অভিমানী ভালবাসা

অভিমানী ভালবাসা

আসবো? অফিসে কাজ করছিলাম তখনি কেও কথাটি বললো।আমি মুখ তুলে তাকাতেই বেশ খানিকটা অবাক হলাম।আসলে সুপ্তি যে আমাকে খুজতে খুজতে এখানে চলে আসবে সেটা আমি কল্পনাও করিনি। আমি চেয়ার থেকে উঠে বললাম,

-হুম আসো।

সুপ্তি এসে ঠিক আমার সামনের চেয়ারে বসলো। মুখটা কেমন যেন শুকনো শুকনো লাগছে।আসলে বেশ কিছুদিন পর দেখা তো তাই হয়তো এমন মনে হচ্ছে। এই আমি অফিস যাচ্ছি তুমি খেয়ে নিও। শুয়েই ছিলাম।আসলে ঘুমটা একবার ভেঙে গেলে আর আগের ঘুমটা আসে না।তাই চোখ বন্ধ করে শুয়েই ছিলাম।তখনি সুপ্তি কথাটি বললো। সুপ্তির কথায় আমি কিছু বললাম না।ওর দিকে অন্তত একবার তাকানো উচিত ছিল কিন্তু কোনমতেই চোখটা খুলতে ইচ্ছে করছিল না। আমি চোখ বন্ধ রেখেই বললাম,

-তুমি যাও।আমি খেয়ে নেবো।
-দড়জাটা লাগিয়ে দাও।
-তুমি যাও,লাগাচ্ছি।

সুপ্তি আর কিছু বললো না। তবে বুঝতে পারলাম ও বের হয়েছে। আমি উঠে দড়জাটা লাগিয়ে দিয়ে সোফায় গিয়ে বসলাম।নরম গদিটাও কেমন যেন শক্ত শক্ত লাগছে।যাই ফ্রেশ হয়ে আসি। সুপ্তির সাথে আমার বিয়ে হয়েছিল পারিবারিক ভাবেই।ভেবেছিলাম ওর সাথে মানিয়ে নিতে বেশ ঝামেলাই হবে।কিন্তু মেয়েটা অল্প কয়েকদিনেই আমাকে বেশ আপন করে নিয়েছিল। যেটা ভালভাবে বুঝেছিলাম গত রোজার ঈদে।ওর বাবার বাড়ি যাওয়া নিয়ে।ওর ছোট বোনের বিয়ে ছিল।প্লান ছিল বিয়ের দু দিন আগে যাওয়ার।কিন্তু একটা কাজে আমি গেলাম আটকে।সুপ্তিকে বলেছিলাম একাই চলে যেতে,আমি দু দিন পর আসছি।কিন্তু মেয়েটা সেদিন আমাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বলেছিল,

-তোমাকে ছাড়া এক মুহুর্ত আমি থাকতে পারবো না।কাজ শেষ হলে দুজন একসাথেই যাব। সেদিন আমি কিছু বলতে পারিনি।যে মেয়েটা আমার জন্যে নিজের বোনের বিয়ে ছেড়ে দিতে পারে সে আর যাই হোক ভালবাসতে জানে।অবশ্য ওকে নিয়ে বিয়েতে গিয়েছিলাও,সেটাও বিয়ের দিন সকালে।ফ্রেশ হয়ে এসে খাবার টেবিলে চেয়ার টেনে বসলাম।প্লেটে ভাত নিতেই মনে হলো আজকের ভাতটাও কেমন যেন শক্ত হয়ে আছে। আমি মাংসের একটা ছোট টুকটা নিয়ে খাওয়া শুরু করলাম।

বেশ চলছিল আমাদের।তবে বিপত্তিটা বাধলো আমার চাকরীটা চলে যাওয়ার পর।আসলে চাকরীতে সৎ থাকাটা বেশ কঠিন ব্যাপার। যার কারনে আমার ভালমানুষগিরি আর টেকাতে পারিনি। সুপ্তি যখন চাকরী চলে যাওয়ার কথাটা শুনেছিল তখন মেয়েটা আমার হাতটা ধরে মুচকি হেসে বলেছিল,মন খারাপ করে না,আমি তো আছি। সুপ্তির সাপোর্টে একটু সাহস পেয়েছিলাম।এরপর বেশ কয়েকজায়গায় এপ্লাই করেছি।কিন্তু কোথাও কিছু হচ্ছিলো না।তখনি সুপ্তি সিদ্ধান্ত নিয়েছিল ও জব করবে।ওর বাবার রেফারেন্সে জবটা পেয়েও গেলো। অবশ্য জবটা আমারই করার কথা ছিল।কিন্তু আমি চাই না কারও রেফারেন্সে বড় হতে।নিজে থেকেই অনেক কিছু করা যায়,পাওয়া যায়।আমি সেটারই অপেক্ষা করছিলাম।

খাওয়া শেষে আমি আবার সোফায় গিয়ে বসলাম।কেমন যেন আজ এই সোফাটাকেই বেশ আপন মনে হচ্ছে।বিয়ের পর সুপ্তির পছন্দেই এটা কিনেছিলাম। সুপ্তির জবটা আমাকে যে এভাবে ছোট করে দেবে সেটা বুঝতে পারিনি।কিছুদিন যেতেই ঘরজামাই উপাধিটা পেয়ে গিয়েছিলাম।আসলে এটাকে কি ঘরজামাই বলে।আমি তো আমার ফ্লাটেই থাকছি।তবে সেদিন সুপ্তির মা যখন বললো, বউয়ের টাকায় আর কতদিন সেদিন বেশ কষ্টই হয়েছিল।ঠিকই তো,সারাদিন ঘরে বসে আর কত।নিজের তো কিছু করতে হবে।কিন্তু আমিও যে চেষ্টা করছি এইটা বোঝাই কিভাবে।

এতকিছুর পরও সুপ্তি রাতের বেলা আমার বুকে মুখ লুকিয়ে আমাকে শান্তনা দিত।কিন্তু আমি তো বুঝতাম সারাদিন অফিস করে রাতে বাসায় ফিরে আবার বাসা গুছানো কতটা কষ্টের। সেদিন তো সুপ্তির কলিগ আমার মুখের উপর ই বলে দিল,কি ভাই বউয়ের কাছ থেকে টাকা নিতে এসেছেন।বউয়ের কামাই খেতে বেশ মজা, না। আমি সেদিন সুপ্তির সাথে দেখা না করেই চলে এসেছিলাম।ও শুনলে অবশ্য লোকটার খবর করেই দিত।কিন্তু লোকটা তো আর মিথ্যে বলেনি।শুধু উনি কেন,সবাই বলবে এ কথা।বউয়ের কামাই,শুনতেই কেমন যেন গা গুলিয়ে ওঠে।

আমি সোফা থেকে উঠে রুমে আসলাম।ব্যাগ গুছানোর সময় সুপ্তির একটা ছবিও নিলাম।চোখ থেকে অজান্তেই পানি গড়িয়ে হাতে রাখা সুপ্তির হাসিমাখা ছবির উপর পড়লো। সেদিন চলে এসেছিলাম সুপ্তিকে রেখে।আসলে আশেপাশের লোকজনের কথায় আর নিজেকে ধরে রাখতে পারিনি।সুপ্তির ভালবাসার কাছে আমি সেদিন হেরে গিয়েছিলাম।ছোট্ট একটা চিরকুটে লিখে এসেছিলাম, জবটা পেলেই আবার আসবো তোমার ভালবাসার টানে।

কিন্তু আজ এখানে সুপ্তিকে দেখে আমি যতটা না অবাক হয়েছি তারথেকে বেশী খুশি হয়েছি।সেদিন চলে আসার কিছুদিন পরেই আমি জবটা পেয়ে যাই।মোটা অংকের সেলারীর সাথে অফিস থেকে গাড়িও দেয়া হয়।ভেবেছিলাম প্রথম বেতনের টাকা নিয়ে সুপ্তির জন্যে কালো একটা শাড়ি কিনবো।আর সুপ্তির হাতে টাকাগুলা দিয়ে বলবো,
সরি, এতদিন কষ্ট দেওয়ার জন্যে।এবার না হয় চাকরীটা ছেড়ে দাও। তোমার বরের চাকরী হয়ে গেছে। কিন্তু তার আগেই সুপ্তি ঠিক আমাকে খুজে বের করেছে।আমি জানি ওর মনের অবস্থা।যে কোন সময় কেঁদে দেবে আমি সুপ্তির পাশে যেতেই মেয়েটা চেয়ার থেকে উঠে আমাকে জড়িয়ে ধরে কান্না করে দিল।হুম এটাই ভেবেছিলাম।আমি সুপ্তির মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বললাম,

-কেমন আছো?
-এখন ভাল আছি।
-ভেবেছিলাম সারপ্রাইজ দেবো।
-এতদিন কষ্টে রেখে এরকম সারপ্রাইজ লাগবে না আমার।
-জবটা আমি পেয়ে গেছি।
-আমার কিছুই লাগবে না।শুধু তুমি পাশে থাকলেই চলবে।আমি কি তোমাকে কিছু বলেছিলাম যে এভাবে রেখে চলে এলে। সুপ্তির কথায় আমি আর কিছু বলতে পারলাম না। আমি সুপ্তির কপালে একটা চুমু একে দিয়ে ওর হাতে গাড়ির চাবিটা দিয়ে বললাম,
-আমাদের গাড়ি।চলো আজ দুজন সারাদিন ঘুরবো।
-উঁহু।
-কেন?
-গাড়িতে না।তোমার হাত ধরে কাধে মাথা রেখে আজ সারাশহর রিক্সায় ঘুরবো।

হুম,রিক্সায় মন্দ হয় না।সুপ্তির সাথে শেষ কবে রিক্সায় উঠেছি মনে নেই।আজ রিক্সা ভ্রমনে যাওয়াই যাই।
বউকে নিয়ে রিক্সা ভ্রমন।ব্যাপারটা মন্দ হয় না।

গল্পের বিষয়:
ভালবাসা
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত