আমি তানিয়ার দিকে তাকিয়ে বললাম,
-কিছু বলতে চাও? তানিয়া মাথা নাড়িয়ে জানান দিলো ও কিছু বলতে চায়না।তবে আমার কেন জানি মনে হচ্ছে ও কিছু বলতে চায়।এ কারণে অনেক্ষন ধরেই ও আমার আশেপাশে ঘোরাঘুরি করছে। আমি আবার বললাম,
-কিছু বলতে চাইলে বলে ফেলো।
-না বলব না,
-তাহলে শুতে যাও।আমার একটু দেরী হবে। কাজটা শেষ করতে হবে।
-আচ্ছা। আচ্ছা বললেও তানিয়া শুতে গেল না। আমার পাশে এসে বসলো।তারপর জিজ্ঞেস করলো,
-কি করো?
-কাজ করি,,
-এত কাজ করে কি করবা?
আমি কোন জবাব দিলাম না।তানিয়ার যখন কিছুর প্রয়োজন তখন ও এভাবেই কথা বলে। এরকম পরিস্থিতিতে ওর কথা এড়িয়ে যাওয়াই শ্রেয়। তানিয়া আমার আরেক টু গা ঘেষে বসলো। তারপর আমার মাথায় ওর হাত বোলাতে বোলাতে বলল,
-আজকের আবহাওয়া টা খুব সুন্দর তাই না?
আমি ল্যাপটপ থেকে চোখ তুলে ওর দিকে তাকালাম।আজ ওর এত সুন্দর করে কথা বলার কারণ কি? তাও আবার আবহাওয়া নিয়ে। আমি জবাব দিলাম,
-হুম,ভালই। বেশি গরম ও না ঠান্ডাও না, তানিয়া বলল,
-আবার মনে হয় বৃষ্টি হবে, তাইনা?
এবার বুঝতে পারলাম ব্যাপার টা কি।সোজা বলে দিলাম,
-হ্যাঁ, কিন্তু ছাদে যাওয়া যাবেনা।বৃষ্টি হোক আর কি হয় হোক,, তানিয়া একটু অভিমানী গলায় বলল,
-আমি কি বলছি যে যাবো,,
-গুড। তানিয়া কিছুক্ষন বাদে আবার বলল,
-ছাদের চাবিটা কোথায় রাখছ?
-এখনি তো বললা ছাদে যাবানা,
-এমনি জানতে চাচ্ছি,,
-শোন, ছাদে রেলিং নাই। অনেক পিছল হয়ে আছে। ওঠা যাবেনা।
-এক কাজ করো তুমিও চলো।হাত ধরে থাকবা। তাহলে কোন রিস্ক নাই।
-আমার এত শখ নাই।অনেক কাজ আছে।
তানিয়া আমার পাশ থেকে উঠে গিয়ে একটু দূরে দাঁড়াল।বাইরে জোরালো বাতাশ বয়ে গিয়ে বৃষ্টি শুরু হলো।এমন কিছু ঘরেও ঘটবে সেটার আশঙ্কা করছি। তানিয়া খুব জোরেই বলল,
-বিয়ের আগে তো খুব বলতা আমার জন্য কত কি করবা আর এখন বিয়ের পর এসে ভেজাল করতেছ? একটু ছাদে যাইতেও পারোনা।
-বিয়ের আগে আর পরে দুটা আলাদা ব্যাপার।
-এই জন্য তুমি পালটি খাবা?
আমি তানিয়ার কথা শুনে অবাক হলাম। ল্যাপটপ টা বন্ধ করে আবার ওর দিকে তাকালাম। ওর চোখে পানি টলমল করছে, যে কোন সময় কেঁদে ফেলবে এমন একটা ভাব। আমি বুঝিনা এই মেয়ে এত ভাল অভিনয় করে কি ভাবে? আমি বললাম,
-বিয়ের আগে প্রেমিকরা অনেক কথা বলে। সব কথা ধরতে হয় নাকি?
-মানে?
-অনেক ছেলেই তো তাদের প্রেমিকাকে বলে, জান তোমার জন্য আমি চাঁদ, তারা নিয়ে আসবো।এগুলো সম্ভব নাকি?
-আমি কি ওসবের কথা বলছি,একটু ছাদে যাইতে বলছি।এটা কি সম্ভব নয়?
-হ্যাঁ, বাট এখন নয়।
-এখন কেন নয়,আধাঘন্টার তো ব্যাপার।
-তোমার ভালর জন্যই বলছি।তোমার মাথায় বৃষ্টির পানি পরলেই জ্বর আসে। গতবার এর কথা মনে আছে?
-একবার হয়েছে দেখে বারবার হবে?
-পারবোনা আমি। তানিয়ে বেডরুমের দিকে যেতে যেতে বলল,
-আমি আগে জানলে তোমাকে কখনো বিয়ে করতাম না।আম্মু মানা করছিলো তোমাকে বিয়ে করতে,,তাও নিজে থেকে বিয়ে করছি। আগে যদি জানতাম আরো এই টাইপ কিছু কথা বলতে বলতে গেলো। আমি আমার কাজে মন দিলাম।
সীজনের প্রথম বৃষ্টি, এগুলোতে ভিজলে শিউর জ্বর আসবে। কিন্তু এই মেয়েকে বোঝাবে কে? বেড রুম থেকে এখনো শব্দ আসছে।তানিয়া নিজে নিজেই কথা বলতেছে।আমার নামে ওর যত দোষারোপ।এমনি সময় কত ভাল মেয়ে। আমার প্রতি দোষারপ গুলো ওর নিজের মধ্যই সীমাবদ্ধ থাকবেনা কিছুক্ষন বাদে সেগুলো ওর মাকেও ফোন করে বলবে।গতবারেও এই একই কাজ করছে।। ওর মা আবার আমাকে ফোন করবে,অনেক কথা শোনাবে।এমন ভাবে কথা বলবে যেন ওনার মেয়েকে আমার হাতে তুলে দিয়ে ধন্য করেছেন। এসব হওয়ার আগেই তানিয়া কে আটকাতে হবে। আমি দরজার কাছে গিয়ে দেখি ভেতর থেকে দরজা লাগানো।এই মেয়ে অভিমানের ঢেকী। এত দ্রুত এত অভিমান এত রাগ কই থেকে আসে কে জানে? আমি বাহির থেকে বললাম,
-তানিয়া,বালিশের নিচে চাবি আছে। নিয়ে বের হও। এটা বলার ত্রিশ সেকেন্ডের মধ্য তানিয়ে হাসতে হাসতে দরজা খুলে চাবি নিয়ে বের হলো। বলল,
-আমি জানতাম তুমি রাজী হবা,
-হুম,চলো।কিন্তু মাত্র দশ মিনিট।
-আচ্ছা,শুধু দশ মিনিট।
ছাদে গিয়ে আমার ঠান্ডাই লাগলো। বেশ জোরে বাতাস বইছে ,তার উপর বৃষ্টি। তবে খুব একটা খারাপ লাগছিল না। তানিয়া একা একাই ভিজতে লাগলো।আমি চুপচাপ দেখতে লাগলাম ওর বৃষ্টিতে ভেজা। মেয়েটার পাগলামী গুলো ভাললাগে। তাই হয়ত এত ভালবাসি। বিয়ের আগে ও খুব বলতো,বৃষ্টি নামলে দুজন একসাথে ছাদে গিয়ে ভিজবো।আমিও রাজী হয়েছিলাম। তবে ঋতু বদলানো বৃষ্টিতে নয়। বৃষ্টিতে ভেজা তানিয়াকে দেখতে মন্দ লাগছিলা না।ও আমাকে ছাউনির নিচে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে বলল,
-কি করো? আসো ভিজি,
-তোমাকে দেখি,
-আমাকে কি দেখো,
-তোমাকে দেখার অনেক কিছু আছে।
-আসো না ভিজি,,
-না,
-বিয়ের আগে তো বলছিলা ভিজবা একসাথে, আমি একটু বিরক্ত হয়ে বললাম,
-আচ্ছা,আসছি। আর বারবার বিয়ের আগের প্রসঙ্গ টানার দরকার নাই।
-আসো।
আমিও নামলাম বৃষ্টিতে। কাল সকালে দুজনের মধ্য একজনের জ্বর আসবে এটা শিউর। দশ মিনিট এর জায়গায় আধাঘন্টা ভিজে ফিরলাম দুজনে।তানিয়া আমাকে জড়িয়ে ধরে বললো,
-তুমি সব চাইতে ভাল হ্যাজবেন্ড,,
আমি কিছু বললাম না। আমার শুধু কাল সকালের জন্য অপেক্ষা ছিল। যা ভেবেছিলাম তাই হলো। ভোরের দিকে তানিয়ার জ্বর এলো। আর এতে বড় প্রবলেম টা আমারই হলো।সারারাত যে কাজ টা করলাম সেটা নিয়ে অফিসে যেতেই পারলাম না। সকাল থেকেই তানিয়ার মাথায় পানি দিতে হচ্ছে।যখন ওকে বললাম,তোমার কারণে আমার অফিস যাওয়া হলো না।
তখন ও বলল,
-বিয়ের আগে তো বলছিলা, আমার জ্বর হলে নিজে সেবা করবা।আর এখন সমস্যা দেখাচ্ছ?
-সমস্যা কই দেখাইলাম,
-তাহলে পানি ঢালো।
আমি আর কিছু বললাম না চুপচাপ পানি ঢালতে লাগলাম।জানিনা আরো কত দিন বিয়ের আগের প্রসঙ্গ টানবে ও, কে জানে?