ভালোবাসার কান্না

ভালোবাসার কান্না

রাত দুটোয় আমার বৌ আমার উপর উঠে বসে আমাকে কিল ঘুষি মারতেছে তাও শুধু একটি ফোন না করার জন্য। আজ বিকেলে একটু তাকে নিয়ে ঘুরতে যাবো এমন টা বলেছিলাম।দুপুর থেকেই নাকি সে রেডি হয়ে বসে ছিলো।আমি বাড়ির দিকেই ফিরছিলাম তখন অফিসে একটি কাজ পড়ে যাওয়ায় আবার চলে যেতে হয়।আর ব্যস্ততায় তাকে ফোন দিয়ে প্লান ক্যান্সেল এর কথা বলতে ভুলে গেছি। বাড়ি ফেরার পর ও সব স্বাভাবিক ছিলো,কিন্তু রাতে খেয়ে বিছানায় শুতে আসার সময় ই ঘটলো বিপত্তি টা।সে কিছু বলে নাই দেখে আমি ও তাকে কিছু বলি নাই।তবে রাতে রুমে ঢুকে বিছানায় এসে বসতেই সে আমার বালিশ টা ছুড়ে ফেলে দিলো।হঠ্যাৎ করে এমন আচরণে আমি খুব বেশি অবাক হলাম না, কারণ সে মাঝেমধ্যেই রাগ উঠলে এভাবে জিনিস পত্র ছুঁড়ে ফেলে। আমি শান্ত ভাবে তাকে জিজ্ঞেস করলাম,

–কি হয়েছে? সে আমাকে বড় বড় চোখ করে বললো,
–কি হয়েছে জানো না!
–না তো,কি হয়েছে?
–আজ বিকেলে কোথায় যাওয়ার কথা ছিলো। আমি বুঝতে পারলাম তার মাথা এখন গরম হয়েছে।আমাকে এখন চুপ করে থাকতে হবে।
–চুপ করে আছো কেনো,উত্তর দাও?
–কি!
–আজ বিকেলে কোথায় যাওয়ার কথা ছিলো?
–ঘুরতে।
–তাহলে এলে না কেনো?
–কাজ পড়ে গিয়েছিলো?
–তাহলে ফোন করা যায় না,নাকি তাও ভুলে গেছো!

–হ্যা,ভুলে গেছিলাম। ব্যাস আমাকে টান দিয়ে ফেলে বাচ্চা দের মতো আমার উপর উঠে আমাকে কিল ঘুষি দিতে শুরু করলো। আমি তাকে থামিয়ে বললাম,
–আচ্ছা, এখন কি করলে রাগ ভাঙবে শুনি? আমাকে অত্যাচার করা বন্ধ করবে!
–আমাকে এক্ষুনি ঘুরতে নিয়ে যাবে।
–ঘড়িতে সময় দেখো তো? সে পেছনের দিকে তাকিয়ে,
–দুইটা।
–এখন কিছুই খোলা থাকবে না, ঘুমাও। আগামীকাল সকালে নিয়ে যাবো।
–নাহ্ আমার এক্ষুনি যেতে ইচ্ছে করছে।এখন না গেলে কিল ঘুষি খাও সকাল পর্যন্ত। বলেই আমাকে একটা ঘুষি মুখের মধ্যে মারলো। আমি খুব বেশি ব্যথা না পেলেও এমনি একটু শব্দ করে ককিয়ে উঠলাম।সাথে সাথেই সে আমার হাত সরিয়ে আমাকে ফু দিতে দিতে কানে হাত ধরে সরি বলতে লাগলো।

–খুব জোরে লেগেছে নাকি,সরি সরি আমি দেখতে পাইনি। আমি একটু অভিনয় করে গালে হাত দিয়ে,
–উঁহ মা গো।

সাথে সাথেই সে নেমে গেলো আমার উপর থেকে।দৌড়ে গিয়ে ফ্রিজ থেকে বরফ নিয়ে এলো। ততক্ষণে আমি উঠে বসে আছি। সে বরফ এনে হাতে নিয়ে অত্যন্ত যত্ন সহকারে গালে লাগিয়ে দিতে থাকলো। আমি ফ্যাল ফ্যাল করে তার দিকে তাকিয়ে থাকলাম। সে খুব ধীরে ধীরে আমাকে বরফ লাগিয়ে দিচ্ছে যেনো আমি ব্যথা না পাই। বরফ লাগিয়ে দিয়েই সে অন্য রুমে চলে গেলো।বিছানায় মাথা পেতে ফুঁপিয়ে কাঁদতে শুরু করলো।তার আচরণ গুলোতে আমি খুব বেশি অবাক হই।বিয়ের প্রায় এক বছর হতে চললেও এখনো আমি ঠিক মতো তাকে বুঝে উঠতে পারি নি। তার কান্নার শব্দ শুনে আমি অন্য রুমে গেলাম। তার সামনে বসে তার হাত টি হাতে নিয়ে জিজ্ঞেস করলাম,

–কি হলো কাঁদছো কেনো!
–আমি তোমার গায়ে হাত তুলে তোমাকে কষ্ট দিয়েছি।
–তাহলে কষ্ট দিতেই বা গেলে কেনো! সে আমার দিকে মাথা তুলে একবার তাকালো।সে বোধহয় এমন প্রতিউত্তর আশা করে নি।তারপর বলল,
–আমি তো মজা করেই করছিলাম। জানতাম নাকি আমি যে তোমার এতো লাগবে।
–আরেহ্ আমিতো ব্যথা পাই নি, শুধু অভিনয় করছিলাম।
–কিহ্, বলেই বালিশ দিয়ে আমাকে বারি দিতে শুরু করলো।

সকালে ঘুম থেকেই উঠে আজ খুব অবাক হলাম। সে এখনো ঘুমিয়ে আছে।প্রতিদিন আমার আগেই ঘুম থেকে উঠে যায় কিন্তু আজ,আজ আমার কপালে বোধহয় মন্দ কিছু আছে,গতকাল ফোন করার জেদ এখন অব্দি যায়নি মনে হয়। আমি আর তাকে ডাকলাম না।প্রতিদিন ই বেচারি কতো কাজ করে আজ একটু ঘুমাক।আমি অফিসে ফোন দিয়ে ছুটি নিয়ে ফেললাম। রান্না ঘরে আজ অনেক দিন পর ঢুকলাম।মেসে থেকে ফেরার পর আর রান্না করা হয় নি।মা যতোদিন ছিলো তিনিই রান্না করতো আমি মাঝেমধ্যে সাহায্য করতাম কিন্তু বৌ আমাকেরান্না ঘরে আসতেই দেয় না। রান্নাঘরে গিয়ে সকালের নাস্তা রেডি করে রুমে নিয়ে গিয়ে পর্দা টা টেনে দিলাম।বাহিরের আলো এসে তার চোখে পড়ার সাথে সাথেই ঘুম থেকে উঠে গেলো। ঘুম থেকে উঠে একবার টেবিলে রাখা খাবার গুলোর দিকে তাকিয়ে ফ্রেশ হতে চলে গেলো।ফ্রেশ হয়ে এসে চুপ চাপ খেলো।

আমি ততক্ষণে রেডি হয়ে গিয়েছি।আমাকে রেডি দেখে সে আরো কিছুটা রাগ করলো। তবে আমি যে এখন অফিসে যাচ্ছিনা সেটা সে জানে না,আর তার রাগ ভাঙানোর পদ্ধতি টা আমি জানি। তাকে রেডি হতে বলে আমি বেরিয়ে পড়লাম।বাহিরে বেরিয়ে নিচে থাকা চায়ের স্টলে গিয়ে একটা সিগারেট ধরালাম। বহুদিন সিগারেট খাওয়া হয় নি।সিগারেটের দাম টা ও আজকাল বেড়ে গিয়েছে।সিগারেট ধরিয়ে অন্য হাতে চায়ের কাপ নিয়ে একটা চুমুক দিলাম। যেনো সব ক্লান্তি চিন্তা দূর হয়ে গেলো। সিগারেট খাওয়াটা ছেড়ে দিয়েছি,তবে মাঝেমধ্যে খাই। বাসায় ফেরার পথে ফুঁচকা নিয়ে ঢুকলাম।রুমে ড্রেসিং টেবিলের সামনে বসে টুকটাক নিজেকে গুছিয়ে নেওয়ায় ব্যস্ত থাকা আমার বৌ ফুচকার দিকে একবার তাকিয়ে উঠে দাঁড়ালো। হাতের চুড়ি গুলো খুলতে খুলতে সে অভিমানের সুরে বলতে লাগলো,

–ফুচকা এনে আমার রাগ ভাঙানোর চেষ্টা হচ্ছে তাই না।সব উপায় ই জানো তুমি! তোমাকে বলেছিলাম না সিগারেট খেয়ে বাসায় ঢুকবে না,তাও কে শুনে কার কথা? আমি মাথা নিচু করে থাকলাম। চুড়ি গুলো হাতে নিয়ে তার হাতে পরিয়ে দিতে যাওয়ায় সে সরে গেলো।

–যাও লাগবে না তোমার পরিয়ে দেওয়া।আর যাবো না তোমার সাথে ঘুরতে।কতো বার করে বলেছি সিগারেট খেও না। আমি শান্ত ভাবে বললাম,

–অনেক দিন পর আজ মুখ টা খালি খালি লাগছিলো, তাই অর্ধেক টা টেনেছি।
–বিষ অর্ধেক বা পুরো যতটুকুই হোক বিষ কখনো অমৃত হতে পারে না।
–আচ্ছা,আর খাবো না যাও।
–এই কথাটা অনেক বার শুনেছি।
–এই শেষ বার।
–সত্যি তো!
–হ্যা,

বলেই সে কান্নায় ভেঙে পড়লো।সে প্রায় ই এভাবে আমাকে জড়িয়ে ধরে কাঁদে।তার কাঁদার কারণ টা তাকে বহুবার জিজ্ঞেস করেছি তবে সে কখনোই বলেনি।আজ আর জিজ্ঞেস করবো না।আমি ও তাকে বাহুডোরে ভরে নিলাম।তার কান্না নিয়ে আমার অনুমান আছে একটা, এটা বোধহয় তার ভালোবাসার কান্না। ভালোবাসা চোখে দেখা যায় না,তবে আমার প্রতি তার অনুভূতি গুলো, ভালোবাসা গুলো সে বোধহয় চোখ ভিজিয়েই প্রকাশ করে।

গল্পের বিষয়:
ভালবাসা
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

সর্বাধিক পঠিত