—এই আপনি তো ছ্যাচড়া কেন?
—মানে?
—মানে বুঝেন না?এখন কী আকাশ থেকে পড়লেন বুঝি।
–কাকে কী বলছেন আপনি?
–আপনাকেই বলছি,প্রত্যেকদিন আমার পিছু নেয়ার মানে কী?
—আপনিই তো আমার পিছন থেকে মাত্র আমার সামনে আসলেন।তাহলে আমি পিছু নিলাম কিভাবে।
—ঐ শয়তান পোলা আমি সামনে আসছি তো কী হইছে,এখন তো আপনি আমার পিছনে।
—দেখেন এসব ঠিক হচ্ছে না।আমি কারো পিছু নেই না।
—লোকজন ডাক দিলে তখন মজা বুঝবেন।
—দেখেন আপু আপনি কোথাও ভুল করছেন।
—ঐ আমি তোর কোন কালের আপু লাগি?
—আচ্ছা সরি বোন।
—উহ অসহ্য।দেখেন এরপর থেকে আমার পিছু নিলে এই পার্কের লোকজন ডেকে ধোলায় খাওয়ামু।
—আচ্ছা ঠিক আছে।
কথাটা বলেই ঐ পোলার সামনে থেকে চলে আসলাম।রাগটা মাথায় উঠে গেলো।আমি ওর কোন কালের বোন লাগি,ইচ্ছা করতেছিলো নাকের উপর একটা দেই।নেহাত ওকে ভালবাসি তাই কিছু বললাম না।মারলেও তো আবার আমারই কষ্ট লাগবে,তখন আবার কান্না করে দিতে পারি।
যার কথা বলছি ওর নাম মাহিন।আমাদের বাসার নতুন ভাড়াটিয়া।সবে মাত্র এক মাস হলো এসেছে।প্রথম যেদিন দেখছিলাম সেদিনই কেমন ভাল লেগে গেছিলো।এর পর ওর গাধা মার্কা মুখটা দেখে প্রেমে পড়ে গেছি।ইয়া বড় মোটা ফ্রেমের চশমা পড়ে।দেখতে খুবই মিষ্টি লাগে। আমি ইচ্ছা করেই এমন টা করলাম মাহিনের সাথে।এক মাস হলো এসেছে আজ পর্যন্ত আমার দিকে কখনো তাকায়নি।তাই ওর চোখে পড়ার জন্য এমনটা করলাম।চোখে আর পড়লাম কই, সেই তো মাথা নিচু করেই আমার কথা গুলো শুনলো।একবার মনে হয় চশমার ফাক দিয়ে তাকিয়ে ছিলো।
ও আপনাদের তো বলা হয়নি,আমি ফাতেমা,বাবা মার বড্ড আদরের মেয়ে।ছোট বোন আছে নাম তিতলি।আমি সবে মাত্র ইন্টার ২য় বর্ষে পড়ি। ঝিনাইদহ নূরুন্নাহার মহিলা কলেজে।আর মাহিন কে.সি কলেজে এবার অনার্স প্রথম বর্ষে ভর্তি হয়েছে। বাড়ীতে এসেও যেনো রাগ টা কমছে না।ইচ্ছা করছে মাহিন কে সামনে পেলে আস্ত চিবিয়ে খেতাম।ফাজিল পোলার আশে পাশে একটা সুন্দরী মেয়ে ঘুর ঘুর করে, সে দিকে তার কোন চোখই পড়ে না।নাকি আমার সামনে এসে এমন সাধু সেজে থাকে কে জানে। আরে গাধাটা গেটের সামনে এসে কী করে,দেখাইতেছি তোমারে,,,
–এই যে আপনি ফলো করতে করতে আমার বাসায় চলে এসেছেন? (আমি)
—মানে,এটা আপনার বাসা? (মাহিন)
–তো কী এটা আপনার বাসা?
–না মানে..
—দেখুন মানে মানে করা বন্ধ করুন।এটা আমার বাবার বাসা।
–আচ্ছা সরি, ভুল হয়ে গেছে।
—আর যেনো এমন ভুল না হয়।
—আচ্ছা।
হি,হি, হি,,গাধাটা সেই ভই পাইছে।কত্ত বড় গাধা একটা ঝাড়ি দেয়ার সাথে সাথে গেটের বাইরে চলে গেলো।এবার খুজো চান্দু তোমার বাসা।আমি থাকলাম এখানে। কিছুক্ষন পরে,,,
–কি ব্যাপার আপনি আবার আমাদের বাসায় ঢুকছেন? (আমি)
—দেখুন এইটাই আমাদের বাসা (মাহিন)
—এরই মধ্যে বাসাটা আপনাদের হয়ে গেলো?
—না মানে,ভাড়ায় থাকি বাসাতে।
–এটা তে ভাড়ায় থাকেন?
–জি।আমার আম্মু কে ফোন দিছি গেটের বাইরে থেকে।
—কী বলল আপনার আম্মু?
–বলল আমি পাগল হয়ে গেছি নাকি যে বাসা চিনতে পারছি না।
—হি,হি, হি,,আপনি তো পাগলই।
–মোটেও না।আম্মু ঠিকানা পরে দিছে।মিলিয়ে দেখি এটাতেই আমরা থাকি।
—আপনার আম্মু ভুল বলছে।
কথাটা শেষ হতে না হতেই মাহিন আমার সামনে থেকে চলে গেলো।কত্ত বড় অভদ্র একটা ছেলে। পারে শুধু ভাব নিতে।একটা মেয়ের মন কী বোঝার ক্ষমতা আছে না।আমি কেমন বেহায়ার মত তার পিছু পিছু ঘুরছি। সব সময় শুধু মাহিন কে মনে পড়ে।খেতে গেলে,ঘুমোতে গেলে,আয়নার সামনে তো এখন দাড়ালেই মাহিনের কথা মনে পড়ে তখনই লজ্জার মাথা খেয়ে হাসতে থাকি।কিন্তু মাহিন সেদিকে তার কোন ভ্রুক্ষেপই নেই। গাধাটা কই যে থাকে।নাহ ছাদেও তো নেই।এখন কী বেহায়ার মত ওদের রুমে উকি দিবো নাকি।নাহ পরে আবার ধরা খেলে যাচ্ছে তাই হবে।নাহ রুমে এসেও ভাল্লাগছে না।গাধাটা কে সারাদিন আজ একবারও দেখতে পাইনি।মন টা কেমন শূন্য শূন্য লাগছে।
–এই ফাতেমা এই দিকে আয় তো মা। (আম্মু)
–উহহ আম্মুর ডাকটা ও কেমন অসহ্য লাগছে।কী হইছে বলো।
–তুই একটু মাহিনদের বাসায় যা তো।
>আমি কী কানে ভুল শুনলাম নাকি ঠিকই শুনছি।আম্মু কে যে কী বলে ধন্যবাদ দিবো বুঝতেছি না।
—আচ্ছা আম্মু গেলাম।
–এই দাড়া দাড়া।
–কী আম্মু?
–তোকে আমি কী কারনে যেতে বলছি তা না শুনেই হাটা ধরলি যে।
–সরি আম্মু।মাথাটা আমার পুরাই গেছে।কী কারন আম্মু?
–মাহিন কে গিয়ে বলবি, তিতলি কে একটু পড়াতে আসতে।তোকে তো কতবার বলেছি ছোটবোন টা কে একটু পড়াতে,তা তো করবি না।পারবি শুধু লাফালাফি করতে।
–দেখো আম্মু এভাবে বললে কিন্তু যাবো না। (ভাব নিলাম একটু আম্মুর সামনে আর কী)
–ঠিকআছে যা যা।
এবার হয়তো মাহিনের দেখা পাবো।মাহিন কে না দেখতে পেলে কেমন অস্থিরতা কাজ করে মনের মধ্যে।আমার অনুভুতির শিরায় শিরায় যেনো মাহিন মিশে আছে।মাহিনের সামনে গেলেই কেমন জানি নিজের মনের হার্ডবিট টা দ্রুত গতিতে চলতে থাকে।এখনো কেমন ভয় ভয় লাগছে।কিন্তু মাহিনের ন্যাকামি ভাল লাগেনা বলেই তো এমন ক্ষেপে ক্ষেপে কথা বলি। কলিংবেল বাজাতেই আন্টি মানে মাহিনের আম্মু দরজা খুলে দিলো।
–কী ব্যাপার ফাতেমা কেমন আছো মা।আমাদের ফ্ল্যাটে আজ তুমি প্রথম আসলে। তোমার আম্মু প্রায়ই আসে তুমিও আসবে সব সময়।তুমি বসো আমি নাস্তা আনছি।
–না,না,আন্টি এসব লাগবে না।আমি একটা কথা বলেই চলে যাবো।
–কী বলবে বলো।
–আসলে আন্টি মাহিন ভাইয়া যদি আমার ছোট বোন তিতলিকে পড়াতে পারতো তাহলে ভাল হতো।আসলে আম্মুই বলল কথাটা।
–ঠিকআছে কোন সম্যসা নেই।আমি মাহিন কে বলে দিবো।
–কে এসেছে আম্মু? (মাহিন)
–এই তো ফাতেমা এসেছে তোর মোজাম্মেল আঙ্কেলের মেয়ে।তুই ফাতেমার ছোট বোন টা কে পড়িয়ে আসবি তো।
–ঠিক আছে আম্মু ফ্রী সময়ে পড়িয়ে আসবো।
–আচ্ছা আন্টি আমি তাহলে যায়।
-মাহিন কে দেখেই যেনো মনের শূন্যতা গুলো হারিয়ে গেলো।
মাহিন আমার অনুভবে অনুভুতিতে মিশে গেছে।কিন্তু মাহিন কে বোঝায় কিভাবে।যাক একটা কাজ তো হলো।প্রতিদিন আমাদের বাসায় আসবে।আর প্রতিদিন ওকে দেখতে পাবো।
–মাহিন আমার ছোট বোন টা কে পড়াচ্ছে। আর আমি চোরের মত লুকিয়ে লুকিয়ে দেখছি। কিছুক্ষন আগেই নাস্তা দিয়ে আসলাম মাহিন কে তবুও শয়তান ছেলেটা একটু তাকিয়েও দেখলো না।আমার ছোট বোনের সাথে যে কী এতো কথা বলে বুঝি না।আমার দিকে তাকালেই বা কী হয় উনার।
এভাবেই প্রতিদিন মাহিন পড়াতে আসে, আবার চলে যায়। কিন্তু ফাতেমার প্রতি কোন ফিলিংস তৈরি হয়েছে বলে সেটা ফাতেমা বুঝতে পারে না।এভাবে ফাতেমা আর থাকতে পারে না।সে হঠাৎ-ই একদিন মাহিনের কলেজে চলে যায় মাহিনের সাথে খোলাখুলি কথা বলবে বলে।সে আর এভাবে থাকতে পারছে না।
—মাহিন চলো আমার সাথে। (মাহিন পিছনে তাকিয়ে দেখে ফাতেমা দাড়িয়ে আছে)
–আরে ফাতেমা তুমি এখানে,আমার কলেজে কী মনে করে।
—তোমাকে মনে করে।
–আমাকে মনে করে কেনো?
—না গেলে বলবো কিভাবে?
–আচ্ছা যাচ্ছি।
ফাতেমা রাগে খিটবিট করছে কারন মাহিন একটা মেয়ের সাথে হাসাহাসি করে কথা বলছিলো, যেটা সে স্বপ্নেও ভাবেনি।মাহিন কে তো গাধা মনে করেছিলাম,আর এখন দেখছি তার পুরোটাই উল্ট।মেয়েটার সাথে কী ফ্রী ভাবে কথা বলছে,আর আমার দিকে তাকাতেই উনার? কলেজ থেকে বেড়িয়ে মাহিন আর ফাতেমা গল্প করে করে হাটছে…ফাতেমা একটু একটু লজ্জা পাচ্ছে।কিন্তু মাহিনের আর আগের মত গাধা লাগছে না।খুবই স্মার্টলি কথা বলছে।
–ফাতেমা কী বলবে বললে না তো?
–হ্যা বলবো তো।
—তাহলে বলো?
-আচ্ছা মাহিন তুমি কি কাউকে কখনো ভালবেসেছো।।।(ফাতেমা)
-হ্যাঁ একজন কে তো ভালবাসি কিন্তু বলতে পারছিনা…আচ্ছা কি ভাবে ওকে বলব একটা টিপস দাও তো..(মাহিন)
-আরে সরাসরি বলে দিলেই তো হয়।।।
-ভয় করে যদি না করে দেয়।।।।
-আরে করবে না শিউর।।।
-তাহলে কালই মেঘা কে প্রপোজ করে ফেলবো।।।
-মেঘা টা কে??
-কেন যাকে ভালবাসি….
ফাতেমা যেন কিছুটা বলতে গিয়েও থমকে যায় এত দিন যাকে ভালবেসে এসেছে সে নাকি অন্য একজন কে ভালবাসে…অনেক কষ্টে ফাতেমা নিজের কান্না টা লুকিয়ে মাহিনের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে বাসায় চলে আসে এবং কাঁদতে কাঁদতে প্রায় পাগল এর মত হয়ে গেছে..কখন যেন ঘুমিয়ে পরেছে বলতেই পারে না…তবে ঘুম থেকে উঠে মাহিনের একটা ম্যাসেজ পায় যেটা হলো..
“Love is not biology to forget”
“Not math to calculate”
“Not physics to learn”
“Its only the chemistry that
reacts between to heart”
I wish
You were here
I love you……
I love you Fatema……….
ফাতেমা আমি শুরু থেকেই সব বুঝতে পেরেছি যে তুমিও আমাকে ভালবাসো।সব জেনে শুনেই চুপ ছিলাম। তোমার ছোট বোন তিতলির কাছ থেকে শুনে আরো শিউর হলাম।তোমাকেও আমি চুরি করে দেখতাম,তোমাকে না দেখতে পেলে আমিও ভীষন শূন্যতা অনুভব করতাম,আর ভাবতাম কখন তোমাকে দেখবো। তোমার প্রতিটা মুহুর্ত আমি অনুভব করতাম।আমিও ভীষন ভালবাসি তোমাকে।অনুভবে তুমি আমাতে ফাতেমা। এবার ফাতেমা হাসবে না কাঁদবে ভেবে পাচ্ছেনা…হয়ত চোখে আবার পানি চলে এসেছে কিন্তু ঠোঁটে ঠিকি হাসি ফুটে উঠেছে।।আর মনে মনে বলছে আস্ত একটা গাধা কোথাকার….