মোহ অথবা কাছে আসা

মোহ অথবা কাছে আসা

একদম ধরবে না আমাকে।জানো আমি কে? তোমাদের হাড় গোড় সব আমি এক করে ফেলবো। কেন ধরে এনেছো আমায়?

— প্লিজ আপু, আপনি কি একটু চুপ থাকবেন নাকি!!
— এই বেয়াদপ ছেলে, তুমি আমাকে ধমক দিয়ে কথা বলো? হাতটা খুলে দে চাপকে তোর দাত ফেলে দিব।ইতর জানি কোথাকার।
—- (পাশের ছেলেটার দিকে তাকিয়ে এই ছেলেটা বলছে) নাহ আর সহ্য করা যাচ্ছে না। এবার কিছু একটা করতে হয়।

কথাটা শুনেই লোপার ভ্রু কুঁচকে গেলো।ভয়ে গা কেপে উঠলো।মনে মনে সাহস যোগানোর চেস্টা করছে।হারামী গুলো না জানি কি করবে।লোপা দুই ঘন্টা ধরে একটা বাড়ীতে বন্দী।রুমের ভেতর তিনটা ছেলে।কাউকে চিনে না।বাসা থেকে বের হয়ে কাছে ই শপিং সেন্টারে যাচ্ছিলো।হঠাত করে একটা মাইক্রো বাস সামনে এসে দাড়ালো।

কয়েকটা ছেলে সামনে এসে বল্লো, আপু কোন চেচামেচি করবেন না।তাহলে সোজা বলে ই ইশাড়া করে বল্লো গাড়ীতে উঠে বসেন।কিছু বোঝার আগেই লোপা কে এক ছোবলে গাড়িতে তুলে নিল।জ্ঞান ফেরার পরে দেখে ও একটা রুমে বন্দী। এবার একটা ছেলে কাছে এগিয়ে আসতেই লোপা চেঁচিয়ে বলে উঠলো প্লিজ তোমরা আমার ছোট ভাই।এমন কিছু করোনা যে আমাকে সুইসাইড করতে হয়। ছেলেটা একটা কাপড় মুখে গুজে দিয়ে অন্য একটা কাপড় দিয়ে মুখটা বাঁধতে যাচ্ছে।এমন সময় অন্য একটি ছেলে রুমে ঢুকলো।পেছন থেকে বলে উঠলো দাড়া, বাধিস না মুখ।খুলে দে। এবার ভীতু চোখে লোপা বলে উঠলো

—–কি চাও তোমরা? কেন আমাকে ধরে এনেছো? হ্যাংলা পাতলা একটা ছেলে।বেশ লম্বা, পরনে জিন্স আর টিশার্ট,বলে উঠলো
— বলব আপনাকে।এমনকি আপনাকে ছেড়ে ও দিব।একটু ধর্য্য ধরুন। অন্য ছেলে গুলোর দিকে তাকিয়ে বলে উঠলো, এই আপু কে কিছু খেতে দিয়েছিস? ওরা মাথা নাড়িয়ে না জানালো। এবার ছেলেটা বলে উঠলো

—- আপু চা খাবেন? লোপা চোখ কড়মড় করে তাকিয়ে বল্লো না। রিলাক্স আপু।আপনার কোন ক্ষতি আমরা করব না।  বলে ই আদেশ দিল লোপার হাতের বাঁধন খুলে দিতে। এবার কিছু সময় পরে চা বিস্কিট দিল সামনে। হ্যাংলা ছেলেটা হাতে চায়ের মগ নিয়ে সামনে আসলো।তারপর বল্লো আপু চা খান। লোপা ভয়ে ভয়ে চায়ের কাপটা তুলে নিল। এবার ছেলেটা বলছে, আপু আপনি তো ইংলিশের ছাত্রী ছিলেন।মানে ইংলিশ সাহিত্যের।

—- চোখ ছানা বড় করে তাকিয়ে হ্যা কেন? আর তুমি জানো কেমন করে?
—- আপু জানতে হয়।যাকে নিয়ে কাজ করব তার সম্পর্কে একটু স্টাডি তো করতে হয় নাকি। এনিওয়ে আবিদের মত ছাগল কে বিয়ে করলেন কেন? প্রশ্নটা শুনে লোপা ক্ষেপে গেলো।
— মুখ সামলে কথা বলো।আবিদের নাম ধরে বলার মত যোগ্যতা তোমার নেই।
—- হ্যা তা বলতে পারেন,তবে উনি তো একটা আবাল।হ্যা বাপের টাকা ছিল তাই দিয়ে ফুটানকি করতেছে।নিজের যোগ্যতায় হলে কিছুই করতে পারত না।শালা একটা।।

—– মুখ সামলে কথা বলো।রাবিশ।
—– হিহি কত গুলো রোলিং মিলের মালিক। কত গুলো বাড়ী, হিহি প্রতি বছর প্রিয় বউকে নিয়ে বিভিন্ন দেশে ঘুড়ে বেড়ায়।
—- তোমার সমস্যা কি?
—- তেমন কিছু না আপু।যাস্ট কিছু টাকা চেয়েছি ওটা পেলেই আপনাকে স্ব সন্মানে বাসায় রেখে আসবো।
—- কত?
—- এই লাখ বিষে দিলে ই হবে।
—– ( খুব অহংকার নিয়ে বলে উঠলো) ছিঃ মাত্র বিষ লাখ।

আমার দাম এত কম ধরলে কেন? আবিদ আমার জন্য আরো বেশি খরচ করতে পারবে।জানো আমার নামে কত প্রপার্টি আছে?

—- হো হো হো প্রপার্টি আছে কিন্তু ব্যাংক ব্যালেন্স নাই।শালা ভীষন চালাক।
—- আচ্ছা একটা ফোন দাও আমাকে, আমি বলে দিচ্ছি।তোমরা টাকা পেয়ে যাবে।
—- লাগবে না আপু।আমি কথা বলেছি ওনার সাথে।
—- কি বলেছে?
—- বলেছে জানাবে।
—– ফোন দাও বলছি।এভাবে আমি বন্দী থাকতে পারছি না।
— ওকে ওয়েট, বলে ই একটা ওফ করা ফোন অন করে রিং দিয়ে বল্লো
— হ্যালো,কথা বলুন।
—হ্যালো আবিদ, ( বলেই কান্না শুরু করলো।) ওই প্রান্ত থেকে আবিদ বলে উঠলো
— লোপা কই তুমি? কেমন আছো।ওরা কোন মিস বিহেভ করেনি তো তোমার সাথে?
—- কেঁদে কেঁদে লোপা উত্তর দিচ্ছে প্লিজ আমাকে নিয়ে যাও।
—- এই কাদছো কেন? কি হয়েছে?
—- এবার কান্না থামিয়ে লোপা বলে উঠলো, কি হয়েছে মানে? কত ঘন্টা ধরে আমি বন্দী আর তুমি বলছো কি হয়েছে?টাকা পাঠাচ্ছো তুমি?
—- জান শোন, টাকা দিব না।আমি পুলিশে খবর দিয়েছি।তুমি চিন্তা করো না।
—- তোমার কি মাথা খারাপ হয়ে গেছে নাকি?? ওরা যদি রাগের বসে আমাকে মেরে ফেলে?
—-কিচ্ছু করবে না।তুমি সাবধানে থেকো। এবার কথা শেষ না হতেই কলটা কেটে দিল ছেলেটা।ফোনটা কেড়ে নিয়ে ই বল্লো।

— আপু এবার আমাদের কি করা উচিত বলুন।আবিদ, উনি পুলিশে ইনফর্ম করেছেন।আপনাকে এবার কি করব বলুন।একটু চায়ের সাথে বিষ মিশিয়ে দিব নাকি কস্ট করে কাজটা আমাদের করতে হবে?
—-আতকে উঠলো লোপা।কাঁদতে শুরু করলো। ২য় দিন বেলা ১১ টা।হ্যাংলা ছেলেটা লোপার সামনে এসে বল্লো,আপু ভালো ঘুম হয়েছে?
—লোপা কোন উত্তর দিল না। ওকে, আবিদ আজ ও টাকা দিবে না,বলে আমার মনে হচ্ছে।কি করা যায় বলুন। এবার ও লোপা চুপ।ছেলেটা কিছু সময় দাঁড়িয়ে থেকে রুম দিয়ে চলে যেতে থাকলো।লোপা পেছন দিক থেকে ডেকে বল্লো

— শোন,আমার অনেক গহনা আছে।আমি বলে দিচ্ছি চাবি কোথায়,কি করে আনতে হবে।তোমরা যা চেয়েছো ওখানে তার চেয়ে অনেক বেসি আছে। ছেলেটা মুখ ঘুড়িয়ে তাকিয়ে বল্লো, সরি আপু, আমি চোর না। পুরো দিনটা লোপার আতঙ্ক নিয়ে কেটে গেলো। রুমের দেয়ালে তাকিয়ে থাকতে থাকতে চোখ ঝাপসা হয়ে এলো।আবিদ মাত্র বিষ লাখ টাকা দিচ্ছে না? যার এত টাকা,আচ্ছা তাহলে কি আমার কোন কঠিন অসুখে ও আমার ঠিক মত চিকিৎসা করাবে না টাকা খরচের ভয়ে? সেই ভার্সিটি লাইফ থেকে চিনি।আমাকে পাবার জন্য এমন কিছু নাই যে সে করেনি।

নিজের ক্লাশ মিস দিয়ে আমার ডিপার্টমেন্ট এ এসে বসে থাকতো।প্রথম প্রপোজের পরে আমি রিফিউজ করার পরে একসাথে অনেক গুলো ঘুমের ওষুধ খেয়ে হাসপাতালে ছিল।যে কিনা খুব সকালে আমার বাসার রাস্তায় দাঁড়িয়ে থাকতো ঘুম ভাংগার পরে আমাকে দেখবে বলে। এমন কোন দিন যায়নি যে আবিদ বিয়ের পর আমাকে ছেড়ে একা রয়েছে।আমার সব চাওয়া পুরন করেছে।না চাইতেই সব দিয়েছে,সে কি না কিছু টাকা সেক্রিফাইস করতে পারছে না। সব কথা ভাবতে ভাবতে হু হু করে কেদে উঠলো। আজ ৩ দিন হলো।আবিদ আজো টাকা পাঠলো না। হ্যাংলা ছেলেটি ফোন টা বাড়িয়ে দিয়ে বল্লো নিন কথা বলুন।

— হ্যালো আবিদ।
—- লোপা,তুমি কেমন আছো?মিস ইউ মাই লাভ।
— চুপ করো।টাকা দিচ্ছো না কেন?(কর্কশ কন্ঠ)
— একটু চুপ থেকে, লোপা আমার কিন্তু সন্দেহো হচ্ছে, তুমি কিডন্যাপারদের সাথে জড়িত নয়তো?
— হোয়াট?? আর ইউ সিক?
—- না আমি ঠিক আছি।কিন্তু তুমি কেন ওদের হয়ে বার বার টাকা চাচ্ছো?তোমার টাকা দরকার ছিলো আমাকে বলতে।এমন করলে কেন?

—– তুমি জানো তুমি কি মীন করছো?
—- হ্যা জানি।তোমারারা মেয়েরা না ।।
—-তোমার টাকা না দিতে, আমার গয়না বিক্রি করে তো আমাকে নিয়ে যেতে পারতে। শোন মুখ সামলে কথা বলবে।
—- আরে নাটক করো নাতো।বয়ফ্রেন্ড এর সাথে পালিয়ে গিয়ে আবার আমার কাছে সাধু সাজা হচ্ছে।
—- কি? তুমি এত্ত ছোট লোক আমি ভাবতে ও পারিনি।এত নীচ।থু… থু… থু
— হ্যা হ্যা বুঝেছি, আর ফোন দিও না আমাকে।যাও বয়ফ্রেন্ডকে নিয়ে আমোদ ফুর্তি করো গিয়ে। ফোনটা কেটে দিতেই হা হয়ে নির্বাক হয়ে হ্যাংলা ছেলেটার দিকে লোপা তাকিয়ে আছে। যেন বাকরুদ্ধ, মাথাটা ঘুড়াচ্ছে,কি করবে ঠিক বুঝতে পারছিল না।এমন সময় জ্ঞান হারিয়ে নীচে পড়ে গেলো লোপা। হ্যাংলা ছেলেটা লোপার কাছে এসে বল্লো,

— আপু কি করবেন?
— জানি না।
—- কই যাবেন?
—- (চোখ পাকিয়ে) জাহান্নামে যাবো। কাঁদতে কাঁদতে বলতে থাকলো, কেন আমার সংসারটা ভাংগলে।কেন??
— সরি আপু আমাদের ইন্টেনশনটা এমন ছিলো না।ভেবেছিলাম আবিদ সাহেব আপনাকে ভালবাসে তাই এটা পুজী করতে চেয়েছি। ভেবেছিলাম টাকার এমাউন্ট কম মেবি উনি আপনার জন্য পাগল হয়ে দিয়ে দিবে।একটু চুপ করে থেকে ছেলেটা বল্লো ,একটা কথা বলি আপু ?

—-কি ?
—আসলে আবিদ আপনাকে ভালবাসেন নাই ওটা মোহ ছিল।নইলে এমন করে অবিস্বাস করতে পারতেন না।
—-শোন তোমার কাছে আমি কিছু জানতে চাইনি । বলেই লোপা বের হবার জন্য এগুতে লাগলো। এমন সময়হ্যাংলা পাতলা ছেলেটা ডেকে বল্লো আপু ।
—-একটু তাকিয়ে ? কি!! কাছে এসে ছেলেটা একটা ফোন এগিয়ে দিলো বল্লো
–আপু ফোনটা রাখেন সাথে।আপনার কোন কাজে আসতে পারে।আমার নাম টা সেভ করা আছে
—আমার নাম
—মারুফ।

কোন প্রয়োজন হলে বলবেন ,আমি ও আমারা আপনার সাথে আছি।আর একটা কথা একটা প্যাকেট বের করলোপকেট থেকে,এগিয়ে দিয়ে বল্লো ,-এখানে কিছু টাকা আছে রেখে দিন পথে লাগতে পারে। লোপা তখন মুখটা তুলে ছেলেটার দিকেতাকিয়ে একটু হাসি দিলো ,আর বল্লো লাগবে না রাখো।

এরপর লোপা রাস্তায় নেমে একটা সি এন জি নিলো ।কেন জানি কাঁদতে ও ইচ্ছে করছে না। কই যাবে ভাবতে ভাবতে হতাস হয়ে যাচ্ছিল। সি এন জি টা বাসার সামনে দাঁড়ালো। দাড়োয়ান ছুটে এসে বল্লো ম্যাডাম আপনি?? আপনাকে ছেড়ে দিছে? কোন কথা বল্লো না লোপা ।নিজের রুমে গিয়ে ঢূকলো,এদিক ওদিক তাকিয়ে শেষ দেখা দেখে নিলো নিজের ঘর টা।

নিজের কিছু দরকারি জিনিস একটা ল্যাগেসে গুছিয়ে নিল।আবিদ তখন বাসায় নেই।এই সময়ে সে বাইরে থাকে ,অফিসে ,মিটিং আ অথবা ফ্যাক্ট্রী তে। যাবার আগে ছোট একটা চিরকুট লিখে দেয়ালের ছবির সাথে লাগিয়ে রেখে গেলো।’ আবিদ , রাস্তার নেড়ি কুকুরের সাথে বসবাস করা যায় কিন্তু তোমার সাথে বসবাস করা যায় না। তারপর লোপা মিলিয়ে গেলো অথবা নিজেকে নিয়ে সবার কাছ থেকে হারিয়ে গেলো অভিমানে,লজ্জায় ।কেউ কখনো তাকে আর খুঁজে পায়নি।

গল্পের বিষয়:
ভালবাসা
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত