পিচ্চি বর

পিচ্চি বর

– ওহহহহহ বাঁচলাম সকাল সকাল একটা মাইয়ার পিছন পিছন যাচ্ছিলাম। এমন সময় কই থেকে মাইয়াই বড় ভাই শুনামির মতো আসলো, আর ঘোড়ার মতো দৌঁড়ানি দিলো। আর আমি বাঘের মতো দৌঁড়ানি দিয়ে সোজা বাসাই। আমারে ধরা এত্ত সোজা না চান্দু। বসাই এসে দরোজা খুলতেই দেখি, আমারর গুণধর ডেডি জান হাতে একটা প্লাস্টিক এর পাইব নিয়ে দাঁড়াই আছে একি মারবে নাকি কিছুই তো বোঝা যাচ্ছে না।

– আব্বা আপনি কী মোরে ওইটা দিয়ে চুপরাইবেন।
– তোরা মাইরা আর লাভ নাই, জীবনে তো আর ভালো হবি না। শুধু শুধু হাতের ব্যাথা বাঁড়বে, তাঁর থেকে অন্য পথ অবলম্বন করতে হবে এখন থেকে।

– হি হি তাইলে তো আর মারবা না নাকি তো কী অবলম্বন আব্বা।
– তোর বিয়ে ঠিক করে ফেলছি।
– ওয়াও সত্যি আমার তো বিশ্বাস হচ্ছে না.. কার সাথে, মেয়ে জিন্স পড়ে তো আচ্ছা নাম কীইইইই।
– বাহ্ তুই এত সহজে রাজি হয়ে যাবি ভাবতেই পারি নাই।
– কী কও আব্বা বিয়ের খবর শুনলে কে না খুঁশি হয় তাঁর উপর আবার নিজের বিয়ে ওহহহহহহ এত তাঁড়াতাড়ি তুমি নিজেই এমন আমার বিয়ের কথা বলবা আমার নামে কোন জমি জমা থাকলে সব তোমার নামে লিখে দিতাম.. এই আনন্দে। আচ্ছা মেয়ের নাম কীইইইই।

– মেয়ের নাম নিধি ঐ যে তোর রফিক আংকেল এর মেয়ে মেডিকেল এ পড়ে।
– কীইইইই না এ হতে পারে না আসলে আব্বা আমার বিয়ের বয়স হইছে তুমিই কও। আর এখন যদি তুমি আমারে এমন না বালক থাকতেই বিয়ে করার তোমার জেল হয়ে যাবে হুমমমমমম। আর আমি বেঁচে থাকতে তোমার জেল হতে দিমু না।

– চুপপপপপপপপপ বিয়ে তো তোকে করতেই হবে এতদিন অনেক জ্বালাইছিস।
– আব্বা একটু বুঝবা তো নাকি নিধি আমার দুই বছর এর বড় আর ওরে দেখছো.. আমারে কথাই কথাই তুলে আছাড় মারবো।

– হুমমমমমম সেটাই তো চাই তো সোনা আমার, যাও বিয়ের প্রস্তুতি নিয়ে নাও।
– আচ্ছা কীইইইই করলে বিয়ে দিবা না বলো।
– আমার বাড়ি থেকে চলে যাবি আর কোথাও আমার পরিচয় দিবি না।
– আচ্ছা সহজ কোন অফার নাই।
– আজকে সকালে কই ছিলি সত্যি বলবি।
– হুমমমমম একটা মেয়ের পিছন পিছন যাচ্ছিলাম এমন সময় ওর বড় ভাই দৌঁড়ানি দিছে।
– আরে বাহ্.. তাহলে তো বিয়েয় ডেট আরো পাঁচদিন সামনে চলে আসলো।
– আব্বা এটা কিন্তুু আমার সাথে দুই নম্বরি করা হচ্ছে।
– যেই হাঁড়ে ছুঁটতে লাগছো বাবা একটু দুই নম্বরি করে ও যদি তোরে ঠেকানো যায় তবু ও মঙ্গল।
– আব্বা তুমি ঐ নিধি রে ছাঁড়া যারে বিয়ে করতে বলবা তাঁরেই করমু শুধু সে বাদ পিলিজ।
– ঠিকআছে পাশের বাসার মিলিরে করবি… যে স্বামীর নাক ফাঁটিয়ে দিয়ে চলে আসছে।
– ওহহহহহহহহ তোমার চয়েজ ও না ক্ষেত মার্কা।
– তাহলে রেডি হয়ে নে নিধি বিকেলে আসছে আমাদের বাড়িতে।

– হুমমমমমমমম… আমি তো কুরবানি গরু কুরবানি তো দিবাই।

এই নিধি নামটা শুনলেই কেমন যেন ভয় ভয় করে দেখতে বেশ সুন্দরী তবে অন্য সবার জন্য সুন্দরী হলে ও তাঁর জন্ম আমাকে ঠিক করার জন্যই আগে যখন আমাদের বাসাই থাকতো.. একটু ও এদিক ওদিক হওয়া হইছি তো মরছি আর আমার বাপ ও বাবারে বাবা। তিন বছর আগে যখন চলে গেছিলো তার পরে থেকেই বুঝছি স্বাধীনতা কী জিনিস। কিন্তুু স্বাধীনতার সুখ সবার কপালে নাই রে ভাই। বিকেলে ছাঁদে দাঁড়াই রাস্তার দিকে চেঁয়ে আমি হঠাৎ দেখি একটা পরী যেন আমাদের বাসাই ঢুকলো ওটাই তো নিধি… কিন্তুু আমার জন্য কী অপেক্ষা করছে সেটা তো সেই মহান সৃষ্টি কর্তাই এক মাত্র জানে। একটু পড়ে ছাঁদের দরোজা খোলার শব্দ শুনতেই বুকটা কেমন ধক করে উঠলো। তাঁকিয়ে দেখি নিধি হাজির।

– আমি ও তাঁর দিকে চেঁয়ে আমি সে ও আমার দিকে চেঁয়ে আছে কীইইইই সুন্দর হয়েছে এই তিন বছরে আচ্ছা ও কী সেই আগের মতোই আছে.. যে সব সময় আমাকে ধরে ধরে ক্যালানি দিতো।

– ঐ বলদ ওমন হা করে কী দেখছিস।
– নাতো কিছু না।
– তুই নাকি এলাকার সব মেয়ের পিছন পিছন ঘুরিস।
– না তো একদম না কে বললো ওই কথা। এমন একটা বউ থাকতে কী কেউ ওই সব ফালতু মেয়ের পিছনে ঘুরে।
– তাই না ফাজিল দাঁড়া দেখাচ্ছি মজা একটা পাইব নিয়ে মারতে লাগলো। জানতাম এমনি থাকবে একটু ও বদলাবে না।
– ঐ কী ভাবছিস আমি আগের মতোই আছি এটাই তো।
– আরে বাহ্ মনে আসতেই বলে ফেললো।
– আংকেল এর কাছে আমি সব শুনছি নেহাত যদি আর কোন মেয়ের পিছনে পিছনে ঘুরিস তাহলে দেখবি মজা মনে থাকে যেনো।

– হুমমমমমমমমমমমম।
– আমি এখন নিচে গেলাম।
– মনে মনে কী ভাবলাম আর কী ঘটে গেলো নিধির দিকে তাঁকিয়েই তো সব ভুলে গেছি এখন তো মনে হচ্ছে তাঁর শাষণ সব সময় আমার চাই। ওওওও ডেডি কই তুমি আমি তো এমনিতেই তাঁরে পাইলে সব ছেঁড়ে দিতাম। আর যাই হোক সরাজীবন এর জন্যই তো পাচ্ছি… আহা । ছাঁদ থেকে নিচে.. দরোজাই কাছে আসতেই যা শুনি।

– আংকেল আমি সাহরিয়া কে বিয়ে করতে পারবো না ওকে আমি তেমন ভাঁবে কখন ও ভাঁবি নাই।
– আচ্ছা ঠিকআছে মা ওর ও এই বিয়েতে তেমন কোন মত ও ছিলো না জোর করে তো আর কিছু হয় না।

– ঠিকআছে আংকেল আমি তাহলে এখন আসি।
– ঠিকআছে।
– দুনিয়াটা কেমন উলট পালট হয়ে গেলো কেন যে আগেই বলতে গেলাম বিয়েটা করবো না দূর। দৌঁড়ে ছাঁদে চলে গেলাম.. কিছুই ভালো লাগছে না। দেখলাম নিধি চলে গেলো। এখন কীইইইই করবো আমি চোখের সামনে আমার হইলে ও হইতে পারত বউটা চলে গেলো, আর আমি হা করে দেখতেছি। আব্বাকে যদা এখন গিয়ে বলি যে বিয়েটা করবো… কী লজ্জাটাই না দিবে। রুমের মধ্যে যাচ্ছি ।

– তোর তো কপাল খুলে গেলো নিধি ও বলছে সে এ বিয়ে করবে না।
– কিছুই বললাম না… রুমের মধ্যে গিয়ে দরোজাটা আটকাই বসে রইলাম খুব খারাপ লাগছে এমন একটা সুন্দরী কার নসিবে যে আছে। বিকেলে ঘুমিয়ে আছি একটা অপরিচিত নাম্বার থেকে ফোন আসলো।
– ফোনটা ধরে কানের উপরে রাখলাম, কোন কথা বলছি না এমনিতেই আবার বেশ ঘুম পাচ্ছে।

– ঐ হারামি কথা বলছিস না ক্যান।
– কে বলছেন।
– পিচ্চি বরটার বউ বলছি।
– এমন করবেন না আপু এমনি বুকের মধ্যে পদ্মা, মেঘনা, যমুনা সব নদী বয়ে চলেছে… কেন ফোন দিছেন তাই বলে.. রেখে দেন আমি ঘুমামু।
– শয়তার পোলা আমি নিধি আর পিচ্চি বর বলছি এমনি ওটা নিয়ে আজাইরা ভাববি না।
– কীইইইই… তুমি নাম্বার পাইলা কই।
– যেখানেই পাইছি তাঁড়াতাড়ি রেডি হয়ে নিচে চলে আয়।
– ওকে।

ফোনটা কেটে দিলো। হঠাৎ মনে পড়লো সাহরিয়া এমন লাফানোর দরকার নাই বিয়াতো হইবো অন্য কারো লগে। একটু পড়ে নিচে গিয়ে দেখি নিধি আগেই চলে এসেছে।

– রিক্সাই উঠে আসো।
– কই যাবা।
– মার্কেটে।
– আমি গিয়ে কীইইইই করবো।
– তুই যাবি নাকি আমি নিচে আসবো।
– না না থাক আমিই আসছি। শপিং করতে করতে বুঝলাম কোন বিয়ের শপিং।
– আচ্ছা কার বিয়ে হচ্ছে।
– আমার।
– ওহ ভালো কবে বিয়ে হবে।
– তোর সাথে হওয়ার ডেট ছিলো যেদিন সেদিনই হবে।
– এত তাঁড়াতাড়ি পাত্র কই পেলে।
– আছে আছে তোর অত শত বুঝতে হবে না
– হুমমমমম.. আমার আবার বুইঝা হবে কীইইইই কিচ্ছু না।
– তুই তো আবার আমাকে বিয়ে করবি না বলে দিছিস তাই আমি ও বাবাকে বলে অন্য পাত্র ঠিক করছি।
– আরে তখন তো আমি জানতাম না যে তুমি মানে।
– থাক যা হবার হয়েছে আর মানে মানে করতে হবে না।
– দেখতো এই পাঞ্জাবিটা কেমন লাগছে এদিকে আয় মাপ নেই।
– আরে আমার মাপ নিয়ে কীইইইই করবা, আর আমি তো পিচ্চি ছিলাম, তোমার বর তো অনেক বড় হবে।
– চুপ থাক তো আমার বর ও পিচ্চি, তোর মতো বুঝলি।
– হুমমমমমমমমমম।

চোখের সামনে.. হলে ও হইতে পারতো বউটার বিয়ে হয়ে যাবে আর আমি এমন হা করে সেটা দেখবো,, কী হত ভাগাই না আমি। সেদিন বাসাই চলে আসলাম এরপড়ে থেকে নিধি যখন তখন আমার কাছে ফোন দিচ্ছে আর আমি আরো বেশি ইমোশনাল হয়ে যাচ্ছি।

– পিচ্চি বরটা আমার কী করছে আচ্ছা আমার পিচ্চি বরটা কী খেয়েছে। সব সময় এমন কথা। যদি বলি আচ্ছা তুমি তো আমাকে না অন্য কাউকে বিয়ে করছো.. তাহলে আমাকে এমন পিচ্চি বর পিচ্চি বর বলছো কেন।

– আরে বোকা বিয়ে পর তো তাঁকে ও পিচ্চি বর বলেই ডাকবো.. তাইতো এখন একটা প্যাকটিজ করছি বুঝলা… সাহরিয়া বাবু।।
– হুমমমম বুচ্ছি। আমি তো এই মেয়ের জ্বালাই পাগল হয়ে যামু। তিনদিন পরে।
– ঐ তুই নাকি বাড়ি থেকে বাইরে যাস না আর আগের মতো।
– হুমমমমম.. বাড়িতেই ভালো লাগে তাই।
– বাহ্… আগে তো লাগতো না, এখন কেনো লাগে.. আর ওই মেয়ে গুলোর কী হবে যাদের পিছন পিছন এতদিন ঘুরছস।

– আরে আমার ভালো লাগছে না আর ফোনটা রাখো প্লিজ ওই যে তোমার বর তাঁর সাথে কথা বলো যাও তো।। বলে ফোনটা কেটে দিলাম কী করবো দুই দিন পর তো অন্য কারো হয়ে যাবে। এমনি বুকটা ফেঁটে যাচ্ছে তাঁর উপরে আবার এমন পিচ্চি বর পিচ্চি বর বলে ডাকছে। যেদির বিয়ে হবে সেদিন আর থাকতে পারলাম না খুব কষ্ট হচ্ছিলো। ব্যাগ জামা কাপড় গুছিয়ে নিলাম কারণ, আজকে তাঁকে সত্যি কথা সব বলে দিবো। যদি কিছু বলে সোজা অনেক দূরে চলে যাবো আর যদি হ্যা বলে তাহলে নিধিকে নিয়ে অনেক দূরে চলে যাবো প্লান তো প্লানই। বিয়ের সুবাদের নিধি দের বাসাই আছি দুই দিন ধরে লুকিয়ে লুকিয়ে দেখছি তাঁকে অন্য মেয়ের দিকে নজরই পড়ে নাই। নিধির রুমে গেলাম দেখি একাই আছে দরোজাটা আস্তে করে লাগিয়ে দিলাম।

– ঐ সাহরিয়া… এখানে কেনো আসছো।
– তোমার সাথে কথা আছে আমার।
– কোন মেয়েকে পছন্দ হয়েছে নাকি।
– হুমমমমমম সেই কবে থেকে তাঁকে দেখার পরে থেকে সব মেয়ে মাথা থেকে চলে গেছে.. এখন শুধু সে একাই আছে।

– কে সেটা শুনি। যা সাহরিয়া যা এখন ভয় করলে চলবে না নিজেই নিজেরে সাহস যোগালাম।
– আর কোনদিকে না তাঁকিয়ে গিয়ে সোজা জরুয়ে ধরলাম তোমাকেই আমার চাই বুঝলা তোমাকেই আমি ভালবাসি ব্যাস এখন যদি আমার সাথে না যাও আমি এখাই অনেক দূরে চলে যাবো, আর মরে যাবো হুমমমমমমমম আমি সব গুছিয়ে ফেলেছি ব্যাগ আমার রুমেই আছে। বলো না আমার সাথে যাবা।

– ঐ ছাগল তোমার সাথে এখন কই যাবো,আজকে তো আমার বিয়ে।
– হুমমমম সে জন্যই তো আজকে এক্ষুনি আমরা পালাবো চলো। জরিয়েই ধরে আছি একটু পরে টের পেলাম নিধি ও আমাকে জরিয়ে ধরে আছে। তাঁর মানে লাইন ক্লিয়ার।

– যেতে পারি তবে সবার সামনে দিয়ে নিয়ে যেতে হবে
– ওকে চলে ওর হাত ধরে সবার সামনে দিয়ে নিয়ে যাচ্ছি।
– সাহরিয়া নিধি কে কই নিয়ে যাচ্ছো নিধির বাবা।
– বাবা আমরা পালাচ্ছি।
– কেনো।
– আংকেল এই বিয়ে হবে না আমি মানি না এ বিয়ে।
– কিন্তুু কেনো।
– আপনারা বুঝতে চেষ্টা করেন আমরা দুই জন দুই জনকে ভালোবাসি আর আপনি হুট করে অন্য জনের সাথে তাঁর বিয়ে দিচ্ছেন। এটা কেমনে কী।
– আরে বোকা নিধির সাথেই তো তোমার বিয়ে হচ্ছে।
– কীইইইই।
– হুমমমমমমমম এই দেখো বিয়ে কার্ড।
– ওমা তাই তো এখানে তো সাহরিয়া আর নিধিই লেখা আছে তাহলে কী সবাই আমাকে বোকা বানালো। দেখলাম সবাই হেঁসে হেঁসে এঁকে বারে একাকার। নিধি আমার হাত ধরে একটা রুমে নিয়ে গেলো।

– তুমি আসলেই একটা ছাগল।
– ওই বলবা না আগে।
– তোমার এটার দরকার ছিলো ফাজিল তাই তো প্রথমদিন তোমাকে দেখিয়ে দেখিয়ে ওই সব বলছিলাম।
– তাই না… হুমমমমম.. যদি সত্যি অন্য কারো সাথে বিয়ে হতো।
– দূর আমার পিচ্চি বরটাকে রেখে অন্য কারো সাথে কেনো বিয়ে করবো শুনি।
– দাঁড়াও এখন শুধু পাপ্পি আর পাপ্পি খাবো।
– ঐ যে ওইটা দেখছো।
– আচ্ছা থাক বিয়ে পরে খাবোহি হি হি হি।

সমাপ্ত

গল্পের বিষয়:
ভালবাসা
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত