দুই মাস হলো বিয়ে করেছি। বিয়ের প্রথম কয়েকদিন নীলা(বৌয়ের নাম) আমাকে তার সাথে একই বিছানায় ঘুমানোর পারমিশন দিতো না। তবে গত কয়েক সপ্তাহ ধরে একসাথে একই বিছানায় ঘুমানোর পারমিশন দিলেও তাকে স্পর্শ করার পারমিশন দেয় নি।
বিয়েটা যদিও পারিবারিক ভাবেই হয়েছিলো কিন্তু আমাদের বাসর রাতটা আর দশটা বাসর রাতের মতো ছিলো না। বাসর রাতেই নীলা বলে দিয়েছিলো যতোদিন না সে রাকিবের( তার এক্স বয়ফ্রেন্ড) কাছে ক্ষমা চাইতে পারবে ততোদিন সে আমাকে মেনে নিবে না।
রাকিব, বড়লোক ঘরের ছেলে। ডিএসএলআর, মোটর সাইকেল, আইফোন সবই ছিলো। প্রতি সপ্তাহে দুই তিনবার করে নীলাকে বড় বড় রেস্টুরেন্টে নিয়ে খাওয়াতো। কিন্তু বিয়ের কথা বললেই এড়িয়ে যেতো। তারপর পরিবারের চাপে নীলা রাকিবকে না বলেই আমাকে বিয়ে করে। আর তাই নীলা ভাবে ও রাকিবের সাথে অন্যায় করেছে, ঘোর অন্যায়, যে অন্যায়ের কোন ক্ষমা হয় না, কখনোই না। একারনে নীলা সবসময় অনুশোচনায় ভোগে। আর তাই সে রাকিবের কাছে যতো তাড়াতাড়ি সম্ভব ক্ষমা চাইবে। যেদিন আমার অফিস বন্ধ থাকতো সেদিনের আগের রাতে আমরা দুইজনে না ঘুমিয়ে গল্প করতাম আর প্রতিদিনের গল্পের বিষয় থাকতো এক রাকিবই। একটা মানুষ যে তার এক্সবয়ফ্রেন্ডের কতো প্রশংসা করতে পারে তা নীলাকে না দেখলে হয়তো কখনো জানতে পারতাম না।
আমি নীলার মনের ভালোবাসা অর্জন করতে চাচ্ছিলাম। কেননা একটা মেয়ের মনের ভালোবাসা অর্জন করতে না পারলে তার প্রতি কোন অধিকার খাটানো যায় না। আর তাই একসাথে না ঘুমানো কিংবা নীলার শরীরের স্পর্শ করতে না দেয়ার বিষয়ে আমি কখনো নীলাকে কিছুই বলতাম না। আমার মনে বিশ্বাস ছিলো ও একদিন রাকিবকে ভুলে আমাকে ভালোবাসবে।
সেদিন নীলাকে নিয়ে বসুন্ধরায় শপিং করার জন্য গিয়েছিলাম। নীলার পছন্দ মতো সব কিছু কিনে দেওয়ার পরও দেখি ও অখুশি। অসুখি থাকার কারন জিগ্যেস করতেই ও বললো ওকে নাকি রাকিব প্রতি মাসে অন্তত দুইবার করে বসুন্ধরায় শপিং এর জন্য নিয়ে আসতো। আর নতুন কোন মুভি বের হলে আরো বেশিবার রাকিবের সাথে আসা হতো।
শপিং শেষে বাসায় ফেরার পথে নীলা নাকি রাকিবকে দেখেছিলো। রাকিবের সাথে কথা বলতে না পারার কারনে সে বাসায় ফিরে অনেক কান্না করছে, এ যেনো মরা কান্না। নীলার কান্না সহ্য করতে না পেরে বাংলা সিনেমার দয়ালু নায়কদের মতো আমিও তাকে ওয়াদা করেছি যেমনেই হোক রাকিবকে তার সামনে এনে দাড় করাবো। সেদিনের মতো আমার আশ্বাস পেয়ে ওর কান্না থেমেছিলো।
তাছাড়া ওই ওয়াদার কারনে এখন আমার প্রতি ওর ভালোবাসাটা একটু বেড়েছে । এখন রাকিবের কাছে ও ক্ষমা চাইতে পারলেই মনে হয় আমার প্রতি ওর ভালোবাসাটা আরো অনেক গুন বাড়বে। আমি রাতে না ঘুমিয়ে যখন মাথার ভেতর এসব আওরাচ্ছি, তখন আমার পাশে নীলা ঘুমাচ্ছে।
ঘর সম্পুর্ন অন্ধকার, বাইরে থেকে পুর্নিমার চাঁদের মৃদু আলো রুমে প্রবেশ করছে। এমন সময় লক্ষ করলাম বারান্দা দিয়ে একটা মানুষ আমাদের রুমে প্রবেশ করার চেষ্টা করছে। মনে তো হচ্ছে চোরই হবে। এতো রাতে চোর ছাড়া আর কেউই এভাবে রুমে ডুকতে চাইবে না। আর আমি কখনো চোরের চুরি করা দেখিনি৷ তাই মনে মনে সিদ্ধান্ত নিয়ে নিয়েছি আজ ঘুমের ভান করে দেখবো যে চোর কিভাবে চুরী করে। তারপর চুরীর করার শেষ মূহুর্তে গিয়ে হাতে নাতে ধরে ফেলবো।
ঘুমের ভান করে চোরের চুরী করা দেখছি আর চোর তার মোবাইলের লাইট জ্বালিয়ে আরামে চুরী করে যাচ্ছে। নীলা এসব কিছু টের পাচ্ছে না। টের পাওয়ারও কথা না। আমি ঘুমিয়ে গেলে আমিও টের পেতাম না। তাছাড়া এরকম শিক্ষিত এবং চালাক চোরদের ধরাও মুশকিল। চোরটি চুরী করা শেষে বেরিয়ে যাবে এমন সময় আমি ঘুম থেকে লাফ দিয়ে উঠে চোরের ঘাড়ে আমার শরীরের সমস্ত শক্তি দিয়ে একটা ঘুষি মারি। চোর সাথে সাথে শুয়ে পরে।
ছোটকালে কোন এক ক্লাসে বিড়াল নামক একটা গল্প পড়েছিলাম। আর সেখানে চোরের চুরির কারন হিসেবে বড়লোকদেরই বেশী দোষ দেওয়া হয়েছে। কিন্তু আমার কাছে তা মনে হতো না। তাই আমি কৌতুহলী হয়ে আছি এই চোরের চুরীর কারন জানার জন্য। কিছুক্ষন পর চোরটা ঘাড়ের ব্যাথায় কাতরাতে কাতরাতে উঠে বসলো,
–ভাই ভাই আমারে পুলিশে দিয়েন না। আমার একটা সংসার আছে। বৌ বাচ্চা আছে। আর কয়েকটা গার্লফ্রেন্ড ও আছে। আমি জেলে গেলে ওগুলা না খাইয়া মরবে।
সংসার আছে আবার গার্লফ্রেন্ড ও আছে চোর বেটাট এই কথাটা মাথার উপড় দিয়ে গেলো। তাই চোরকে প্রশ্ন করলাম,
–তোর সংসার আছে আবার গার্লফ্রেন্ড আছে মানে কি??
— আসলে ভাই আমার সংসারটা গ্রামে থাকে। একটা বৌ আছে আর দুই বাচ্চা। সেখানে মাসে মাসে টাকা পাঠাইতে হয়। আর এখানে কয়েকটা গার্লফ্রেন্ড বানাইছি ওদের পেছনেও অনেক টাকা খরচ করতে হয়।।
–তুই এমনি চুরি ছাড়া আর কি কাজ করিস?
— একটা ছোটো খাটো জব করি। ওইটার টাকা বাড়িতে পাঠাই আর এসব চুরীর টাকা দিয়া গার্লফ্রেন্ড গুলা পুষি।
— ওহ আচ্ছা৷ এখান থেকে কিছু চুরি করার দরকার নাই। আমি তোরে দুই হাজার টাকা দিতাছি ওইটা নিয়া যা। আর কোনদিন এই এলাকায় আসবি না। দেখলে কিন্তু হাত পা ভেঙ্গে গুঁড়ো করে দিবো।
তারপর চোরটারে দুইহাজার টাকা দিয়ে বিদায় করি। আসলে আমার মানুষের কষ্ট সহ্য হয় না। তার উপর চোরটা কতো গুলা মহৎ কাজ করতাছে একসাথে। বর্তমান যুগে একটা গার্লফ্রেন্ড পুষলেই বাপের পকেট থেকে টাকা চুরী করতে হয় আর উনি তো কয়েকটা গার্লফ্রেন্ড পুষে সাথে একটা সংসারও চালায়। ওনার চুরী করা যৌক্তিক। চোরটা জন্য খুব মায়া হলো। এতোকিছু হয়ে গেলো অথচ নীলার কোন খবরও নেই। ও মরা ঘুম দিয়েছে । অনেক রাত হয়েছে, নিজেকেও খুব ক্লান্ত লাগছে। তাই নীলার পাশে গিয়ে শুয়ে পড়লাম।
সকালে নীলার ডাকে ঘুম ভাঙ্গলো। চোখে খুলে দেখি নীলা আমার জন্য চা নিয়ে এসেছে। বিয়ের এতোদিন হয়েছে অথচ ও কোনোদিন আমার আগে ঘুম থেকে উঠে নি। কিন্তু আজ ও আমার জন্য সকাল সকাল চা নিয়ে এসেছে বাহ, মনে হলো স্বপ্ন দেখছি। কিন্তু না নীলা আমার হাত ধরে টানাটানি করে আমার ধারনার ভুল প্রমান করলো। হঠাৎ করে মেঘ না চাইতে বৃষ্টি কেন কিছুই বুঝে উঠতে পারছি না। এমন সময় নীলা কানের কাছে এসে বললো আস্তে আস্তে বলতে লাগলো, “গতরাতের ওই চোরটাই রাকিব ছিলো, রাকিবের কন্ঠ শুনেই আমার ঘুম ভেঙ্গে গিয়েছিলো। ভেবেছিলাম ঘুম থেকে উঠে গিয়ে ওরে স্যরি বলবো কিন্তু ওর সংসারের কথা শুনেই সব ইচ্ছা মাটি হয়ে গেছে। বুঝতে পারিনি ও এতো দিন আমাকে ঠকিয়েছিলো”। এতোটুকু বলেই ও আমার বুকে মাথা রেখে ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কান্না করে দেয়।
আমি কিছুই বুঝে উঠতে পারছিলামনা কি বলবো। কিন্তু নিজের মনের ভেতরে অন্যরকমের ভালোলাগা কাজ করছে। বিয়ের দুইমাস পর প্রথম বৌয়ের স্পর্শ পেলাম,তাও যেমন তেমন স্পর্শ নয়, গভীর ভালোবাসার স্পর্শ। এই কারনে ওই চোর টা স্যরি চোর না, নীলার এক্স বয়ফ্রেন্ড রাকিব একটি বড় ধরনের ধন্যবাদ প্রাপ্য। এরপর কোনদিন ওই চোরের সাথে দেখা হলে বুকে জড়িয়ে ধরবো। আপাতত নীলার সাথে সুখে শান্তিতে সংসার করি৷