শেষ থেকে শুরু

শেষ থেকে শুরু

আজ নীলুর বিয়ে। চুপচাপ ড্রেসিং টেবিলের সামনে বসে আছে। পার্লারের দুটো মহিলা তাকেসাজাচ্ছে। নিজেকে দেখতে কেমন লাগছে তাআয়নায় তাকিয়ে দেখার বিন্দু মাত্র ইচ্ছে নেই নীলুর, অথচ বউ সাজাটা একটা নেশা ছিলো তার। সাব্বিরের আবদারে অনেকবার নিজে নিজে বউ সেজেছিল নীলু। সে এইদিনটার অপেক্ষাকরতো যেদিন সত্যিকারের বউ সাজতে পারবে।আজকে এইদিনটা এসেছে কিন্তু সাব্বির জীবন থেকে চলে গেলো। আপাতত আনমনা হয়ে শুধু সাব্বিরের কথাই ভাবছে। কিছুক্ষণ আগ পর্যন্তও নীলু অধীরে অপেক্ষা করেছিলো সাব্বির একটি বারের জন্য হলেও কল দিয়ে বলুক; “নীলু বিয়েটা তুমি করো না, একটু ব্যাস্ত ছিলাম তাই যোগাযোগ করতে পারিনি। আমি এক্ষুনি আসতেছি তোমায় নিয়ে যেতে। তুমি আর কারো হতে পারবা না।” কিন্তু না, কিছুই হলো না। সাব্বির গত পরশু বিয়ের কথা শুনার পরও খুব ইজিলি বলেছিলো “ম্যানিকনগ্রাচুলেশানস নীলু!”

পাঁচটি বছর সাব্বির আর নীলুর সম্পর্ক ছিলো। একটা সম্পর্ক পাঁচ বছরের মতো দীর্ঘায়িত হলে সেটা আর একটা নামমাত্র সম্পর্কে আবদ্ধ থাকে না, এটা একটা সংসারে পরিণত হয়। কত স্বপ্ন আর কত স্মৃতি তিলে তিলে গড়ে উঠেছিলো যা নিমিষেই মিথ্যেহয়ে গেলো আজ! সব স্বপ্ন পূরণ হওয়ার খুব কাছে এসেও যে সব শেষ করে দিবে সাব্বির, এটা কে জানতো? অনেক কষ্টে সাব্বিরের কথানীলু তার পরিবারের কাছে জানিয়েছিলো, নীলুরবাবা মা তাদের একমাত্র মেয়ের সুখের কথাভেবে মেনেও নিয়েছিলেন। কিন্তু সাব্বিরএরকম একটা সময়ে বাহানা শুরু করে দিলো!

সে এখন বিয়ে করবেনা। আর কতদিন একটা মেয়ের পক্ষে অপেক্ষা করা উচিত ছিলো? একটা সম্পর্ক পুরানো হয়ে গেলে নাকি আস্তে আস্তে ছেলেদের কাছে সেটা তেতো লাগতে শুরু করে, হয়তো সাব্বিরের এমনটাই লাগছিলো।সবকিছু ঠিকঠাক থাকায় আর সহজে পেয়ে যাওয়ায় সেটার আর মর্যাদা দিলো না। নীলু অনেক কান্নাকাটি করেছিলো। সুইসাইড করবে এটা পর্যন্ত জানানো সত্ত্বেও সাব্বিরের মন গলাতে পারেনি। আসলে নীলু’ই বড্ড বেশি ভালোবেসে ফেলেছিলো সাব্বিরকে। সাব্বিরের আগ্রহ সেটা সেই প্রথম কয়েক মাস পর্যন্তই ছিলো। পরে যার জোরে সম্পর্কটা এগিয়ে যায় সেটা নীলুর’ই। কতটা দিন বিছানায় পরে পরে কাঁদলো তার ইয়ত্তা নেই। আর না পেরে কোন ভরসা না পেয়ে মা বাবার পছন্দ করা ছেলেকেই বিয়ে করতে রাজি হলো নীলু। এদিকে মিসেস সায়েমা সুলতানা, নীলুর হবু শাশুড়ি। সকাল থেকে ছেলের দরজায় টোকা দিতেছেন আর ডাকতেছেন উনার ছেলেকে;

– রবিন বাবা উঠ! আল্লাহর দোহাই লাগে আর ঘুমাইস না। আজকে তর বিয়ে বাপ! উঠস না ক্যান? অনেক্ষণ পর রবিন দরজা খুলে কাঁথা গায়ে পেঁচিয়ে বের হলো;

– আম্মা আজকে বিয়ে করবো না। কালকে করবো। আমাকে ঘুমাতে দাও। শরীরটা ভালো না।
– এটা কি বলিস! আজকে বিয়ে করবিনা মানে! অ আল্লাহ্! এমন করেনা বাপ, আজকের দিনটা অন্তত জ্বালাইস না। আমার প্রেসার বেড়ে যাচ্ছে।

– আম্মা আমার বোধহয় জ্বর উঠছে, আজকে বিয়ে করা সম্ভব না। মিসেস সায়েমা ছেলের কপালে হাত দিয়ে চিৎকার দিয়ে মুর্ছে যাওয়ার মতো অবস্থা। সত্যি সত্যি ছেলের গায়ে অনেক জ্বর। সারা বাড়ি চিল্লায়া এক করে ফেলেছেন। উনার ছোট ভাই আইসা সামাল দিলো; “আপা শান্ত হ তুই, আমি দেখতেছি সব। আজকে বিয়ে! এটা ক্যানসেল করা সম্ভব না, যেকোন মূল্যেই হোক কোনরকম বিয়েবাড়িতে নিয়ে গিয়ে কবুল পড়িয়ে হলেও আনতে হবে। নইলে কেলেঙ্কারি হয়ে যাবে।” এদিকে জ্বরের ঘোরে রবিন বলতেছে;

– মামা আমি কবুল। তোমরা ওরে নিয়ে আসো গিয়ে আমি যাচ্ছি না।

অনেক জোরাজুরি করে উঠিয়ে কোনরকম রেডি করে একরকম গাড়িতে শুইয়ে রওনা হলো সবাই। নীলুদের বাড়িতে সবাই বলাবলি করতেছে; “বর চলে আসছে!” হঠাৎ নীলুর কানে কানে ওর একটা কাজিন আইসা বলে দিলো; “আপু তর বর’তো লুলা। এইমাত্র দেখে আসলাম তিনজন মিলে কোলে করে নিয়ে আসছে” নীলু একথা শুনার পর কান্নায় ফুঁপিয়ে উঠলো। এই ছিলো তার কপালে! মা বাবার ভরসায় ছেলেকে না দেখেই বিয়েতে রাজি হয়েছিলো। তাই বলে এতোই কি খাদে পরে গিয়েছিলো যে লুলা ছেলের সাথে তার বিয়ে ঠিক হলো! এদিকে রবিন বরের স্টেজে কোনরকম উঠেই বালিশ পেতে শুয়ে পরেছে। ছেলের অবস্থা বেগতিক দেখে তাড়াহুড়ো করে বিয়ে পড়ানোর তাগাদা হচ্ছে বাড়িতে।

সন্ধ্যা গড়ানোর আগেই বিয়ের কার্যক্রম শেষ করে বর কণেকে গাড়িতে উঠানো হলো। নীলু একবারের জন্য তার বরের দিকে তাকালোও না। কোন কান্নাকাটি পর্যন্ত করেনি। শুধু চোখ দিয়ে অঝরে পানি ঝরছিলো। বড্ড অভিমান হচ্ছে তার বাবা মার প্রতি। তারাই শেষ ভরসা ছিলো। আজকেতারাই কিনা ফেলনা করে দিলো! নীলু এখনো জানেনা তার জীবনটা কোনদিকে মোড় নিচ্ছে। নিয়তি এতো খারাপ সময়ে এনে দাঁড় করাবে এটা কল্পনাও করেনি। সাব্বিরকে বড্ড অভিশাপ দিচ্ছে সে। নীলু বাসর ঘরে বিছানায় বসে আছে হাঁটু ভাজ করে। তার পাশেই তার বর কাঁথা কম্বল যা যা ছিলো সব মুড়িয়ে নাক ডেকে ঘুমাচ্ছে। কি বিচ্ছিরি অনুভূতি হচ্ছে তা প্রকাশ করতে পারছে না। জীবনটা এতো স্যাঁতস্যাঁতে কেনো হলো? মনে মনে বলছে নীলু। হঠাৎ নীলুর শাশুড়ি একটা বাটিতে কিছু জল আর একটা পট্রি নিয়ে রুমে ঢুকলেন;

– কি রে মা খারাপ লাগছে?

একথা শুনে নীলুর মেজাজ আরো খারাপ হয়ে যাচ্ছে। এই মহিলা’ই এক দেখায় নীলুকে পছন্দ করে ফেলছিলো। চিল্লায়া সেদিনই বলছিলো এটা আমার মেয়ে। আমি ওকেই আমার ছেলের বউ করবো। লুলা ছেলে যে সেটা আর বলে নাই! এতো খারাপ মানুষ কীভাবে হয়! মিনমিন করে নীলু বললো;

– না আমি ঠিক আছি।
– তর ভাগ্যটাই খারাপ রে, ছেলেটা আজকেই যে জ্বর বাধিয়ে ফেলবে কে জানতো? জ্বর এতোটাই যে কোলে করে নিয়ে যেতেহয়েছে তদের বাড়ি। আমার ছেলেটার জ্বর হলেখুব আলসে হয়ে যায় বুঝছিস! খুব আদর করেছেলেটাকে মানুষ করেছি। কেনো জানি শুভদিন গুলোতেই ওর জ্বর চলে আসে। সেবার ওর জন্মদিন, নিজেই বন্ধুদের নিয়ে সবকিছু সাজিয়েছিলো, কেক কাটার সময় কাঁথা মুড়ি দিয়ে শুয়ে পরেছে। পরে গিয়ে দেখি জ্বরে গা পুড়ে যাচ্ছে। আগেরবার ঈদের দিন একই অবস্থা। আর আজকে নিজের বিয়ের দিন, দেখতেছিস’ই তো। যাক নীলু ভাবছিলো, ছেলে বুঝি লুলা, এখন আসল কাহিনী বুঝলো। অনেকটা চাপ মুক্ত হলো। নীলুর শাশুড়ি তার ছেলের মাথা কোলে টেনে জলপট্টি দিয়ে দিচ্ছেন আর বলতেছেন;

– নীলু জানিস মা, আজকে আমার বিয়ের দিনটার কথা খুব মনে পরে যাচ্ছে। শুনবি? তর কি ঘুম পাচ্ছে? নীলুর আপাতত ঘুম পাচ্ছে না। এদিকে শাশুড়িকে খুব খারাপ মহিলাও মনে হচ্ছেনা আপাতত, যতটা ভেবেছিলো আগে। আর গল্প শুনতে এবং পড়তে দুটোই ভালোবাসে নীলু। ঘুম তো আজ হবেই না। সো অবলীলায় বললো;

– না মা আপনি বলেন।
– তর মুখে মা ডাকটা শুনে মনটা ভরে গেলো রে।

আমি তর মা হয়েই থাকতে চাই। আজকে আমরা দুজনে গল্প করেই রাতটা কাটিয়ে দেই, কীবলিস?  হুমম, বিষয় ভুলে যাবেন। বিয়ের দিনের কথা মনে পরে যাচ্ছে। তারপর থেকে বলেন নীলুর শাশুড়ি একটা হাসি দিয়ে বলতে শুরু করলেন;  আমার তখন খুব অল্প বয়স, ঘরের কোণে মাটির পুতুল নিয়ে খেলছিলাম। হাফ প্যান্ট আর গোল জামা পরা ছিলো। হঠাৎ আমার শ্বশুর বাড়িতে এসে হাজির। উনি বাবার বন্ধু ছিলেন। মূলত উনিই বিয়ের প্রস্তাব এনেছিলেন। আমি অতশত বুঝতাম না। আমার মা আমার জন্মের পরেই মারা যান। চাচীর কাছে বড় হই। সেদিন চাচীই আমাকে ঘরের কোণ থেকে তুলে জামার উপর দিয়েই একটা শাড়ী পেঁচিয়ে নিয়ে এসে দাঁড় করিয়ে ছিলেন আমার শ্বশুরের সামনে। উনি মুচকি হেসে বলেছিলেন; এই পুঁচকিটাকে কেনো খেলা থেকে ধরে আনতে গেলেন বেয়াইন? আমি একেই আমার ছেলের বউ করবো, এতো ভাইবেন না তো। ঠিক পরের সপ্তাহেই আমার বিয়ে। বিয়ে, বিয়ের অনুভূতি, কিংবা কেনোই বা বিয়ে? কোন কিছুই আমি জানতাম না। শুধু মনে হয়েছিলো এটাই নিয়ম। আমি বেড়াতে যাচ্ছি।

আমাদের এলাকাটি ভাটি অঞ্চলে ছিলো। প্রথমে নৌকা করে শহরে তারপর শহর থেকে একমাত্র যানবাহন লোকাল ট্রেন ছাড়া আর কিছুই ছিলোনা। নৌকা দিয়ে যখন বাপের বাড়ি ছেড়ে আসছিলাম তখন কেন জানি আমার এতো কান্না পেয়েছিল। এতো কষ্ট হচ্ছিলো বুঝাতে পারবো না। আর বেড়ানোর শখ হচ্ছিলো না। মন চাচ্ছিলো ঝাপিয়ে পরে সাতরে চলে যাই। নাহ্ তা আর হলোনা। স্টেশনের প্ল্যাটফর্মে বসে আছি। ট্রেনের অপেক্ষা, সবাই এদিক ওদিক ঘুরছে। আমার বর কে কিংবা কোথায় এটাও ভালো করে দেখিনাই। ঘরে অন্ধকারে কবুল বলার সময় আবজাব দেখেছিলাম। দুপুরের রোদে সিল্কের বেনারসী শাড়ী পরে গরমে সেদ্ধ হয়ে যাচ্ছিলাম বসে বসে। কোনদিন শাড়ী পরেনি আগে। কিছু পিচ্চি পাচ্ছির দল নেংটো হয়ে পুরো প্ল্যাটফর্ম ঘিরে আমাকে দেখছে। ইচ্ছে করছে আঁচলটা সরিয়ে দেই কয়েকটা ভেঙচি কেটে! আমি খুব ভালো ভেঙচি কাটতে পারতাম জানিস?

এবার নীলু হাসতে হাসতে গড়াগড়ি খাওয়ার অবস্থা। শাশুড়ি আর বউয়ের সেই সখ্যতা গড়ে উঠেছে। তারপর আবার বলতে শুরু করলেন মিসেস সায়েমা; তারো অনেকক্ষণ পর আসলো ট্রেন। হুইসেল বাজিয়ে থামার সাথে সাথে সবাই দৌড়ে ট্রেনে উঠে যাচ্ছে। আমি উঠে দাঁড়িয়ে দেখি আমার বর মানে তোমার শ্বশুর সিগারেট খেতে খেতে দৌড়ুচ্ছে। ওকে চিনলাম মাথার মুকুট আর গলার মালা পরা দেখে। বুঝো অবস্থা! কিন্তু আমি টায় দাঁড়িয়ে আছি। ট্রেন ছেড়ে দিবে হঠাৎ আমার দেবর ট্রেন থেকে নেমে দৌড়ে এসে বলতেছে; “আরে ভাবী হ্যাঁ করে দাঁড়িয়ে আছেন কেন? দৌড় দেন, ভাইয়ার অপেক্ষা করে লাভ নেই, গাধাটা আগেই উঠে বসে আছে।” দৌড়ানোর অভ্যাস আমার খুব ভালোই ছিলো। তারপর আমার দেবরকে রেখেই শাড়ী মুঠি করে ধরে হাঁটুর উপর তুলে দিলাম একটা দৌড়। বাঁদরদের সাথে বাঁদর হওয়া লাগে তা’নাহলে চলা দায়। হাহাহা নীলু খুব হাসছে। এতো হাসি আগে কখনো হাসে নাই। এরকম আজগুবি কাহিনী জীবনে প্রথম শুনলো। এদিকে ওর বর জ্বরের ঘোরেই বলতেছে মায়ের কোল থেকে;

– আম্মা আমিও ট্রেন দিয়ে বিয়ে করবো।
– চুপ কর হারামজাদা! বিয়ে করে বউ ঘরে বসে আছে সেই হুস নেই, উনি ট্রেন দিয়ে বিয়ে করবে! এক্কেবারে বাপের মতো হইছে ফাজিলটা।

নীলু হাসি আর থামাতে পারছেনা, নিজের বর আর শাশুড়ির কান্ড দেখে। তারপর আবার বলতে শুরু করলেন মিসেস সায়েমা; ট্রেনে কোনরকম উঠলাম। তোমার শ্বশুর ইচ্ছে মতো বন্ধুদের সাথে মজা তামাসা করছে আর আমি আবার নিশ্চুপ হয়ে বসে আছি। আমার দেবরটা অনেক ব্রিলিয়ান্ট ছেলে ছিলো। সেও ছোট, বাট ভালো বুঝতো। আমার সাথে একমাত্র সে’ই অনেক গল্প করেছিলো। বাড়িতে এসেই আমার বর ড্রেস চেঞ্জ করে ফুটবল খেলতে চলে গেলো। আমার শ্বশুরও বিভিন্ন কাজে ব্যাস্ত হয়ে গেলেন।

আমি একা মাটিতে চাটাই পেতে বসে আছি। অনেক পিচ্চি পাচ্ছি বৃদ্ধ জোয়ান ছেলে মেয়ে সবাই আমাকে আইসা দেখে যাচ্ছে। কতটা খারাপ সময় যাচ্ছিলো বুঝাতে পারবোনা। বেলা শেষে আমিও শাড়ী চেঞ্জ করে আমার ননদ আরো কয়েকটা সমবয়সী ছিলো তাদের সাথে খেলতে বসে গিয়েছিলাম। আমার শাশুড়িও অনেক ভালো মানুষ ছিলেন। সন্ধ্যার পর আমাকে বকে খেলা থেকে তুলে হাত পা ধুইয়ে ঘরে নিয়েছিলেন। আমি রাতে উনার সাথেই ঘুমিয়ে ছিলাম। তারপর ছয়দিন এভাবে শাশুড়ির কাছেই শুইছি। আস্তে আস্তে উনিই আমাকে মাথায় হাত বুলিয়ে বুলিয়ে জীবন আর সংসার বুঝিয়ে ছিলেন। আজ অবধি আমি উনাকেই অনুসরণ করে সংসার করে যাচ্ছি।

এতক্ষণ এসব কথা বলার কারণ হলো এটাই বোঝাতে যে; জীবন কখন কীভাবে মোড় নেয় আমরা জানিনারে মা। একটা সময় এই বাড়িটাই দেখবি তর সবকিছু। নিজেকে নিজেই খাপ খাইয়ে নিতে হবে। জীবনের বাঁকে বাঁকে নিজেক মানিয়ে নিতে পারলেই জীবন সুন্দর। প্রত্যাশা কখনো কখনো মিথ্যা হয়ে যায়। যদি প্রত্যাশা মিথ্যে হয়ে যায় তবে এটাই ভাবতে হবে, ” জীবন প্রত্যাশার চেয়েও অনেক বেশি কিছু দিতে পারে। ধৈর্য ধরতে হবে।”

নীলু তার বরের মাথা শাশুড়ির কোল থেকে সরিয়ে বালিশে রেখে নিজে কোলে শুইলো। শাশুড়ি তার মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছেন। একটু পরেই ভোর হবে, আজানের ধ্বনি ভেসে আসবে। নামাজ পড়ে উঠে জীবনটাকে নতুন করে সাজানোর প্রতিজ্ঞা করছে নীলু। আর কোন কষ্টই থাকে গ্রাস করতে পারবেনা। যে চলে যাওয়ার হাজার চেষ্টাতেও তাকে আটকানো সম্ভব না। সে তার ভালোর জন্যই চলে যায়, ভালোই থাকে। তার জন্য নিজের জীবন শেষ করে দেয়াটা নিরর্থক। শেষটা থেকেই নাহয় জীবনটা আবার শুরু হোক। সকাল আটটার সময় কারো ডাকে ঘুম ভাঙ্গে নীলুর এবং হাতে আলতো কারো স্পর্শ পায়। খুব সুন্দর একটা কন্ঠ; “নীলু…এই নীলু উঠো” নীলু চোখটা নিভু নিভু করে খুলে তাকিয়ে দেখে তার বর নাস্তা নিয়ে হাজির। লাফিয়ে উঠে বললো নীলু;

– আপনার জ্বর নিয়ে উঠতে গেলেন ক্যানো? ইশ! আমার কখন যে ঘুম পেয়ে গেলো।
– আরে ধ্যাত ব্যাপার না। জ্বর ভ্যানিশ হয়ে গেছে।

আম্মা আর আমি মিলে নাস্তা বানালাম। ঝটপট উঠে খেয়ে নাও। নীলু এই প্রথম তার বরকে দেখছে। মনে মনে ভাবছে; “ছেলেটা এতো আহামরি আধুনিক না হলেও দেখতে কিন্তু বেশ মায়াবী আছে, এজন্যই বাবা এক দেখাতেই রাজি হয়েছিলেন। ক্রাশ খাওয়ার মতো যথেষ্ট উপাদান বিদ্যমান। বাকিটা গড়তে হবে আমার। ব্যাপার না। একেই হয়তো “সেকেন্ড চান্স অফ লাইফ” বলে। মিস করা যাবে না। কোনভাবেই না।”

গল্পের বিষয়:
ভালবাসা
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত