কিউট সাইকো

কিউট সাইকো

– কোচিং এ গেসিলা আজ?
– নাহ
– কেনো?
– এমনি। ইচ্ছে হয় নি।
– কি করসো? ঘুম?
– নাহ। টিভি দেখসি। জানো আজকে অমুক চ্যানেলে না…

প্রেমিকার প্রতি অতিরিক্ত যত্নশীল ছেলেটা হঠাৎ টের পায় অতিট্যালেন্টেড এই মেয়েটা বাকি সব কিছুতে আপ টু ডেট থাকলেও পড়াশুনাতে ব্যাপক ফাঁকি দিচ্ছে। দিনের পর দিন ব্যাপারটা বুঝতে পারলেও এতদিন গায়ে লাগে নাই-কিন্তু হঠাৎ ব্যাপারটা তার মাথায় আঘাত করলো- মেয়েটার এইচএসসির বেশিদিন নাই। তারপর বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে এডমিশন পরীক্ষা। ইন্টারে রেজাল্ট ভালো না হলে এডমিশনই দিতে পারবে না ভালো কোথাও। ভালো কোন ভার্সিটিতে চান্স না পেলে পরে তাদের রিলেশনটার ব্যাপারে আব্বু আম্মুকে মানানোটা আরো কষ্ট হবে। ব্যাপারটা শুনতে খুব বাজে লাগলেও এটাই বাস্তবতা। সে নিজে থাকে দূরে। কাছে থাকলে নিজেই পড়াতো। মেয়েটা সব সাবজেক্টে কোচিং করে। বাসায় কোন টিউটরের কাছে পড়ে না। এতদিন এটা ভালোই লাগতো- কোন ছেলে এসে তার সাথে একান্তে কিছুটা সময় কাটাচ্ছে- পড়ানোর জন্যই হোক, কিছুটা হলেও অস্বস্তির। কিন্তু এখন মনে হচ্ছে বাসায় তার এক্সট্রা কেয়ার নেওয়াটা দরকার।

– এই শুনো!
– হু বলো
– তুমি বাসায় ম্যাথ প্র্যাক্টিস করছোতো?
– করিতো!
– প্রতিদিন?
– কোচিং এ যা বাড়ির কাজ দেয়…
– এমনি বাসায় করো না?
– টাইম কই বলো?

– এগুলা কোন কথা? ডেইলি এক্সট্রা ম্যাথ না করলে তো বিপদ। প্র্যাকটিসে না থাকলে সব ভুলে যাবা! তুমি এক কাজ করো, টিউটর খুঁজো একটা ম্যাথের জন্য।
– ধুর। এখানের টিউটর গুলা একটাও ভালো না। বলছিনা তোমাকে লাস্ট টিউটর কি ফালতু টাইপ ছিলো? শেষমেস প্রপোজই করে বসলো!
– ক্লাসের ফার্স্ট সেকেন্ড গার্লদের সাথে কথা বলো। এত বড় শহরে একটা ভালো টিচার নাই?
– আচ্ছা, দেখি…

মেয়েটার গলায় তখন ততটা সিরিয়াসনেস দেখা না গেলেও একটা সময় ছেলেটার চাপেই ম্যাথ টিচারের খোঁজ করতে শুরু করলো। এবং কিছুটা দ্রুতই পেয়েও গেলো! এইটিচারটা তাদের কোচিং এ নতুন ক্লাস নিচ্ছে। খুব নাকি ভালো বুঝায়! ক্লাসে নাকি হাসায়ও- প্রেমিকার কন্ঠে কোন শিক্ষক নিয়ে এই প্রথম কিছুটা উচ্ছ্বাস দেখে ছেলেটা খুশিই হলো। তাও পড়ুক, কোন কারণে ইন্টারে এ প্লাস মিস গেলে সর্বনাশ হয়ে যাবে! যাই হোক, কোচিং এর ওই ছেলেকে মেয়েটা গিয়ে বাসায় এসে পড়ানোর প্রস্তাব দেওয়ার পর সে রাজি হলো। এই টিচার মেয়েটার বয়ফ্রেন্ডের সমবয়সী, কিন্তু এটা নিয়ে তার আপাতত কোন মাথাব্যাথা দেখা গেলো না। সে শুধু মেয়েটা টউটর থেকে ঠিক মত পড়া আদায় করছে কিনা সেটা নিয়েই আগ্রহী।

এদিকে মেয়েটার পরীক্ষা যত কাছে আগাতে থাকলো তারভা লোবাসার মানুষটার কথার  টপিকও দিন দিন একঘেয়ে হতে লাগলো। ছেলেটা ফোন দেয়, ক্লাস কোচিং কিছু আছে কি না জিজ্ঞেস করে, স্যারের পড়া পড়েছে কি না জানতে চায় আর খাইসো কিনা, ঘুমাইসো কিনা এরকম দু একটা গৎবাঁধা কিছু প্রশ্ন করার পর “আচ্ছা পড়ো তাহলে রাখি” বলে ফোন রেখে দেয়। মেয়েটার বিরক্তি বাড়তেই থাকে। পড়াশুনার খোঁজ খবর নেওয়া ছাড়া তার যেন আর কোন কাজ নেই, সে যেন তার বড়ভাই গোছের কিছু হয়ে গেছে! এই প্রচন্ড চাপের সময়ে যে তার পড়ার উপদেশ ছাড়াও যে একটু মেন্টাল সাপোর্ট, একটু প্রেমিকের আদর লাগে ছেলেটা ভুলেই গেছে! তাকে আজকাল খুব অচেনা লাগে।

একদিন রাতের বেলা। সে সারাদিন পর মেয়েটাকে ফোন দিয়ে বিজি পেলো। ব্যাপার না। কিছুক্ষণ পর আবার ফোন করলো। বিজি। এরপর দশমিনিট, বিশমিনিট ধরে ছেলেটা ফোন দিয়ে গেলো। তার বুক হালকা ঢিপঢিপ করতে শুরু করেছে। এত রাতে ফোন বিজি কেন। কোন সমস্যা হয়নি তো? অবশেষে মেয়েটা যখন ফোন ধরলো তখন ছেলেটার গলা কাঁপছে। “কার সাথে কথা বলছিলা?” যতটা সম্ভব স্বাভাবিক গলায় জিজ্ঞেস করলো সে।

“রাশেদ ভাইয়ের সাথে”
“রাশেদ ভাইটা কে?”
“কেন? আমার স্যার!”
“অ। এতক্ষণ? ”
একটা অংক বুঝছিলাম না। উনি বুঝিয়ে দিলেন” “না বুঝলে তো আমাকে ফোন দিতে পারতা” “তোমাকে ফোন দিবো কেন অংক বুঝার জন্য?তুমিকি আমার ম্যাথ টিচার? তোমাকে তো বেতন দিচ্ছি না!” ছেলেটা নির্বাক হয়ে গেলো এই কথা শুনে। এরপর প্রায়ই রাতে মেয়েটার ফোন বিজি থাকতে শুরু করলো। সে কিছুই বলে না। স্যার আগে এক কি দেড় ঘন্টা পড়াতো। এখন দুই ঘন্টা পরফোন দিলেও শোনা লাগে “স্যার আছেন, বাই”। ছেলেটা ছটফট করে। কিছু বলতেও পারেনা। এই স্যার তার চাপেই রাখা হয়েছে। আর স্যারকে জড়িয়ে বিন্দুমাত্র সন্দেহ প্রকাশ করলে তার পরিণতি ভয়াবহ হতে পারে- সেই যন্ত্রণা নেওয়া যাবে না। সন্দেহ ঠিক হোক বা ভুল হোক এরকমকিছু বললেই “তুমি আমাকে সন্দেহ করো?” এই কথা বলে সব কিছু বন্ধ করে দিয়ে বসে থাকবে মেয়েটা। সে এক সুদীর্ঘ প্রক্রিয়া আবার সব কিছু ঠিকঠাক করা… সে সইতেও পারছে কইতেও পারছে না কিছু- শুধু মাথায় হাত দিয়ে মনে মনে বলছে- “মানুষ খাল কেটে কুমির আনে… আমি তো নিজে ডিম পেরে ডাইনোসর জন্ম দিসি!” এরকম একদিন স্যার পড়াতে আসার প্রায় আড়াই ঘন্টা পড় তার ফোন রিসিভড হলো।

– আড়াই ঘন্টা পড়ালো?
– হুম
– কি পড়ায় এত?
– কি পড়ায় মানে? ম্যাথ করায়!
– আড়াই ঘন্টা কি ম্যাথ করায় যে রাতে আবার ফোনে ঘন্টার পর ঘন্টা বুঝা লাগে?
– আমার স্যার, আমি যেভাবে খুশি সেভাবে পড়া আদায় করবো, তোমার সমস্যা কি?

তুমিই না সারাদিন বলতা- আমি ফাঁকি দেই, পড়া আদায় করি না স্যারদের থেকে। এখনতো করতেসি। কি সমস্যা! ছেলেটাত গলায় কি যেন দলা পাকায়। চোখ ফেটেপানি বের হতে চাচ্ছে। বহু কষ্টে সে গলার স্বর স্বাভাবিক রাখার চেষ্ট করতেকরতে বলে “আই মিস ইউ”

– মিস মি? হোয়াই?
– তোমাকে পাচ্ছিই না আমি আজকাল…
– পাচ্ছোনা মানে? এই যে আমি!
– না! সারাদিন কলেজে, কোচিং এ থাকো, সন্ধ্যার পর থেকে টিউটর, রাতেও ফোনবিজি থাকে আমার সাথে তো তোমার কথাই হয় না!
– ও তাই! তোমার আমার সাথে কথা বলাও লাগে নাকি? আমি তো জানতাম আমি পড়াশুনা করলেই হ্যাপি থাকো তুমি! আমি তো তাই আছি!
– এভাবে বলছো কেন…
– এন্ড ইউ নো হোয়াট? থ্যাংক ইউ!

তুমি না চাপ দিলে রাশেদ ভাইয়ের মত অসাধারণ একটামানুষের সাথে আমার পরিচয় হতো না। এত জোস কিভাবে হয় একটা  ছেলে! কি তার পার্সোনালিটি! কত্ত মনোযোগ দিয়ে আমার সব কথা শুনে… নিজের মত কথা বলে চলেও যায় না, হুটহাট ফোন রেখে দেয় না… পড়াশুনা ছাড়াও যে আমি একটা মানুষ সেটা মানুষটার সাথে থাকলে টের পাই মেয়েটা হঠাৎ টের পায় অইপাশেছেলেটা নীরবে কাঁদতে শুরু করেছে। প্রাণপণ চেষ্টা করছে কান্নাটা লুকানোর।কিন্তু মেয়েট ঠিকই টের পায়। এই ছেলের নিঃশ্বাসের একটা এদিক উদিক হলেও সে বুঝে ফেলে।

– এই ছেলে তুমি কাঁদছো কেন?
– কই? কাঁদছি না আমি
– মিথ্যা বলবা না তুমি আমার সাথে!
– না বলছি না। আর শুনো!

ইউ আর রাইট আমি আসলেই তোমার কথা শুনিনা। স্বার্থপরের মত শুধু পড়ালেখা, রেজাল্ট, পরীক্ষা এসব নিয়ে কথা বলি। তুমি যে একটা মানুষ আমি ভুলেই গেছি… (তার গলা ভেংগে যায়, অসহায়ের মত ফোঁপাচ্ছে সে)… আর তুমি যদি চাও, ইউ ক্যান চুজ দা বেটার পারসন… যে তোমার কথা শুনবে… আমি তোমার ভালোবাসা পাবার যোগ্য না আসলেই আমি চুপচাপ ভ্যানিশ হয়ে যাবো, তোমাকে কোন ডিস্টার্ব করবো না আর সে আর কথা বলতেপারে না। নিঃশব্দ কান্নায় দমকে দমকে উঠছে তার শরীর। চোখের পানিতে সারা গাল মাখামাখি হয়ে গেছে।

নিজেকে নিজের দোষে সর্বস্ব হারানো এক নিঃস্ব মনে হচ্ছে। সব শেষ হয়ে গেলো এভাবে! নিজের দোষে! অসহায়ের মত নীরবে কাঁদতে কাঁদতে সে হঠাৎ শুনলো মেয়েটা তাকে চুমু খাচ্ছে। সে ভাবলো নিশ্চয়ই ভুল শুনেছে। শক্ত করে সে কানে ফোন চেপে ধরলো। মেয়েটা তাকে আরো দুটো চুমু খেয়ে ফিসফিস করে বললো, “এই বোকাছেলে! কাঁদে না! কোত্থাও যেতে দিবো না আমি তোমাকে!” ছেলেটা এবারআর লুকাতে পারলো না। কন্ঠ ভেংগে কান্না আসছে, সে বিকৃত গলায় বললো “আমি সরি…” মেয়েটা চুমু খেতে খেতে ধমক দিচ্ছে “এই বোকা ছেলে! কানতে মানা করসি না?” ছেলেটা ছোট বাচ্চাদের মত হেচকি তুলতে তুলতে বললো “তুমি তো আমাকে আর ভালোবাসো না… ঐ রাশেদের সাথে কথা বলো… তাকে আটকায়া রাখো ঘন্টার পর ঘন্টা”!

“ধুর বোকা! তোমাকে একটু টাইট দেওয়া দরকার ছিলো। তাই অইসব করসি!” “মানে?” “মানে এখন পর্যন্ত কোন দিনই অই ব্যাটার সাথে আমার রাতে কথা হয় নাই। প্রথমদিন আপু ফোন দিসিলো। আর এরপর আমিই রাতে তুলি, রুনু এদের ফোন দিয়ে বিজি করে রাখতাম!” “কি?!” ছেলেটার চোয়াল আক্ষরিক অর্থেই ঝুলে পড়ে। “হু। আর রাশেদ স্যার যত ভালোই বুঝাক শালা আমার চেয়ে বড় ফাঁকিবাজ! একঘন্টাও থাকতে চায় না। আমি এম্নিই বলতাম স্যার আছে” ছেলেটা হতভম্ব। সে কাঁদতেও ভুলে গেছে। “এসব করসো কেনো?”

“তুমি পচা হয়ে যাচ্ছিলা তাই। ফোন করে খালি পড়া পড়া পড়া! আর কোন কথা নাই!আমি যে তোমাকে কত্ত মিস করি কোন খেয়াল নাই! একদম পচা একটা! তোমাকে এই টাইট দেওয়াটা খুব দরকার ছিলো। শিক্ষা হইসে?” “হু” “কেমন শিক্ষা?” “মনে হচ্ছিলো আমার বুকের ভেতরটা ছিঁড়ে যাচ্ছিলো” “বুঝছি, আর ছিঁড়া লাগবে না। এখনআদর দাও। কতদিন আদর করো না তুমি আমারে বদ পোলা একটা!” ছেলেটা ভেজা চোখ নিয়ে পাগলের মত বহুদুরে বসে থাকা মেয়েটাকে চুমুতে ভিজিয়ে দিতে দিতে ভাবে, এরকম ভয়ংকর নিষ্ঠুর অথচ কিউট টাইপের সাইকো হবার ক্ষমতা শুধু মেয়েদেরই আছে!

গল্পের বিষয়:
ভালবাসা
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত