রাতে রুমে শুয়ে শুয়ে গেমস খেলছিলাম তখনই নিহানের ফোন এসে হাজির। নিহান হলো আমার জানের জান দোস্ত। তাই তারাতারি ফোনটা রিসিভ করে নিলাম।
— হুম নিহান বল।
— দোস্ত বাসায় না বোরিং লাগছে। মা বাবা দেশের বাসায় গেছে আর আমার সামনে পরীক্ষা বলে রেখে গেছে।
— তো কি হইছে?
— একা একা রুমে থাকতে ভাল লাগছে না। তুই আমাদের বাসায় চলে আয়। আজ থাকবি আমার সাথে।
— ওকে দেখি।
যেহেতু নিহান বলেছে তাহলে আমি তো ওর বাসায় যাবোই আর বাসায় না হয় একটু মিথ্যা বলবো যে সারা রাত নিহানের বাসায় পড়বো। বাবা বসার রুমে বসে টিভি দেখছিল। আমি ওনাকে ভয় পাই তবুও সাহস করে ওনার সামনে গেলাম আর তাছাড়া নিহানের বাবা আর আমার বাবাও বন্ধুই।
— বাবা তোমার সাথে একটা কথা বলার ছিল?
— কি?
— আসলে আমার তো সামনে পরীক্ষা তো এখন থেকেই বেশি বেশি পড়া উচিত তাই না। বাবা আমার কথার কোন জবাব না দিয়ে জানালা দিয়ে আকাশের দিকে তাকালো। তখন আমি বললাম…
— কি হয়েছে বাবা?
— না দেখছি চাদঁ আজকে উল্টা দিকে উঠলো নাকি।
— না ঠিক দিকেই উঠেছে।আসলে আমি আর নিহান ভাবছি আজ রাত জেগে ওর বাসায় পড়াশুনা করবো। তাই তুমি যদি পারমিশন দাও। বাবা প্রথমে আমার মুখের দিকে তাকিয়ে তারপর রান্না ঘরে মায়ের দিকে তাকিয়ে বলল..
— এই যে রাজের মা, রাজ আর নিহানের জন্য রাতের খাবার একটা বক্সে দিয়ে দাও। তার মানে বাবা পারমিশন দিয়ে দিয়েছে। আমি তো খুশিতে রুমে গেলাম বই আনতে। যেহেতু নিহানের বাসায় যেতে হবে তো বই নিয়েই যেতে হবে। আমি বই আর খাবারের বক্স নিয়ে বাসা থেকে বের হতে যাবো তখন বাবা বলল…
— নিহানের বাবা মা দেশে গেছে আর নিহান বাসায় একা। তাই নিহান এক বাদর আর তুমি এক বাদর মিলে নিহানদের বাসাটাকে জঙ্গল বানাতে যাচ্ছো এটা আমি জানি তাই আগামী বার মিথ্যা কথা বলো না। এবার সাবধানে যাও। আর নিহানদের বাসায় পৌঁছেই আমায় একটা ফোন করে দিও।
— ওকে ( মাথা নিচু করে)
মাঝে মাঝে মনে হয় আমার বাবা একটা সব জান্তা। আমি মিথ্যা বলছি তাও বুঝে ফেলেছে তবে বাদর বলার কি দরকার ছিল? পাশের বাসার মানুষ যদি শুনে তাহলে হাসবে। আর তাছাড়া সবাই মাঝে মাঝে আমায় বাদরই ডাকে। আমি আর লেট না করে একটা রিকশা ভাড়া করে নিহানদের বাসার উদ্দেশ্যে রওনা দিলাম। নিহানদের বাসার কলিং বেল চাপতেই নিহান এসে দরজা খুলল। আমাকে দেখেই বলল…
— আমি জানতাম দোস্ত তুই আসবি। দোস্ত এখন চল তো রান্না ঘরে।
— রান্না ঘরে কেন?
— আরে বিয়ার গ্রিলস তো দেখি মাছ পুড়ে পুড়ে খায়। তাই আমি ভাবলাম আজ রাতে পুড়া মাছ খাবো। আর নতুন একটা কিছুর স্বাদ নেওয়া হবে।
— ওকে চল।
আমি যে সাথে করে খাবার এনেছি এটা নিহানকে বলি নি। কারন বললে আপাতত এই মজাটা নষ্ট হয়ে যাবে। যদি মাছটা না খাওয়া যায় তাহলে আমার বাসার খাবার খাবো নে। সমস্যাটা কোথায়? আমি আর নিহান মিলে একটা তেলাপিয়া মাছকে পুড়লাম। নিহান একটা বড়সড় তেলাপিয়া মাছই এনেছে। মাছটা পুড়া শেষ হওয়ার পর খাবার টেবিলে মাছটা রাখলাম কিন্তু মাছের সাথে টমেটো সস্, মরিচ গুড়া,লবন সবই রেখেছে। কিন্তু বিয়ার গ্রিলস তো মাছের সাথে আর কিছু খায় না।
— কিরে তুই পুড়া মাছ খাবি ঠিক আছে কিন্তু এই টমেটো সস্,লবন আর মরিচ গুড়া কেন?
— আরে দোস্ত বিয়ার গ্রিলস তো এই গুলো পায় না বলে খায় না। আর আমার বাসায় যেহেতু এই গুলো আছে তাই মিস করবো কেন? তাছাড়া স্বাদটাও জোশ হবে। তবে ফেসবুকে এটার সেলফি আপলোড দেওয়ার সময় শুধু লেখবো Only পুড়া মাছ।
— হাফ ইংলিশ আর হাফ বাংলা কেন?
— দোস্ত আমি ইংলিশে কাঁচা। এটা তো আর পাবলিক কে বুঝতে দেওয়া চলবে না।
— ওকে নে এবার খাওয়া শুরু কর।
— আগে তুই খা।
নিহানের জোরাজোরিতে প্রথমে আমাকেই মুখে দিতে হলো। এত্তো ভাল টেস্ট হয়েছে যে আমার বমি চলে আসছে কিন্তু এখন যদি বলি খারাপ হয়েছে তাহলে তো নিহান খাবে না তাই আমি ইশারা দিয়ে বুঝালাম “খুব ভাল হয়েছে”। নিহানকে খুশি মনে মুখে তুলল কিন্তু বেশিক্ষন খাবারটা মুখে রাখতে পারলো না । খাবারের মাঝেই ফেলে দিলো। আর আমার দিকে তাকিয়ে রইলো…
— রাজ তুই না বললি ভাল হইছে তাহলে এটাই কি সেই ভাল?
— ও মা খারাপটা আমি একা খাবো কেন? তুইও স্বাদ নে।
— হারামী একটা।
— নিহান জানি তো বেস্ট ফ্রেন্ড মানে হলো ” নিজের মত আরেকটা হারামী “। আর তুইও সেটা।
— হইছে চুপ কর। কিন্তু এখন কি খাবো? রাত তো অনেক হয়েছে।আর অনেক ক্ষুধাও লেগেছে।
— ওয়েট
এরপর আমার বাসা থেকে আনা খাবারটা নিয়ে আসলাম আর মজা করে খেলাম। নিহান যদিও জানতে চেয়েছে আমি আগে কেন বলি নি খাবার আনার কথা। না বলার কারন হলো, যদিও পুড়া মাছটা খেতে ভাল হতো তাহলে তো ঠিকই এই খাবারের দরকার হতো না। রাতে খাওয়া দাওয়া শেষ করে এক সাথে বাসন গুলো ধুয়ে নিলাম। আমরা ব্যাচেলার হতে পারি তবে নিকর্মা না।হয়ত রান্নাটা পারি না তবে বাকি কাজ খুব ভাল মতই পারি। সব কাজ শেষ করে ঘুমাতে গেলাম। তখন নিহান আমায় বলল…
— রাজ আমরা এতো বড় হয়েছি। কিন্তু আমাদের কোন গার্লফ্রেন্ড নাই কেন?
— বাপের টাকায় খেয়ে পড়ে অন্যের কথায় জীবন চালানোর শখ নেই তাই।
— তাও ঠিক। ওকে যদি কখনো আমাদের মাঝে কেউ প্রেমে পড়ি তাহলে আমাদের বন্ধুত্বের কোন সমস্যা হবে না তো।
— আরে না।
এরপর আর কোন কথা হয় নি। দুইজনেই ঘুমিয়ে পড়লাম। অবশ্য নিহানের কথা গুলোর মাঝে কেমন যেন সন্দেহ লাগছে। তবে এখনই এতো না ভেবে আমি ঘুমের মধ্যে চলে গেলাম। সকালে দুইজনেই ঘুম থেকে উঠে ফ্রেশ হয়ে ভার্সিটির উদ্দেশ্যে রওনা দিলাম। আমাদের ঘুমই ভেঙ্গেছে ৯টার পর। কোন রকমে রেডি হয়ে বেড়িয়েছি। আমি আর নিহান রিকশা দিয়ে যাচ্ছি তখন আমার ফোনটা এসে হাজির আর ফোনটা ধরে দেখি বাবার ফোন এসেছে। ইশশ গতকাল বাসায় পৌছেই তো ফোন দেওয়ার কথা ছিল। এখন কি বলবো?
— হ্যালো বাবা।
— এখন কোথায় আছিস?
— এই তো রিকশায় আর ভার্সিটি যাচ্ছি।
— তুই তো বাসা থেকে বলে গেলি সারা রাত পড়াশুনা করবি। আর যদি সারা রাত পড়তি তাহলে তো এতো তারাতরি ঘুম ভাঙ্গারই কথা না।
— হুমম ঠিকই তো কিন্তু এলার্ম দিয়ে ঘুমিয়ে ছিলাম তো।
— ওকে মন দিয়ে ক্লাস করো আর বাইরে থেকে কিছু খেয়ে নিও।
— ওকে।
যাক বাবা কোন বকা খেতে হয় নি তবে বেচে গেছি বলতে হবে।আমি মাঝে মাঝে ভাবি আমার বাবা আমার মিথ্যা কথা গুলো কি করে বুঝে যায়, ওনি কি আমার বয়সে এমনই করতো। যাই হোক, এতো কিছু না ভেবে আগে ক্লাসে যাই। ঠিকমত ক্লাস শেষ করে আমি আর নিহান মিলে লাইব্রেরীতে গেলাম বই নিতে। কিন্তু রাস্তায় রুবেল স্যারের সাথে আমার দেখা হওয়ায় নিহান একাই লাইব্রেরীতে গেল আর আমি স্যারের সাথে কথা বলতে লাগলাম। স্যারের সাথে কথা বলা শেষ করে আমি আর লাইব্রেরীতে গেলাম না বরং নিহানের জন্য অপেক্ষা করতে লাগলাম। নিহানকে ফোনও দিচ্ছি কিন্তু নবাবে তো ফোনও ধরছে না। একটু পরে নবাবের আগমন ঘটলো। আর আমার দিকে তাকিয়ে আঙ্গুল কামড়াচ্ছে আর লজ্জা পাচ্ছে।
— ও মা কিরে তুই এমন লজ্জাবতী পাতার মত বার বার মুখ লুকাচ্ছিস কেন?আর একটু একটু আঙ্গুলের চামড়া না খেয়ে আঙ্গুলটাই খেয়ে নে না। তাহলে আঙ্গুলটা বেঁচে যায়।
— দোস্ত আমার সাথে না একটা পরীর মত মেয়ের ধাক্কা লাগছে। ইশশ কি যে কিউট আর মেয়েটা কি সুন্দর করে সরি বলছে?
— পরীর মত মেয়ে হলে পৃথিবীতে কি করে? আর তুই কি পরী দেখছিস?
— না তবুও খুব সুন্দর।
— হইছে কি হয়েছে একটু খুলে বল?
— দোস্ত আমি লাইব্রেরীতে গিয়ে একটা তাকের এক পাশ থেকে বই নিচ্ছিলাম আর ঠিক অন্য পাশ থেকে ওই মেয়েটা একই বই টানছিল।
আমি বুঝতে পারি বইটা কেউ টানছিল তাই বইটা ছেড়ে দেই। এরপর বইয়ের ফাঁক দিয়ে মানুষটাকে দেখার চেষ্টা করি। দেখে মনে হলো মেয়ে। তাই ওই পাশে গিয়ে দেখি একটা মেয়ে। এরপর আমার প্রয়োজন মত বই নিয়ে বেড়িয়ে আসছিলাম তখনই ওই মেয়ের সাথে ধাক্কা লাগে। উফ কত্তো রোমান্টিক!!
— চুপ কর। ৩য় বর্ষে আইসা ছেলের প্রেমের রং লাগছে। এখন বাসায় চল।
— বাসায় গিয়ে কি করবো?চল বাইরে কোন হোটেলে খেয়ে নেই।
— কোন দরকার নেই? আমার বাসায় চল। আজ ওইখানেই খাবি আর রাতের খাবারটাও নিয়ে আসবো। তোর সাথে থাকলে আবার পুড়া মাছ খাওয়াবি তাই আমার বাসা থেকে খাবার নিয়ে আসলেই ভাল।
— ওকে।
এরপর নিহানকে নিয়ে আমি আমার বাসায় চলে আসলাম। এখন যদি ওর বাসায় যাই তাহলে উল্টা পাল্টা কিছু খেতে হবে আর যদি বাইরে খাই তাহলে খেতে বসেও মেয়ের কথা বকবক করবে। আমাদের বাসায় খাওয়া দাওয়া করে রাতের খাবারটা বক্সে করে নিয়ে আসলাম। রাতে আমি আর নিহান শুয়ে আছি তখন নিহান বলল..
— দোস্ত আমার না কেমন কেমন যেন লাগছে?
— স্নান করে ঘুমা তাহলে কেমন কেমন চলে যাবে।
— আরে ধুর! আমার না ওই মেয়ের কথা মনে পরতেছে।
— প্রথম প্রথম প্রেমে পরলে এমন হয় রে। এটা নতুন কিছু না।
— তুই কেমন করে জানস? আগে কি তুই প্রেম করতি?
— আরে গাধা প্রেমের সম্পর্কে আমার জানা আছে তাই এইসব করতে হয় না।
— ও রাজ ভাই আমার, মেয়েটা কি আমার সাথে রিলেশন করবো রে?
— আজব তো! তুই একবার ধাক্কা খেলি, মেয়েটা তোকে চিনে না জানে না, কখনো দেখেছে কি না সন্দেহ? মেয়েটার বি এফ আছে কি না এটাও জানোস না আর বলিস মেয়ে তোর সাথে রিলেশন করবো কি না?
— তাও কথা। ওকে কাল থেকে আমি আর তুই মিলে ওই মেয়ের সব খবর যোগার করে নিবো।
— আমি পারবো না।
— রাজ এটা তুই বলতে পারলি। তুই না আমার বেস্ট ফ্রেন্ড।
— ওকে ওকে যাবো, ইমোশনাল ব্লেকমেইল করিস না।
আজ রাতটা অশান্তিতেই কেঁটেছে। চোখে ঘুম আসতে যাবে আর নিহান কোন না কোন প্রশ্ন করে? ছেলেরা প্রথম প্রথম কোন মেয়েকে লাইক করতে শুরু করলে তাকে নিয়ে কত ভাবে তা আজ দেখতেছি। রাতে ঠিক মত কয় ঘন্টা ঘুমিয়েছি খেয়াল নেই। সকাল সকালই নিহান আমাকে নিয়ে ভার্সিটিতে হাজির। এরপর ভার্সিটির গেটের সামনে দাঁড়িয়ে আড্ডা দিতে লাগলাম। তখন আমি বললাম…
— নিহান আর কতক্ষণ একটা মেয়ের জন্য দাঁড় করিয়ে রাখবি?
— ভাই দেখি না মেয়েটা কখন আসে?
— এমন ভাবে ভার্সিটির গেটের সামনে না দাঁড়িয়ে চল লাইব্রেরীতে যাই। ওইখানে তো হয়ত তোর পরই মেয়েটা সাইন করে বই নিয়ে এসেছে আর ওই খাতা দেখলেই তো মেয়ের কোন ইয়ার আর কোন ডিপার্টমেন্ট জানা যাবো?
— জোশ আইডিয়া চল। এরপর নিহানকে নিয়ে চলে গেলাম লাইব্রেবীতে। এরপর খুব সহজেই জেনে গেলাম মেয়ের নাম অন্তরা আর ১ম বর্ষের ছাত্রী আর বাংলা বিভাগের ছাত্রী। নিহান তো খুব খুশি। এর পর আমি আর নিহান ক্লাস করতে চলে গেলাম। কিন্তু ক্লাস শেষ করেই নিহান বাংলা ডিপার্টমেন্টে চলে গেল। আর বার বার ওই মেয়েকে খুঁজতে শুরু করলো। আমি যদিও কাউকে খুঁজি না তবুও নিহানের কারনে চুপচাপ ওর পাশে দাঁড়িয়ে আছি।হঠাৎ নিহান ডাক দিয়ে একটা মেয়েকে দেখিয়ে বলল “এই তো অন্তরা”। বাহ্ বেশ দেখতে তবে মনটা কেমন কে জানে?
এরপর প্রায় সময়ই নিহান এসে এই ডিপার্টমেন্টের সামনে দাঁড়িয়ে থাকতো। আর আমাকেও মাঝে মাঝে দাঁড় করিয়ে রাখতো। এভাবে অনেক দিন কেটে যায়। এতো দিনে অন্তরা বুঝে গেছে নিহান ওরে পছন্দ করে। নিহান এখন আমার সাথে কথা বলার সময় প্রায় ৯৫% ওই মেয়েকে নিয়েই কথা বলে। মাঝে মাঝে একা একাই ভার্সিটিতে চলে যায়। নিহান যেন আমার থেকে একটু একটু করে দূরে সরে যাচ্ছে। একদিন বিকালে আমি নদীর পাড়ে বসে আছি তখন নিহানের আগমন ঘটলো। কারন নিহান জানে আমি নদীর ঘাটে বেশি সময়ই থাকে। আমার খুবই ভাল লাগে এই ঢেউয়ের আওয়াজ। প্রতিটা ঢেউ যেন একা জীবন চলতে বলে।
— কিরে রাজ তোরে তোর বাসায় খুঁজে আসলাম আবার তোকে ফোন দিলাম কিন্তু তোর কোন খবর নেই।
— কেন কি হয়েছে রে?
— দোস্ত ওই মেয়েটাকে প্রপোজ করবো ভাবছি।
— ভাল কথা কিন্তু মেয়ে তোরে লাইক করে কি না এটা তো জানতে হবে।
— মনে হয় করে। এখন তো আমার দাঁড়িয়ে থাকা গুলো বুঝে নেয়।আমার দেখলে হাসেও।
— ওকে তাহলে প্রপোজ করে দে।
— কিন্তু আমার সাহস হচ্ছে না। আমার সাথে তুই থাকলে হয়ত একটু সাহস পেতাম।
— ধুর বোকা এতো ভয় পেতে নেই। তবে আমি একটু দূরে দাঁড়িয়ে থাকবো নে সমস্যা নেই।
— ওকে।
এরপর নিহানও আমার সাথে কিছুক্ষণ একসাথে বসে চলে গেল। একটা সময় আমি নদীর পাড় আসলেই ও বুঝে যেত আমার মন খারাপ আর হাজারটা প্রশ্ন করে আমার মন ভাল করে দিতো কিন্তু এখন তো ওই মেয়ে ছাড়া ওর মনে কোন প্রশ্নই নেই। হয়ত একটা সময় আমাকেও ভুলে যাবে।
আজ আমি আর নিহান দাঁড়িয়ে আছি। আর নিহান একটা গোলাপ নিয়ে এসেছে। অবশ্য একটা ফুলের তুড়াই নিয়েছিল কিন্তু আমার কথায় শুধু একটা ফুল এনেছে।নিহানের খুব নার্ভাস লাগছে। একটু পরই অন্তরা ওর সামনে আসলো। আমি অন্তরাকে দেখার সাথে সাথে দূরে সরে গেছিলাম। নিহানের হাত কাঁপছে। নিহান ফুলটা অন্তরার দিকে এগিয়ে দিলো আর অন্তরাও একটা হাসি দিয়ে ফুলটা নিলো। নিহানের অবস্থা দেখে আমার খুব হাসি পাচ্ছে। এভাবে নিহান আর অন্তরার লাভ স্টোরি টা শুরু হয়ে যায়। প্রায় এক সপ্তাহ পর আমি আর নিহান রাতে আমাদের ছাদে বসে ক্যারাম খেলছিলাম তখন নিহানের ফোনটা বেজে উঠে আর নিহান বলে অন্তরা ফোন দিয়েছে। নিহান কথা বলা শেষ না করে ফোন টা আমার দিকে এগিয়ে দিলো। অন্তরা নাকি আমার সাথে কথা বলতে চায়।
— হ্যালো
— রাজ দা নিহানের কাছ থেকে আপনার নামে অনেক কথা শুনেছি কিন্তু আপনাকে কিছু বলার আছে। অবশ্য নিহানের এই কথা গুলো আপনাকে বলা উচিত ছিল।
— হুমম বলো।
— আমি চাই না নিহান রাতের বেলা রিলেটিভ বাদে অন্য কারো বাসায় থাকুক। এতে লেখাপড়ার ক্ষতি হতে পারে। আর রাতে এইসব আড্ডা দেওয়া আমার পছন্দ না। আর ওকে আমি কথা গুলো আগেই আপনাকে বলতে বলেছি কিন্তু ও বলতে পারে নি।
— ওকে আমি নিহানকে বাসায় পাঠিয়ে দিচ্ছি। আমি মোবাইল টা রেখে নিহানের দিকে তাকাতেই নিহান চোখটা নিচে নামিয়ে নিলো। তখন আমি বললাম…
— যা বাসায় চলে যা। (কথাটা অন্য দিকে তাকিয়ে বললাম)
— হুমম পরে এক সময় আসবো নে।
— হুম।
এরপর নিহান চলে গেল আর ও ওর বাসায় চলে গেল। এই প্রথম ওর ব্যবহারটা আমার কাছে খুব খারাপ লাগলো। আমাকে নিজেই কথা গুলো বলতে পারতো। অন্য একটা মানুষের কাছে শুনতে হলো। এভাবে নিহান আর আমার মাঝে সম্পর্কের ফাটল বাড়তে লাগলো। আমি আগেই ধারনা করে ছিলাম নিহান এমন হবে। অবশ্য মেয়েটার দোষ দিয়ে কি করবো, এখানে নিহানেরও দোষ আছে।
নিহান যদি চাই তো তাহলে হয়ত অন্তরাকে বুঝাতে পারতো। তবে যাই হোক, নিহান আমায় এক পথ চলা শিখিয়ে দিয়েছে। নিহানই বলে ছিল এই প্রেমের কারনে আমাদের বন্ধুত্বের মাঝে সমস্যা হবে কি না? ঠিক ওর কথাটাই সত্যি হলো। আমি সব সময় চাইবো আমার বন্ধু ভাল থাকুক আর যখন নিজেট ভুলটা বুঝতে পারবে তখন যেন আবার ফিরে আসে। আমি আর বন্ধুর জন্য অপেক্ষা করবো। এমন শুধু ছেলেরা নয় বরং কিছু কিছু মেয়ে ফ্রেন্ডও প্রেমে পরলে বান্ধবীদের ভুলে যায়। আমি আমার বন্ধুর অপেক্ষায় রইলাম।