ভালোবাসার গল্প

ভালোবাসার গল্প

– এই যে মিঃ সেসরা গাছের দিকে তাকিয়ে কী দেখো?(আনিকা)
– গাছে কয়টা আম ধরেছে, সেটা গুনতেছি। (রাহাত)
– ঢং দেখানোর জায়গা পাও না?
– গাছের আম গুনাও কী দোষ??
– প্রতিদিন সকাল বেলা তোমার এইখানে কী?
– এই জায়গাটা আমাদের। আব্বু বলেছে, আম গুলো দেখে রাখতে। হিহিহিহি
– কী বিশ্রী হাসি!
– হা হা হা
– উফফফফ! আজিব ছেলে তো তুমি!

কথাটা বলেই আনিকা ঠাস করে জানালাটা বন্ধ করে দিল। রাহাত হচ্ছে সেই ছেলে যে, আনিকার জন্য পাগল। এক দেখাতেই তার ভাল লেগে যায়। একদিন নিজেদের জায়গা দেখতে এসে আনিকাকে দেখেছিল চুল ছেড়ে দেওয়া অবস্থায়। ঐ দিন থেকেই রাহাত আনিকাকে একদম মনের মধ্যে জায়গা দিয়েছে। তাই তো, এখন নিজেদের জায়গা দেখার নামে, আনিকাকে প্রতিদিন দেখতে আসে। তবে, অানিকা ছেলেটিকে, একদম সহ্য করতে পারে না। কারন, কোন একটা সকাল বাদ যায় না রাহাতের মতো একটা বিশ্রী ছেলেকে আনিকার চোখে না পড়া। পরের দিন সকাল বেলা….

– হাই,,,কেমন আছো?(রাহাত)
– জানি না। তোমার সাথে ঐ ছেলেটা কে?
– আজকে আম গুলো পাড়বো। তাই,ওকে সাথে করে নিয়ে এসেছি।
– তুমি এরকম সেসরা পোলা কেন?
– আমি কী করছি? আব্বু বলেছে আম গুলো পেড়ে পাশের বাড়িগুলো তে দিয়ে আসতে আর সাথে নিজেদের বাড়িতে নিয়ে যেতে।
– তার মানে কী? তুমি এখন আমাদের বাড়িতে আসবে??
– হুম।তোমাদের বাড়িতে যাবো। তোমাদের সাথে যে বাড়িটা আছে,ওই বাড়িতেও যাবো।
– তুমি আসলেই একটা সেসরা ছেলে। একটা মেয়েকে দেখার জন্য সবকিছুই করতে পারো।
– এতক্ষণে ব্যাপারটা বুঝতে পারলে?
– আমি এখনই দরজা বন্ধ করে দিবো।দেখি তুমি ক্যামনে আমাদের বাড়িতে আসতে পারো!
– ব্যাপার না। আজ আমি তোমাদের বাড়িতে যাবোই….
– দেখা যাবে! একটু পর রাহাত আম গুলো নিয়ে, আনিকাদের বাড়িতে গিয়ে নক করতেই আনিকার আম্মু এসে দরজা খুলে দিল…….
– কে বাবা তুমি?
– আমি আপনাদের জামাই।(রাহাত খুব আস্তে কথাটা বলল, যেটা আনিকার আম্মুর কান পর্যন্ত পৌঁছাই নি)
– কিছু বললে বাবা??
– না আন্টি, কিছু বলি নাই। আপনি আমাকে চিনবেন না। আপনাদের বাড়ির পিছনে যে অনেকগুলো আম গাছ, ওইগুলো সব আমাদের। আব্বু বলেছে, কিছু আম পেড়ে যেন পাশের বাড়ি গুলোতে দিয়ে আসি।

– ওহ,,,,খুব ভাল করেছো। বসো বাবা তুমি।আমি তোমার জন্য কিছু খাবার নিয়ে আসি।
– আন্টি থাক লাগবে না। শুধু এক গ্লাস ঠান্ডা পানি দেন, খুব পিপাসা পেয়েছে।
– আচ্ছা,ঠিক আছে।
– আন্টি আনিকা কোথায়?
– তুমি আনিকাকে চিনো নাকি? [ এ রে! কথাটা বলে তো নিজের বাঁশ নিজেই রেডি করল রাহাত…….. ]
– না আন্টি। আমি আর আনিকা একই কলেজে পড়তাম।(যদিও, মিথ্যা কথা বলল রাহাত)
– ওহ। আনিকা তো গোসল করতে গেছে।

একটু পরেই বের হবে, তুমি বসো বাবা একটু! রাহাত মনে মনে ভাবতে লাগলো,, আনিকার আম্মুটা কত্তো সুন্দর করে কথা বলে আর তাঁর মেয়েটার মনে হয় বাঁকা করে কথা না বললে, পেটের ভাত হজমই হয় না। কিছুক্ষণ পর আনিকা গোসল করে বের হল। আনিকার উপর রাহাতের চোখ পড়তেই, আনিকার উপর থেকে সে যেন চোখ সরাতে পারছে না। মেয়েটাকে আজ অসম্ভব সুন্দর লাগছে। ভিজা চুলে একদম পরীর মত লাগছে আনিকাকে। রাহাতের ইচ্ছা করছিল, ঐ সময় আনিকার একটু স্পর্শ নিতে! রাহাতকে দেখেই আনিকা বলতে লাগল……

– ওই, তোমার কী কোন কাজ নাই? রাহাত কিছু বলতে যাবে, তার অাগেই আনিকার আম্মু বলে উঠল……
– আহা! মানুষের সাথে কেউ এভাবে কথা বলে?
– না আন্টি, ঠিক আছে।
– তোমরা দুইজন কথা বলো। আমি গেলাম, আমার কাজ আছে……
– দেখছো,,, অামি বলছিলাম না যে, আজ তোমাদের বাড়িতে আমি ঢুকবোই…
– হুহ। মানুষের লজ্জা না থাকলে, এরকমই হয়!
– এটা নতুন কথা না। সবাই জানে আমার লজ্জা কম।
– হুম। তোমার শুধু লজ্জা কম না। তোমার সবই কম!
– যেমন?
– সব সময়য় এরকম আমার পিছনে লেগে থাকো কেনো?
– আমি থাকি না তো! আমার ভিতরেরটা লেগে থাকে।
– চুপ চাপ, সোজা_সুজি উত্তর দাও?
– ভালবাসি তোমাকে অনেক, তাই।

– কিছু বললে!!! শুনতে পাড়লাম না তো?
– মানে কী??তোমার কানে কি ঠাডা পড়ছে?
– হা হা হা হা
– হাসিটা অনেক সুন্দর…..
– কার?
– আমার হবু বউয়ের।
– মানে কী???
– তোমার বুঝা লাগবে না।
– এই যে,,,শুনো?
– জ্বী…বলো?
– আমার তোমাকে ভাল লাগে না।
– ওহহহ। তাহলে কাকে ভাল লাগে, শুনি?
– আমি একটা ছেলের সাথে রিলেশন করি।

সো, আমাকে আর ডিস্টার্ব করবে না। এরকম কথা আনিকার মুখ থেকে শোনার জন্য রাহাত একদমই প্রস্তুত ছিল না। মুহূর্তের মধ্যে রাহাতে মুখ কাল হয়ে গেল। কি বলবে বুঝতে পারছিল না। ভিতরে যেন, ভেঙ্গে চূড়ে যাচ্ছে। তারপরেও, রাহাত আনিকাকে কিছু বুঝতে না দিয়ে, আবারও হাসতে হাসতে বলল….

– ব্যাপার না! ওইটা আমি দেখে নিবো নি।
– তুমি দেখে নিবে মানে?
– তুমি কী সত্ত্যিই আমাকে ভালবাসো না?
– না। কখনো আর আমার জানালার পিছনে আসবে না।
– আচ্ছা।
– আমাদের বাড়ির আশে পাশে আর যেন ঘোরা ঘুরি করতে না দেখি?
– আচ্ছা।
– কখনও আর আমাদের বাসার ভিতরে ঢুকবে না?
– আচ্ছা।
– এরকম আচ্ছা, আচ্ছা করছো কেনো?
– না এমনি। আমি এখন যাই…

আনিকার কথাগুলো আজ রাহাতের অনেক খারাপ লেগেছে। রাহাত ভাবতেছে, সবার ভিতরে ভালবাসা থাকলেই কী, সেটা কি সবার জীবনে পরিপূর্ণতা পায়? অনেকের ভাল লাগা গুলো, ভাল লাগাই থেকে যায়। সেটা ভালবাসায় পরিণত হয় আর কত জনের? রাহাত তখন নিজে নিজেই প্রতিজ্ঞা বদ্ধ হল…সে আর কখনোই আনিকাকে ডিস্টার্ব করবে না। প্রতিদিন সকাল বেলা আনিকার জানালার পিছনে যাবে না। যদি, আনিকা নিজেই কোন দিন রাহাতের ভালবাসা বুঝতে পারে, তাহলেই তাদের মাঝে কথা হবে। নয়তো, আর কখনোই তাদের কথা হবে না।

অন্যদিকে, আনিকাও কী রাহাতকে ছাড়া খুব ভাল আছে? না, আজকে সে যা যা বলেছে, সব শুধু মাত্র রাহাতের হাত থেকে বাঁচার জন্য। দিন শেষে আনিকাও রাহাতের মনের অবস্থাটা বুঝতে পেরেছে। আনিকা ভাবছে, তার হয়তো আজ এতো বেশি করাটা ঠিক হয় নি। “প্রতিদিন সকালে রাহাতকে না দেখলে যে, আনিকারও ঠিকই খারাপ লাগত। রাহাতকে বকা দিয়ে আনিকা নিজেই চুপ চাপ হাসতো। সেটা কখনোই রাহাতকে সে বুঝতে দেয় নি।” কিন্তু, আজ হঠাৎ করে, পরিস্থিতির স্বীকার হয়ে রাহাতকে মিথ্যা বলতে হয়েছে আনিকার। পরের দিন সকাল বেলা, আনিকা জানালার পার্শ্বে বসে অপেক্ষা করতেছে কখন আসবে রাহাত? কখন তার সাথে ঝগড়া করবে! তাকে বকা দিয়ে, জানালা বন্ধ করে নিজেই চুপ চাপ হেসে যাবে!!

কিন্তু, ঐ দিন আনিকা রাহাতকে পেল না। আর, রাহাতই বা কেনো তাকে ডিস্টার্ব করতে আসবে? সে যে নিজে নিজেই প্রতিজ্ঞা বদ্ধ! এমন ভাবে কেটে গেল ছয় দিন, তবুও রাহাতের কোন খোঁজ নেই। আনিকার মনটাও অনেক খারাপ। প্রত্যেকটা দিন আনিকা অনেক খুঁজেছে, কিন্তু কোন লাভ হয় নি। রাহাতকে এক পলক দেখার জন্য হেতে আজ অনেকটাই অস্থির। কিন্তু, কোথায় পাবে সে রাহাতকে? রাহাতের বাসার ঠিকানা, ফোন নাম্বার কোনটাই তো সে জানতো না। আনিকার মাথায় সব সময় এখন একটা বিষয়ই ঘুর পাক খাচ্ছে, তাকে যে ভাবেই হোক রাহাতের সাথে দেখা করতে হবে। কিন্তু, কিভাবে দেখা করবে সে? রাহাতকে নিয়ে ভাবতে ভাবতে আরও দুই/তিন দিন কেটে গেল। একদিন সকাল বেলা আনিকা আন মনা হয়ে জানালার পার্শ্বে বসে আছে। তার হঠাৎ করেই মন হল, কেউ এক জন তার জানালার পাশ দিয়ে গেল এবং সে তাকে চিনে। আনিকা একটু চিৎকার দিয়েই বলল….

– এই ছেলে, এই দিকে আসো তো?
– হুম,,,বলেন।
– তোমাকে কোথায় যেন দেখছিলাম বলো তো?
– আরেহ্…. আফা..আমাকে চিনতে পারছেন না?
– আফা কী??? আপু বলো…..
– ওকে, আপু।
– এবার বলো, কোথায় দেখছিলাম তোমায়?
– এইতো, এইখানে একদিন আমি রাহাত ভাইয়ের সাথে আম পেড়ে দিতে আসছিলাম।
– opps! তো তোমার রাহাত ভাই কোথায়? তাঁকে আর দেখা যায় না কেনো?
– কেনো! রাহাত ভাই তো বাসায়।
– আমায় একটু ওর বাসার ঠিকানা দিবে?
– হুম।

ছেলেটার কাছ থেকে রাহাতের বাসার ঠিকানা নিয়ে আনিকা তখনই রাহাতদের বাসায় চলে গেল। বাসায় গিয়ে নক করতেই ভিতর থেকে রাহাতের আম্মু দরজাটা খুলে দিল….

– কে তুমি?
– আমি আনিকা। আপনি রাহাতের কে হন?
– কেনো! আমি রাহাতের আম্মু।
– আন্টি রাহাত কই?
– কি করেছে রাহাত?
– না কিছু করে নি আন্টি।

কই সে?? মেয়েটা রাহাতের জন্য এরকম পাগল হয়ে গেছে যে, তার কাছে আর কোন কিচ্ছুর মূল্য নেই। শুধুই রাহাতকে তাঁর চাই।

– এই যে, পাশের রুমটাতে রাহাত। আজ অনেক দিন হয়ে গেল, রাহাত রুম থেকে বের হয় না। ঠিক মত খাওয়া দাওয়া করে না। কিছু জিজ্ঞাস করলে, বলতেও চায় না কিছু! আনিকা দৌড়ে রুমের মধ্যে ঢুকলো। রুমটাতে ঢুকতেই, অন্ধকার ছিল। রুমের লাইট জ্বালাতেই, রাহাত আনিকাকে দেখেই অবাক হয়ে গেল…

– আনিকা তুমি???
– ঠাসসসস……….
– (রাহাত চুপ করে আছে)
– তুমি কী মানুষ? সব সময় শুধু নিজের দিকটাই চিন্তা করো?
– ( রাহাতের মুখে কোন কথা নেই)
– এব বারও ভাবলে না আনিকা কতটা কষ্ট পাবে?
– তুমি তো আমাকে ভালবাসো না, তাহলে কষ্ট পাবে কেনো?
– কে বলেছে? আমি তোমাকে ভালবাসি না?
– তুমি নিজেই তো সেদিন বললে, তুমি অন্য একটা ছেলের সাথে রিলেশন করো!
– ঐ দিন যা বলছিলাম সব মিথ্যা।
– মিথ্যা বললে কেনো?

– শুধু মাত্র তোমার হাত থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য।
– তাহলে আজকে, এইখানে আসছো কেন?
– এখন আমার ভিতরেরটা যে, সব সময় রাহাতকেই চায়!
– যাহ্ পাগলী! রাহাতকে নিয়ে কী করবে?
– সেটা তোমার বুঝতে হবে না। শরীরের এই অবস্থা করে ফেলছো কেন?
– খাওয়া দাওয়া ঠিক মত করি না।
– ঠিক মত খাইতে কে নিষেধ করেছে?
– আনিকা……. হি হি হি।
– একদম হাসবে না। চুপ। ভালবাসো আমাকে?
– হুম…..অনেক।
– তাহলে, কপালে একটু চুমু দাও!
– কার কপালে???
– আনিকার কপালে….
– এ ছিঃ ছিঃ। আম্মু এসে দেখলে কী বলবে?
– আসবে না। তোমাকে দিতে বলছি, দাও রাহাত আনিকার কপালে ছোট্র করে একটা চুমু এঁকে দিয়ে, আনিকাকে বাহুডরে জড়িয়ে নিলো।

(সমাপ্ত)

গল্পের বিষয়:
ভালবাসা
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

সর্বাধিক পঠিত