‘আপনি রান্না করতে পারেন?’ পাত্রী দেখতে এসে পাত্রীর মুখ থেকে এমন একটা কথা শুনবো ভাবতে পারিনি। যে প্রশ্নটা আমার করার কথা ছিলো সেই প্রশ্নটা উল্টো মেয়েটা করলো। আমি অনেকটাই অবাক হলাম। মেয়েটা আবারো বললো….
–রান্না করতে পারেন?
-প্রশ্নটাতো আমার করার কথা।
–আমি কি করতে পারিনা?
-পারেন, বাট সব কিছুর একটা সামঞ্জস্যতা আছেনা?
–সেটা নাহয় পরে দেখা যাবে।
-পরে কখন?
–সব-ই কি বলে দিতে হবে?
-উহু, বাট সময়টা জানা থাকলে মনটা খচখচ করবেনা।
–এমা খচখচ করবে কেনো?
-অপরিপূর্ণ থাকবে যে।
–চা খাবেন..? আমি খুব ভালো চা বানাতে পারি।
-চায়ের বিষয়টা নিয়ে বিদায় বেলায় কথা বলবো।
–ঠিক বুঝলাম না। আমি হাসলাম। মেয়েটা হাত নারালো। আমার দিকে তাকিয়ে বলল….
-আপনি দেখছি হাসতেও পারেন।
–কেনো পারিনা?
-আব্বু বলেছিলো আপনি নাকি গম্ভীর স্বভাবের।
–অনেকটা তাই।
-আমারতো মনে হয়না। যারা গম্ভীর থাকে ওদের কথা গুলোও গম্ভীর। ওরা ঠিকভাবে হাসতে পারেনা। আর আপনি দিব্যি হাসলেন।
–কি জানি, আমি অতকিছু জানিনা।
-আপনি একটা কথা কিন্তু এড়িয়ে গেলেন।
–কোন কথা?
-আপনি রান্না করতে পারেন কি না?
–এটা জানা কি খুব জরুরি?
-অনেকটা তাই, অনেকটা বললে ভুল হবে। আমি মাস্ট বি জানতে চাই।
–কিন্তু কেনো?
-প্রথমত আমার বাবা আর আপনার বাবা বন্ধু। তো সেই সুত্রে আমি আপনাকে চিনি বাট কখনো কথা হয়নি। তবে আব্বু সবসময় আপনার গুন গান গাইতো। বলতো রুবেল ছেলেটা খুব ভালো, ব্রিলিয়ান্ট। খুব লক্ষ্মী একটা ছেলে। এই কারনেই ইন্টারেস্টিং।
–এটার সাথে রান্না করার কি সম্পর্ক?
-ওমা তাও জানেন না? শুনুন….যারা লক্ষ্মী তারা সব পারে। সংসারের কাজকর্ম, রান্নাবান্না সব সব সব। সেই জন্য বললাম।
–হাহা, আংকেল হয়তো বেশিই বলেছেন।
-মোটেওনা, আম্মুও বলে। জানেন আপনার উপর আমার খুব রাগ হতো। যখন-ই কিছু করতাম একটু ভুল হলেই আব্বু আম্মু আপনার কথা বলে খোটা দিত। তুই এটা পারিস না ওটা পারিসনা, অথচ রুবেল ছেলে হয়ে সবকিছু পারে। ওর কাছে শিখিস।
–হা হা হা..ইন্টারেস্টিং তো।
-হাসবেননা একদম, আরেকদিন কি করলো। টিফিন বাটিতে করে আপনার আম্মু মানে আন্টি বিরিয়ানি পাঠিয়ে দিলো। সেগুলো খেয়ে বলে এগুলোও রুবেলের হাতের রান্না। তুইতো অকর্মা কিচ্ছু পারিসনা, ছেলেটার কাছ থেকে কিছু শেখ। জানেন তখন আমার ইচ্ছে করছিলো আপনার চুল টানতে।
–হা হা হা তাই নাকি?
-জি।
–তাহলে এখন-ই প্রতিশোধ নিন।মেয়েটা হাসলো। মনে হচ্ছে কিছুটা লজ্জা পেলো। মাথা নিচু করে ফেললো। মাথা তুলে আবার বলল…..
-ইচ্ছে ছিলো একটা প্রতিশোধ নেওয়ার।
–এখন নেই?
-প্রতিদিন নিব।
–কিভাবে সম্ভব?
-একটা আত্মিয়তার মাধ্যমে।
–হয়তো, তবে একটা সত্যি কি জানেন?
-বলুন তাহলে…
–আংকেল একটু বেশিই বলেছে। আর তার সাথে আন্টিও কিছুটা। তবে বাসায় থাকলে রান্নাটা আমিই করি, না করলেও আম্মুকে হেল্প করি।
-মা ভক্ত খুব তাইনা?
–অনেক, বলতে গেলে ছোট বেলা থেকেই আম্মুর পিছে পিছে লেগে থাকতাম। আর রান্নাটা আম্মুইই শিখিয়েছে।
-তারমানে আপনার ইচ্ছে ছিলোনা…?
–মোটেওনা, একদিন স্কুল ফিরে আম্মুর কাছে গেলাম। সেদিন জোর করে বসিয়ে রাখলো, বলল রান্না শিখতে।
-হাউ ইট পসিবল…?
–তবে আমিও খুব সহজে রাজি ছিলাম।
-কেনো?
–কারন আম্মু টাকা দিতে চেয়েছিলো।
-টাকা কি পরে পেয়েছিলেন?
–হুম, এভাবে আস্তে আস্তে কিভাবে যেন কয়েকদিনে মোটামুটি রান্না শিখে ফেলেছিলাম।
-ওয়াও…আর বিরিয়ানি?
–ওটাও আম্মু শিখিয়েছে। যখন মেসে থাকতাম অনেকদিন পরপর বাড়ি যেতাম। কয়েকদিন করে থাকতাম আর সেই সুযোগে ওটাও শিখে নিলাম।
-বাহ! বেশ ভালোতো। আপনার বউয়ের কপাল তো অনেক ভালো।
–হয়তো, বাট বউ যদি রাগি হয় তাহলেইতো সমস্যা।
-কেনো সমস্যা?
–ঐ যে বউ যদি রেগে বলে রান্না করতে পারবনা। তাহলে সব আমার করতে হবে।
-মাঝেমাঝে ইচ্ছে করেই রাগবে।
–সেটা বউই ভালো জানে।
-আমি বলে দিলাম দেইখেন।
–মনে হচ্ছে বউটা আপনি। আমার কথা শুনে লজ্জায় মাথা নিচু করে ফেললো মেয়েটি। ভেংচি কেঁটে বলল….
-আপনার বউ হবার শখ নেই আমার হুউউ…
–সিরিয়াসলি?
-পাক্কা।
–তিন সত্যি?
-উহু, একদম না। তবে….আচ্ছা বাদ দিন। কালকে ফ্রি আছেন?
–কেনো বলুন তো..?
-আপনার কাছ থেকে বিরিয়ানি রান্না শিখবো তখন আম্মুকে বলবো দেখো দেখো আমিও পারি হুউ।
–খুব জেদ বুঝি?
-হুম আর এই কারনেই আমার রান্না শেখা হয়নি। জেদ করেই শিখতাম না। আপনি শেখাবেন আমায় রান্না?
খুব কোমল কণ্ঠে কথাটি বললো জান্নাত। হ্যাঁ, মেয়েটার নাম জান্নাত। আমার দিকে তাকিয়ে আছে। আমার উত্তর শোনার অপেক্ষায় আছে। এই ধরনের মেয়েদের অভিমান করলে বড্ড মায়াবী লাগে। আমি ইচ্ছে করেই বললাম….
–উহু পারবনা।
-আচ্ছা। যা বলেছিলাম তাই… জান্নাত গাল ফুঁলিয়ে বসে রইলো। অভিমান করেছে। আমার হাসি পাচ্ছে। আমি বললাম….
–আচ্ছা বিয়ের পর শেখালে হয়না?
-বিয়ে? (অবাক হয়ে)
–অসম্মতি আছে?
-যদি বলি না।
–তার মানে বিয়ের পর শিখবে?
-হুম….
জান্নাতের মুখটা আগের চেয়ে অনেকটা পরিবর্তন হয়েছে। কেমন জানি লজ্জা লজ্জা ভাব। চোখের ভাষা গুলো বোঝার ক্ষমতা নেই আমার। তবে ঠোঁটের কোণে যে এক চিলতে হাসি আছে সেটার ভাষা আন্দাজ করতে পারছি। সেই ভাষাটা পড়তে পারছিনা, বাট অনুভূতি টা সুখকর। আমি জান্নাতকে বললাম….
-এককাপ চা খাওয়াবে?
–এখনি চলে যাবেন…?
-আমি কি চলে যাওয়ার কথা বলেছি?
–তখন বলেছিলেন চায়ের বিষয়টা বিদায় বেলায় বলবেন।
-একবারে তো যাচ্ছি না।
–কি জানি, আমার কেমন জানি লাগছে।
-আচ্ছা চা করতে হবেনা। আমি বাসায় গিয়ে খাব।
–খুব বেশি বোঝেন কেনো? আমি আসছি জান্নাত চা বানিয়ে আনলো। আমার হাতে চায়ের কাপ দিয়ে বলল….
–খান।
-আপনি খাবেন না?
–পরে খাব।
-আচ্ছা এই এককাপ চা দুজনে ভাগ করে খাই?
–উহু আগে আপনি খান।
-আচ্ছা।
–চা খেয়েই কি চলে যাবেন…?
-বলছিতো একবারে না।
–ভালো সময় গুলো খুব তাড়াতাড়ি শেষ হয়ে যায় তাইনা? আমি চায়ের কাপে চুমুক দিয়ে বললাম….
–হুম অনেক তাড়াতাড়ি।
চা টা বেশ হয়েছে। বেশ হয়েছে বললে ভুল হবে। অনেক অনেক সুন্দর হয়েছে। চায়ের প্রশংসা করলাম না। করলে এই মেয়ের চোখের কোনে অশ্রু জমা হবে। যেটা একদম ভালো দেখায় না। আমি চায়ের কাপে আরো দু’একটা চুমুক দিয়ে বাকিটা টেবিলে প্রিচের উপর রাখলাম। জান্নাতের দিকে তাকিয়ে বললাম….
-আমি যাই…
–যাইনা, বলুন আসি।
-আচ্ছা আসি….
জান্নাত মাথা নাড়িয়ে হ্যাঁ সুচক জবাব দিলো। আমি দরজা দিয়ে বের হবার সময় জান্নাতের দিকে পিছন ফিরে তাকালাম। জান্নাত চায়ের কাপে চুমুক দেওয়ার জন্য প্রস্তুত হয়েছে। ওর চুমুক দেওয়ার সুরররুত শব্দটা ঠিক আমার কানে চলে আসলো। আমার চোখে চোখ পড়তেই জান্নাত লজ্জায় ঘুরে দাঁড়ালো। আমি মুচকি হেসে আস্তে করে বেরিয়ে পরলাম। জান্নাত হয়তো এখন আমায় বেহায়া ভাবছে। যে আমি কেনো পিছনে তাকালাম। তবে চায়ের কাপের অনুভূতি টুকু যে অনেক সুখের। সেটা কি ও জানে? হয়তো……