মাহাবুবকে আমি একদমই সহ্য করতে পারতাম না। দিনের পর দিন একটা অপ্রত্যাশিত মানুষের সাথে একই ঘরে থাকা,চোখের সামনে সহ্য করা রিতিমত বিরক্তিকর।কোনদিনই এই বিয়েটাতে আমি রাজি ছিলাম না।তার উপর চেহারার কি বাহার।ভুতের মত কালো আর সামনের দুইটা দাঁত।
ওদিকে আবার বন্ধু বান্ধবীরা তো রোজই এইটা সেটা বলে ক্ষ্যাপায়।আমার খুব কান্না পায়। সবমিলিয়ে ছেলেটার কথা শুনতেও অসহ্য লাগে আমার।বিয়ের প্রথম দিন থেকেই আমি বলে দিয়েছিলাম-আপনি প্রয়োজন ছাড়া আমার সাথে কথা বলতে আসবেন না।আর যদি স্বামীর অধিকার ফলাতে আসেন তবে ঘুসি দিয়ে নাক ফাটায়ে দেবো।এতগুলো কথা শোনার পরও একটা মানুষ কি করে নির্লজ্জের মত হাসতে পারে তা মাহাবুবকে না দেখলে বোঝাই যাবে না রান্নাবান্নায় আমি মাশআল্লাহ পুরাই ঢেড়স। অগত্যা রান্নার ভারও মাহাবুবের উপর পড়ল।
এমনকি অফিস থেকে ফিরেও আগে রান্না তারপর ফ্রেস হওয়া।আর আমি প্রতিদিন বাসায় বসে বসে হিন্দি সিরিয়ালের কিছু কুচক্রি মহিলাদের মত মাহাবুবকে টাইট দেওয়ার ফন্দি আটতাম।তাই কখনোবা ওর রান্নায় অনেকটা নুন ঢেলে দিতাম,কখনোবা শার্ট গুলোতে ইচ্ছা করে লিপস্টিক লাগিয়ে রাখতাম আবার কখনোবা ইচ্ছা করে ওর মাথায় পানি ঢেলে দিতাম যেন ও বিরক্ত হয়ে আমাকে ডিভোর্স দেয়।কিন্তু আমি যা ই সব করি না কেন মাহাবুব শুধুই হাসে যে হাসি দেখলেই আমার মেজাজ তেলে বেগুনে জ্বলে ওঠে।
এই বাসায় একটাই গাড়ি ছিল কাজেই সেইটা আমিই ব্যাবহার করতাম আর মাহাবুব বাসে করে অফিসে যেত।প্রতিদিন ডিনার শেষে টেবিলের উপর একটি পিজ্জা আর ফ্রিজে আইচক্রিমের বাটি পেতাম।যদিও মাহবুবকে অসহ্য লাগে কিন্তু এই দুইটা জিনিস কখনোই অসহ্য লাগে না।তাই নিজের আত্মসম্মান বজায় রাখতে অর্ধেক রাতে ঘুম থেকে উঠে চুপি চুপি সবটা খেয়ে নেই।
ওদিকে সকালের ব্রেকফাস্ট থেকে শুরু করে,দুপুরের লাঞ্চ এবং অফিস থেকে ফিরে ডিনার সবটার অ্যারেঞ্জমেন্ট করত মাহবুব নামের ঐ কালো ছেলেটি।সেদিন রেস্টুরেন্টে খেতে গেলাম।বরাবরই আমার চিংড়িতে এলার্জি।কিন্তু ইচ্ছা করেই চিংড়ি খেতে যাব অমনি মাহাবুব আমার হাতটা চেপে ধরল।হাতে ওষুধটা দিয়ে বলল-“আগে ওষুধটা খেয়ে নিন।আপনার তো চিংড়িতে এলার্জি”।আমি খুবই হতবাক হলাম।
আমিতো এটা কখনোই বলি নাই তবে ও এতটা জানলো কিভাবে!!তারপর একটানা এক সপ্তাহ আমার ভীষণ জ্বর।মাঝে মাঝে দেখি মাহাবুব আমার মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে আর খুবকাঁদছে।একদম বাচ্চাদের মত।আমি আরো অধাক হলাম।পৃথিবীতে এমন মানুষও হয় নাকি!!!আমার ভিতরের কি যেন একটা নাড়া দিয়ে উঠল। প্রতিদিন রাতে একাই খাই কিন্তু আজ মনটা কারো জন্য অপেক্ষা করতে চাইছে।এতটা রাত হয়ে গেল অথচ মাহাবুব এখনো বাসায় ফিরলো না।ভিতরটাই কেমন যেন অস্থির লাগতে শুরু করল। কই আগেতো এমনটা হয়নি?তবে কি আমি ওকে ভালোবাসতে শুরু করেছি? মোটেই না।
ওরকম কালো,উজভুক ছেলেকে ভালোবাসার প্রশ্নই আসে না। হঠাৎ আমার ফোনটা বেজে উঠল।আমি ছুটে গেলাম হসপিটালে।দেখলাম মাথায় বিশাল একটা ব্যান্ডেজ নিয়ে ঐ কালো বদমাশ ছেলেটা শুয়ে আছে।আমি কাছে যেতেই,পিজ্জাটা হাতে দিয়েই বলল-এইটা আনতে গিয়ে হঠাৎ এক্সিডেন্টটা হলো কিন্তু আমি আবারো অর্ডার করেছি মাত্র রেস্টুরেন্ট থেকে দিয়ে গেলো।এখনো বেশ গরম। রাগে পুরো মাথাটা হ্যাং হয়ে গেল। নার্সকে চিল্লায়ে বললাম-স্বামী স্ত্রীর মাঝে তৃতীয় কেউ থাকতে নেই জানেন না? আমার ফাড়া গলার আওয়াজে বেচারি নার্স খুব ভয় পেল।রুম থেকে বেরও হয়ে গেলো।
মাহাবুবের কাছে গিয়ে বললাম-সেদিন রাতে বাচ্চাদের মত কাঁদছিলেন কেন? বা,,,,,রে,,,!!!!!আমার পাজরের হাড় দিয়েই আল্লাহ তোমাকে বানিয়েছে।আর আমার পাজরে ব্যাথা লাগলে আমি কাঁদবো না?? এইবার আমি প্রচন্ড রেগে গিয়ে দুই হাত দিয়ে mওর শার্টের কলার টেনে ধরে,ওর নাকের সাথে নাক লাগিয়ে বললাম–“ভালোবাসি,ভালোবাসি,ভালোবাসি–হাদারাম”!!