বাসর ঘরে ঢুকে বউয়ের কান্ড দেখে অবাক হয়ে গেলাম…
– এই এই কি করো?
– দেখতে পাচ্ছনা?
– ফোনটা ভেঙ্গে যাবেতো?
– যায় যাক
– আরে পাগলি ফোনটাকে ঐভাবে নাড়াচ্ছ কেন?
– একদম নেটওয়ার্ক পাচ্ছেনা তাই
– তুমি নেটওয়ার্ক কি করবে?
– কি করব মানে? সারারাত ফেসবুক চালাবো
– এ.এ.এ.একি বলছ ঝিলিক?
– ঠিকি বলছি বাবু?
– তাহলে আমাদের ইয়ে?
– কিতা?
– না মানে বলছি, আজ তো আমাদের জীবনের মধুর রাত
– তো?
– একটু প্রেম ভালবাসা রোমান্স…
– এহ! রাখো তোমার শখ, ওগুলো আগামীকাল হবে, এখন আমি ফেসবুক চালাবো,
– আল্লাহ! আমারে মাইরালাও গাইরালাও ফাইরালাও
– হিহিহি নাগো বাবু তাহলে আমার কি হবে?
– তোমার তো ফেসবুক আছে
– চুপ,
কথা না বলে ফেবুতে ঢোকো, দুজনে সেলফি তুলে পোষ্ট দেব বাসর ঘরে কথা বলছিলাম আমার প্রাণপ্রিয় বউ ঝিলিকের সাথে আজই আমাদের বিয়ে হয়েছে ঝিলিকের সাথে আমার ফেসবুকে পরিচয় ও প্রেম হয় আমি রাজ, গ্রামে বাস করি, এবারই পড়াশুনা শেষ করেছি পাশাপাশি চাকরিও খুজছি ঝিলিকের পরিবারের তাড়াহুড়াতে চাকরি না পেতেই, বিয়েটা করে ফেল্লাম কি আর করার! এখন যতদিন চাকরি না পাই,ততদিন বাবার একগুচ্ছ জমিজমা আমাকেই দেখাশুনা করতে হবে হতে হবে আমাকে বাংলার কৃষক নো প্রোবলেম, বিয়ে যখন করেছি এখন ঠেলা বুঝতেই হবে.. যাহক, পরে ঝিলিক আমাকে বলল
– ধ্যাত খুব রাগ লাগছে!
– কেন গো?
– তোমাদের গ্রামে এত নেটওয়ার্কের প্রোবলেম কেন?
– হাহাহা এটা কি তুমি ঢাকা শহর পেয়েছ খুকী?
– ধ্যাত পুরাই মেজাজ গরম
– কেন বিয়ের আগে
ফেসবুকে রিপলে দিতে লেট হলে আমাকে তো ধোলাই করতে আমি নাকি মেয়েদের চ্যাটিং করতাম? নেট প্রোবলেম বললে তো বিশ্বাস করতে না, এখন তো বিশ্বাস হচ্ছে?
– হইছে! আমি ঘুমাবো
– এই ঝিলিক
– হ্যা বলো
– উহুহুহুহুহু(আমি কাঁদার ভাব)
– হিহিহি কি হয়েছে বাবু
– জানিনা
– হাহাহা হিহিহি
আমি তার গোলাপ রাঙা ঠোটের হাসি দেখে অবাক হয়ে গেলাম! তাছাড়া ঝিলিক এমনিতেই সুন্দরী,বউয়ের সাজে আজ তাকে ডাবল সুন্দরী লাগছে..
– উহ ইস
– কি হলো ঝিলিক?
– অনেক জার্নি করেছি, তাই হয়তো মাথাটা ব্যথা করছে,
– ঠিক আছে তাহলে ঘুমিয়ে পড়ো
– তুমি ঘুমাবেনা?
– না
– কেন রাজ?
– “হাতের চুড়ি রুমঝুম ঝুম, কণ্ঠে তোমার গুণ গুণ গুণ..রুপের ঝলক দিয়ে আমার কেড়ে নিলে ঘুম..”
– আ হা রে
– ও হো রে
– হিহিহি… ঐ যাও বরের পোশাকটা চেঞ্জ করে এসো..
– তুমি শাড়ি চেঞ্জ করবেনা?
– পাগল নাকি?
– কেন?
– আমি শাড়ি পড়তে পারিনা, খালাতো বোনঅনেক কষ্ট করে এই বিয়ের শাড়িটা আমাকে পড়িয়ে দিয়েছে, তাও আবার ১০১ টা সেপ্টেফিন দিয়ে
– তাই তো দেখছি তাই বলে কেউ এত সেপ্টেফিন লাগায় পাগলি?
– বেশ করেছি, নতুবা আমার শাড়ি খুলে যাবে
– হাহাহা তবে যতগুলো সেপ্টেফিন লাগাইছো, তোমার শাড়ি খুলতে তো ২ দিন লাগবে
– কুত্তা
– হাহাহা, আচ্ছা আমি তোমাকে শাড়ি পড়িয়ে দেবো
– nooo, তুমি ঘুমাও
– ওকে গুড নাইট(রাগ দেখিয়ে)
– রাগ করলে বাবু?
– না
– তাহলে কাছে এসো বাবুসোনা
– কেন?
– কানকথা আছে
– জোরেই বল
– সব কথা জোরে বলা যায়না কাছে এসোতো আমি তার কাছে গিয়ে কানকথা সহ এই না না আর বলা যাবেনা,
ঐটা সিক্রেট থাকুক হিহিহি যাহক পরেরদিন সকাল বেলা ঝিলিক খুব ভোরে ঘুম থেকে উঠে, ফ্রেশ হয়ে নামাজ পড়ে, ঘরবাড়ি ঝাড়ু দিয়ে চা নাস্তা রেডি করল আমি তো এসব দেখে অবাক! যে মেয়ে সকাল ৯টা পযন্ত ঘুমাতো, আজ সে এত লক্ষীমেয়ে হয়ে গেলো! আসলে বিয়ের পর মেয়েরা বুঝি এরকমই দায়িত্ববান হয়ে যায়? যাহক আপনাদের তো বলাই হয়নি, আমি যখন ঘুমাচ্ছিলাম ঠিক তখন, ঝিলিক চা নিয়ে এসে বলল
– এই বাবু ওঠো আর কত ঘুমাবে? আমি ঘুমঘুম চোখে অর্ধেক চা খেয়ে, ঝিলিককে জড়িয়ে ধরে কিস করতেই,
– এই এই ছাড়ো কি করছ?
– চা মিষ্টি হয়নি,
খুব তিতা হয়েছে, তিতা চা খেয়ে মুখ আমার একদম বেস্বাদ হয়ে গেছে, তাই এখন মিষ্টি খেয়ে, মুখটা একটু মিষ্টি করবো…
– অসভ্য আমি চায়ে অনেক চিনি দিয়েছি তবুও মিষ্টি হয়নি?
– না হয়নি
– ধান্দাবাজ, ছাড়ো বলছি কেউ এসে পড়বে
–
– উম…ছাড়ো
আমাকে রান্না করতে হবে অতঃপর পাগলিটা ছুটে পালালো, আমি হাসতে লাগলাম পরে ঝিলিক রান্না ঘরে গিয়ে মাকে বলল,
– মা আপনি উঠুন আজ আমি রান্না করবো
– না মা, তুমি শহরের মেয়ে, মাটির চুলাতে, লতাপাতা,কাঠ,খড়ি দিয়ে রান্না করতে পারবেনা
– পারব মা,
আমি শহরের মেয়ে হলে, আজ জন্ম গ্রামে। তাছাড়া মাটির চুলাতে রান্না করার অভ্যাস আমার আছে আমি পারব মা পরে ঝিলিক আমার মাকে আর কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে, রান্না শুরু করলো পরে আমি গিয়ে দেখলাম, আমার মিষ্টি বঊটি রান্না করছে, চুলার ধোয়াতে তার চোখ দিয়ে, পানি বের হয়ে গেছে আমি বল্লাম
– এই ঝিলিক তুমি রান্না করছ কেন?
– তো কি হয়েছে? এখন থেকে বাসার সব কাজ আমি করব
– তোমার খুব কষ্ট হচ্ছেনা?
– একদম না,
তুমি যাও ফ্রেশ হও আমি ঝিলিকের ব্যবহার দেখে অবাক হয়ে গেলাম, শহরের একটা মেয়ে, গ্রামে এসে এতটা কাজ করতে পারে সত্যিই অবাকর! যে মেয়ের মধ্যে নেই কোনো হিংসা,অহংকার,অলসতা.. যাহক পরে খেতে বসে সবাই ঝিলিকের রান্নার প্রশংসা করলো.. আমি ঘরে এসে হাপাতেই ঝিলিক বলল,
– কি হয়েছে বাবু?
– তরকারি খুব ঝাল হয়েছে গো
– বলো কি? ঝাল তো কমই দিয়েছি
– কি জানি(জোরে হাপাচ্ছি)
– ইস! খুব কষ্ট হচ্ছে তোমার?
– হইলে কি আর করব?
– চিনির বোয়্যাম আনবো?
– না
– তাহলে?
– দেবের আই লাভ ইউ সিনেমার মতো মিষ্টি দাও, তাহলে ঠিক হয়ে যাবে
– হিহিহি পাগল পরে ঝিলিক আমাকে খুশি করতে তাই করলো।
– যাক বাবা এতক্ষণে ঝালটা গেল
– হুম এবার চিনি খাও
– হাহাহা
– হাসো কেন?
– আসলটা পেয়ে গেছি আর চিনির দরকার নেই
– ধ্যাত
– আরে তরকারিটা ঠিকি ছিল,
– মানে?
– মানে রাঙা বউয়ের আদর পেতে এই ঝালের নাটকটা করলাম..
– ওরে দুষ্ট পাজি, এত বড় চিটারি দাড়াও দেখাচ্ছি মজা আমি ঘর থেকে বের হয়ে পালালাম ঝিলিকও আমার পেছন পেছন আসতে লাগল.. হঠাৎ ঝিলিকের নজর পড়ল পুকুর পাড়ে, এক গুচ্ছ রাজহাসের পালের দিকে
– ওয়াও কত্ত কিউট.. সে রাজহাসের পালকে তাড়া করতে লাগলো..
– একটা চিনাহাস তার দিকে তেড়ে এসে ঠোকর মারল
– সে ব্যথাতে চিৎকার করে উঠে দৌড়ে পালাতেই,সামনে পড়ল একটা কুচা মুরগি..
– কুচা মুরগিটি ছোট ছোট একগুচ্ছ বাচ্চা নিয়ে ঘুড়ে বেড়াচ্ছে
– ঝিলিক বলল, বাহ! কি সুন্দর কিউট ছোট ছোট মুরগির বাচ্চা ওয়াও!
– ঝিলিক মুরগির বাচ্চাকে ধরতেই, মা কুচা মুরগিটি উড়ে এসে ঝিলিকের কপালে ঠোকর মারলো
– ঝিলিক চিৎকার করে উঠলো আমি তো দুর থেকে এসব দেখে সে কি হাসা! আমাকে দেখে ঝিলিক দৌড়ে এসে জড়িয়ে ধরে বলল,
– আমাকে বাচাও
– হাহাহা
– হাসো কেন? হাস মুরগি যে ঠোকর দেয়আমার আগে জানা ছিলনা..
– ঐ পাগলি হাস মুরগি ঠোকর দেয়না,তবে কুচা হাস মুরগির বাচ্চাকে ধরলে, তারা তো তাদের বাচ্চাকে বাচাতে, তোমাকে ঠোকর তো দেবেই
– আমি কি এটা আগে জানতাম?
– ইস! কপালটা চিড়ে গেছে
– ইটস্ ওকে
বাসাতে চলো ঝিলিক সেই থেকে যেকোনো হাস মুরগিকে দেখে ভয় করে.. হাহাহা বিকেলে আমি ঝিলিককে নিয়ে গ্রামটা ঘুড়তে বের হলাম.. সাথে আমার একটা সুইট ভাতিজি আছে
– ফাগুনের পড়ন্ত বিকেলে গ্রামের ঐ আকাবাকা মেঠো পথে আমরা একে অপরের হাত ধরে হেটে চলছি রাস্তার দুপাশে সাদা কাঁশফুল ফূটে আছে, মাঝে মধ্যে দু একটা কৃষ্ণচুড়ার গাছ, গাছে গাছে কোকিল গান গাইছে,
– সুন্দর ঐ নীল আকাশ যেন মাটিকে আলিঙ্গন করছে.. রাস্তার দুপাশে দিগন্ত জোড়া ফসলের মাঠ, দুর আকাশে সাদা বকের ঝাক ঊড়ে যাচ্ছে দক্ষিণা বাতাসে প্রাণটা যেন জুড়িয়ে যাচ্ছে বাতাসে আমার সুইট বউটির মাথার মেঘকালো চুল গুলোও উড়ছে আজ সে কালো একটা শাড়ি পড়েছে অসাম লাগছে তাকে
– পরে ঝিলিক দুহাত প্রসারিত করে প্রকৃতির সৌন্দয্য উপভোগ করতে লাগলো আমি বল্লাম
– চলো ঝিলিক এখন বাসাতে যাওয়া যাক
– না আমি যাবনা, দুচোখ ভরে আকাশ দেখব আমার ভাতিজি খিলখিল করে হেসে উঠে বলল
– আন্টি আপনি বুঝি শহরে থাকতে কখনও আকাশ দেখেন নি? ঝিলিক তাকে চুমু দিয়ে কোলে তুলে নিয়ে বলল,
– দেখেছি মামণি, তবে শহরের উচু বিল্ডিংয়ের মধ্যে আকাশ দেখতে খুব পচা লাগে
– হিহিহি
– হিহিহি
পরে শুরু হলো বৃষ্টি। ভিজে ৩ জন বাসাতে ফিরছি দূরে একটা কুকুর তেড়ে আসতেই ঝিলিক চিৎকার করে আমাকে জড়িয়ে ধরল। আমি বল্লাম
– হাহাহা আরে পাগলি ঐটা পালিত কুকুর কামড়াবেনা আর এভাবেই আকাশ দেখা,রাতে তাঁরাভরা আকাশ দেখা, গ্রাম ঘুড়ে বেড়ানো ইত্যাদির মধ্য দিয়ে ঝিলিকের দিনগুলো কেটে যায় পরেরদিন সকালে আমি ঘুম থেকে উঠলাম
– কই যাবে বাবু?
– একটু ক্ষেতে কাজ করতে যাব
– না গেলে হয়না?
– বাহরে! এখনও চাকরি পাইনি, তাই জমিজমা তো দেখাশুনা করাই লাগবে
– ওকে যাও
– হুম, টেক কেয়ার
– ওকে তুমিও
– হুম
– এই শোনো
– কি
– কখন ফিরবে?
– দুপুরে
– এত পরে?
– হুম
– আমিও তোমার সাথে যাব
– ধ্যাত পাগলি লোকে কি বলবে?
– উহুহুহু(কাদার ভাব)
– এই যাবো আর আসব, যাই লক্ষীটি?
– যাইনা বলো আসি
– ওকে আসি
– ঐ তুমি সকালে খাবেনা?
– হুম
চিন্তা করোনা, তুমি খেয়ে নিও.. মা কাউকে দিয়ে ঠিকি ক্ষেতে খাবার পাঠিয়ে দেবে পরে আমি জমিতে এসে কাজ করতে লাগলাম একটুপর পর আমি তো অবাক!
– দেখলাম বাঙালি বধুর সাজে, আমার সুইট বউটি, রেশমী কাপর,লালচুড়ি পড়ে, ও লাল ফিতায় চুল বেধে বেনি করে, খাবার নিয়ে চলে আসছে
– এই বাবু খাবার নিয়ে এসেছি খেয়ে নাও
– ঝিলিক তুমি কষ্ট করে এলে কেন?
– চুপ তোমাকে ছাড়া ভাল লাগছিলনা
– ও তাই
– হুম,
ইস কাজ করতে করতে তুমি খুব ঘেমে গেছো পরে ঝিলিক তার আচল দিয়ে আমার কপালের ঘাম মুছে দিল আমাকে খাইয়ে দিলো
– ঝিলিক একটা সুখবর আছে
– কি
– আগামীকাল আমার চাকরির ভাইভা, দোয়া কইরো চাকরিটা যাতে হয়
– না করবনা
– কেন
– চাকরি পেলে তুমি আমাকে নিয়ে শহরে চলে যাবে, তখন আমার এই সুন্দর গ্রামে থাকা হবেনা
– হাহাহা পাগলি
– হুম রাজ, গ্রামের এই পরিবেশ, আর তোমার ঘর আমার কাছে এখন যেন সুখের ঠিকানা
– ওকে তুমি গ্রামে থেকো, আমি শহরে আরেকটি বিয়ে করে নেবো
– কিই কুত্তা???
– হাহাহা
– (ঝিলিকের চোখ অশ্রুসিক্ত)
– এই পাগলি আমি তো ফান করলাম
– একতু হাতো আমাল গুললু গুললু পাপপা
– হিহিহি
– এইতো হেসেছ হাহাহা