৫ বছর পর মায়ের রিকুয়েস্টে তার বান্ধবীর বিয়েতে যেতে বিয়েতে যেতে রাজি হই। গায়ে হলুদের দিন গিয়েছি সেখানে, রাতে যখন অনুষ্টান শুরো হল সবাই নিয়ম অনুযায়ী আনন্দ উল্লাসে মেতে উঠছিল। আমি বরাবরের মতই অনুষ্টান স্টেইজের ভিতর এক পাশে একটা চেয়ারে বসে আছি। হঠাৎ একটা মেয়ের দিকে আমার চোখ আটকে যায়।
মেয়েটা একবার দেখলে যে কারো মন ছোঁয়ে যাবে, আমার যেনো তার পানে বসতি গড়তে চাইলো। মেয়েটাকে দেখে মনে হচ্ছে সে আমার অনেক পরিচিত, এর আগেও তার সাথে আমার অনেক বার দেখা হয়েছিল কথাও হয়েছিল, আমি অপলক দৃষ্টিতে চেয়ে আছি তার দিকে। সেই হাসি এই মুখ সব মিলিয়ে যেন মনের ঝাঁপসা আয়নায় একটা মুখের ছবি ভেসে উঠছে, কিন্তু এই মূহুর্তে কেন জানি মনে পড়ছেনা কে সে? এর আগে কোথায় দেখেছি তাকে?
অযাচিতভাবেই মেয়েটি আমার দিকে হন হন করে ছুটে এসে যা বলল তার জন্য আমি মোটেও প্রস্তুত ছিলাম না,
-এইযে সাহেব আপনাকে অনেকক্ষণ ধরে লক্ষ করছি আমার দিকে তাকিয়ে আছেন, এইরকমভাবে হাবার মত তাকিয়ে আছেন ক্যান ?
-মেয়েটার কথায় সত্যি আমি হাবলা থেকে ভ্যাবলাকান্ত হয়ে একটু ইতস্ততভাবেই বলে উঠি, আসলে আপনাকে আমার খুব পরিচিত মনে হচ্ছে, মনে হচ্ছে এর আগেও আমার আপনার সাথে দেখা ও কথা হয়েছে ।
-শুনেন এইরকম মেয়ে ভুলানো কথা সব ছেলেরাই বলে থাকে, কিন্তু আমাকে এইসব বলে আপনার কোনো লাভ হবেনা, অন্য কাউকে এইসব শুনাবেন! আর যদি আপনাকে দেখি ঔভাবে আমার দিকে তাকিয়েছেন তাহলে আপনার কপালে খারাপি আছে বলে দিলাম।
এই বলেই মেয়েটি হন হন করে ছুটে চলে গেলো, পিছন দিকে কেউ একজন অনি বলে তাকে ডাকছিল, অনি,,,,,, নামটা কোথায় যেনো শুনেছি, অনেক গুলো ভাবনা তাড়া করছিল তখন কাচা হলুদ অনুষ্টান থেকে সবাই চলে গেলো খেয়াল করিনি। আমি একা একা বসে সেই ঝাঁপসা আয়নাটা পরিষ্কার করে স্মৃতি গুলোকে পরিচ্ছন্নতায় রুপ দিতে চাইছি। কিন্তু বার বার এই একই প্রশ্ন কোথায় দেখেছি তাকে ?
রাতে বিছানায় শুয়ে শুয়ে ভাবছি কোথায় দেখেছি এই মেয়েকে,? কেনইবা ওকে আমার অনেক পরিচিতা মনে হচ্ছে,? কোথায় শুনেছিলাম এই অনি নামটা? পরোক্ষনেই মনে হল হ্যাঁ অনি নামটাত ছিল আমার এক ফেইসবুক ফ্রেন্ডের নাম,সে শুধো আমার বন্ধুই ছিলনা তারচেয়ে বেশিই কিছু ছিল।এখন সব কিছু স্পষ্ট মনে পরছে আমার।
আজ থেকে প্রায় পাঁচ বছর আগের কথা, ফেইসবুকে আমার একটা ভাল মেয়ে বন্ধু ছিল যার সাথে আমার খুব ভাল সম্পর্ক গড়ে উঠেছিল, এক দেড় ঘন্টার চ্যাটিংয়ে অর সকল অবাধ্য স্বপ্ন গুলা মনের মধ্যে শীতল বাতাস বইয়ে দিত আমার, মেয়েটা ছিল বড্ড অগোছালো। মেয়েরাতো অনেক গোছালো হয়, কিন্তু অনির বেলায় তা ভিন্ন,কথাগুলা কেমন জানি অগুছালো ভাবেই ফোনের স্কিনে ভেসে উঠত।
ধীরেধীরে দুজনের মধ্যে বন্ধুত্বটা আরো একধাপ এগিয়ে যায়। দিনের ব্যাস্ততা শেষে প্রতি রাতের অনির সাথে কথা বলে নিমিষেই কষ্টগুলো অজানায় পাড়ি জমাত। মেয়েটি ছিল প্রচন্দ রকমের রাগি আমিও কোনো অংশে কম ছিলাম না কিন্তু দুজনের রাগ চরম আকাড়ে রুপ নেয়ার আগেই কান্ত হতাম,ওর প্রিতিটি ব্যাথা আমার কাছে বিষাদের আর্তনাদে রুপ নিতো।
একদিন অনির সাথে কথা হচ্ছিল অসুস্থ শুনে অনিকে একটা ফোন দেই কথা বলতে পাড়ছিলনা, অনির জ্বর ছিল প্রচুর আমারও কিছু অভ্যক্ত ব্যাথা মনে কড়া নাড়তে থাকে, কিন্তু সেই মুহুর্তে অনিকে দেখার খুব ইচ্ছে জাগলো ,তাকে বলতেই সে একটা ছবি দেয় অর,।পরে আমিও আমার ছবি দিয়েছিলাম।ছবি দেখে মনে হল সে অসাধারন সুন্দর সে দুইচোখে কি যেনো পাগল করা মায়া, স্বর্গীয় অস্পরি মনে হচ্ছে, অবাধ্য ইচ্ছে গুলো তখন ডানা মেলে উড়তে থাকে নীল আকাশে, এদের বারন করার সাধ্যি ছিলনা আমার।
পরের দিন বিশেষ দরকারে ঢাকা যেতে হয় আমার, বাসায় যাওয়ার পর আমার ফোনটা খুজে পাচ্ছিলামনা, অনেক খুঁজা খুঁজির পর মনে হল ফোনটা বাসেই ফেলে আসছি, কিন্তু এই ব্যাস্ত শহরে সমুদ্রগর্ভ যানজটে কোথায় খুঁজবো আমার হাড়িয়ে যাওয়া ফোনটি ? এতে যে অনির অস্থিত্বের বসবাস ছিল। আমার যে ফেইসবুক আইডি ইমেইল মনে নেই তবে তার সাথে কথা বলব কি ভাবে? তবে কি অনিও হাড়িয়ে গেল জীবন থেকে? না এটা হতে পাড়েনা ভাবতে ভাবতে চোখেরর কোণঘেঁষে দুফোটা নুনাজল বেয়ে মাটিতে বিলীন হল।
ইমেইল ভুলে যাওয়ায় আর নতুন ফোনে সেই আইডিটা এক্টিভ করতে পাড়লামনা, মনটায় বিষাদের মরু গড়ে উঠছে। এভাবে চলে যায় কয়েক দিন। নতুন আইডি ওপেন করলাম আগের সব কিছুই এখানে আনলাম, কিন্তু খুজে পেলামনা সেই অনিকে, এভাবে চলে যায় বছর, একসময় আমি প্রবাসে চলে যাই, কর্ম ব্যাস্ততার ফলে বাড়িতে ফোনকরার সময়টুকুও পাইনা, এভাবে চলে যায় জীবন থেকে পাঁচটি বছর।
কাচা হ্লুদ ষ্টেজের এক কুণে বসে ভাবছি,ভাবনার ঘোড় কিন্তু এখনও মনে মেঘেরর ভেলার মত উরছে, আনমনে প্রশ্নের ঝর বইছে। সে ওতো আমার ছবি দেখছিল, তাহলে আমায় চিনতে পারেনি কেন? নাকি এখন অন্য কারো জীবনে সে আষ্টেপৃষ্ঠে বাঁধা পড়েগেছে? তাও ভাবনাগুলা রাতের অন্ধকারের সন্ধি বিচ্ছেদ করে সেই স্নিগ্ধ সকালের মুখ দেখতে পেলাম, প্রস্তুতি পর্ব সেরে শুধো অনির সামনে গিয়ে দাড়ানোর প্রহর গুনতে লাগলাম,
বিয়ের দিন ওকে শুধো আড়াল থেকে দেখে যাচ্ছি, যখনই সে পিছনে পিরে থাকাচ্ছে নানা ভাবে অর দৃষ্টির আড়াল হতে ব্যার্থ প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। কিন্তু বেশিক্ষণ স্থায়িত্ব লাভ করলনা এই লুকচুরি খেলা, একসময় বিয়ের কাজ সম্পন্ন হয়ে যায়,সবাই যার যার গন্তব্য ফিরে যায়। রাত তখন দশটা আমি ছাদে উঠে চাঁদের আলোয় অন্ধকার রাত্রি দেখছি। অযাচিত ভাবে সেখানে অনির উপস্থিতি উপলব্ধি করলাম, সে বরাবরের মত এবারও রাগি কন্ঠে বলতে লাগে।
-এই মিস্টার আপনার কি সমস্যা শুনি?
-না কোনো সমস্যা নেই!
-তাহলে এভাবে লুকিয়ে লুকিয়ে আমায় তখন দেখছিলেন কেন?
আমি এই সুযোগটা হাত ছাড়া করলামনা, বলতে লাগলাম তুমিযে আমার খুব কাছের লোক যাকে এই পাঁচটি বছর ধরে বুকে লালন করে আসছি। যার জন্য মনে একটা ছোট্ট কুটিরে স্থাপনা করেছিলাম। মনের আহাকার গুলা শুনাবো বলে কত নির্ঘুম রাত্রি যাপন করেছিলাম। রঙ মাখা স্বপ্ন গুলো কত দিন আকাশের ওই সুখি তারা গুলার সাথে সখ্য করেছে তা গুনে গুনে ভুল করেছি।
মনে পরে কোনো দিন কাউকে বলেছিলে পায়রারা নাকি সুখের প্রতিচ্ছবি ? মাছ চুর বিড়াল বলে কাউকে ডেকেছিলে ?মনে করে দেখ কোনো একদিন কাউকে বলেছিলে কি? -আমরা যতই দূরে থাকিনা কেনো তবুও তোমার কাছে দূর মনে হতনা আমরা যে একই আকাশের নিচে বসবাস করি। এই কথাটি কি মনে পরে? , কোনো একদিন কারো সাদা শার্টের গন্দে মাতাল হওয়ার ইচ্ছে জানিয়েছিলে ? তবে জেনে রাখো সেই সে, এই আমি,যার স্বপ্ন গুলো হাঁড়িয়ে গিয়েছিল ফোন হাড়ানোর সাথে সাথে ।
তোমাকে দেখার পর থেকে আমারও কেমন জানি মনটা শুধো পিছনে যেতে চাইছিলো, কিন্তু তোমার এই মুখ ভর্তি দাড়ি গোঁফ সব ভুলিয়ে দিচ্ছিল আমায়, জিজ্ঞেস করিনি যদি ভুল হয়। তোমার অপেক্ষায় ছিলাম আর মনকে মানিয়েনিয়েছিলাম তুমি ফিরবে বলে। তবে এতদিন কোথায় ছিলে তুমি? তোমার ঠিকানা জানা থাকলে ঠিকই তোমার খুঁজ নিতাম, কিন্তু তুমি আমার ঠিকানা জানতে তবে কেনো খুঁজ নেওনি?
অনিকে সব বুঝিয়ে বলতে লাগলাম,
এবার অনির চোখে অস্রুজল ধীয়মান বইতে লাগল। অনির গাল বেয়ে অঝোর ধারে ঝরনা ধারার ন্যায় ওর কষ্টের জ্বল ঝরে পড়ছে। কথা গুলা শেষ হওয়ার আগেই সে আমায় ঝাপটে ধরে বলে উঠে তুমি সেই রাত্রীর বর ? আমার পরনে তখন ছিল শার্টটা। ওর কান্নায় সাদা শার্টটা নিজের রঙ হারিয়ে ওর কষ্টের নীল রঙের কান্নার রুপে নীল হতে চাইলো।
অনি কান্না কান্না স্বরে শত শত প্রশ্নের ঝড় বইয়ে দিল।কিন্তু এই মুহুর্তে ওর কোনো প্রশ্নের উত্তর যেনো সব ভুলে যাচ্ছিলাম, আমিও আর ইতস্ততবোধ না করে বুকের আরো গভীরতম স্থানে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলাম। মুহুর্তটা কেমন জানি সুখের রংধনুর রংঙের সব রঙ নিতে চাইল।
নীরহাড়া দুটি পাখি খুঁজে পেলো তার সুখের ঠিকানা, আবার হলো নতুন শুরো। তবে এবার আর হাঁড়িয়ে যাওয়ার ভয় নেই। সোজা সেই কুটিরের মালকিন হয়ে ঘরে উঠতে হবে যে মেয়েটিকে।
-এই আমি ভুল করে না হয় আবেগে তুমায় জড়িয়ে ধরে কান্না শুরো করেছি, কিন্তু তুমি কেন আমায় স্পর্শ করছো কি অধিকার আছে তুমার?(অনি)
-তুমার ও কোন অধিকার দেইনি সেই মুহুর্তে তবে কেন তুমি আমায়।? ,,,,,,,একটু মৃদহাসি ঠোটে একে বললাম
-ভুল হয়েগেছে, তবে এবার দাও সেই অধিকারটুকু। (অনি)
-হয়েছে আর নেকামু ছাড়ো এবার, হাতটা ধরো একবার, বলছি শুনো এবার, ভালবাসি তুমায়,
-অর দুটি হাত ধরে আবার ও বলতে থাকি, অনি ভালবাসি তুমায়
-আমিও তোমায় ভালবাসি। (অনি)