– আচ্ছা আজ আকাশটা বেশ মেঘলা,তাই না.?
– হুম তাই
– বৃষ্টি হবে মনে হয়
– হুম
– চলো আজকে দুজনে বৃষ্টিতে ভিজব
– না না,আমি বৃষ্টিতে ভিজলেই, ঠান্ডা,জ্বর,কাশি এসব এক সাথে আমার শরীলে প্রবেশ করে
– এমন করো কেন.? চলো প্লিজ.?
– না বললাম তো,আজব
– থাক তুমি, আমি গেলাম
মেয়েটি চলে গেল।আমি সাঁই দাঁড়িয়ে আছি তিতাসের প্রান্তে।এই জায়গাটা আমার বেশ ভালো লাগে।ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সদর থানার অন্তর্ভুক্ত শাঁলগাঁও-কালিসীমা স্কুল এন্ড কলেজের দক্ষিন প্রান্তে তিতাস নদীর তীরে এক বেড়ি বাঁধ।সারা দিনের ক্লান্তি মুছার জন্য,প্রকৃতির সুবাস পেতে,তিতাস নদীর পানির কলোকলো শব্দ শুনতে,ছুটে আসা দূর দুরান্ত থেকে বাতাস গাঁয়ে মাখতে, গ্রাম-শহরের অনেক মানুষের বিকেল বেলা আগমন হয় এই খানে।সেই সুবাদে আমি আর খাদিজাও আজকে এসেছি।
মেয়েটি চাই বৃষ্টিতে ভিজতে।আমি তা চাই না।কারণ বৃষ্টিতে ভিজলেই আমার শরীরে প্রবেশ করে জ্বর নামক রোগটা।ফলে তিন-চার দিন অনায়সে বিছানায় শুয়ে থাকতে হয়।আমি না বলার ফলেই মেয়েটি চলে গেল।আর আমি সাঁই দাঁড়িয়ে আছি।চোখ দুটি বিরামহীন তাকিয়ে আছে প্রকৃতির পানে।চারদিকে শুধু পানি আর পানি।বলতে বলতে কালো আকাশ বেদ করে বৃষ্টি পড়তে লাগল।আমার সেদিকে কোনো আক্ষেপই নেই।আমি তো প্রকৃতির প্রেমে হাবুডুবু খাচ্ছি।ইচ্ছে করছে প্রকৃতির সাথে থেকে যাই।পরক্ষনে দূর-বহুদূর থেকে আসা মানুষ গুলো ছুটে যাচ্ছে বৃষ্টি থেকে বাঁচার জন্য।
খাদিজা চেয়েছিল আজকে আমার সাথে বৃষ্টিতে ভিজবে।কিন্তু আমি না বলার কারণে মেয়েটি চলে গেল।এখন আমি নিজেই বৃষ্টিতে ভিজতেছি।যাক তাহলে আমি একাই ভিজি।জ্বর হলে হোক।কিছুক্ষন বৃষ্টিতে ভিজার পরে আমার পাশে অন্য কাউকে আয়ত্ত করতে পারলাম।মাথাটা ঘুরিয়ে তাকাতেই দেখি,খাদিজা আমার পাশে।মেয়েটির পানে তাকিয়ে ফিক করে হেসে দিলাম।মেয়েটি কোনো কিছুই করল না।শুধু অগ্নি দৃষ্টি দিয়ে আমার দিকে তাকিয়ে আছে।মেয়েটির এই তাকানোর মানেটা আমি বুঝতে পেরেছি। কাঁথা দিয়ে নাক-মুখ ঢেকে শুয়ে আছি।আর কিছুক্ষন পর পর হাছি আসতেছে।জ্বরে গা পুড়ে যাচ্ছে।এমন সময় খাদিজার কল,
– কি অবস্থা তোমার
– আমার খুব করুণ অবস্থা,তোমার কি অবস্থা
– আমি মোটামোটি ভালো আছি
– ভালো থাকলেই ভালো
– আচ্ছা ওয়েট..
আমি ফোনের এপাশ থেকে বার বার হ্যালো বলতে থাকলাম।খাদিজার কোনো সারা পেলাম না।মেয়েটি কিসের জন্য বলল ওয়েট করতে।বুঝি না মেয়েটির কাজ কাম।ভালোবাসা এত এত বেশি পাই যে আমি তা কখনো ভুলার মতো না।খাদিজার মত মেয়ে পাওয়া এখনকার যুগে যেন সোনার হরিণ পাওয়া।বর্তমান যুগে অনেক মেয়েরাই আছে একের অধিক রিলেশনে জড়িয়ে থাকে।এসব মেয়েদের জন্যই আজকাল প্রকৃত ভালোবাসা গুলো হারিয়ে যাচ্ছে।
প্রকৃত ভালোবাসার সাথে পবিত্র ভালোবাসা। বর্তমানে পবিত্র ভালোবাসা নাই বললেই চলে।কারণ রিলেশনে জড়ানোর পর অল্প কিছুদিন পরেই খারাপ কাজে লিপ্ত হয়ে যাই।ছেলে গুলো মেয়ে গুলো কে খারাপ কাজ করার জন্য প্রস্তাব দেই।মেয়ে গুলোও নিজের ভালোবাসার জন্য সেই কু-প্রস্তাবে রাজি হয়ে যায়।বিলিয়ে দেয় নিজের সতিত্ব।কিছুদিন বাদেই তাদের মাঝে ফাটল ধরে।দূরত্ব সৃষ্টি হয়ে ভালোবাসার নামে এসব নোংরামি রিলেশনে। কিছুক্ষন বাদেই খাদিজা আমাদের বাসায় এসে হাজির।মা এর সাথে খাদিজার সম্পর্ক অনেক ভালো।কারণ আমি আর খাদিজা একি ক্লাসে পড়ি।সেই সুবাদে আমাদের বাসায় খাদিজার আগমন অনেকে আগে থেকেই।তাই যে কোনো সময় খাদিজা আমাদের বাসায় আসতে পারে।তার জন্য কোনো প্রবলেম হয় না।
খাদিজা আমার রুমে আসতেই তার পানে আমার চোখ দুটি পড়ল।অবাক হওয়ারই কথা।মেয়েটি হুট করে বাসায় এসে পড়ল।হাতে একটি ছোট বাটি।আমি জানি এই বাটিতে কি আছে।কারণ আমি খুব করে পায়েস পছন্দ করি।তাই এই সময়ে আমার জন্য খাদিজা পায়েস নিয়ে এসেছে।মেয়েটি পারেও বটে। খাদিজা নিজ হাতে আমাকে খাইয়ে দিচ্ছে।আর আমি জ্বরের মুখে খুব করে খাচ্ছি।কাঁথা দিয়ে শরীল মুড়িয়ে চুপটি করে বসে আছি।আর খাদিজা আমাকে খাইয়ে দিচ্ছে।আমি মেয়েটির পানে তাকিয়ে আরাম করে খাচ্ছি আর পরম সুখে চোখ থেকে দু ফোটা পানি পড়ল।মেয়েটির চোখেও পানি ঝলমল করছে।পবিত্র ভালোবাসা গুলো এমনই হয়।
আমার আর খাদিজার ভালোবাসা পবিত্র ভালোবাসা।এই ভালোবাসায় কোনো ধরণের নোংরামি থাকবে না।থাকবে না কোনো রকমের খারাপ চিন্তা ভাবনা।আমরা চাই পবিত্র ভালোবাসায় বেঁচে থাকতে।থাকতে চাই একে অপরের পাশে পবিত্র ভালোবাসা নিয়ে।পুরো পৃথিবী কে দেখিয়ে দিতে চাই এখনো পবিত্র ভালোবাসা বেঁচে আছে এই ধরণীর মাঝে।এক আকাশ জয় করতে চাই আমার আর খাদিজার পবিত্র ভালোবাসা দিয়ে।এক পৃথিবী জয় করতে চাই পবিত্র ভালোবাসা দিয়ে। বেঁচে থাকুক পৃথিবীর সকল পবিত্র ভালোবাসা আর ভালোবাসার মানুষগুলো।