ভালোবাসার বন্ধন

ভালোবাসার বন্ধন

রাইয়্যান আগামী শুক্রবার আমার বিয়ে।তুই দু-একদিনের মধ্যে চলে আয়।দেরি করিস না বুঝলি, পারলে আগামীকালই চলে আয়।আমার কেমন জানি স্নায়বিক দুর্বলাবস্থা কাজ করছে আসলে জীবনে প্রথমবার বিয়ে করতে যাচ্ছি তো। আচ্ছা আমি ছুটি নিয়ে কাল-পশু চলে আসবো,তুই চিন্তা করিস না।হ্যাঁ রে রিশান মধুযামিনী (হানিমুন) করতে কই যাবি কিছু ভেবেছিস বা অদিতা কোন পরিকল্পনা করেছে এ ব্যাপারে।আরে তুই আগে আয় তারপর এসব নিয়ে ভাবা যাবে।আচ্ছা ঠিক আছে দোস্ত,আসার আগে জানিয়ে দিবো কেমন।

সেই ছোট বেলার বন্ধুর বিয়ে বলে কথা না যেয়ে কি পারি।তাই ১ সপ্তাহের ছুটি নিয়ে রওনা হলাম। রিশানকে মেসেজ দিয়ে জানিয়ে দিয়েছি।রিশান বড় লোক বাবার একমাত্র ছেলে।বাবার দামি গাড়ি নিয়ে এসেছে পৌছে নিতে আমায়। অনেক দিন বাদে দেখা, তাই আলিঙ্গনের মাধ্যেমে অবেগে দু-ফোটা অশ্রু বিসর্জন দিলাম দুজনে।গ্রামীন পরিবেশটা খুবি সুন্দর,গ্রামের প্রকৃতির সৌন্দর্যে চোখটা আটকে আসে।

এ সৌন্দর্য ঢাকার ব্যস্ত শহরে খুজে পাওয়া যায় না।সবুজের সমারহ ঢাকার শহরে খুবি বিরল।মান্নাদের “আবার হবে তো দেখা” গানটা চালিয়ে দিলাম আমি।গানটা আমার প্রিয় গানের মধ্যে একটা।গান শেষ হতে না হতেই পৌছে গেলাম রিশানদের বাড়িতে।বিয়ে জন্য বাড়িটা প্রস্তুত করছে রিশানের বাবা।নতুন বউ আসছে তাকে বরণ করার জন্য এত রকমারি আয়োজনটা নিজ দায়িত্বেই সম্পন্ন করতেছে।এসো বাবা রাইয়্যান এসো নিজ হাতে এত দিক সামলাতে পারছি না।তুমি এসেছো ভালোই হলো,দুজন মিলে কাজ করলে সমস্যা হবে না। তা রাইয়্যান সাহেব তুমি একা এলে যে তোমার বাবা মা এলো না কেন?।আসলে অাব্বুর শরীরটা একটু অসুস্থ তো সেজন্য আমি একাই এলাম। ওহহ! আচ্ছা বাবা অনেকটা পথ যাত্রা করে এলে,বিশ্রামের প্রয়োজন আছে তোমার, যাও বিশ্রাম করো গিয়ে আমি একটু বাজারের দিকে যাই।

রাইয়্যান! এই রাইয়্যান! বাহিরে যাবি? হুমমম একটু সময় দে আসছি।হুুমম চল আমি তৈরি বাহিরে যাবার জন্য।আচ্ছা কই যাবি এই সন্ধ্যায় সেটা তো জানা হলো না।অদিতা ফোন দিয়ে যেতে বললো। আচ্ছা এই ব্যাপার তাহলে চলুন হবু নতুন জামাই।হাসতে হাসতে বেরিয়ে গেলাম দুজনে।অদিতা ওদের বাড়ির গেটে দাড়িয়ে ছিলো।রাস্তার পাশে অদিতার বাড়ি,তাই অদিতাকে নিয়ে যাই।অদিতার সাথে রিশানের দীর্ঘ ৭ বছরের প্রেম।দুজন দুজনকে খুব ভালোবাসে।রিশান ওদের গ্রামের সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক পদে চাকুরি করে।অদিতা সবে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেছে।ওদের সম্পর্কটা চতুর দিক দিয়ে পরিপূর্ণ। রিশান আমার বড় ফুফিরা আসতেছে,তুমি যদি কিছু মনে না করো তাহলে আমার সাথে একটু যাবে? কেন যাবো না বলো তো,আমার হবু বউ বলে কথা চলো।এটা কি এভাবে বলতে হয়।তোমার সাথে যেকোন জায়গায় যেতে রাজি।

ওদের কথা শুনে খুব ভালো লাগলো,দুজন দুজনকে কতটা ভালোবাসে।আমরা যাত্রী ছাউনিতে বসে অপেক্ষা করতেছি।রিশানের হাত দুটো ধরে,কাধে মাথা রেখে নিজের ক্লান্ত দূর করতে চাচ্ছে অদিতা।রিশান অদিতার মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে।এমন সময় অদিতার বড় ফুফু এসে পৌছায়।আমরা এগিয়ে যাই, আমার গুরু দায়িত্ব তাদের বিশাল বিশাল ব্যাগ গুলো নিজ দায়িত্বে নেওয়া।বন্ধুর ফুফু শ্বশুড়ি বলে কথা।আমি ব্যাগ গুলো নিতে যাবো এমন সময় মধুর সুরে এক মেয়েলী কন্ঠ ভেসে আসে আমার কানে।মেয়েটি আমাকে কুলি উপাধি দিয়ে দিছে ইতোমধ্যে।সাথে আবার চিরচেনা শব্দ ভাই সেটাও জুড়ে দিয়েছে। হ্যাঁ মেয়েটি কুলি ভাই বলে ডাক দিয়েছে আমায় তার হাতের ব্যাগটা নেওয়ার জন্য।রাগে ভিতরটা গিজগিজ করতে লাগলো।কি হয়েছে কি হ্যা,আমাকে দেখে কুলি মনে হয় আপনার? ওমা! দেখো কান্ড কুলি কে কুলি বলবো না তো কি বলবো।দেখে তো কুলিদের মতই মনে হলো।

তারপর আবার ব্যাগ গুলোও হাতে।আমাদের চেঁচামেচি তে রিশান ও অদিতা আমাদের কাছে আসে। আমার কথাটা বিষণ মাইন্ডে লাগে। সরি রাইয়্যান ভাইয়া,আসলে ও চিনতে পারে নি।এ হচ্ছে প্রিয়মা! আমার ফুফির মেয়ে।দয়াকরে কিছু মনে করবেন না। আর ও হচ্ছে রাইয়্যান ভাইয়া,রিশানের বন্ধু প্রিয়মাকে উদ্দেশ্যে করে বলে। কিহহ রিশান ভাইয়ার বন্ধু একটা কু..লি।কথাটা শুনে মেজাজটা বিগ্রে গেল।মেয়ে মানুষ তাই কিছু বলতে পারলাম না।আমি ব্যাগ গুলো নিয়ে হাটা শুরু করি,পিছন থেকে প্রিয়মা ডাক দিয়ে বলে এই কু..লি ভাই আমার ব্যাগটা নিবেন না।আমি আর পিছন ফিরে তাকাই নি, ব্যাগ গুলো গাড়ির ব্যাক ঢালায় যে খালি যায়গাটা আছে ওখানে রেখে দিলাম।রিশান ড্রাইভার সিটে, অদিতা তার পাশের সিটে,আর আমার জায়গা হলো পিছনে প্রিয়মার পাশে।বসতেও ইচ্ছা করছে না আবার না বসেও উপায় নেই।প্রিয়মাকে ভালো করে দেখা হয় নি এখনও।যে উপাধি দিয়েছে তাতে আর তাকে দেখার ইচ্ছা হচ্ছে না।

তারপরও আড় চোখে দেখে নিলাম,বেশ মিষ্টি একটা মেয়ে।চোখ দুটো খুব সুন্দর,চোখ দুটো যেন একটা মায়াজাল,মায়াজালে ধরা দেওয়া যাবে না কিন্তু এক পলক দেখেছি তাতেই ভালো লেগে যায়, মায়াজাল থেকে বেরিয়ে আসতে পারি নি। আমি মোবাইল নিয়ে ব্যস্ত হয়ে যাই।এছাড়া কোন উপায় নেই,প্রিয়মার সাথে কথা বলতে গেলে না জানি আরো কত কিছু শুনতে তার চেয়ে চুপচাপ মোবাইল নিয়ে ব্যস্ত থাকাটাই ভালো।অদিতা ও অদিতার ফুফুদের নামিয়ে আমি আর রিশান চলে আসি।রিশন ঐ দোকানটার পাশে একটু রাখ,দুজনে মিলে একটু চায়ের কাপে আড্ডা দেই।খোলা আকাশের নিচে আড্ডাটা জমবে বেশ।পকেট থেকে বেনসন সিগারেটের প্যাকেট থেকে একটা সিগারেটা বের করে ধরিয়ে নেই। মামা দু কাপ চা দিয়েন তো কাচা পাতি দিয়ে। সিগাটেরের ধুয়া ছাড়তে ছাড়তে।রিশান আবার সিগারেট খায় না,তবে আমার একটু একটু করতে হয়।

–হ্যা রে রিশান আব্রাহামের কোন খবর জানিস?
–সেই যে কানাডা গেল এর পর আর কোন যোগাযোগ নেই।আসলে সেদিনের অপমান মেনে নিতে পারে নি,তাই সবার উপর অভিমান করে না বলে কানাডা চলে গেল,সেই যে গেল এর পর থেকে আর কোন খোজ খবর পাই নি ওর।

–আফার জন্যই তো এত কিছু হলো,ও যদি সেদিন আমাদের সাথে ঘুরতে না যেতে তাহলে এমনটা হতো না। আব্রাহাম আর রুবি আপাকে নিয়ে ভুল ধারণা হতো না।
অব্রাহামের না বলে চলে যাওয়াতে আফরা খুব কেঁদেছিলো।এখনও আফরা আব্রারের জন্য অপেক্ষায় আছে।

–জানিস রিশান আব্রাহাম কে খুব মনে পড়ে।ওর জন্যই তো আমি নতুন জীবন ফিরে পেলাম।ওর রক্ত যে আমার শরীরে বইছে।ও যদি সেদিন আমাকে রক্ত না দিতো তাহলে আজ আমি তোদের মাঝে থাকতাম না।আচ্ছা আফরা,শাওন,হৃধি ওরা কবে আসবে?

— কাল সকালে রওনা হবে শাওন আর হৃধি।আফরার নাম্বারটা বন্ধ তাই যোগাযোগ করতে পারি নি।
–ওহহহ! আচ্ছা।

আমরা সবাই খুব কাছের বন্ধু ছিলাম। রিশানের বিয়েতে আবার এক হতে যাচ্ছি শুধু আব্রাহাম ছাড়া। শাওন, হৃধি ওদের ও ভালোবেসে বিয়ে।আমি,রিশান,আব্রাহাম, শাওন,হৃধি ও আফরা সবাই একই বিভাগে অধ্যায়ন করেছি।সবাই খুব কাছের বন্ধু। শাওন আর হৃধি বিশ্ব বিদ্যালয়ে থাকতেই বিয়ে করে নেয়।যাক অবশেষে অনেক দিন পরে আমরা এক সাথে হবো। ভালোই হবে কি বলিস রিশান?

–হ্যা তা তো হবেই। তবে হ্যা তোদের জন্য আমার পক্ষ থেকে একটা সারপ্রাইজ থাকবে। তবে সেটা বলা যাবে না, প্যান প্যান করবি না তুই। তোর আবারা প্যান প্যান করার অভ্যাস আছে।
–রিশান কি সারপ্রাইজ দিবি বল না দোস্ত বল প্লিজজ দোস্ত।
–সারপ্রাইজ বলে দিলে তো সারপ্রাইজ থাকবে না।তবে তোর যে প্যান প্যান করার অভ্যাস সে তো আমি জানি।

কিন্তু  এটা বলা যাবে না। মামা আপনাদের চা লন দুই বন্ধু চায়ের কাপে বেশ মজিয়ে আড্ডা দিলাম। আড্ডায় কাটিয়ে দিলাম অনেকটা সময়।রিশানের ফোনটা বেজে উঠলো টুন টুন টুন করে।মনে হয় অদিতা ফোন দিয়েছে। রিশান ফোন বের করে দেখে ওর বাবা। হ্যা বাবা বলো। কই তোরা, এত রাত হলো এলি না যে। তোর মা খাবার নিয়ে অপেক্ষা করছে। আমি আর রাইয়্যান একটু আড্ডা দিচ্ছিলাম।কুদ্দুস মামার দোকানে আসতেছি। তাড়াতাড়ি আয়। টুট টুট টুট টুট রাইয়্যান চল মা খাবার নিয়ে অপেক্ষা করছে,তাড়াতাড়ি যেতে বলেছে। আচ্ছা চল তাহলে। রাইয়্যান খেতে আয় মা ডাকছে।তুই যা আমি হাত মুখে একটু পানি দিয়ে আসি। আচ্ছা আয় তাহলে আমি নিচে আছি।আমরা সবাই খাওয়া শেষ করে একটু আড্ডায় মেতে উঠি।রিশানের বাবা খুব বন্ধু সুলভ আচরণ করেন সবার সাথে।

— মিঃ রাইয়্যান সাহেব কোন অসুবিধা হচ্ছে না তো এখানে?
–একদমই না, কোন অসুবিধা হচ্ছে না।
–তোমার কি খবর, কি করছো এখন?
–আমি একটা মাল্টি-ন্যাশনাল কম্পানিতে চাকরি করি।ঢাকাতেই আছি, পরিবার নিয়েই।
–বিয়ের ব্যাপার নিয়ে কিছু ভাবছো নাকি?
–না এ ব্যাপারে এখনও কিছু ভাবা হয় নি।তবে আব্বু-আম্মু বিয়ের ব্যাপারে বলেছে।
–তোমার বন্ধুর তো একটা ব্যবস্থা হলো।তোমারও করতে হয় তাহলে হাহাহাহাহা।
–জি দেখুন আপনারা।আপনারাই তো গুরুজন।
–আচ্ছা দেখতেছি,আগে তোমার বন্ধুরটা শেষ করি।তারপর না হয় তোমারটা হবে।তাহলে তোমারা গল্প করো,আমি যাই বেশি রাত জাগতে পারি না। শুভ রাত্রি…
–শুভ রাত্রি আংকেল।

আমরা ঘুমানোর জন্য প্রস্তুত হচ্ছি,এমন সময় আমার ফোনে একটা মেসেজ এলো কি করছেন কুলি ভাই?
আমার তো বুঝতে বাকি নেই এটা প্রিয়মা। এই তুমি আমার নাম্বার পেলে কই? অদিতা আপুর থেকে নিয়েছি,চুরি করে। আচ্ছা আপনি যদি নিষেধ করেন তাহলে মেসেজ দিবো না। নাম্বার যেহেতু নিয়েছো নিষেধ করলও শুনবে না,তাই বলেও লাভ নেই।মেসেজ টা পঠিয়ে ঘুমিয়ে যাই।সকালে ঘুম থেকে উঠে দেখি ৪৫ টা মেসেজ,আমি পুরো অবাক এত মেসেজ আগে তো কখনও কেউ করে নি।সব মেসেজ গুলো প্রিয়মার নাম্বার থেকেই এসেছে।মেসেজ গুলো পড়ে নিলাম খুব মনযোগ দিয়ে।কোন প্রত্যুত্তর দেই নি।

আমার একটা বদ অভ্যাস সকালে সিগারেট না টানলে শরীর টা কেমন জানি করে।তাই সিগারেট টানছি দিব্বি,হটাৎ টুন টুন আওয়াজ হলো ফোনে মেসেজের।দেখি প্রিয়মার মেসেজ শুভ সকাল মিঃ কুলি। যাক ভাই শব্দটা বাদ দিয়েছে ভালোই হলো। শুভ সকাল প্রিয়মা।কিছু সময় প্রিয়মার সাথে এভাবে কথা হয়।নিজের ভিতর ভালো লাগা কাজ করে।প্রিয়মার প্রতি দূর্বল হতে শুরু করি।অনেক কিছুই মনে মনে ভেবে নিলাম প্রিয়মাকে নিয়ে। রাইয়্যান এই রাইয়্যান নিচে আয় দেখ কারা এসেছে। রিশানের ডাকে নিচে যাই গিয়ে দেখি শাওন,হৃধি ওরা এসেছে।আমি এগিয়ে গেলাম শাওনের কাছে বুকে জড়িয়ে নিলাম প্রিয় বন্ধু কে।

–কিরে রাইয়্যান তুই তো মোটা হয়ে গিয়েছিস (হৃধি)?
— এই বসে বসে সময় কাটাই তো, তাই হয়তো।তোরা দুজনে তো একদম আগের মতই আছিস।কোন পরিবর্তন নেই।
–হ্যা সারাদিনে একটুও সময় পাই না,সব সময় ব্যস্ত থাকতে হয়।শাওনও তো সেই সকালে বেরিয়ে যায় আর রাতে ফেরে।
–আচ্ছ যা তোরা একটু বিশ্রাম নে পরে সবাই মিলে আড্ডা দিবো।
–একটা সুখবর আছে, বিকালে আফরা আসতেছে কথা হয়ে ছিলো(রিশান)
–যাক তাহলে তো সবাই মিলে জমিয়ে আড্ডা দেওয়া যাবে।

আংকেল -আন্টিকে দেখছি না যে কোথায় উনারা? একটু বাহিরে গেছে কিছু কেনা কাটা করতে।তোরা যা উপরে গিয়ে ফ্রেস হয়ে নে। রিশান প্রিয়মাতো আমাকে মেসেজ দিয়েছিলো কথা বলেছি,মনে হয় আমায় পছন্দ করে।কি করবো বলতো, আমারও তো ভালো লাগে প্রিয়মা কে। তোরা কথা বলতে থাক।আর আপাতত তুই প্রিয়মাকে কিছু বলিস না।কিছু দিন দেখ ও কি চায়।তারপর আমি তো আছি তাই না।প্রয়োজন হলে অদিতা তো আছেই।কোন সমস্যা নেই তুই কথা বলতে থাক।আচ্ছা বন্ধু ঠিক আছে,তোর কথা মত আগাইতে থাকি দেখি কি হয়। দুপুর গড়িয়ে বিকেল হয়ে গেল,সেই সাথে আফরাও এসে গেল আমাদের মাঝে।আফরার সাথে নিজের মনের ভাব বিনিময় করে নিলাম, প্রিয়মার সাথে মেসেজিং করতে করতে।

–কিরে রাইয়্যান এত দিন পরে দেখা তুই এখনও ফোন টিপছিস(আফরা)
–ও তো ছোট বেলা থেকেই এমন।নতুন করে বলার কি আছে (শাওন)
–তোরা থামবি,আমাকে নিয়ে গবেষণা করা ছাড়া,তোদের কোন কাজ আছে হ্যাঁ (আমি)
–এই তোরা এবার থাম,বোঝা যাচ্ছে যে বাদর-বাদরাণী এক হয়েছে।হৃধি তুই আফরাকে উপরে নিয়ে যা। অনেকটা পদ পেরিয়ে এসেছে।এখন তোদের জগড়া করতে হবে না। রাতে সবাই মিলে চাঁয়ের কাপে আড্ডা দিবো (রিশান)

— তোমাদের সবাইকে একসাথে দেখে ভালোলাগছে।কিন্তু আব্রাহামকে তো দেখছি না। ও আসবে না? (রিশানের বাবা) সবাই স্তব্ধ হয়ে গিয়েছে।আব্রাহামের কথা বলতেই সবার চোখের কোণে পানি এসে যায়।সবার নজর আফরার দিকে,আফরার চোখে পানি আসাটা স্বাভাবিক। আফরা তার চোখের পানি সবার থেকে আড়াল করতে চেয়েও পারে নি।আফরা উপরে চলে যায়,সাথে হৃদি ও। আংকেল কিছু বুঝে উঠার আগেই

–আব্বু তুমি আব্রাহামের কথা কেন বলতে গেলে (রিশান)
–আমি কি জানি বাবা তোদের মাঝে কি হয়েছে বা কি ঘটেছে (রিশানের বাবা)
–রিশান আংকেল কি জানে নাকি এ বিষয়ে কিছু, শুধু শুধু রাগ দেখাচ্ছিস (শাওন)
–আচ্ছা কি হয়েছে আমাকে বলবে কেউ? (রিশানের বাবা)
–পরে বলবো আব্বু,এখন এটা বলতে গিয়ে সবার মন খারাপ করার কোন প্রশ্নই আসে না।তোমাকে সময় করে একদিন বলবো (রিশান)

সবাই নিজেকে সামলে নিয়েছে।আব্রাহাম আমাদের সকলের সাথে ওতপ্রোত ভাবে মিশে আছে।আব্রাহাম কে কেউ ভুলতে পারে নি। বাড়িটা মিঃ দবির সাহেব রিশানের বাবা লাল,নীল ঝাড়বাতি দিয়ে রাঙিয়ে তুলেছেন।সন্ধ্যায় লাল নীল বাতির আলোয় বেশ মুখরিত করে তুলেছে সবাইকে।এক মাত্র ছেলের বিয়ে বলে কথা।নিজেই নিয়েছে এসব দায়িত্ব।নিজ দায়িত্বে সামলাচ্ছেন তিনি।সালমা বেগম,রিশানের মা তিনি এক মাটির মানুষ।প্রতি মায়ের মন কেন জানি কোমল মনের হয়।তাদের ভালোবাসা এই পৃথিবীতে শ্রেষ্ট উপহার আমাদের জন্য।মায়েদের ছায়াতলে আশ্রয় নিলে এক প্রশান্তির দেখা মিলে।সালমা বেগম তার ছেলের বিয়ের কেনা-কাটার দায়িত্বটা নিয়েছেন। ছেলের বউ এর সকল কেনা-কাটা তিনি সেরে নিয়েছেন অদিতাকে সাথে নিয়ে।তিনি নিজের মেয়ের মত গ্রহণ করে নিয়েছেন অদিতাকে।সেটা সালমা বেগম এবং অদিতার ফোনালাপ শুনে এই ধারণাটা খুব একটা ভুল হবে না।

সবাই মিলে ছাদে আড্ডা দিচ্ছি, মনে হচ্ছে সেই বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে ফিরে গেছি।শেষ কবে একসাথে আড্ডা দিয়েছি সেটাও আজ আবছায়া হয়ে গেছে।আজ সবার মুখটা হাস্যোজ্জ্বল, কিন্তু আফরাকে বেশ বিষন্ন লাগছে।আব্রাহামের জন্য হয়তো এই বিষণ্ণতা। সেদিনের অপমানের জন্য হয়তো নিজেকে ক্ষমা করতে পারছে না।ইদ্রিস ভাই আমাদের চাঁ দিয়ে গেলেন, রিশানের মায়ের বানানো চা’র বেশ ভক্ত আমি। চা’র কাপে চুমুক দিতেই তৃপ্তিকর স্বাদ পেলাম। যেটা জন্য এত ভক্ত আমি।চায়ের কাপে আড্ডাটা জমেছে বেশ।

আর সাথে হালকা বাতাস শরীরের ক্লান্তি দূর করে দিচ্ছে।খুবি সুন্দর একটা সময় কাটাচ্ছি আমরা।গল্প করতে করতে ফিরে গেলাম সেই পূরনো দিনে, যেটা আমাদের জীবনে সব থেকে সেরা সময়ের মধ্যে একটা।সবার কু-কৃর্তি বন্ধুরাই জানে,সেই গুলো একে একে উপস্থাপন হচ্ছে।অনেক দিন বাদে আবারও মন খুলে হাসতেছি আমরা।মনে পড়ে যাচ্ছে সেই বকুল তলায় আড্ডা দেবার কথা।কত ক্লাস না করে কাটিয়ে দিয়েছি ঐ বকুল তলায়।কথা ও সেই সময়টা মনে পড়তেই ফিরে যেতে ইচ্ছে করছে সেই সময়টায়।কিন্তু ফিরে যাও সম্ভব নয়।এই রাইয়্যান কখন থেকে ডাকছি তোর কোন প্রতি-উত্তর নেই যে।হারিয়ে গিয়েছিল সেই স্মৃতির মাঝে,ফিরে আসতে ইচ্ছা করছিলো না।কিন্তু হৃধির ডাকে নিজেকে বাস্তবে আবিষ্কার করি।

“বন্ধু” তাদের সাথে থাকলে যে মন ভালো হয়ে যায় সেটা আফরা আবারও প্রমাণ করলো।রিশানের ঠাট্টাতামাসায় আফরা না হেসে থাকতে পারে নি।রিশান একটু হাসি-তামাসা করে এটা সকলেরই জানা।সবার ফোন শাওন আগে থেকে জমা নিয়ে নিছে যাতে আড্ডার মাঝে কেউ ফোনের অজুহাতে ব্যস্ততা না দেখাতে পারে।যখন সবাই মিলে বিদ্যায়তনে আড্ডা দিতাম তখন শাওন সবার ফোন নিয়ে নিত।এবার ও ব্যতিক্রম হয়নি।সবাই তাদের কথার ঝুড়ির গিট খুলে দিছে।দীর্ঘ সময় অতিবাহিত হবার পর আজ আবার এক সাথে,তাই জমিয়ে রাখা কথা গুলো সবার সাথে ভাগাভাগি করে নিচ্ছে”অট্ট হাসিতে”।অনেক সময় আড্ডা দেবার পর, শাওন নিজ দায়িত্বে যার যার ফোন তার তার কাছে দিয়ে দিলো।আমার ফোনের আলোটা জ্বলেই আছে।হাতে নিয়ে দেখি অনেক গুলো মেসেজ এসেছে, মেসেজ গুলো প্রিয়মার নাম্বার থেকে এসেছে।  মেসেজের প্রত্যুত্তর দেই আমি।কিছু সময় আমাদের এভাবে কথা চলে।ফোনের ভাইব্রেটে আমি কেপে উঠি, দেখি প্রিয়মার ফোন।মেসেজিং করতে করতে কখন ঘুমিয়ে গেছি বুজতে পারি নি।

–হ্যা…লো (ঘুম জড়িত কন্ঠে)
–এত ভাব কেন আপনার হ্যাঁ।মেসেজের কোন প্রত্যুত্তর নেই,ভালোই তো ভাব নিতে জানেন দেখছি।
–দুঃখিত প্রিয়মা! ঘুমিয়ে গিয়েছিলাম।
–কিহহ! আমি আপনার সাথে কথা বলার জন্য জেগে আছি আর আপনি……

ফোন রাখেন কোন কথা নেই আপনার সাথে।টুট টুট টুট টুট প্রিয়মা কথা শেষ না করেই কেটে দিলো।আমি ভাবছি আমার কি করা উচিৎ।প্রিয়মাকে ফোন করা উচিৎ, নাকি ঘুমানো।ঘুমের বেগটাও বেশ।আপাতত প্রিয়মার সাথে কথা বলাটাই আদর্শ প্রেমিকের কাজ।আমি যদিও প্রেমিক না তবে হবার চেষ্টা করছি।

–আচ্ছা এটা কি প্রিয়মার রাগ না অভিমান?? (ফোন রিসিভ করার পর)
–সেটা আপনি বুঝেন না,
–বুঝলে নিশ্চই জানতে চাইতাম না।তবে মানুষ বলে ভালোবাসার মানুষদের উপর প্রেমিকারা অভিমান করে।কিন্তু আমি তো আপনার ভালোবাসার মানুষ নই, তাই এটা রাগ ই হবে হয়তো (কিছুটা অধিকার নেবার চেষ্টা)

–সেটা আপনার ইচ্ছা কি ভাববেন মিঃ কুলি সাহেব।
–যদি প্রেমিক হতাম তাহলে রাগ,অভিমান যাই হোক ভাঙাতাম।
–ইশশশ! সখ কত,কুলি হয়ে আবার প্রেম করতে চায়।
-কেন কুলিরা কি মানুষ নয়,তাদের কি মন নেই? (নরম সুরে)
–আছে, তবে যে বুঝতে পারে না, তাদের এগুলো মুখে আনা মানায় না।এবার ফোন রাখো,তুমি ঘুমাও কুলি সাহেব।
–“তুমি” এটা কিন্তু খুব কাছের মানুষদের বলে,সেটা কি জানো।
–কাছের মানুষ না ছাই হুহহ।
–ইশশশ!কেমন করে বলে রে, বুকে লাগে তো।
–লাগুগ আমার কি।এবার ফোন রাখো, পরে আবার ফোন দিবো।আম্মু জেগে গেলে সমস্যা হবে।
–আচ্ছা রাখছি,
–ওকে রাখুন কুলি সাহেব।

ফোন রেখে দেই।কিন্তু মনটা যে কেমন উড়ু উড়ু করছে।মনে প্রেমের বাত্তি জ্বলছে।প্রিয়মা যে এভাবে তার প্রেমে আমাকে ফেলবে বুঝি নি। আজ রিশানের গায়ে হলুদ।সন্ধ্যায় অদিতাদের বাড়ি থেকে হলুদের ঢালা নিয়ে আসলো।রিশানের সাথে আমাকেই বসতে হলো হলুদের মঞ্চে। পরনে নতুন লুঙ্গি, সাদা সেন্ডু গেঞ্জি গলায় গামছা।আমাদের হলুদ পর্ব শেষ,হতে হতে রাত ১১টা বেজে গেলো।আমরা বসে উঠানে গল্প করছি বন্ধুরা মিলে।রিশান ফোনটা কানে নিয়ে উঠে গেল।হয়তো অদিতার ফোন। রিশানের আর তড় সইছেনা, বউয়ের আদরের জন্য কথাটা বলে হেসে দিলো হৃধি।হৃধির সাথে আমরাও মেতে উঠি আট্ট হাসিতে গিটারে টুন টুন টুন শব্দটা কানে আসতে আতকে ওঠে সবাই।এই আওয়াজটা যে সকলের খুব চেনা।আমার ভিতরটা শিহরিত হয়ে ওঠে।কোথা থেকে আসছে এই গিটারের আওয়াজটা।আফরা কেমন পাগল হয়ে গিয়েছে।এদিক ওদিক খুজতে থাকে,শব্দটার উৎস।

“আব্রাহাম ” বলতে বলতে আফরা খুজতে থাকে।মনে হচ্ছে ছাদ থেকে আসছে শব্দটা। আফরা ছাদের দিকে পা বাড়ালো,আমরাও আফরার সাথে যেতে লাগলাম।গিটারের আওয়াজটা পরিষ্কার হয়ে এলো ছাদে আসতেই। ছাদের পশ্চিম কোণঘেঁষে একজন আকাশের দিকে তাকিয়ে গিটারটা বাজিয়ে যাচ্ছে।আফরা এগিয়ে গেলো, জ্বলে উঠলো ছাদের লাইট টা।সবাই বিস্মিত হয়ে তাকিয়ে আছি সামনের দিকে।নিজের চোখকে বিশ্বাস করতে পারছি না।মনে হচ্ছে স্বপ্ন দেখছি।আফরার চোখটা টলমল করছে,এত দিন পর আব্রাহামকে দেখে। হ্যাঁ আব্রাহাম কে দেখেই।চোখের কোণে ভিড় জমাতে থাকে জলরাশি।এগিয়ে গেলাম আব্রাহামের দিকে। আফরা ভেজা কন্ঠে আব্রাহাম কে বলতেছে,

–এত দিন পর মনে পড়লো তোর রাগিণীর কথা?সেই না বলে চলে গেলি আর কোন খোজ নিলি না।কি করে কাঁটালো এতটা বছর তোর রাগিণী টা?একটি বারও খোজ নিলি না।

–চেয়েছি কিন্তু সেদিনের আপমান আমি মেনে নিতে পারি নি।সবার সামনে আমাকে আপমান করে অপদস্থ করে দিলি মেনে নিতে পারি নি।সেদিন আমায় তোরা ভুল বুঝেছিলি কিন্তু আমার কথা কেউ শুনিস নি।বুক ভারা কষ্ট আর আপমানিত হয়ে তোদের মাঝে অপরাধী হয়ে থাকতে চাই নি।

–তাই বলে এভাবে না বলে চলে যাবি।আমরা না হয় ভুল বুঝেছি তোকে।কিন্তু সত্যিটা তো বলতে পারতি (আমি)
–কেন এত বছর ধরে আমাদের কে অপরাধী করে রাখলি তোর কাছে (হৃধি)
–রুবি আপার থেকে সব কিছু জানার পর,তোর সাথে যোগাযোগ করার অনেক চেষ্টা করেছি কিন্তু পারি নি।সব সত্যি জানার পর আফরা প্রতিটা রাত তোর ফোনের জন্য অপেক্ষা করেছে।তোর দেওয়া সিমটা এখনও আফরা অন রেখেছে। শুধু তোর জন্য।ওদিনের পর থেকে আমাদের সবাই কেমন জানি হয়ে গিয়েছে (শাওন)

–তোদের প্রতি বিশ্বাস ছিলো যে,সবাই ভুল বুঝলেও তোরা আমাকে ভুল বুঝবি না।সেদিন রুবি আপার ছোট বোন অসুস্থ ছিলো, তকে দেখার জন্য আমাকে নিয়ে হাসপাতালে যায়।রুবি আপা আমাকে ছোট ভাইয়ের মত দেখতো। আর রিপনের কথায় আমাদের নামে খারাপ কথা গুলো বিশ্বাস করে নিলি।যেটা মেনে নিতে পারি নি। ক্যাম্পাসে সবার সামনে আমাকে অপমান,মুখে আফরার জুতা দিয়ে আঘাত করা যেটা জন্য খুব কষ্ট পেয়েছি।এই যে দাগটা দেখছিস সেদিন তোর জুতার আঘাতে কেটে গিয়েছিলো।সেদিন চোখের পানি আড়াল করে নিয়েছিলাম কিন্তু রক্তটাকে আড়াল করতে পারি নি।কিন্তু সেদিন তোরা আমাকে বুঝিস নি, তাই নিজেকে তোদের থেকে দূরে কোথাও নিয়ে গিয়েছিলাম।ভেবে ছিলাম তোদের সামনে কোনদিন এই মুখ নিয়ে দাড়াবো না।কিন্তু রিশানের অনুরোধে আবার ফিরে আসতে হলো তোদের মাঝে।

ফিরে এলাম আমার রাগিণীর কাছে(আব্রাহাম) আমরা কিছু বুঝে ওঠার আগে আফরা আব্রাহাম কে জড়িয়ে ধরে।আফরার কান্নার শব্দটা বেশ পরিষ্কার বোঝা যাচ্ছে।কন্নার মাধ্যেমে হয়তো ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছে আব্রাহামের কাছে।আফরার চোখের পানি দেখে নিজেকে আটকে রাখতে পারছে না আব্রাহাম। প্রিয় মানুষের কান্না,তার চোখের পানি দেখে কখনো কেউ নিজেকে শান্ত রাখতে পারবে না।আব্রাহাম নিজের অভিমান ভুলে গিয়ে জড়িয়ে নেয় আফরা কে।তুই কাঁদবি না আফরা,তোর কন্না সহ্য করতে পারি না, ভালোবাসার মানুষটা কন্না কেউ সহ্য করতে পারে না (কন্নার সুরে বলে আব্রাহাম)। ভালোবাসলে এত দিন দূরে থাকতি না আমার উপর অভিমান করে।অনেক ভালোবাসি তোকে আফরা অনেক অনেকটা ভালোবাসি।তহলে শক্ত করে জড়িয়ে রাখ তোর বাহুডোরে, ছেড়ে দিস না আমায়।

ওদের এই মিলনে,বহুদিন পর তাদের বহু প্রত্যাশিত ভালোবাসা আজ পূর্ণতা পেল। চোখের কোণে আসা পনি দিয়ে আনন্দের বহিঃপ্রকাশ করছি আমরা।অবশেষে আব্রাহামকে নিজের করে পেলো আফরা।ওদের এই খুশিতে, নিজের অজান্তে পানি চলে আসে সবার।চোখের পানি সব সময় কষ্টের বহিঃপ্রকাশ ঘটায় না,কিছু সময় সুখের বহিঃপ্রকাশ ও ঘটায়।রিশান চোখের পানি মুছে নিলো।একটা আবেগময় পরিবেশ সৃষ্টি হলো এখানে।হৃধি আমাদের সকলকে ইশারা দিতেই, ওদের কে সুযোগ করে দিয়ে চলে আসি।থাক আজ আফরা তার প্রিয় মানুষটার বুকের মাঝে। আজকের রাতটা কাটিয়ে দিক আব্রাহামের বুকে।

বিয়ের দিন…

আমরা ১:৩০ টা নাগাত অদিতাদের বাড়িতে পৌছাই।আমি, আফরা আব্রাহাম রিশানের সাথেই বসলাম।শাওন আর হৃধি আমাদের সামনের টেবিলে।কিছু সময় পর প্রিয়মার আগমন ঘটলো।আমি আর কিছু মুখে নিতে পারছি না,প্রিয়মার দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকি।নীল শাড়ি,নীল চুড়ি, আবার কানে নীল কানের দুল। এ যে সাক্ষাৎ নীল পরী এসে দাড়িয়েছে আমার সামনে। কিন্তু কপালে নীল টিপটা থাকলে ভালো হতো বিড়বিড় করে বললাম।আফরা শুনে নেয় কথাটা, কিরে রাইয়্যান ওভাবে তাকিয়ে আছিস যে মেয়েটার দিকে। প্রেমে পড়লি নাকি,আবার নীল টিপ হলে ভালো হতো এটা বলছিস,ব্যাপার কি হ্যাঁ প্রেম কেস নাকি।

প্রিয়মা ওর নাম প্রিয়মা,হ্যাঁ আমি আগে থেকেই ওর প্রেমে পড়েছি। আচ্ছা একটু দাড়া আমার কাছে হয়তো নীল টিপ থাকতে পারে। ব্যাগ থেকে নীল টিপ বের করে দেয় আফরা। যা পরিয়ে দে টিপটা,খু্ব সুন্দর দেখাবে প্রিয়মাকে। পাশে থেকে আব্রাহাম ও আমাকে উৎসাহ দিলো। আমি টিপটা প্রিয়মার কপালে পরিয়ে দেই। এই কি করছো পাগল হলেন নাকি।সবাই দেখছে তো। দেখলে দেখুক তাতে আমার কিছু যায় আসে না কপালে নীল টিপ টা দিতে ভুলে গেছো,তাই নিজে পরিয়ে দিলাম।ঢং করতে হবে না,নিজের বউকে পরিয়ে দিয়েন। মেয়েরা মুচকি হাসি দিলে খুব সুন্দর দেখায়,প্রিয়মার ক্ষেত্রে ব্যতিক্রম হলো না।কিন্তু প্রিয়মার মুখের টোলটা আরো মহনীয় করে তোলে।সবাই খাওয়া বাদ দিয়ে আমাদের দিকে তাকিয়ে আছে।প্রিয়মা লজ্জা পেয়ে দৌড়ে চলে যায়।

৪ ঘন্টা পর…

রাইয়্যান প্রিয়মা তোকে নাকি পছন্দ করে।অদিতা তুমি তো সব জানো বলো রাইয়্যান কে।হ্যা রাইয়্যান ভাইয়া প্রিয়মা আপনাকে পছন্দ করে।আমাকে বলতে বারণ করেছিলো যাতে আপনাদের কাছে না বলি।আর হ্যাঁ আগামীদিন প্রিয়মার জন্মদিন।আপনি যা করার তাড়াতাড়ি করুন, এমন কিছু করুন যাতে আপনার প্রতি আরো বেশি দুর্বল হয়ে যায়।আচ্ছা তোমাদের আর বলতে হবে না, আমি আমার প্রিয়মাকে এমন ভাবে সারপ্রাইজ করবো যেটা তোমরা নিজেরাও কল্পনা করতে পারবে না।এখন তোমরা থাকো, বাসর রাতটা সুন্দর করে উপভোগ করো শুভ রাত্রি।
প্রিয়মা আমাদের সাথে এসেছে তাই প্রিয়মাকে সারপ্রাইজ দিতে খুব একটা সমস্যা হবে না।

পরের দিন রাতে…

আফরা প্রিয়মাকে নিয়ে তোরা ছাদে আয়তো তাড়াতাড়ি।আজ প্রিয় মানুষটার জন্মদিন তাই প্রিয়মাকে সারপ্রাইজ দেবার জন্য সকাল থেকে ছাদটা সাজিয়েছি।বেলুন, ঝাড়বাতি, গোলাপ,গাধা ফুল দিয়ে পুরো ছাদটা সাজিয়েছি।কেক আনিয়ে রেখেছি সেই সন্ধ্যায়।আমি ছাদের দরজা টা বন্ধ করে বাহিরে অপেক্ষা করছি প্রিয়মার জন্য ১১ টা ৫৪ মিনিটে আফরা প্রিয়মাকে নিয়ে চলে এলো।২ মিনিট পর রিশান,অদিতা,শাওন,হৃধি ওরা ও এলো। ১২ টা বাজতেই প্রিয়মাকে ছাদের দরজার সামনে জুলন্ত দড়িটা টান দিতে বলি, টান দিতেই উপর থেকে গোলাপের পাপড়ি প্রিয়মার উপর বৃষ্টির মত পড়তে থাকলো। হ্যা…পি বা..র..থ..ডে টু ই…উ, হ্যাপি বার্থডে মাই ডিয়ার প্রিয়মা।সামনের ল্যাপটপে প্রিয়মার ছোট বেলার কিছু ছবি সংগ্রহ করে সেটার সাথে এই বার্থডে টন টা সেট করে দিয়েছি। সবাই আমার এই কান্ড থেকে থ গিয়েছে।তাদের মুখে কোন শব্দ নেই।

নিস্তব্ধ হয়ে দাড়িয়ে আছে।দরজায় জুতাটা খুলে রেখে আসতে বলি প্রিয়মাকে। কারণ প্রিয়মার আসার পথটা গোলাপ আর গাধা ফুলের পাপড়ি দিয়ে সাজিয়ে রেখেছি,প্রিয়মা সেই ফুলের পাপড়ির উপর দিয়ে হেটে আসবে বলে।প্রিয়মা রিতিমত অবাক হয়ে যাচ্ছে।প্রিয়মার বার্থডে টা এত স্পেসাল ভাবে উদযাপন করবো কখনো কল্পনা করে নি কেউ।প্রিয়মাকে এভাবে সারপ্রাইজ দিবো সবার ধারণার বাহিরে ছিলো।আমি হাতে গোলাপ নিয়ে এগিয়ে যাই প্রিয়মার দিকে, হাটু ভেঙে সবার সামনে প্রিয়মাকে প্রপোজ করি,যেটা প্রিয়মা আশা করে নি।প্রিয়মার চোখটা পানিতে টলমল করছে,হয়তো খুশিতে।ওর জন্মদিনে ওকে এভাবে সারপ্রাইজ করবো প্রিয়মা ভাবতেও পারে নি।

আর এভাবে প্রপোজ করাটাও।আমার হাত থেকে গোলাপটা নিয়ে জড়িয়ে নেয় আমাকে। সবাই হাত তালি দিয়ে আমাদের উৎসাহ দিলো। মিঃ কুলি সাহেব আমাকে যদি কখনো কষ্ট দিছেন তো একদম দূরে চলে যাবো আমাকে ফিরে পাবেন না। না তোমাকে কখনও কষ্ট দিবো না। তোমাকে আগলে রাখবো আমার এই বুকে। প্রিয়মা শক্ত করে জড়িয়ে নেয় আমাকে।প্রিয় মানুষকে বুকের সাথে জড়িয়ে নেওয়াটার মাঝে অন্য রকম ভালো লাগা কাজ করে।যেটার বহিঃপ্রকাশ চোখের পানির মাধ্যেমেই ঘটে।শত চেষ্টা করেও আটকে রাখা যায় না।আমিো ঠিক তেমনটাই করলাম।চোখের পানির সাথে দীর্ঘ শ্বাস নিয়ে নিজেকে সামলে নিলাম।এভাবে আমিও জড়িয়ে গেলাম ভালোবাসার বন্ধনে।

ভালোবাসা আমাদের সবার জীবনকে রাঙিয়ে তুলতে পারে। ভালোবাসাময় হয়ে উঠলো আমাদের জীবন। ভালোবাসা আমাদের জীবনের এক গুরুত্বপূর্ণ জিনিস যেটা ছাড়া আমাদের জীবনটা নিরামিষ।প্রতিটি মানুষের একটা সময় আসে, যে সময়টা তাদের জীবনটা পাল্টে দেয়।তাদের জীবনে ভালোবাসার আবির্ভাব ঘটে, যে ভালোবাসার মূল্য কেউ ঠিক ভাবে দিতে পারে না।নিতে হয় বিষাদের স্বদ,প্রিয় মানুষকে সরিয়ে দেয় তাদের জীবন থেকে।নিজের জীবনকে করে তোলে নিরামিষ।

তাই জীবনকে রঙিন করে তুলার জন্য ভালোবাসার বিকল্প কিছুই নেই। ভালোবাসার মানুষগুলোকে শত কষ্টের বিনিময়ে নিজের করে রাখাতে হবে।হারিযে যেতে দেওয়া যাবে না আমাদের ভালোবাসার মানুষদের।হয়তো তার হাত ধরে আপনার জীবনে আসতে পারে শুভ সময়।পাল্টে দিতে পারে আমার,আপনার জীবনধারা কে। সবাই সুস্থ থাকুন, ভালো থকুন।ভালোবাসাময় হয়ে উঠুক আপনাদের জীবনও।

গল্পের বিষয়:
ভালবাসা
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

সর্বাধিক পঠিত