ভালবাসার পিওরিটি

ভালবাসার পিওরিটি

—রাশেদ.. (আব্বু)
—হ্যা, আব্বু… (আমি)
—কাল থেকে অফিসে যোগ দিবে…..
—আর কয়েকটা দিন যাক, সামনে মাসে থেকে যায়????
—না, কাল থেকে মানে কাল থেকেই,

লেখাপড়া শেষ করে ছয় মাস সময় চেয়েছিলে আমি দিয়েছি, এর মাঝে যা ইচ্ছা করেছ আমি নিষেধ করিনি, গত কাল তোমার সময় শেষ হয়েছে, তাই কাল থেকেই অফিসে জয়েন করবে…..
—আচ্ছা ঠিক আছে, তবে আমি প্রথমে ছোট্ট একটা পৌষ্টে জয়েন করব সাধারণ কর্মচারির মত, তোমার পরিচয় ব্যাতিত আমার নিজের মত করে কিছু করতে চাই আপাতত…..

—কেন???
—আমি চাই ছোট পৌষ্টে থেকে সবার সাথে মিশে সবাই কেমন সেটা বুজতে চাই আর বিয়ের পর তোমাকে ছুটি দিয়ে সব দায়িক্ত বুঝে নিব
—ঠিক আছে তোমার যা ইচ্ছা তবে বিয়ের এত্ত চিন্তা কেন শুনি????(আব্বু)
—এই রাশেদ কেও পছন্দ আছে নাকি রে??? একদিন নিয়ে আয় বাড়িতে দেখি মেয়েটাকে….(আম্মু)
—কি যে বল না, তোমরা। আমার কেও পছন্দ থাকলে তোমরা জানতে না????
—হুম সেটাই, যাই হোক পছন্দের কেও থাকলে জানাস…..
—অবশ্যই জানাব…. এখন আসি।

বলে নাশতার টেবিল থেকে উঠে পড়লাম, আসেন পরিচয় দিয়েনেই…. আমি রাশেদুল ইসলাম শিমুল, বাবা মা কে নিয়ে আমাদের ছোট্ট পরিবার বাবা ব্যাবসা করেন, ইনপোর্ট এক্সপোর্টের মা গৃহীনি আমি ছাত্র ছিলাম, মাস ছয়েক আগে মাস্টার্স শেষ করে গত ছয় মাস বাপের টাকাই দেশের বিভিন্ন এলাকা ঘুরে বেড়িয়েছি সময়টা যেহেতু বাবার থেকে নেয়া ছিল তাই সময় শেষ হতেই তিনি অফিসে যোগ দিতে বললেন, আব্বু যা বলবেন তাই করতে হবে, যদিও খুব ফ্রিলি চলি আমরা….

মুয়াজ্জিনের মধুর সুরের আযান শুনে ঘুমটা ভেঙে গেলো আজ থেকে অফিসে জয়েন করার কথা যাই অযু করে নামাজটা পড়ে আসি নামাজ শেষে করে একটু বাইরে ঘুরলাম, বন্ধুদের সাথে আড্ডা দিয়ে বাড়ি ফিরলাম এসে দেখি আব্বু আম্মু নাশতার টেবিলে অপেক্ষা করছে তাদের সাথে নাশতা করে নিলাম রুমে এসে গোসল দিয়ে রেডি হলাম অফিসের. জন্য আব্বুর সাথে না গিয়ে আমার বাইক নিয়ে অফিসে রওনা হলাম…. ইন্টার পাশ করার পর আর আসা হয়নি এই অফিসে, পড়ালেখার জন্য অন্য যাইগাতে থাকতে হয়েছে সরাসরি আব্বুর কেবিনে গেলাম, তিনি ম্যানেজারকে ডেকে আমাকে কাজ বুঝিয়ে দিতে বললেন ম্যানেজার প্রথমে সবার সাথে পরিচয় করিয়ে দিলেন….

তিনি আমার ডেস্ক দেখিয়ে দিয়ে অফিসের কাজ কর্ম বুঝিয়ে দিতে লাগলেন, নিয়ম কানুন সম্পর্কে সাবধান করলেন ডেস্কে বসে একটা ফাইল খুললাম, অর্ধেকটা কাজ করা, বাকীটা শেষ করা যায় কি না দেখি দুপুরে লাঞ্চ করে এসে ফাইলটার পেছনে আবার লাগলাম, লাঞ্চ টাইমে খেতে গিয়ে দেখি অনেকেই ক্যানটিনের খাবার খাচ্ছে, আম্মু বাড়ি থেকে খাবার দিয়েছে আমি সেটাই খেলাম বিকালে অফিস ছুটি করে বাড়ি ফিরলাম ফ্রেশ হয়ে নাশতা করে বাইরে বেরোলাম, মাগরিবের নামাজ পড়ে বন্ধুদের সাথে আড্ডা দিলাম, সবাই প্রথম দিন অফিসের কথা জিগেশ করল ওদের সাথে আড্ডা দিতে দিতে এশার সময় হয়ে গেলো সবাই এশার নামাজ পড়ে যে যার বাড়ি ফিরে গেলাম বাড়ি এসে দেখি আব্বু আম্মু আমার জন্য অপেক্ষা করছে, আমায় আসতে দেখে বলল খেতে আয়। সবাই মিলে খেতে বসলাম, খাবার দিয়ে মা বললেন

—কিরে প্রথম দিন অফিস কেমন গেলো বললি না তো???(মা)
—খুব ভাল, তবে ম্যানেজার বেটাকে সুবিধার ঠেকল না….(আমি)
—হ্যা উনি একদিন গিয়েই সবাইকে চিনে ফেললেন….(আব্বু)
—বাদ দাও তো, খেয়ে নাও…(আম্মু)

খেয়ে ঘরে চলে এলাম, এর পর থেকে অফিস বন্ধু বাড়ি আব্বু আম্মু সব মিলিয়ে খুব ভালই চলছিল অফিসের সবার সাথেই বেশ ভাল সম্পর্ক হয়ে গেছে, লিপি আর নিরা নামের দুটো মেয়ে কলিগ আছে, দুজনই খুব মিসুখ, নিরা খুবই চঞ্চল টাইপের মেয়ে, প্রান উচ্ছল, যা মনে বলে করে ফেলে কিছু না ভেবেই অন্য দিকে লিপি একটু শান্ত, কিছু করার আগে গভির ভাবে ভাববে সে বিষয়ে, তারপর যা করার করবে দেখতেও কেও কারো চেয়ে কম না, লিপি সব সময় মার্জিত পোশাক আর মার্জিত আচরনে বিশ্বাস করে, আর নিরা পুরাই আধুনিক টাইপের মেয়ে, ফ্যাশান সচেতন বলা চলে…..

দুজনই পছন্দ করার মত, জীবন সাথী করার জন্য আদর্শ…. আর কিছু দিন দেখি তারপর ডিসিসন নিব, আর তাঁরা বিবাহিত কি না সেটাও তো জানা হয়নি এক কাজ করলেই তো জানতে পারি, অফিসের ফাইল দেখলেই পেয়ে যাব থাক ওদের থেকেই জানব কিছুদিন যেতেই ম্যানেজার যে একটা আস্ত খ্যাচ্ছত তা বুঝতে পারলাম, বেটা পারলে সবার থেকে দ্বিগুন কাজ করাই আমায় দিয়ে ভাগ্যিস লিপি ছিল মেয়েটা আমাকে অনেক সাহায্য করে কাজে, তাই বেঁচে যায় এই মেয়েটা কেন যেন আমার খুব কেয়ার করে, সব সময় খোজ নেই, ছুটির দিনে কি করি না করি তাঁর সব কিছু সে জানত, আমার পছন্দ অপছন্দ গুলোও সে জেনে গেছে, মাঝে মাঝে আমার পছন্দের খাবার রান্না করে নিয়ে আসত,

তিন জনে মিলে অনেক মজা করে খেতাম হয়ত লিপি আমায় পছন্দ করে বলেই এসব করত, কখনো প্রকাশ করত না, নিজের মাঝেই রাখত, আর আপন মনে সব করত কিন্তু আমি যে নিরাকে ভালবাসি এইটা লিপি জানে, হয়ত এই জন্যই সে কিছু বলে না এখন আমরা তিন জনে একে অপরের খোজ রাখি, লাঞ্চ টাইমে এক সাথে খাই, এক সাথে অফিস থেকে বেরোই, এর মাঝে নিরার কাজ কর্ম গুলো আমাকে ওর প্রতি আক্রশিত করছে দিন দিন ওর প্রতি দুর্বল হয়ে পরছি আমি ওকি এসব বুঝছে, দেখে তো মনে হয় না একদইন লাঞ্চ টাইমে ভবিষ্যৎ প্ল্যান সম্পর্কে জিগেশ করলাম, দুজনই বলল, আমিও বললাম, তখনই জানলাম দুজনই অবিবাহিত, আর কারো কোন বয়ফ্রেন্ড নেই সো আমার রাস্তা পরিস্কার কিন্তু ইদানিং সময় দেখছি নিরা আমাদের থেকে সরে যাচ্ছে, কারনে অকারনে ম্যানেজার বেটার কেবিনে ডাক পরে, এক সাথে বাইরে যাই, লাঞ্চ তো বেশির ভাগ সময় ম্যানেজার বেটার সাথেই করে….

তাই একদিন ওকে জিগেশ করলাম ম্যানেজারের সাথে ওর কিছু চলছে কি না ও সরাসরি না করে দিল, তবুও মনে শান্তি পেলাম না তাই পরের দিন ওকে প্রপোজ করে বসলাম কিন্তু সে ফিরিয়ে দিল, সে এসবে নাকি বিশ্বাস করে না তাই আমিও আর কিছু বললাম না, এক বারে আব্বু আম্মুকে পাঠাব ওর বাসায় সপ্তা খানিক পর লক্ষ করলাম ওদের মেলা মেশাটা মাত্রা ছাড়িয়েছে, আরো সপ্তা খানিক পর আমাদের সবাইকে অবাক করে দিয়ে ম্যানেজার এর সাথে ওর বিয়ের দাওয়াত দিয়ে গেলো নিজেই না বলে ছিল এসবে বিশ্বাস করে না, তবে ওকে জিগেশ করতেই বলল বাবা মা রাজি তাই ও আর আপত্তি করে নি কিন্তু আসল কার যে সেটা না তা বুঝতে কষ্ট হবার নয়…. একটা অফিসের ম্যানেজার বলে কথা এভাবে মিথ্যা বলাটা মেনে নিতে বেশ কষ্টই হলো যথা রীতি ওদের বিয়ে হয়ো গেলো, আমি যাইনি, পরে শুনলাম লিপিও যাই নি…. আমি না হয় যাই নি, কিন্তু ও কেন গেল না?????

আব্বু আম্মু গেছিল, বিয়েতে রাতে ফিরে আম্মু অনেক গল্প করল বিয়ের আমার একটুও সহ্য হচ্ছিল না, অনেকটা যে ভালবাসতাম ওর আচার ব্যাবহার, চঞ্চলতা আমায় সব সময় মুগ্ধ করত, কি আর করা “কপালে নেই ঘি, ঠনঠনালে হবে কি” যথারীতি আমি অফিস করছি, লিপিও আপন মনে সব করে, তবে এই কয়েকদিন ও কেমন যেন হয়ে আছে আগের মত আমার সামনে আসে না, কথাও কম বলছে, মনটা খারাপ দেখলেই বোঝা যায় সপ্তাহের মাঝামাঝি নিরার ছুটি শেষ হওয়ার পর অফিসে এলো আজ শাড়ী পড়ে এসেছে, দেখতে অনেক সুন্দর লাগছে, তবুও আজ ওর দিকে তাকাতে ইচ্ছে করছে না সে অধিকার যে নেই  আগের মতই সব চলছে, সুধু নিরা নেই আমাদের মাঝে, এখন স্বামী আছে, সব কিছু তার সাথেই, লিপি কয়েক দিন মন ভার করে থাকলেও এর পর ঠিক হয়ে যায় একদিন অফিসে লাঞ্চ টাইমে ক্যান্টিনে ঢুকতে যাব তখন শুনি…

—নিরা কেমন চলছে তোর বিবাহিত জীবন??? (লিপি)
—এই তো খুব ভাল চলছে,…(নিরা) ওদের কথা শুনে ভেতরে না গিয়ে বাইরে দাঁড়িয়ে শুনতে লাগলাম কি বলে ওরা…

—তুইতো আগে থেকেই জানতি রাশেদ তোকে পছন্দ করে,…
—বাদ দে ওর কথা, সাহেদ (ম্যানেজার) কোথায় আর রাশেদ কোথায়…..
—তবুও ওকে বলতি সবটা….
—বাদ দে তো, ওর মত নিম্ন আয়ের একজন আমার চাহিদা পুরন করত কি করে??? তাই যখন সাহেদ অফার দিল আর না করি নি। বাবা মা অবশ্যই চান নি আমি জোর করাতে রাজি হোন…..

—তবে যে সেদিন বললি তোদের মাঝে কোন সম্পর্ক নেই…..
—এমনি বলেছি, না বললে রাশেদ যদি কিছু করে বসত….
—তার মানে তোরা প্রেম করেই বিয়ে করলি, তাই তো????
—হুম,

আরে প্রেম করে বিয়ের মজাই আলাদা বলে হাসতে লাগল ভাগ্যিস আজ ফাইটা শেষ করতে গিয়ে আসতে দেরি হয়েছিল, না হলে সত্যি টা জানা হত না কখনই লাঞ্চের জন্য যখন লিপি ডাকতে গেলো তখন একটা ফাইল শেষ করে আবার দেখছিলাম, তাই বললাম তোমরা যাও আমি ১০ মিনিট পর আসছি আর এসেই এই সত্যির মুখমুখি হতে হল…..

—কি হলো তোমরা কি নিয়ে এত হাসাহাসি করছ??? হুট করেই ঢুকে পরলাম ক্যান্টিনে, যাতে না বুঝে আমি সব শুনেছি….
—কই এমনিতেই….(নিরা) বলে মুকটা কেমন শুকিয়ে গেলো….
—দাও খুব খুদা পাইছে….(আমি)

সত্যি টা জানার পর মানতে খুব কষ্ট হচ্ছিল, সত্যি টা গোপন না করলেও পারত বিয়ের পর আমাদের সাথে নিরা তেমন মিসতই না, আর এইদিনের পর থেকে একেবারেই বন্ধ হয়ে যায় অন্য দিকে আমার প্রতি লিপি কেমন ঝুকতে থাকে, আগের চেয়ে বেশি কেয়ার করে, খোজ খবর নেই ছুটির দিনে ঘুরতে যেতে বাইনা করে, একটু সময় কাটাতে আমিও যাই, বাকিটা সময় বন্ধুদের সাথে থাকার চেষ্টা করি যাতে নিরাকে মন না পরে…..

একটা সময় না পেরে বন্ধুদের সবটা খুলে বললাম, সালারা যা বলল তা হলো তুইও লিপিকে বিয়ে করে নে, আর আঙ্কেলকে ছুটি দিয়ে অফিসের দায়িক্ত বুঝে নে। তখন দেখবি মজা কিন্তু আমি তো লিপিকে ভালবাসি না, তবে কেন ওদের যুক্তি ছিল, তুমি এমন কাওকে “ভালবাস যে তোমাকে ভালবাসে, তাকে নয় যাকে তুমি ভালবাস কারন সে তোমাকে ভাল নাও বাসতে পারে কোন এক কবির উক্তি ছিল এইটা একদিন অফিস শেষ করে বাড়ি ফিরে দেখি, সালারা গো-গ্রাসে গিলছে, আর আম্মু ওদের খুশি মনে গেলাচ্ছে এক একটা গরুর মত গিলছে আমি এইটা দেখে কিছু না বলে ফ্রেশ হতে গেলাম, ফ্রেস হয়ে এসে দেখি সালারা পেট টান করে সোফাই বসে আম্মুর সাথে গল্প করছে আমিও হালকা পাতলা খেয়ে ওদের সাথে বেরিয়ে আসলাম, সালারা আসার সময় আম্মু কে বলল আন্টি খুব শিগ্রই বিয়ে খাব কিন্তু, আম্মুও বলল ঠিক আছে, রেডি হও স্কুল মাঠে এসে বসলাম, তারপর জিগেশ করলাম কার বিয়ের দাওয়াত, সালারা যা বলল…..

—তোর বিয়ের দাওয়াত (এক বন্ধু)
—মানে কি???(আমি)
—তোর আর লিপি ভাবির বিয়ের কথাটা আন্টিকে বলে এলাম, তাই তো আন্টি এত্ত আদর করে খাওয়ালো….(আরেকজন)
—কি বললি শালা??? আর আমার মা তোদের খাওয়াই না????
—হুম খুব আদর করেই খাওয়াই, আজ ছেলের প্রেম কাহিনি শুনে একটু বেশিই আদর করে খাওয়ালো…..
—প্রেম কাহিনি মানে???
—তোর আর লিপি ভাবির, আন্টিকে বলতেই তিনি রাজি….
—কি বললি শালা, তোরা করেছিস কি????
—ঠিকই বলেছে, সালা ঐ মেয়ে সুখে সংসার করছে, তোর অফিসের ম্যানেজার কে নিয়ে আর তুই কি না….
—তাই বলে এমনটা করবি????
—হু করবই তো….

আর কি বলব ওদের না জানি কি কি বলে পটিয়েছে আম্মু কে রাতে খেতে বসেছি, আব্বু আম্মু দুজনেই চুপচাপ কোন রকমে খেয়ে উঠে আসব তখনই আব্বু ডাকল…

—রাশেদ শোন…
—হু আব্বু…
—কাল আমরা লিপিকে দেখতে যাচ্ছি, ওকে বলেদিস, ওর পরিবারকে যেন জানায়।
—জ্বী আব্বু….

সালারা যা করল না, ইচ্ছে করছে। এক দিক দিয়ে হয়ত ভাল করেছে, যে আমায় ভালবাসে তাকে পেতে যাচ্ছি রুমে এসে ওকে ফোন দিয়ে বলেদিলাম, ঠিক আছে বলে রেখে দিল সকালে নাশতা করে বসে আছি আব্বু এসে বললেন

—তুমি এখানে বসে কেন অফিস নেই???
—না মানে আব্বু..
—তোমার যাওয়া লাগবে না, আমরাই পারব।

যাও অফিসে যাও কি আর করা অফিসে আসলাম, দেরি করে অফিসে আসাতে ম্যানেজার কেবিনে ডেকে মনের মত ঝাড়লেন, আমি মনে মনে বললাম ওয়েট এন্ড সি মন বসছে না কাজে, কি যে হয় বিকালে অফিস থেকে বেরোতেই লিপির ফোন,

—হ্যা বলো….
—কই তোমার আব্বু আম্মু তো এলেন না,….
—যাই নি???
—না,
—আমায় জানাওনি তো….
—আসলে আমাদের অফিসের মালিক আর উনার স্ত্রী উনার ছেলের জন্য বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে এসেছিলেন। আমায় পছন্দ করে আংটি পরিয়ে বিয়ের দিন ঠিক করে গেছেন। তাই সময় পাই নি, উনারা বের হতেই তোমায় ফোন দিলাম। উনার ছেলে নাকি আমায় কোথাও দেখে পছন্দ করেছে তাই প্রস্তাব নিয়ে এসে ছিলেন…..

—হা হা হা হা হা….
—এই হাসছো কেন, আমার জান যায় আর উনি আছে মজা নিয়ে…
—কাল অফিসে আস সব বলছি পরের দিন অফিসে আসার পর আব্বু কে বলে লিপিকে নিয়ে বেরোলাম, দুজনে বাইকে করে একটা নদীর পাড়ে গিয়ে বসলাম, লিপিকে সব খুলে বললতেই ও তো অবাক…..

—কখনো বল নি তো…. তুমি আমাদের কম্পানির মালিকের ছেলে আর তুমি এত্ত ছোট পদেই কেন কাজ করছ????

—আমি চাইনি এক বারে বড় বোঝা নিতে, ছোট থেকে শুরু করেছি, আর আব্বুর পরিচয় দেই নি কারন আমি আমার মত থাকতে চেয়েছি, আব্বুর পরিচয় দিলে তুমিই কি এত্ত ফ্রি হতে আর নিরা আমায় ফিরিয়ে দিত, আর ওর সার্থপরতা বুঝতে পারতাম???? সেদিন ক্যান্টিনে তো সব শুনলে….

—তুমি শুনেছ???
—হুম, আমি দরজার পাশেই ছিলাম….

সেদিনের মত লিপিকে ওর বাসাই পোছে দিয়ে বাড়ি ফিরলাম বিয়ের দিন দ্রুত কাছে আসতে লাগল, নিরা লিপিকে বোঝাতে চেয়েছে যাতে এত্ত ছোট চাকুরি করা কাওকে বিয়ে না করে, লিপিকে বলতে নিষেধ করেছিলাম তাই ও কিছুই বলে নি আমার সম্পর্কে অফিসের সবাইকে দাওয়াত দিলাম, আব্বু আগেই সবাইকে দাওয়াত দিয়েছেন, আমি আমার মত করে দাওয়াত দিয়েছি নিরা আর ম্যানেজার কে যখন বললাম দুজনেই বললেন বসের ছেলের বিয়েতে যাবে তাই আমার বিয়েতে যেতে পারবে না কিন্তু অন্য সবাই তা না বলে বলেছে চেষ্টা করবে আমিও মুচকি হাসি দিয়ে চলে এলাম যথা সময়ে আমাদের বিয়ে হয়ে গেলো, বিয়ের দিন সবাই আমাকে বসের ছেলের যাইগায় দেখে চমকে যায় নিরা আর ম্যানেজার সাহেব যখন আমাকে বর আসনে দেখে যেন শক খাই সব ঝামেলা শেষ করে ১১টার দিকে বসর ঘরে ঢুকলাম….

লিপি এসে সালাম করতে গেলো, ওকে বাঁধা দিলাম বুকে টেনে নিলা কি মনে করে ও আমার বুকে মুখ গুজে দিল এর পর টেবিলে রাখা দুধের গ্লাসটা এনে আমায় দিয়ে বলল খেয়ে নিতে আমি অর্ধেকটা খেয়ে বাকিটা লিপিকে দিলাম খেতে, ও খেয়ে নিল এর পর অযু করে এসে নফল নামাজ পড়ে ছাদে গেলাম দুজনে অনেক রাত পর্য়ন্ত গল্প করে এসে আবার তাহাজ্জুত পড়ে ঘুমালাম, ফজরে উঠতে মনই চাচ্ছিল না, নামাজ না পড়লে আল্লাহ্ মাফ করবেন না। তাই অযু করে নামাজে গেলাম, লিপিও অযু করে দরজা পর্যন্ত এগিয়ে দিয়ে গেলো নামাজ পড়ে এসে আবার ঘুম, লিপি মায়ের সাথে নাশতা তৈরি করছে একটু পরই লিপি নাশতা করতে ডাকতে এলো ঘুমের জন্য উঠতেই মন চাচ্ছি না, কাছে আসতেই একে টেনে পাশে শুয়ে দিলাম, জরিয়ে ধরে বললাম একটু ঘুমায়, তার পর ও ছাড়াতে চেষ্টা করছে, আমায় ঠেলে দিয়ে উঠে পরল, আমিও উঠে আবার জরিয়ে ধরলাম….

—এই কি হচ্ছে, কেও দেখবে তো…
—কেও দেখবে না, আর দেখলেই কি একটা মিষ্টি দাও তাঁর পর যাব
—পরে এখন না
—না এখনই

বলে সামনে ঘুরিয়ে চার ঠোট এক করে দিলাম ওকে ছেড়ে দিতেই ছুটে পালাল আমিও গেলাম, নাশতা করতে গিয়ে দেখি সালা বন্ধুরা হাজির কাল খুপ জ্বালাইছে না জানি আজ কি করবে….

—যাক অবশেষে এলি….(একটা)
—আমরা তো ভাবলাম আসবিই না….(অন্যটা)
—অনেক রাত জাগছিস না….(আরেক টা)

লিপি লজ্জাই লাল, আব্বু আম্মু আশ পাশে নেই বাঁচা গেলো সপ্তা খানিক পর অফিসের সব দায়িক্ত বুঝে নিলাম, সবাই স্যার বলে, কারন এখন যে আমি বস সবাইকে নিষেধ করেদিলাম স্যার বলতে আগে যেমন ছিলাম তেমনই থাকতে ইদানিং ম্যানেজার সাহেব কেমন যেন মুচরাচ্ছে, চাইলেই অফিস থেকে যেতে পারছে না, অফিস কামাই দিতে পারছে না।

আবার আমায় ঝাড়িও দিতে পারছে না আর নিরার কথাটা নাই বা বললাম বেচাড়া আমায় আর যেন সহ্যই করতে পারছে না, আর মনে মনে পশ্তাচ্ছে, কি ভুলটাই না করেছে সে ওদের মত সুযোগ সন্ধানী মানুষ গুলোর জন্যই পুরো মানব জাতির বদনাম হয় ওরা নিজেরটা নিয়েই ব্যাস্ত অন্য দিকে লিপি আগে কেয়ার করলেও এখন সাথে অধিকার খাঠাই, কার সে অধিকার এখন আছে তার মাঝে মাঝে ঝাড়ি মাড়ে কোন ভুল করলে, আব্বু আম্মু ওর পক্ষে তাই কিছু বলতেও পারি না তবে দিন শেষে যে অনেক ভালবাসার আবেশে জরিয়ে রাখে আমায় আব্বু আম্মুর সময় কাটে লিপির সাথে গল্প খুনশুটি করে আমি তো অফিসে থাকি,

তবে ওর জন্য ফেরার সময় কিছু না কিছু নিয়ে যেতেই হবে, না হলে কথা বন্ধ দেরি করে ফিরলেও খবর আছে শুক্রবার সম্পুর্ন ওকে দিতে হবে সুধু নামাজের সময়টা ছাড়া সহ মিলিয়ে বেশ সুখেই আছি, এখন বন্ধুগুলোকে ধন্যবাদ দেই সালারা সেদিন বলেছিল বলেই না লিপির মত একজনকে পেলাম মাঝে মাঝে ছুটির দিনে এখনো হামলা চালাই আমার বাড়িতে, লিপির হাতের রান্না খেয়ে তবেই যাবে, আর এক একটা এমন করে খাই যেন কেন কালে খাই নি এমন খাবার আসলে বন্ধু গুলো এমনই হয়, এরা কোন সার্থ বুঝে না, এরা প্রয়োজনে সব করতে পারে… সব আর নিরার মত মানুষ গুলো নিজের সার্থের জন্য সব করে লিপিরা একটু ভালবাসা পেতে সব কিছু সহ্য করতে পারে, সব ভুলে আপন করে নিতে পারে। সবাইকে খুশি রাখতে লিপিদের জুরি মেলা ভার….

সমাপ্ত

গল্পের বিষয়:
ভালবাসা
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত