-“স্যার যাবেন? পরিচিত হোটেল আছে আমার। ডিসকাউন্ট দিবো ” লোকটা চমকে গিয়েছিল সেদিন। বুঝাই যাচ্ছিলো সে এর আগে এমন অভিজ্ঞতা নেয় নি। আমি আবার জিজ্ঞেস করলাম। অন্ধকারে লোকটার চেহারা বোঝা যাচ্ছিলো না ঠিক মত। সোডিয়াম লাইটের হালকা আলোয় গালের পাশে একটু চিক চিক করে উঠলো। দেখলাম ভদ্রলোকের চোখ বেয়ে পানি পড়ছে। বেশ্যা হইতে পারি কিন্তু টুকটাক অনুভূতি আমারও আছে। তাই তাকে একান্ত ভাবে কাঁদতে দিয়ে হেটেই যাচ্ছিলাম এমন সময় ডাক দিয়ে বলল
-আপনার কাছে পানি হবে?
-না স্যার পানি তো নাই। আপনি কি অসুস্থ?
-হ্যাঁ একটু।
-আমি কি কিছু করতে পারি?ভয় পাবেন না আমাকে।
-নাহ এখন আর ভয় নাই কোনকিছুতে। কিছু লাগবে না। আপনি যেতে পারেন। আমাকে অনেকদিন যাবত কেউ এত সম্মান দিয়ে কথা বলে নাই। আপনি দিলেন। বলেন না স্যার কিছু কি সাহায্য করতে পারি?
-না যদি খুব ইচ্ছা হয় আমাকে সাহায্য করার তাহলে একটু বসে আমার সাথে কথা বলুন।
-এইটা তো আমার ডিউটি আওয়ার। আজ তাহলে ডিউটি বাদ। লোকটা আমার দিকে হা করে তাকিয়ে রইল। আমি খেয়াল করলাম তার চোখে এখন পানি নাই।
-স্যার কিছু মনে না করলে এই জায়গায় থেকে সরে দাঁড়াই? নাহলে একটু পর আমার কাস্টমাররা আমাকে নিয়া টানা হেঁচড়া শুরু করবে।
-কোথায় যাওয়া যায়?
-এই অন্ধকার সন্ধ্যায় আশে পাশের মন মানসিকতা এমন যে বৌ নিয়ে ঘুরলেও এই জায়গায় বৌ কে পতিতা ভাবা হয়। আমরা সামনে যেতে পারি।
ঐখানে একটা চায়ের দোকান আছে সম্পর্কে আমার পাতানো ভাই হয়। লোকটা একটুও ভয় পেলো না। এই যুগে একজন রাস্তার মেয়ে তাকে এভাবে ডেকে নিলো আর সে ভয় পাচ্ছে না অদ্ভুত বিষয়টা সে আমার সাথে হাঁটা শুরু করলো। হাঁটার মধ্যে খেয়াল করলাম লোকটার চোখ ছলছল করছে আবার।
-স্যার, কি হইসে বলা যায় আমাকে? খুব মায়া ভরা চোখে তাকিয়ে বলল
-আমার প্রেমিকার আজ বিয়ে হচ্ছে । ৭ বছরের প্রেমের পর আজ অন্য কারো হয়ে যাচ্ছে। একটা বাচ্চার মত করে সেই যৌবনকাল থেকে তার দেখাশুনা আদর যত্ন করেছি জানো? দুঃখিত তুমি বলে ফেললাম।
-না ঠিকাছে আপনি চাইলে আমার নাম ধরেও ডাকতে পারেন। আমার নাম তনু।
-সুন্দর নাম।
-এটা আমার আসল নাম স্যার তাছাড়া আমার বিভিন্ন নাম আছে। যার সাথে যখন থাকি তখন ভিন্ন ভিন্ন নাম থাকে আমার। আর কাজের সাথে পার্মানেন্ট নাম হচ্ছে “বেশ্যা” থাক ঐসব কথা
-হ্যাঁ থাক। এজন্যই মন টা খারাপ।
-কি জানি, স্যার প্রেম ভালোবাসা কি জিনিস আমি জানি না। প্রতিদিন সস্তা দরে রাতে প্রেম বিক্রী করি। কেউ একটা বার জিজ্ঞেস করে না “ভালোবাসো?” অথবা কেউ একটা বার বলে না “আমি তোমাকে আজ রাতের জন্য না, আজীবনের জন্য চাই”কথাগুলা বলার সময় খেয়াল করলাম লোকটা আমার দিকে অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে …খুব মায়া লাগছে দেখতে। একটা পুরুষ মানুষের কান্না এত মায়াবী হয় আমি না আগে জানতাম ই না।
-তুমি আমাকে এত স্যার স্যার বলো না। আমাকে তুমিও নাম ধরে ডাকতে পারো। আমার নাম ইফতি।
-আপনাকে নাম ধরে ডাকবো?
-হুম ডাকো।
-আচ্ছা। একটা কথা জিজ্ঞেস করব?
-হ্যাঁ করো।
-আমার প্রেমের গল্প এক রাতের তাই মেনে নিতে হয় এই প্রতিদিনের বিচ্ছেদে। ..কিন্তু সাত বছরের প্রেম কিভাবে কেউ ভুলে? কি কারণে সে চলে গেলো?
-হাহাহাহা সে হিসাব তো আমার কাছেও নাই। সে অনেক সুন্দরী। আমি নাকি তার ছোটকালের প্রেম ছিলাম মাত্র যেটা সে বড়কালে এসে বুঝতে পেরেছে সে ভুল করেছে। তাছাড়া তার বাবা মা চায় সে বড়লোক ঘরের বৌ হোক। তাকে বলছিলাম চলো পালাই। তার উত্তর ছিলো ভালোবাসা নাকি অভাবে পড়লে উড়ে যায়। কিভাবে ভুলে যাবে আমার সাথে কাটানো এত গুলা সৌখিন দুপুর মেয়েটা? অবাক হচ্ছি।
-কত ভাগ্যবতী মেয়েটা আপনি তাকে এখনো মনে করছেন। কথা টা শুনে লোকটার চোখ আবার ভরে আসলো পানি তে। এরপর বাচ্চাদের মত হাউ মাউ করে কান্না শুরু করলো। আমি এত অপ্রস্তুত হয়ে উঠলাম বুঝলাম না কি করা উচিৎ আমরা তখনো রাস্তায় হাঁটছি। আমি তার কান্না দেখে দাঁড়িয়ে গেলাম। আমি তাকে থামতে বলবো এমন সময় সে আমার হাত ধরে বলল “আমি আজ আত্মহত্যা করবো ভেবেছি। আমি তাকে ভুলতে পারছি না।” আমি তার হাতটা শক্ত করে ধরে সত্য মিথ্যা আশা দিলাম -” সব ঠিক হয়ে যাবে।” যার নিজের কোনকিছু ঠিক নাই সে সব ঠিক হবার প্রতিশ্রুতি দিচ্ছে। ব্যাপার টা হাস্যকর। সে কান্না থামালো আমরা চায়ের দোকানে পৌঁছে গেলাম। চায়ের দোকানের বেঞ্চে বসে রাসেল ভাই কে চা দিতে বললাম দুইটা। হঠাৎ ইফতি বলে উঠলো
-তোমাকে একটা প্রশ্ন করবো?
-জ্বী স্যার করেন না।
-আবার স্যার?
-থুক্কু। মাফ করবেন। বলুন
-তুমি এই নিষিদ্ধ কাজে কেন?
-অনেক কঠিন প্রশ্ন করেছেন যদি সংক্ষেপে বলতে চাই তাহলে গল্পটা ৩ বছর আগের।
প্রেমিকের হাত ধরে পালিয়ে গেলাম বাসা থেকে। প্রেমিকের মেসে একসাথে ৬ জন প্রেমিক পেলাম। যারা প্রথমে আমাকে আটকে রেখে একটানা ১১ দিন আমাকে ভোগ করেছে। বুঝতেই পারিনি এটা প্রেম না, ছিল শরীর খেলা। আমাকে নিয়ে সেখানে একজন না, সবাই মিলে ভালেবেসেছে। এরপর অন্য এক জায়গায় ধরে বেঁধে আমাকে আরেক জনের হাতে তুলে দিল। সেখানে পেলাম আরো নতুন কিছু প্রেমিক। দিন দিন কোথা থেকে কোথায় নিয়ে যাওয়া হচ্ছে টেরই পাচ্ছিলাম না।
স্থান বদলানোর সময় অনেক মেরে কি একটা খায়িয়ে দিত নয়ত ইন্জেকশন দিয়ে দিত। মাতালের মত পরে থাকতাম। পূর্ণ জ্ঞান এলে আবার নতুন কেউ। এভাবেই চলছিল। এরপর আর মাতাল করার জন্য আমার শরীরে কিছু দিতে হত না। আমি এখন এগুলোতে অভ্যস্ত হয়ে গেছি। বুঝে গেছি এখান থেকে ছাড়া পাবার আর কোনো উপায় আমার কাছে নেই। বেশ্যা নামটা তখন আমার শরীরে স্পষ্টভাবে ফুঁটে উঠেছে। এখন প্রতিদিন পাঠানো হয় আমাকে নতুন প্রেমিকের কাছে। প্রেমিক এর অভিনয় করে যারা নষ্ট করে তার চেয়ে এই লোকগুলো অনেক ভালো। অন্তত আমি এদের কাছে এক রাতের ভালোবাসার উদ্দেশ্য যাই। তাদের কাউকে দ্বিতীয় বার দেখি নাই অবশ্য। বাসায় ফিরার আর মুখ ছিলো না। মাঝে মাঝে বোরখা পরে দূর থেকে মা বাবা কে দেখে আসি। কাছে যেতে ইচ্ছা করে .. কিন্তু সেই যোগ্যতা আমার আর নাই। আমি অপ্রস্তুত ভাবে কেঁপে কেঁপে কেঁদে উঠলাম। ইফতি আমার হাত ধরা বলল।
-ভুল করেছো। তোমার বাসায় ফিরে যাওয়া উচিৎ ছিলো। ঐ মানুষটাকে শাস্তি দেওয়া উচিৎ ছিলো।
-ওর শাস্তি আল্লাহই করবে। আমি ওর নাম ঠিকানা কিছুই জানিনা জানেন? নাহলে একটা বার হলেও গিয়ে জিজ্ঞেস করতাম কেন এমন করলো।
-ভুলে যাও সব নতুন করে জীবন শুরু করো। তুমি চাইলেই পারবা। চেষ্টা করো।
-লাভ কি? আবার কেউ প্রেমের অভিনয় করে ধর্ষণ করবে।
-তুমি কি প্রতিদিন এখানে থাকো?
-না প্রতিদিন না। তবে আশ পাশ দিয়েই থাকি। আজ তো কোন কাজ করলাম না। খালি হাতে ফিরতে হবে আজ। কিন্তু আপনার সঙ্গে কথা বলে আমার খুব ভালো লেগেছে। পকেট থেকে মানিব্যাগ বের করে ইফতি দুইটা ৫০০ টাকার নোট বের করে বলল
-এটা রাখো।
-না না ছি ছি! আমি এটা রাখতে পারবো না। আপনি আমাকে স্পর্শ করেন নি। এই টাকা আমি নিতে পারবো না। চায়ের কাপটা হাত থেকে রেখে ইফতি উঠে দাড়ালো। আমাকে বলল
-দাঁড়াও একটু।
আমি উঠে দাঁড়াতেই ইফতি আমাকে জড়িয়ে ধরলো। আমি নিথর হয় গেলাম। প্রতিরাতে কত কারো বুকেই তো থাকি কিন্তু এমন অনুভূতি কখনো হয় না। আমি চোখ বন্ধ করে ফেললাম। রাস্তার দুই একটা মানুষ যারা ছিলো আমাদের দিকে তাকিয়ে ছিলো। রাসেল ভাই ও তাকিয়ে ছিলো ইফতি আস্তে করে আমাকে ছেড়ে বলল
-এখন তো স্পর্শ করেছি। এখন টাকা টা রাখো।
আর কালকেও এই সময়ে এইখানে থেকো। আমি অফিস শেষ করে আসবো। খবরদার অন্য কারো সাথে এক কদম কোথাও যাবে না। সোজা কথা নড়বে না। আমার জন্য অপেক্ষা করবে। আমার দেরী হলেও কোথাও যাবে না। এখন আমার বাসায় গিয়ে আম্মাকে ঔষধ খাওয়াতে হবে …ভাবলাম আমি যদি মরে যাই তাহলে আমার আম্মাকে ঔষধ খাওয়াতো কে? মায়ের কথা ভেবেই থেমে গিয়েছিলাম মৃত্যুর কাছে গিয়েও। ধন্যবাদ তোমাকে, আমাকে ভুল সিদ্ধান্ত থেকে ফিরানোর জন্য। আমার চেয়েও কষ্টে আছে অনেক মানুষ ইফতি বিদায় নিয়ে চলে যাচ্ছে। আমি কোন কথা বলতে পারছি না। মনে হচ্ছিলো কেউ শ্বাস রুদ্ধ করে রেখেছিলো। ও যাচ্ছে আর আমি অবাক এক মায়াবী ছেলেকে দেখছিলাম। হাতে আমার দুইটা ৫০০ টাকার নোট। রাসেল ভাই বলল
-ছেলেটা কে রে?
আমি শুধু তাকিয়ে রইলাম। অনিচ্ছাকৃত ভাবে আজ আমার চোখে পানি। আমি ঐ ৫০০ টাকার দুইটা নোট নিয়ে আমার অন্ধকার পল্লীতে ফিরে গেলাম কি যেন ছিলো ঐ দুইটা নোটে। ঘুম আসলো না রাতে। খুব ভাবসিলাম ইফতি সাহেব কি কাল আসলেও আসবে ? আর কেনই বা আসবে? হয়ত আমাকে মিথ্যা শান্তনা দিয়ে গিয়েছে যেভাবে আমি তাকে দিয়েছিলাম ” সব ঠিক হয়ে যাবে এই বলে” ভাবতে ভাবতে সকাল হয়ে গেলো। দিনের বেলা আমি প্রতিদিনই বের হতাম। বোরখা পরে বাচ্চাদের স্কুলের সামনে গিয়ে দাড়িয়ে থাকতাম। সেদিনও গেলাম। আমি বাচ্চাদের স্কুলের সামনে গিয়ে দীর্ঘশ্বাস ফেলতাম এই ভেবে আমার কখনো মা হওয়ার সৌভাগ্য হবে না। সেদিনও গেলাম এলাকার এক স্কুলের সামনে। গিয়ে হেটে হুটে ফিরে আসলাম আমার ঘরে আমরা সেখানে ৪ জন মেয়ে থাকি।
দুইজন চৌকিতে। দুইজন মাটিতে। যখন বিকেলে গড়িয়ে সন্ধ্যা নামছে তখন আমি তৈরী হয়ে নিচ্ছিলাম রাতের প্রেমিকা হওয়ার জন্য। আমরা ৪ টা মেয়ে সবসময় একসাথেই যাই। ঐখানে গিয়ে ৪ জন আলাদা আলাদা ৪ রাস্তার মোড়ে দাড়াই। আজ আমি উদ্ভট সাজ দেই নাই। আমার বিশ্বাস ছিলো ইফতি আসবে না কিন্তু তবুও কেন যেন অবিশ্বাসের চেয়ে বিশ্বাস বেশি ছিলো যে সে আসবে। যেখানে আমি প্রতিদিন দাড়াই আজও সেইখানেই দাড়িয়ে আছি। কি অদ্ভূত ব্যাপার আমি সোডিয়াম লাইটে নেভি ব্লু শার্ট পড়া একটা ছেলেকে হাসি মুখেআমার দিকে হেটে আসতে দেখসিলাম। ইফতি!! হুম ইফতি আমার দিকে আসছিলো। হাতে একটা লাল গোলাপ। গতরাতেই এই মানুষ টাকে কি অসহায় লাগছিলো আজ তার সম্পূর্ণ উলটো ক্লিন সেভ ঝকঝকে শার্ট প্যান্ট পড়া একটা হ্যান্ডসাম ছেলে। আমার পাশে এসেই বলে উঠলো
-তনু তোমার আসতে এত দেড়ি হলো কেন? আমি অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললাম
-আপনি আমার অপেক্ষা করছিলেন?
-তা নয় তো কি? চল তাড়াতাড়ি তোমাকে আজকে এক জায়গায় নিয়ে যাবো। আমার হাত ধরে টেনে নিয়ে চলল। আমি কিছু বলার আগেই বলল
-ওহো সরি সরি এই ফুলটা তোমার জন্য। আমি ফুল হাতে নিয়ে বললাম
-ফুল কেন?
-তুমি এত প্রশ্ন করো কেন?
-আচ্ছা আর করবো না। আমরা কই যাচ্ছি?
-গেলেই দেখবা চলো। আচ্ছা দাড়াও। এই লিপস্টিক মুছো তো। কেমন ক্যাটক্যাটা রং ,মুছো।
-আমার তো আর কোন লিপস্টিক নাই।
-আহহারে বাবা। আচ্ছা চলো।
এটা টিস্যু দিয়ে মুছো..ব্যাপারটা দেখসি। বড় এক সুপার শপে নিয়ে প্রথমে আমাকে ইফতি কিনে দিলো একটা সুতার কাজ করা থ্রিপিস আর কিছু হালকা রং এর লিপস্টিক , সেখানেই আমাকে সে বলল
-যাও ট্রায়াল রুমে জামা আর
লিপস্টিক বদলায়া আসো। যতক্ষণ ট্রায়াল রুমে ছিলাম ভাবসিলাম হচ্ছে কি এ সব? আমি কি স্বপ্নে দেখসি? নাকি ইফতি আমাকে ভালো কোথাও বিক্রী করবে বলে এভাবে তৈরী করছে? চুন খেয়ে মুখ পুড়লে দই দেখতেও ভয় লাগে। আমি রেডি হয়ে বের হলাম ইফতি আমার দিকে তাকিয়ে বলল
– হুম সব ঠিক আছে। চুলটা হ্যাঁ চুলটা খোলা হলে ভালো হত। এই বলে আমার চুলের ক্লিপটা খুলে দিলো ইফতি। আমার হাত ধরে বলল
-শুনো আমার গাড়ি নাই।
বেশি বড়লোক না। রিক্সায় ঘুরাবো আজকে তোমাকে। আমি সেই কখন থেকে চুপ করে আছি। কথা বলার যেনো ভাষা পাচ্ছিনা। একটা রিক্সা ভাড়া করা হলো। আশ পাশ দিয়ে ঘুরানোর। গত রাতের ইফতি আর আজকের ইফতির মধ্যে অনেক তফাৎ কাল তার চেহারা ছিলো বিষণ্ণ আজ ততটাই উৎফুল্ল আমাকে জিজ্ঞেস করে বসলো
-এই তনু তুমি গান পারো?
-না পারি না। কেন?
-আমি গান গাইলে শুনবা
-হুম। ইফতি একটা কথা ছিলো।
-হ্যাঁ বলো না। কি?
-আমার কাজে যেতে হবে।
-তুমি কাজই তো করছো। নিজেকে ভালোরাখার সময় কাটানো সবচেয়ে বড় কাজ। কি ব্যাপার ফুল টা যে দিলাম সেটা কই?
-আমার ব্যাগে। ইফতি আমার হাত ধরে বলল
-তোমার ভালো লাগছে? আমি চোখ বন্ধ করে ২ সেকেন্ডের মধ্যে উত্তর আবিষ্কার করলাম
-আমি ভালো আছি।
ইফতি খালি গলায় গান ধরলো। “তুমি আমার পাশে বন্ধু হে বসিয়া থাকো। একটু বসিয়া থাকো। আমি শুধু চোখ বন্ধ করে শুনেছি। হেসেছি আর অনুভব করেছি। অনেক ঘুরা ফিরা শেষে আমরা একটা রেস্টুরেন্টে গেলাম। সেখানে খাওয়া দাওয়া করলাম। ইফতি আমাকে জিজ্ঞেস করলো
-তনু তোমার বাসা কই
-মগবাজার।
-তোমার বাবা মায়ের? অনেক বড় নিশ্বাস ফেললাম।
-আব্বু আম্মু মিরপুর থাকে।
-মিরপুর কই?
-ঐ যে মাজার টা আছে না। তার একটু সামনেই বাবুল মামার দোকানের উপরে বাসায় থাকে আব্বু আম্মু।
-আচ্ছা আচ্ছা। খাও। খাবার মজা লাগছে তো?
-হুম।
-পড়াশোনা করেছো?
-হ্যাঁ এইচ এস সি পাশ করার পর ই আমি পালিয়ে
-থাক ঐসব কথা। কালকে আম্মাকে তোমার কথা বলসি। খুব ঘাবড়াইয়ে গেলাম।
-কি বলসেন?
-বলেছি একটা পরী আমাকে বাঁচায়া দিসে। সে বলছে সব ঠিক হয়ে যাবে। আর তার আওয়াজে জোর ছিলো। ইন শা আল্লাহ সব ঠিক হয়ে যাবে।
-আমি পরী?
-তুমি পরী। আসমানের পরী।
-পরী পবিত্র হয়।
-তোমার মন পবিত্র তনু। তুমিও পবিত্র।
কথাটা শুনে আমার চোখ বন্ধ করে কাঁদতে ইচ্ছা করছিলো সেদিন। এত সম্মান। এত সম্মান আমাকে অনেকদিন যাবৎ কেউ করে নাই। খাওয়া শেষে ইফতি আমাকে রাসেল ভাইয়ের দোকানে নিয়ে চা খাওয়ালো। রাসেল ভাই আমার স্বাভাবিক রূপ দেখে চিনতেই পারসিলো না। হাহাহাহাহা। এত স্বাভাবিক জামা কাপড়। হালকা সাজ। সে বলেই উঠলো
-তনু তুই এত সুন্দর? ইফতি পাশ থেকে বলে উঠলো
-দেখেন না রাসেল ভাই। জামা টা ওকে মানাইসে না?
-হ অনেক মানাইসে। মা শা আল্লাহ আমি দুইজনের কথা শুনছিলাম। এমন প্রশংসা শুনি না কত শত বছর। ইফতি কানের কাছে এসে বলল
-তনু আজ পকেটে টাকা নাই। কাল দিলে হিবে?
-কিসের টাকা?
-তুমি আমার সাথে সারা সন্ধ্যা পার করেছো। ঐ টা টাকার চেয়ে অনেক দামী ছিলো কথাটা আমি বলতে পারলাম না কিন্তু মন বলছিলো বলে ফেলি। কিন্তু অবশেষে বললাম
-আরে নাহ। কালকের টাকা টাই তো রয়ে গেছে। সমস্যা নাই।
-শিউর তো?
-হ্যাঁ শিউর।
-তাহলে এই তিন হাজার টাকা হাতে রাখো। এটা দিয়ে শপিং করবে কালকে। এই টাকা অন্য কোন কাজে ব্যবহার করবে না।
-আপনি বললেন টাকা নাই। তাহলে?
-এই টাকাটা শপিং এর জন্য দিয়েছি।
আজকে সন্ধ্যায় যেই সময় কাটিয়েছি সেটা অমূল্য , এর সমমূল্য আমার কাছে নাই। কত অদ্ভূত যা আমি মনে মনে ভাবছিলাম তা ইফতি বলে দিলো। ইফতি আমার হাতে টাকাটা দিয়ে আবার আরেকটু কাছে এসে কানে কানে বলল
-তনু তুমি খুব সুন্দর। তোমাকে অন্ধকারে না আলোতে মানায়। কথাটা বলে আমার কানে হালকা একটু তার ঠোঁট স্পর্শ করে চলে গেলো। আমার চোখ বন্ধ। যখন চোখ খুললাম দেখি ইফতি নাই। ছেলেটা আমাকে কড়া স্বাধীনতার মধ্যেও কোথায় যেনো বন্দী করে গেলো গো। আমি টের ই পেলাম না। রাসেল ভাই আমার দিক তাকিয়ে হাসছে। আমার আজ সবকিছু ভালো লাগছে। সব সব সব। বাতাস টা আকাশ টা রাস্তার নিয়ন আলোটা। সব!! বাসায় গিয়ে ব্যাগ থেকে ফুল বের করে বালিশের নিচে নিয়ে ঘুমালাম। বাকী মেয়েরা আসে নাই। তারা এখনো অন্ধকারে। আমি আজ আলো জ্বালিয়ে নিজেকে আয়নায় দেখসি হাসছি দেখছি হাটসি ভাবসি আলোতে আমাকে আসলেও দারুন লাগে।
পরেরদিন দুইটা জামা কিনলাম। সন্ধ্যায় হালকা সাজে বের হলাম বাসা থেকে। ঠিক সময়ে ইফতি সেখানে। এরপর প্রতিদিন আমরা হাটতাম ঘুরতাম রাস্তায় চটপটি ফুচকা খেতাম। গল্প করতাম ,হাটতাম, হাসতাম,হাত ধরতাম। সবশেষে রাসেল ভাই এর দোকানের চা খেয়ে বিদায় নিতাম দুজন। বিদায়ের পর আমার রাস্তার দিক তাকিয়ে একা একা হাসির একমাত্র সাক্ষী ছিলো রাসেল ভাই। শেষ কবে কোন অন্ধকার গলিতে অথবা অন্ধকার ঘরে নিজেকে অন্যের সামনে অনাবৃত করেছিলাম ভুলে গিয়েছি। আমি শুদ্ধ হচ্ছিলাম। প্রায়ই আমাকে ইফতি টাকা দিয়ে যেতো। চলার জন্য। নরমাল একটা মোবাইলও কিনলাম …প্রায় রাতে কথা হত।একদিন ইফতি আমাকে আগে বের হতে বলল রিক্সা টা সেদিন খুব পরিচিত রাস্তার দিকে যাচ্ছিলো। আমি আস্তে আস্তে কাঁপছিলাম।
-ইফতি আমরা এখানে কেন যাচ্ছি?
-চুপ একদম চুপ।
আমি শক্ত হয়ে বাবুল মামার দোকানের সামনে দাড়িয়ে আছি। আমার শরীর চলছে না। আমাকে ইফতি হাত ধরে সিড়ি বেয়ে উঠলো। দরজায় নক করার আগে ইফতি আমার মাথায় ঘোমটা দিয়ে দিলো। আমি শুধু শক্ত হয়েছিলাম। গেট খুললো আমার আম্মু। আমাকে দেখে সে দেওয়াল ঘেসে বসে পড়লো। আমি এক মা কে তার সন্তান ফিরে পাওয়ার আনন্দে কান্না করতে দেখসিলাম। আম্মা চিৎকার করে উঠলো
-এই এইদিক আসো। এই শুনছো.. তনু আসছে। আব্বা কোত্থেকে দৌড়ে এসে বলসে
-আল্লাহ তোমার কাছে অশেষ মেহেরবান।
আমার মেয়েটা বেঁচে আছে। কি অদ্ভূত ভাগ্য আমার্। আমি পালিয়ে যাওয়ার পর আমার বাবা মা এর মন গলেছিলো আমাকে ঘরের ফিরানোর কিন্তু ঘটেছিলো অন্য কিছু।যে স্বর্ন গয়না নিয়ে পালিয়েছিলাম সেগুলা আমার প্রেমিক রেখে দিয়েছিলো। একদিন সে তার আরেকটা প্রেমিকাকে নিয়ে বাইকে যাওয়ার সময় এক্সিডেন্ট করেছিলো। যার গলায় ছিলো আমার গলার পরা “T” লেখা লকেট সহ চেইন টা আর হাতে ছিলো মায়ের দেওয়া ব্রেসলেট। দুজনই মারা গিয়েছিলো। এক্সিডেন্টে মেয়েটার চেহারা এতই নষ্ট হয়ে গিয়েছিলো যে আমার বাবা মা অনুমান করেছিলো ঐ মেয়েটা আমি।
মৃত আমি সে যেনে এত বছর তারা আমাকে খুঁজে নাই। আমি চিৎকার করে কেঁদে উঠলাম। আব্বু আম্মু কে জড়িয়ে। দূরে দাড়িয়ে ভাবী ও কাঁদছে আর আমার একমাত্র ভাতিজী যে কিনা যানে আমি মৃত সে ও কাঁদছে। আমি সবাইকে জড়িয়ে ধরে কাঁদলাম। সে কি দারুন চিত্র। ইফতি তার পরিচয় দিলো সে আর আমি একই অফিসে চাকরি করি। আব্বু আম্মু আমাকে রাখতে চাইলেন কিন্তু ইফতি বলল আমার অফিস এখান থেকে অনেক দূরে তাই আমার বাসা ঐখানে। কিছুদিন পর আমি শিফট করবো। আমিও তাই বললাম আমিও জানতাম ইফতি কেন এই কথা বলেছিলো.. সে চাচ্ছিলো না আমি বাসায় ছোট হই। বাসা থেকে বের হয়ে আমি ইফতি কে ডেকে বললাম
-ইফতি একটা কথা বলি?
-হ্যাঁ বলো না।
-একটু জড়ায়া ধরবেন?
ইফতি আমার দিকে সামনে এগিয়ে এগিয়ে এসে আমাকে জড়িয়ে ধরলো। অনেকবছর পর নিজেকে পবিত্র মনে হচ্ছে। খুব পবিত্র। ইফতি আমাকে জড়িয়ে ধরে বলছে
-তুমি ঠিক বলেছিলা তনু আল্লাহ ই ওর বিচার করবে। আল্লাহ ওর বিচার করেছে। আমি দীর্ঘশ্বাস ফেলে জড়িয়ে ধরলাম ইফতি কে। তারপর থেকে আমার বাসায় আমার যাওয়া আসা শুরু হলো। এরপর একদিন ইফতি ওর বাসায় নিয়ে গেলো বেড়াতে। ওর মায়ের সাথে পরিচয় করিয়ে দিলো অফিস কলিগ হিসেবে … ইফতির বাবা নাই। একটা ছোট ভাই আছে। সারাদিন ওদের সাথে থেকে সংসার এর প্রতি মায়া লেগে গেলো। আসার আগে ইফতির মা আমাকে ডেকে নিলেন তার ঘরে,বললেন
-মা ইফতি শেষ ধাক্কাটা তোমার জন্য সহ্য করেছে।
বাপ ছাড়া ছেলে আমার্। তুমি ওর যেভাবে যত্ন করছো আল্লাহ তোমার ভালো করবে আমি অবাক হচ্ছিলাম। যত্ন আমি ওকে না ও আমাকে করেছে। কোত্থেকে কই নিয়ে এসেছে। সেদিন ইফতি আমাকে বিদায় দেওয়ার পর থেকে আমি ভাবছিলাম আমি প্রেমে পড়েছি। হুম আমি ইফতিকে ভালোবেসেছি। কিন্তু ও হয়ত মানবিকতার কারণে আমাকে এত সম্মান করে আর কিছুনা। আমি ভুলও হতে পারি। একদিন ইফতি আসলো না। এত মাসে এই প্রথম কোন সন্ধ্যায় আমি ইফতিকে পেলাম না। একটু চিন্তা লাগছিলো। ফোন করলাম রিসিভ করলো না। আমার রুমে আজ আমি একা। বাকী ৩ জন অন্ধকার গলিতে চলে গিয়েছে। আজ সন্ধ্যা আমি একা। খুব খারাপ লাগসিলো। আমার বাসায় ফোন করে মায়ের সাথে কথা বললাম। তাও কেন যেনো শান্তি পাচ্ছিলাম না। রাতে ইফতি ফোন করলো।
-তনু ঘুমায়া গেছো?
-না ঘুমাই নাই। কই আপনাকে কত খুঁজেছি আমি। রাসেল ভাই এর ঐখানেও গিয়েছিলাম। ফোন করেছিলাম। ঠিক আছেন তো? ইফতি অনেক্ষণ থেমে থেকে
-তনু সায়মা (প্রাক্তন প্রেমিকা) ফিরে আসছে।
ওর স্বামীর ঘর থেকে। ও আমার কাছে ফিরতে চায় ওর নাকি সেখানে ভালো লাগছে না। আমি কি বলবো বুঝে পাচ্ছিলাম না। চোখ দিয়ে পানি ঝড়ছিলো। কিন্তু আওয়াজবিহীন। এমন কষ্টের কান্না আর মনে হয় দুনিয়াতে নাই। অনেক্ষণ পর বললাম
– ইফতি আপনি অনেক ভালো মানুষ ভালো থাইকেন। আর আমাকে যেই অন্ধকার রাস্তা থেকে তুলসেন আমি সেখানে আর ফিরবো না। মানুষের বাসায় কাজ করবো কিন্তু আর সেখানে যাবো না। একটা কথা ছিলো।
-কি বলো?
-কিছুনা ইফতি।
ইফতি কিছু বলতেই নিচ্ছিলো ফোনটা কেটে দিলাম। ফোন বন্ধ করে চিৎকার করে কাঁদলাম। আসলে পতিতাদের কপালে ভালোবাসা নাই ,সংসার নাই ,স্বামী নাই। ওদের নিয়ে বিধাতাও ভাগ্য খেলা খেলে। আমি আমার আগের বাসা ছেড়ে দিলাম। আমার বাসায় সবার কাছ থেকে আরো একবার হারিয়ে গেলাম। অনেকদূরে একটা বৃদ্ধাশ্রমে কাজ নিলাম তাদের দেখা শোনার। ঐদিক টায় যাওয়াই হয় না আর। আমি ইফতিকে ওয়াদা করেছিলাম ঐ পথে আর পা দিবো না। আমি ওয়াদা রেখেসি। অনেকদিন পর খুব বেশি রাসেল ভাই কে মনে পড়ল। ভাবলাম একটু চা খেয়ে আসি। রাসেল ভাই আমাকে দূর থেকে দেখে দৌড়ে আসলেন। তার চোখে পানি। আমাকে এসে বললেন
-কই গেসিলি তুই? এমনে গায়েব হয় মানুষ?
-ভাই এই জগতটা থেকে একেবারে বিরতি নিয়েছি তাই আর এদিক আসতাম না। কখন আবার কিসের মায়ায় পরে এই পথের দিকে আরেকবার টান আসে সেই ভয়ে আসি না।
-আরে পাগল নিজে গেসিস। আরেকটা মানুষরে যে কেমনে কান্দায়া গেসিস সেইটা খোঁজ নিসিস?
-কে? কার কথা বলছেন? আমার চোখ তখন কপালে।
-ইফতি সাহেব প্রত্যেকদিন একবার এইখানে আসে।
আইসা তোর কথা জিগায়। আমি কিছুই কইতে পারি না। আর সে এক কাপ চা নিয়া অর্ধেক চা রেখে চলে যায়। আমার কলিজা আচমকা একটা কামড় দিলো। আমি আর ইফতি এক কাপে চা খেতাম। ও অর্ধেক খেয়ে আমাকে দিত এরপর আমি খেতাম। রাসেল ভাই আমাকে একটা কাগজ দিলো তাতে লেখা।” কই গেলা পরী? আমি প্রতিদিন তোমাকে খুঁজি। আমার তোমাকে ছাড়া কিছুই ভালো লাগে না গো। কোথায় গেলা তুমি? এইবার ও আমি মরবো না কিন্তু আমার পরীর জন্য অপেক্ষা করবো। আমার পরী একদিন এইখানেই ফিরবে।” আমি রাসেল ভাইকে বললাম
-ইফতি প্রতিদিন কখন আসে রাসেল ভাই?
-৭ টার দিকে।
ঘড়িতে তখন ৬.২৮ বাজে। আমি দৌড়ে গেলাম সেই জায়গায় যেখানে ইফতির সাথে প্রথম দেখা হয়েছিলো। ইয়া আল্লাহ আমার ধারনা সঠিক ছিলো। ইফতি আমার জন্য অপেক্ষা করছিলো। আমি ওকে দূর থেকে দেখে রাস্তায় হুমড়ি খেয়ে পড়লাম। ইফতি আমাকে যখন দেখতে পারলো দৌড়ে এসে আমাকে জড়ায়া ধরলো।
-এই মেয়ে কই গেসিলা তুমি? আমাকে একটাবার কিছু বলার সুযোগ ও দেও নাই। এমন কেন তুমি? আমি কাঁদতে কাঁদতে হাপিয়ে যাচ্ছিলাম। ঠিকমত কথা বলতে পারছিলাম না।
-আমি!! আমি ভাবসি তুমি …তুমি সায়মার কাছে ফিরে গেছো।
-পাগল হইছো মেয়ে? যে আমাকে রেখে ভালো কিছুর আশায় চলে গেসিলো তার জন্য আমি তোমার মত পবিত্র কাউকে হারাবো?
-আমি তো পবিত্র না ইফতি।
-কে বলেছে তুমি পবিত্র না?
সায়মা নিজ ইচ্ছায় অন্য কারো সাথে বিছানায় গিয়েছে…আমার সাথে কাটানো সব স্মৃতিকে ফেলে। আর তুমি এ কাজে ছিলা বাধ্য হয়ে । তুমি তো ভালোবেসে বিশ্বাস করেছিলা। বেশ্যা তুমি না। বেশ্যা তো তাহলে সায়মা । কয়দিন পর অন্য কারো কাছে চলে যাবে। কিন্তু তুমি আমাকে ওয়াদা করে আর এই অন্ধকার গলিতে আসো নাই। আমি তখনো কাঁদছি। ইফতিকে আপটে সাপটে জড়িয়ে ধরে কাঁদছি.…অনেক শুকিয়ে গিয়েছে ইফতি। গাল ভর্তি দাড়ি…অনেকেই তাকিয়ে আছে যারা আমার মত এই অন্ধকার গলির দেহ ক্রেতা এবং বিক্রেতা ইফতি আমাকে জড়িয়ে ধরা থেকে হালকা ছাড়িয়ে নিলো। ইফতি ওর পিঠের ব্যাগ থেকে একটা প্যাকেট বের করলো।
-এটা নেও। সেই কতদিন ধরে এইটা সাথে নিয়ে ঘুরছি। দিবো বলে। এটা নেও আর আমাকে মুক্তি দেও এই দায় থেকে। আমি ফুপিয়ে ফুপিয়ে বলসি
-কি এটা?
-খুলে দেখো। আমি প্যাকেট খুলে আবার আরেকটা বার কেঁদে উঠলাম একটা লাল বেনারসি শাড়ি। একটা পাথর খোচিত নাকফুল। আমি কাঁদছিলাম আর ইফতি আমার কানের কাছে এসে বলল
-তনু বিয়ে করবা আমাকে?আমি তোমাকে আমার সাধ্য অনুযায়ী ভালো রাখবো। আমাদের অতীত বলতে কিছু নাই। শুধু আমরাই আমাদের বর্তমান আর ভবিষ্যৎ হবো। হবে আমার ভবিষ্যৎ? আমার কান্নার মাত্রা বেড়ে গেলো। আমি ফোপাতে ফোপাতে বললাম
-ইফতি!! একটা কথা বলবো?
-হ্যাঁ বলো না।
-ইফতি ভালোবাসি তোমাকে। অনেক ভালোবাসি তোমাকে।
-আমার চেয়ে বেশি না তাহলে আমাকে ফেলে যেতা না। আর কোনদিন যাবা না।
কালই আমরা দুই পরিবারের সামনে বিয়ে করবো। তুমি শুধু আমার্। আমি ভালোবাসি তোমাকে আমি ইফতিকে জড়িয়ে ধরে সেই সুখের তৃপ্তি নিচ্ছি যা একসময় আমার কাছে ঘোলা স্বপ্ন লাগতো। দুইজনের জড়িয়ে ধরা দূর থেকে দেখে অনেকে কেঁদে দিলো। কাঁদলো আমার রুমে থাকত সেখানের একটা মেয়ে যে দূর থেকে দেখসিলো। কাঁদলো রাসেল ভাই। আহা কি সুন্দর দৃশ্য ছিলো। আহা কি ভালোবাসা। ভালো থাকুক ভালোবাসা নিষিদ্ধ কিংবা অনুমতিতে।