এইযে শোনেন, আগামী পরশু আমার বিয়ে। আপনার সাথে আমার আর কথা হবে না। কখনো আর এই নাম্বারে ফোন দিয়েন না। পারলে বিয়ের দিন আমাদের বাসায় আসবেন। প্রথম ও শেষ দেখা দেখে যাবেন। ভালো থাকবেন!”
মোবাইল ফোনের স্ক্রিনের দিকে তাকিয়ে মিথিলার শেষ মেসেজটা বারবার পড়ছে ফাহাদ। মিথিলা তো তার ভালোবাসার মানুষ না! তবুও তার এত কষ্ট হচ্ছে কেন? বুকের বামপাশ টাতেও কেমন যেন চিনচিনে ব্যাথা হচ্ছে। মনে হচ্ছে যেন, অনেক মূল্যবান একটা জিনিস হারিয়ে ফেলতে যাচ্ছে সে! একটা রং নাম্বারের কি অদ্ভুত ভাবেই না পরিচয় হয়েছিল মিথিলার সাথে। ফাহাদ ঠিক এক বছর আগে ফিরে গেল…
– হ্যালো কে বলছেন?
– জ্বি আমি ফাহাদ। আপনি কে?
– আমি আপনার বন্ধু।
– বন্ধু? কোন বন্ধু? নাম কি?
– মিথিলা।
– স্যরি, এ নামে তো আমার কোনো বন্ধু নেই।
– মনে করুন আজ থেকে হলো। আমি আপনার নতুন বন্ধু! হিহিহি…
সেদিন ছিল ফ্রেন্ডশিপ ডে। অনেকটা মজার ছলেই মিথিলা ইচ্ছেমত একটা রং নাম্বার তুলে কল দিয়েছিল। আর সেই কলটা এসেছিল ফাহাদএর নাম্বারে। প্রথম প্রথম ফাহাদ মেয়েটিকে ইগনোর করলেও একটা সময় দুজনের মধ্যে ভালো বন্ধুত্ব হয়ে যায়। মেয়েটির ছটফটে কিলবিল করে বলা কথা গুলো ভালো লাগতে শুরু করে ফাহাদের। ফাহাদের সরলতায় মাখা গম্ভীরভাবে বলা কথা গুলোও ভালো লাগে মিথিলার।
এর আগে ওইভাবে কোনো মেয়ের সংস্পর্শে আসা হয়নি ফাহাদের। ছোট বেলা থেকেই মেয়েদের কাছ থেকে নিজেকে গুটিয়ে রেখেছে কেন জানি। হঠাৎ করেই আগুন্তকের মত তার জীবনে আসা মিথিলা মেয়েটা তাকে পুরোপুরি বদলে দিলো! মেয়েটিকে নিয়ে সে মনের অজান্তেই স্বপ্ন দেখা শুরু করলো। ফাহাদের মনে হলো, এই মেয়েটির উপর ভরসা করা যায়। হ্যা সত্যিই এই মেয়েটির উপর ভরসা করা যায়। কি দারুণ মায়ায় আচ্ছন্ন মেয়েটির প্রতিটা কথা! একটা মানুষের বাহ্যিক চেহারা যতটা না মুগ্ধ করে, তার চেয়েও বেশি মুগ্ধ করে তার মায়াভরা কথা গুলো। এই মেয়েটিকে যদি সারা জীবনের জন্য পাশে রাখা যেত! সত্যিই আর কিছু লাগতো না তার!
ফাহাদ মিথিলার শেষ মেসেজটার দিকে তাকিয়েই আছে। চোখ দুটো ক্রমেই ঝাপসা হয়ে আসছে তার। মানুষের জীবনটা এমন কেন?? গোলক ধাঁধাঁর ছকে বাঁধা সব সময়! আজ মিথিলার বিয়ে। সারা বাড়ি দারুণ সব আলোক সজ্জায় ঝিকমিক করছে। হয়তো আর কিছুক্ষণ পরই বরের দামি গাড়ি এসে মিথিলাকে তুলে নিয়ে যাবে। পুরো বিয়ে বাড়ি ব্যস্ত। ফাহাদ এক কোণায় দাঁড়িয়ে বাড়িটার দিকে তাকিয়ে আছে। চোখের পাতা গুলো অসহ্য ভারী লাগছে তার। ফাহাদের ফোনের মেসেজ টোন বেজে উঠলো। মিথিলার মেসেজ,
– আপনি এসে গেছেন?
– হুম।
– আমি আপনাকে দেখব। কষ্ট করে একটু দাঁড়ান। আমি আসছি। (অত:পর তাদের প্রথম দেখা) মিনিট দশেক পর মিথিলা ফাহাদের সামনে এসে দাঁড়ালো। নতুন বউ এর সাজে কি দারুণই লাগছে তাকে!
– আপনিই ফাহাদ?
– হুম
– এত হ্যাংলা কেন আপনি? খাওয়া দাওয়া করেন না ঠিকমত? আসেন ভিতরে আসেন, রোস্ট দিয়ে পেট ভরে খাবেন।
– না থাক। আমি বরং যাই। দেখা তো হলোই।
– আচ্ছা ঠিক আছে। কিন্তু আপনার চোখ দুটো লাল হয়ে আছে কেন??
ফাহাদ আর কোনো কথা বলতে পারছে না। মনে হচ্ছে কে যেন তার গলাটা চেপে ধরে আছে।
– ভালোবাসেন আমায়?
মিথিলার এই কথাটি শোনামাত্র থমকে গেল ফাহাদ! ঠোঁট চেপে মুখে হাসি হাসি ভাব এনে বলল, “নাহ! একটুও না!” মিথিলা বলল, “আচ্ছা ভালো না বাসলেন। এবার ভিতরে চলুন। খাবেন পেট ভরে। আসুন তাড়াতাড়ি, সময় নেই। বর যাত্রী আপুকে নিয়ে যাবে।”
ফাহাদ অবাক হয়ে বড় বড় চোখ করে মিথিলার দিকে তাকালো। মিথিলা মুচকি হেসে বলল, “কি ভেবেছেন? বন্ধুত্বটাও আমি করেছি, আবার ভালোবাসার কথাটিও আমাকেই বলতে হবে? ওগুলো পুরুষ মানুষের কাজ। পুরুষদের দিয়ে করাতে হয়। হিহিহি…আজ আমার বড় বোনের বিয়ে। ভাবলাম আপনার সাথে একটু মজা নেই। ভালোবাসেন কি না সেটাও একটু যাচাই করে নেই। হিহিহি মিথিলা হাসছে। আকাশ বাতাস কাঁপিয়ে খিলখিল করে হাসছে। অন্যরকম এক মুগ্ধতা ছড়াচ্ছে সে হাসি। ফাহাদ মিথিলার দিকে নির্বাক তাকিয়ে সে মুগ্ধতায় ভেসে যাচ্ছে…ইচ্ছে করছে অনেক জোড়ে জড়িয়ে ধরে বলতে,অনেক ভালবাসি তোমায় মিথিলা ।