—– ওই বাবু ওঠো না কেন, এতক্ষণ ঘুমানো লাগে? (সুপ্তি)
—- উমমম,বাবুনি আর একটু ঘুমাই না (আমি)
—- আর ঘুমানো লাগবে না, ওঠো।
—– আর একটু প্লিজ।
—– কয়টা বাজে সে খেয়াল আছে? অফিসে যেতে হবে না?
—– কয়টা বাজে? (ঘুম চোখে)
—– ৯:৩০
—– কিহহ্ ১০ টায় অফিস আর তুমি এখন ডাকছ?
—– তোমাকে তো সেই ৮টা থেকে ডাকছি, আর তুমি আর একটু, আর একটু করেই সময় পার করে দিচ্ছ।
—– এখন কি হবে?
—– কি হবে মানে, তুমি তারাতারি ফ্রেস হয়ে রেডি হও তারপর খেতে আসো, ততক্ষণে আমি তোমার টিফিন রেডি করে নাস্তা দিচ্ছি।
—- ওকে।
সুপ্তি রান্না ঘরে চলে গেল। চলুন এই ফাকে আমাদের পরিচয়টা জেনে নেওয়া যাক। আমি শুভ। একটা কোম্পানিতে জব করি। স্যালারী ভালই। আর ও সুপ্তি, মানে আমার একমাত্র বউ। আমাদের বিয়ে হয়েছে প্রায় ১ বছর হলো। আমাদের বিয়ের লম্বা একটা ইতিহাস রয়েছে, সেটা না হয় পরেই বলব। এখন নাস্তার টেবিলে যেতে হবে, কারন সুপ্তি অনেক্ষন ধরে ডাকছে। নাস্তার টেবিলে বসে সুপ্তিকে বললাম :
—- সুপ্তি আমার টাই আর মানিব্যাগ কোথায় দেখ তো।
—- এ আর নতুন কি, তুমি তো কোন দিনই খুজে পাওনা।
—- আনো না তারাতারি।
—- আচ্ছা বাবা যাচ্ছি যাচ্ছি।
—- কি, আমি তোমার বাবা!!!
—- যাহ্ তুমিও না।
আমার নাস্তা করার মধ্যেই সুপ্তি আমার টাই আর মানিব্যাগ নিয়ে আসল। প্রতিদনের মতন আজও সুপ্তি আমার দুপায়ের উপরে দাড়িয়ে আমার টাইটা বেধে দিল আর আমিও ওর কপালে এঁকে দিলাম ভালবাসার চিহ্ন। বাসা থেকে বের হবো, তখনি সুপ্তি আমাকে বলল
—– এই শুভ
—- কিছু বলবে?
—- বলব বলেই তো ডাকলাম।
—- হ্যা বলো
— একটা কবিতা শোনাও না।
—-( আমি তো রীতিমত অবাক, সুপ্তি প্রায়শই আমার কাছে কবিতা শুনতে চায়, আর আমি শোনাইও। তাই বলে এখন!! আজ আবার স্পেশাল কিছু আছে নাকি। পাগলীর ভাষ্যমতে, আমি নাকি পৃথিবীর সেরা কবি) দেখো এখন সময় নেই, পরে শোনাব।
— (সুপ্তি চাপা অভিমান নিয়ে বলললল) হুমম
—- সুপ্তির অভিমান দূর করতে বললাম, আচ্ছা শোনাচ্ছি : ওহে প্রিয়তমা আমি পড়তে চায় তোমার দু’চোখের মায়ায় আমি নীড় বাধতে চায় তোমার ঐ ভালবাসার ছায়ায় আমি বিভোর হতে চায় তোমার ঐ শর্তহীন ভালবাসার মায়ায় বলনা, দেবে কি সুযোগ?
— হি হি হি, হুম দেবো তো
— সুপ্তি যে খুব খুশি হয়েছে তা আর বলার অপোক্ষা রাখে না। জানি আজ বসের ঝারি শুনতে হবে, তবে সুপ্তির খুশির জন্য এতটুকু ঝারি শুনতে রাজি আছি। আর যাকে ভালবাসি তাকে খুশি রাখতে যদি এতটুকু না করতে পারি, তাহলে কিসের ভালবাসা। আচ্ছা সুপ্তি এখন আসি।
—- শোনো
— হুম
— উমমমআহ্ সাবধানে যাবা কিন্তুু
—ওকে
এখন সময় সকাল ১০:১৫। ইতিমধ্যে অফিস টাইম থেকে ১৫ মিনিট লেট। জানিনা আজ কপালে কি আছে। বসের শান্ত গলার মধুর বাণী শুনে মনটা কেমন যেন অশান্ত হয়ে উঠেছে। বসেরা বুঝি এমনই হয়। আজ কাজের চাপ কম আছে। তাই অলসভাবে সময় পার করতে করতে যেন হারিয়ে গেলাম অতীতের স্মৃতিজালে। @ সুপ্তির সাথে আমার পরিচয় কলেজ থেকে। প্রথমে বন্ধুত্ব তারপর ভালবাসা। সুপ্তি ছিল উচ্চবিত্ত পরিবারের আর আমি ছিলাম মধ্যবিত্ত পরিবারের। সুপ্তির পরিবার ওর বিয়ের ঠিক করেছিল এক ডাক্তারের সাথে। আসছে পৌষে ওর বিয়ে। তাই তো তার আগেই সুপ্তি পূর্ণিমার চাঁদ হয়ে ধরা দিয়েছিল আমার মতন বামনের ঘরে। ভাগ্যিস চাকরিটা পেয়েছিলাম, তাই কোন সমস্যা হয়নি। হঠাৎ ফোনের মৃদু কম্পনে ভাবনার ইতি ঘটল। নিশ্চয় পাগলি টা ফোন দিয়েছে। হুম যা ভেবেছিলাম :
—- হ্যা সুপ্তি বলো
—- আমার বাবুটা কি লাঞ্চ করেছে?
—- হুম, তুমি করেছ?
—- আচ্ছা এমন কখনও হয়েছে বলো তো, যে আমি তোমার আগে খেয়েছি?
—- না তো
— তাহলে বললে কেন?
—- আমার ভুল হয়েছে মহারাণী। তারাতারি খেয়ে নাও।
— ওকে। ওই বাবু
— হুম
— আমার একটা জিনিস লাগবে, আনবা তো?
—- এই প্রথম কিছু চাইলে, আনবনা মানে। বলো কি লাগবে?
—- আসার সময় আমার জন্য চাটনি আনবা, আর আজ তারাতারি বাসায় আসবা।
—- কেন, something something?
—- যাহ দুষ্টু, nothing.
— আচ্ছা রাখছি।
— ওকে।
অফিসের বাকী কাজগুলো সেরে আজ তারাতারি অফিস থেকে বেরিয়ে পরলাম। আপাতত গন্তব্য চাটনির দোকান। আজ যেন আমার আনন্দের সীমা নেই। কারন প্রথম বাবা হওয়ার অনুভূতিটা বেশ অন্যরকমই। আকাশে বাকা চাঁদ উঠেছে। চারিদিকে ফাগুনের ঝিরিঝিরি বাতাস বইতে শুরু করেছে। সন্ধ্যার আগমনে রাস্তার দুপাশের সোডিয়াম লাইট গুলো জ্বলতে শুরু করেছে। সুপ্তির জন্য একটা টেডিও নিয়েছি।
ঘড়িতে এখন ৭টা বেজে ১৫ মিনিট। নাহ্ আর দেরি করা যাবেনা। তাই ব্যস্ত শহরের পথে পা বাড়ালাম। কিন্তুু একি!! আমার নিঃশ্বাস বন্ধ হয়ে যাচ্ছে কেন, সবকিছু যেন ঝাপসা হয়ে যাচ্ছে। আহহ্ মাথায় প্রচন্ড ব্যাথা করছে। (রাস্তা পারাপার হওয়ার সময় হঠাৎ একটা ট্রাক এসে শুভকে ধাক্কা দেয়)। হয়ত আর সুপ্তির মুখখানি দেখা হবেনা। বলতে পারবনা এই পাগলি এই, দেখনা তোমার জন্য কী এনেছি। জানিনা আমার এ অবস্থা জানার পর সদ্য পোয়াতি মেয়েটার কি অবস্থা হবে। কী অপরাধ করেছে আমার সদ্য অঙ্কুরিত সন্তান, যে পৃথিবীতে আলো দেখার আগেই তার বাবাকে হতে হচ্ছে পৃথিবী হারা। “সুখের আশায় বেধেছিলাম বুক, আমি এক যাযাবর ; আশার ভেলা ডুবল অতলে,বোবা পৃথিবীটা করিল পর। “