ব্যাগ নিয়ে বাজার থেকে ফেরার সময় এক মেয়ের সাথে ঘন্টায় ত্রিশ কিলোমিটার বেগে ধাক্কা খেলাম। ইশ মেয়টার উপর যদি পড়ে যেতাম তাহলে ফিল্মের মত অবস্থা হত! ধাক্কা খেয়ে মেয়ে এমনভাবে আমার দিকে তাকালো যেন তার কয়েকশ বছরের চেনা আমি!! ভাব নিয়ে সরি বলে অটোতে উঠে পড়লাম,কিন্তু আমার সিক্সথ সেন্স বলছিল এই মেয়ের সাথে আমার আবার দেখা হবে।
হয়েছেও তাই! অটোতে উঠেই দেখি সেই মেয়েটা! কল্পনায় গ্যাং নাম স্টাইলে নেচে বসে পড়লাম! গর্তওয়ালা রাস্তা আজ বেশ কাজে এসেছে! ঝাকি খেয়ে মেয়েটা বেশ কয়েকবার আমার গায়ের উপর এসে পড়ল! উফফফ! কি যে ভাল লাগছিল! মেয়েটা লাজুক হাসি দিয়ে যতবার সরি বলল, আমি ততবার ই ইটস অকে বলে দাত কেলালাম। এক পর্যায়ে দেখলাম মেয়েটা মোবাইল বের করে একটা নাম্বার উঠালো, কিন্ত কল দিচ্ছেনা! কাহিনী বুঝে গেলাম! নাম্বারটা ঝটপট মুখস্ত করে নিলাম।
অটো থেকে নামার পর মেয়েটা আমার দিকে ফিরে বলল..আমার কাছে ভাংতি নেই আপনি একটু দেখবেন। আমি তখন বিল গেটস এর মত একটা ভাব দেখিয়ে বললাম আরে আপনি কী বলেন! আমি আছি কেন! মেয়েটা একটা মুচকি হাসি দিয়ে চলে গেল! বাসায় এসেই ফোন দিলাম, আহা কী মিষ্টি কন্ঠ তার! আহা! ধুমাইয়া সারাদিন কথা চলতে লাগল আরশির সাথে।কখন হিসু করলাম, কখন ঘুমালাম,খেলাম, ডালে কার কবে লবণ বেশি হইছে, কার কিসে এলার্জি, ছোটবেলায় কে কী দুর্ঘটনা ঘটাইছি সবই জানাজানি হয়ে গেল। এর মাঝে লাপিউ বেবি, উম্মাহ উম্মাহ প্রতিদিন ই হতে লাগল। ঝামেলা বাধে দেখা করার দিন, যতবার দেখা হয়েছে ততবার ই তিন চার হাজার করে খরচা গেছে আমার,এর ওর হাতে পায়ে ধরে টাকা ম্যানেজ করে দেখা করতে লাগলাম।
বেশ কয়েকদিন ধরে লক্ষ্য করতে লাগলাম আরশির ফোন ওয়েটিং থাকে! জিজ্ঞেস করলেই বলে – বাবু! তুমি আমাকে ভুল বুঝছো কেন! আমার কাজিন ফোন দিছিল,আমার খালামনি ফোন দিছিল ব্লা ব্লা! এভাবে তার মামা,খালু কাজিনদের ফোন কল দিন দিন বাড়তেই থাকল! এমন দিনও গেছে যে সে সারা রাত মামা, কাজিনিদের সাথে কথা বলেছে। এভাবে আস্তে আস্তে দূরত্ব তৈরি হয়ে গেল বেশ, আমি বাপ্পারাজের গান দেখে কেঁদে বুক ভাসাতে লাগলাম আর আরশি তার ফেসবুক ওয়াল ভারী করতে লাগল প্রতিদিন বিভিন্ন কাজিনদের ছবি আপ্লোড দিয়ে।
কয়েকদিন পর আরশি ফোন দিয়ে বলল -সামনের শুক্রবার তার বিয়ে আমি যেন অবশ্যই বিয়েতে যায়! উল্টাপাল্টা গালিগালাজ করলাম আরশিও সমান তালে গালি দিয়ে ফোন রেখে দিল! একটুপর আরশি মেসেজ দিল – তোর চেহারা দেখছিস আয়নায়? শালা বান্দর,তোর সাথে এতদিন টাইম পাস করছি এই তোর বাপের কপাল। তোর মত এমন কয়েক হালি আবুল আমার পেছনে ঘোরে, হালার পুত আমার বিয়েতে আইসা খাইয়া যাইস, অনেক ফকির মিসকিনও আসব। নাহ! এই মেয়েরে ছাড়া যাবেনা,শুক্কুরবার সকাল সকাল আব্বার পাঞ্জাবি পরে (আমার পাঞ্জাবি পুরান মার্কেটে কাছে বিক্রি করে দিছিলাম ডেটিং খরচ মেইন্টেন করতে- চ্যাগাইন্না রিয়েক্ট হবে ) আরে বাহ! চারিদিকে কাচ্চিময় ঘ্রাণ! সুন্দর সুন্দর মেয়েরাও এসেছে দেখছি!সাথে আরো তিন বন্ধুরে নিয়ে এসেছি,আমার করা খরচ যতটা ওঠানো যায় আরকি। খাওয়াদাওয়া শেষে বরের স্টেজের দিকে গিয়ে বরের সাথে বসে আড্ডা দিতে লাগলাম।
দুলাভাই আপনি মেয়েটা পাইছেন এক নাম্বার! কী রুপ! মাশা আল্লাহ! খুব ফ্রি মাইন্ডেড মেয়ে ভাই সে, এইতো কিছুদিন আগে আমরা কক্সবাজার টুরে যায়, সেখানে এক রুমেই ছিলাম আমি আর ও! ধরেন বিয়ের পর যদি আপনি কোন ফ্রেন্ডের সাথে কোথাও যেয়ে যদি একই রুমে থাকেন তাহলে সে কিচ্ছু মনে করবেনা! আরশির হবে হবে হাজব্যান্ড মুখটা চ্যাগাইয়া আমাকে জিজ্ঞেস করল আমি কে, আমি পাত্তা না দিয়ে বলতে লাগলাম। আর একটা জিনিস আপনার কাছে বিরক্তিকর লাগতে পারে, আরশি ঘুমের ভিতর বালিশে লালা ফেলে আর তার ঠ্যাং মানুষের গায়ের উপরে উঠিয়ে দেয়।
আমার গায়ের উপর উঠিয়ে দিয়েছিল বলে তো ভোর রাতের পর থেকে আর ঘুমাতেই পারিনি! তবে ভাই যে যাই বলুক, ওর বুকের ঠিক মাঝখানে ছোট বেলায় কেটে যাওয়ার যে দাগটা আছে সেটা কিন্তু ভাই ওর সৌন্দর্য বাড়িয়ে দিয়েছে। আরশির হবে হবে আইমিন হবু হাজব্যান্ড ক্ষ্যাপাটে ষাড়ের মত ফোঁপাতে ফোঁপাতে বলল- আপনার সাথে আরশির কী কী হইছে বলেন, একদম কিছু লুকাবেন না। আমি স্টেজ থেকে নেমে চলে আসার সময় পেছন ফিরে বললাম – ছিঃ কী যে বলেন আপনি! আমার লজ্জা লাগে এসব বলতে, তবে ব্যাপার না আমার কাছে কিছু ফটো আছে আপনাকে ইমোতে পাঠিয়ে দিব।
নাহ! খিদে লেগে গেল, আবার গিয়ে খেতে বসলাম, প্রথম প্লেট শেষ করার আগেই বরপক্ষ চলে গেল! যাক গে বাবা, যে চলে যাবার সে যাবেই। রেকর্ডিং অপশন চালু করে একটা গান গেয়ে আরশিকে পাঠিয়ে দিলাম, গানটা ছিল –
“প্রেম পিরীতি ভালই বুঝি আন্ডার গ্রাজুয়েট পাশ, তোমারে দিয়ে গেলাম আইক্কাওয়ালা বাশ..ও শাবা.. ও শাবা”