হাত ধরেছি যখন ছাড়বো না

হাত ধরেছি যখন ছাড়বো না

– আজ একটু তারা তারি ঘুমিয়ে পড়োতো? (আদনান)
-পারবো না ,(শুপ্তি)
– তা কেন পারবে আজ যে বিশ্ব কাপ খেলা আছে । আজ তোমার সিরিয়াল না দেখলেই না।
-হিহিহি
-হাসো কেন ? ভালো লাগে না আর ।

বলেই আদনান বেরিয়ে পরে বাহিরে কোথাও খেলা দেখার জন্য । কারণ চার বছর পর পর খেলা গুলি হয় মিস তো করাই যাবে না । তার মধ্যে আজ আবার আর্জেন্টিনার আর ব্রাজিল এর খেলা । তাই ফোনটা বার করে ফোন দিলাম আসিফ কে ফোন ধরতেই,,

-কোথায় রে ?(আদনান)
-ভাই খেলা তো দেখতে দিচ্ছে না (আসিফ)
-কেডা আবার খেলা দেখতে দেয় না ?
– বউ রে ভাই । মাও বিটি দু জন এক সাথে সিরিয়াল এ পরে গেছে ।
-ভাই আমারো তো একি অবস্থা।
– চল ডিরাই যায় । ওখানে খেলা দেখার ব্যবস্থা আছে ।
– ঠিক আছে চলে আই ।

বলেই ফোনটা কেটে দিয়ে ডিরাই এর উদ্দেশ্য করে চলতিছি । হঠাত্ মনে পড়লো শুপ্তি তো একা ভয় পাই । এখন ভয় পাবে না অবশ্য । কারণ এখন সিরিয়াল হচ্ছে । সিরিয়াল শেষ হবে 11 টাই। তখন মন আর সিরিয়ালে থাকবে না । আজ কিছু একটা হবে বুঝতেই পারতিছি । কিন্তু এই দিকে খেলা টা না দেখলে সত্যিই আমি মরে যাবো । এই সব ভাবতে ভাবতে চলে আসলাম ডিরাই। এসেই খেলা দেখা শুরু। দেখতে দেখতে খেলা খুব তাড়াতাড়ি শেষ হলো । কিন্তু ঘরির দিকে তাকিয়ে দেখি 1:30 বাজে । সব শেষ শুপ্তি তো ঘুমাইনি আমি জানি । তাই তাড়াতাড়ি দৌরাতে লাগলাম। এসে পৌঁছাতে 2 টা পার হয়লো । দরজায় কটা নাড়াতেই খুলে আসলো আর

-ঠাসস,ঠাসস,ঠাসস,ঠাসস করে চারটা থাপ্পড় গালে পড়লো আর বলতে লাগলো ,,

– এখানে আচ্ছিস কেন । যা এখান থেকে একা যখন এতো ক্ষন থাকতে পারছি । সকাল টাও এই ভাবেই কাটে দিতে পারবো । ( বলেই কাদতে লাগলো ) কিন্তু আদনান যেনো কান্না শুনেও কিছু হলো না । কারণ প্রায় 30 মিনিট এর বেশি দৌড়ানোর ফলে শরীরে এক ধরনের ক্ষপ সৃষ্টি হয়ছিল । তার মধ্যে আবার চার চারটি থাপ্পড় । রাগে কিছু না বলেই চলে গেলো আবার ডিরাই । গিয়ে একটা ঘুম দিলো । আর এই দিকে শুপ্তি বুঝতে পারলো এই ভাবে বলাটা ঠিক হয়নি। তাই সে কাদতে লাগলো আর এই দিখে কখন যে সকাল হয়ছে বুঝতেই পারে নি । চোখটা একদম ফুলিয়ে গেছে কাদতে কাদতে । শুপ্তি ভাবছিল আদনান একটু পরেই আসবে তার সকল রাগ মুছে গেলেই কিন্তু সে আর আসে না । যার কারনে শুপ্তির আরো বেশি খারাপ লাগে আর কাদতে থাকে । আদনান ঘুম থেকে ওঠে অফিসে যায় । কিন্তু আজ তাকে সবাই স্বাগতম জানাচ্ছে বেবার কি ? ছয় পাচ ভাবতে ভাবতে নিজের জায়গায় চলে আসতেই তার কাজিন চলে আসে আর বলে ওঠে ,,

– congratulation sir.
– এ শুনো শুনো । তুমি আমাকে স্বাগতম জানালে আর আসার সময় দেখলাম সবাই জানালো কারণ টা কি?
– স্যার আপনি তো বাবা হতে চলছেন?
– বলো কি । তুমি কেমনে জানলে ?
-আপনি যেখানে ম্যাডাম কে টেস্ট করাইছিলেন ওই ক্লিনিক টা আমার আপুর ওইতো বললো ।
– শুপ্তি কে কি জানাইছে ?
– না মনে হয় কারণ নাম্বার নাই তো !
– হুম তুমি যাও ।

বলেই একরম দৌড়েই বাড়ি আসলাম এসে দখি দরজা বন্ধ । জানি বউ টা অভিমান করে বসে আসে । কিছু না খেয়ে।  তাই নিচে হোটেল থেকে এক পেকেটপোলাও নিয়ে আসলাম । এসেই দরজা কটা নারিয়ে বললাম,,

– ও বউ খুলো কো ,আমি তোমার স্বামী কো !
– এখানে আচ্ছো কেনো তোমার সেই সুন্দরী কাজিন এর সাথে থেকেও কি সক মিঠে নি ? (ভিতর থেকে )
-না কো একটু খুলো কো ?
– আমি আমার স্বামী কে আদর করতে পারি যখন খুশি জরিয়ে ধরতে পারি মাঝেমধ্যে দুটা থাপ্পড় ও দিতে পারি । ওই গুলির মধ্যে যেমন ভালোবাসা আছে তেমনি থাপ্পড় মারা টার ভিতর ও ভালোবাসা আছে ।(মন খারাপ করে)

-( শুপ্তি তো মিথ্যা বলে নি । কিন্তু মাথায় যে রাগ ছিল এইটা তো তার বোঝা লাগতো )
– আমাকে আর তোমার ভালো লাগে না । আমি জানি ( কাদতে কাদতে )
– কি বলছো এই সব ?
– কাল রাতে খুব কষ্ট হয়ছিল । মনে হয়ছিল নিজেকে শেষ করে দেয় । কিন্তু তোমার কথা ভেবে খালি নিজেকে শেষ করিনি ।
– ঠিক আছে তুমি যখন নিজেকে শেষ করতে চাইছিলে এই বার আমি নিজেই নিজেকে শেষ করবো । বলেই দরজায় একটা গাছের টপ ছিল । ওইটা উপর থেকে নিজে ফেলে দিতে ধপাশ করে একটা শব্দ হলো । এই শব্দ শুনে এই দিকে শুপ্তি ভাবলো আদনান নয়তো । বলেই দরজা খলে দৌড়ে সামনে যেতেই আদনান পিছুন থেকে জরিয়ে ধরে ।

– পাজি ,ফাজিল কোথাকার ,চিটার (এই সব বলতে বলতে বুকে আস্তে আস্তে মারতে লাগলো । )কোনো কোথা না বলেই আদনান তাকে ঘরের ভীতরে নিয়ে গিয়ে শুয়ে দেয় । আর একটা ছোট্ট চুম্বন আকে দেয় তার কপালে । অবশ্য চুম্বন টা নিতে চাইছিলো না । কিন্তু একরকম জোর করেই দেয় । চোখের দিখে তাকাতেই আদনান বুঝতে পারে সারারাত ঘুমায় নি । চোখের নিচে কালো কালির মতো দাগ পরে গেছে । কানের কাছে এসে ফিস ফিস করে বলে আদনান

-তুমি মা আর আমি বাবা হতে চলেছি !
– কিহ !
-হুম সত্য বলছি ।
– বিশ্বাস হচ্ছে না ।
-আমার কাজীন নিজেই বললো ,,

কথাটা শুনার সাথেই আদনান কে জরিয়ে ধরে কাদতে লাগে শুপ্তি । আজ এই চোখের পানি কোনো মায়ের কষ্টের পানি না । এই পানি টা সুখের । মা হওয়ার কথা টা শুনা যে কতটা সুখের যে শুনছেন তাই এক মাত্র ভালো যানেন ।

-আমার কিন্তু ছেলেটাই পছন্দ । একদম তোমার মতো হবে এমন (শুপ্তি)
– না মেয়ে টাই আমার পছন্দ একদম তোমার মতো হবে দেখতে ।
-আচ্ছা আদনান আমি যদি মরে যায় তাহলে কি তুমি আবার বিয়া করবে ?
– হঠাত্ এই রকম প্রশ্ন কেনো ?
– অনেকেই তো মারা যায় সন্তান জন্ম দেওয়ার সময় ।
– plz এই রকম কথা কখনোই বলবানা ।
– ঠিক আছে । ।

এই রকম ভাবেই দেখতে দেখতে প্রায় কেটে গেলো 10 টি মাস । আজ শুপ্তির খুব খারাপ অবস্থা । ডাক্তার বলছে তাকে নাকি অপারেশন করতে হবে । কিন্তু সন্তান টা এমন জায়গায় আছে । যেকোনো একজন কে বাচানো সম্ভব । আজ মনে পরলো আদনান এর ,সেই কিছু মাস আগে শুপ্তির বলা কথা ,,

– কখনো যদি এমন পরিস্থিতি হয় যে আমাকে না হয় আমার বাবুটার মধ্যে যে কোনো এক জন কে বেচে নিতে হয় তখন তুমি আমার বাবু টাকেই বেচে নিয় plz কিন্তু আদনান তা রাখতে পারলো না । সে ডাক্তার কে বলেই দিলো

-আমার বউ কে চাই । সন্তান কে না ।
– কিন্তু এতে আশঙ্কা থাকবে আপনার বউ পরে আর কোনো সন্তান জন্ম দিতে পারবে না । কথা টা শুনার পর আদনান এর সব কিছু অন্ধকার লাগতেছিল । সে কি করবে বুঝতে পারছেন না । শেষ বলেই দিলেন ।
– বাচ্চা লাগবে না । বউ টাকে বাচান।

অপারেশন হওয়ার পর যখন মৃত সন্তান জন্ম দিলো শুপ্তি । কথাটা শুনার পর নিজেই নিজেকে ক্ষমা করতে পারছিল না । ডাক্তার শুধু শুপ্তিকে বলেছিল আর আপনি কোনো দিন সন্তান জন্ম দিতে পারবেন না । কথা টা শুনার পর সে কি করবে বুঝতে পারছিল না । আর তার সাথে এটাই বলে যে আপনাকে আপনার স্বামী চেয়ে ছিল বলেই আপনাকে বাচানো হয়েছে । তাছাড়া আমরা আপনার সন্তান কে বাচাই তাম । শুপ্তি জানে আদনান কখনোই আমাকে হারাতে চাই না । তাই সে তার সন্তান কে নষ্ট করলো । কিন্তু সে যদি জানতে পারে আমি আর কোনো সন্তান তাকে দিতে পারবো না । তাহলে সে আমাকে সত্যিই ত্যাগ করবে । এই রকম নানা ভয়ে শুপ্তি আদনান কে বলতে পারে না । আর ডাক্তার গুলাও তাকে সিওর ভাবে বলে না ব্যাপার গুলি । কারণ শুপ্তি মানা করেছিলে । কিছু দিন এর মধ্যে শুপ্তিকে বাসায় আনা হলে আদনান বেশ বুঝতে পারে শুপ্তি তার থেকে সব সময় দুরে থাকার চেষ্টা করে । প্রায় একমাস পর আদনান শুপ্তিকে জরিয়ে ধরে পিছুন থেকে । কিন্তু শুপ্তি আদনান কে সাথে সাথে বলে

– আমি তোমাকে ঘৃণা করি । আদনান বুঝতে পারে না কেনো । আগের মতো আর কোথা বলে না । সব সময় মন মরা হয়ে থাকে । সে বুঝতে পারে নিশ্চয়ই বড় কোনো কারণ আছে। তাছাড়া আদনান বেশ ভালো করেই চিনে শুপ্তিকে । তাই সে ফোন করে হসপিটালে । আর জানতে পারে অনেক কষ্টে সত্য ঘটনা । ঘরে এসে দেখে শুপ্তি কাদছে । আদনান কে দেখে চোখ মুছে অন্য দিকে চোখ রেখে শুয়ে থাকে । আদনান তার কাছে এসে হাত টা ধরে খুব শক্ত করে । কিন্তু শুপ্তি তাও তার চোখের দিকে তাকাইনা । কারণ শুপ্তি জানে মায়া বারে কি লাভ আর ।

-আমার তোমার সাথে কিছু কথা আছে এই দিকে তাকাও ?(আদনান)
-আমি জানি কি বলবে । ডিভোর্স দিতে চাও তো সমস্যা নেই দেও আমি সাইন করে দিচ্ছি । আমাকে নিয়ে ভাবতে হবে না । বাবা মার বাসায় হয়তো যেতে পারবো না । কিন্তু কষ্ট করলে দু বেলা ভাত যোগার করতে পারবো।

-ঠাসস
– মারলে কেনো , (গালে হাত দিয়ে কাদতে কাদতে )
-নিজেকে কি ভাবো খুব মহান । তোমাকে এতো মহান হতে কে বলে (বলেই চোখ দিয়ে দু ভোটা পানি ছেরে দেয় )

-আচ্ছা বাচ্চা ছাড়াই তো ভালো হবে। শুনতে হবে না কোনো কান্না কাটি । শুনতে হবে না কোনো বিচার শুনতে হবে না ,,,,

-ব্যাচ আর বলতে হবে না ।(কাদতে কাদতে ) বলেই জরিয়ে নেয় বুকে শুপ্তি । কারণ শুপ্তি এটাই চেয়ে ছিল । আর সে জানে যার হাত ধরে বেরিয়ে আচ্ছে সে তার হাত কখনোই ছারবে না । কিন্তু তবুও একটু ভয় হয় ,মেয়ে তো !

সমাপ্তি

গল্পের বিষয়:
ভালবাসা
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

সর্বাধিক পঠিত