?
– জারা তো নিশ্চয়ই ইসলামিক না।
– হ্যাঁ। কি করে বুঝলে ?
– তুমি বললে না যে, জারা সুন্দরী । তার মানে ও পর্দা করে না।
– হুম ঠিক ধরেছ। তুমি ওসব নিয়ে ভেবনা আম্মু। আমি ঠিক করে নিব সব, ইনশাআল্লাহ।
– বাব্বাহ! খুব পাকনা হয়ে গেছ দেখছি।
জারিফ কিছুটা লজ্জা পেয়ে বলল, প্লিজ আম্মু কিছু করো। আমাকে কথা দাও তুমি আব্বু আর জারার পরিবারকে রাজি করাবে।
– হুম। আল্লাহ্ চাইলে সব হবে চিন্তা করিস না।
এক মাস পর আজ জারিফ ও জারার বিয়ে। জারিফের বাবা একজন নিউরোলজিস্ট । মা একজন শিক্ষিকা । সব মিলে একটা আদর্শ পরিবার। ওদিকে জারার বাবা একজন শিক্ষক। মা গৃহিণী। জারাও তাদের একমাত্র সন্তান।
জারিফের এমন আদর্শ পরিবার আর জারিফ সুন্দরেও কম যায়না – এসব দেখে জারার মা-বাবা আর আপত্তি করলেন না। জারাও রাজি কারণ তার কাছে বিয়েটাকে একটা এডভেঞ্চার মনে হচ্ছে । ক্লাসের সবাই অবিবাহিত । সে ই একমাত্র বিবাহিত থাকবে। ব্যাপার টা আনকমন মনে হল জারার কাছে। এবং আনকমন ব্যাপারগুলো ই জারাকে খুব বেশি টানে। চারদিক রঙিন আলোয় ভরে উঠেছে। কত সুন্দর করে সাজানো হয়েছে সবকিছু। জারা বউ সেজে স্টেজে বসে আছে। এই মুহূর্তে তার খুব বিরক্ত লাগতেছে। এমনিতে গরম পড়তেছে তার উপর এত গয়নাগাটি পড়ে থাকতে থাকতে সে রীতিমত অসহ্য হয়ে উঠেছে। হঠাত খেয়াল করলো তার বন্ধুরা আসছে।
জারার হাসতে হাসতে তার বন্ধুদেরকে রিসিভ করার জন্য স্টেজ থেকে নেমে পড়ল। এই দৃশ্য দেখে সবার চোখ উলটে গেল। সবাই বলাবলি করছে, মেয়েটা কি লাজ-লজ্জার মাথা খেল নাকি! ওদিকে জারা তার বন্ধুদের সাথে আড্ডায় মেতে ওঠলো। চোখ মুখ বাঁকা করে কয়েকটা সেল্ফিও নিলো। কারা যেন বলছে, বর এসেছে! বর এসেছে! জারার বন্ধুরা এটা শুনতে পেয়ে বলে, জারা দুলাভাই আইসে! যা এইবার স্টেযে গিয়া বস। হিহিহি। জারাও তাই করল। বিকেল প্রায় ৫:৩৩মিনিটে বিয়ে সম্পন্ন হল। জারার এইবার শ্বশুর বাড়িতে যাবার পালা।
শ্বশুরবাড়িতে যাওয়ার সময় মেয়েরা সাধারণত কেঁদে কেটে ভাসায়। অনেকে বিয়ের ঠিক হওয়ার সময় থেকে শ্বশুরবাড়িতে যাওয়ার সময় পর্যন্ত কাঁদতে থাকে। কিন্তু জারা অদ্ভুদভাবে কিছুই করলো না। বরং সে খুশি কারণ সে নিউ এডভেঞ্জারে পা রেখেছে। জারার এমন অবস্থা দেখে সবাই রীতিমত হতবাক। অনেকে মুখ টিপে টিপে হাসতেছিল। এ আবার কেমন মেয়েরে বাবা! শরমের কি বালাই নেই! – সবার মাঝ থেকে পাশের বাসার মধ্যবয়সী আন্টিটা বললেন।