~ কিরে দোস্ত শুনলাম তুই নাকি সেমিস্টার পরীক্ষা দিবি না! (রাজু)
– হ দোস্ত। ঠিকই শুনছস। টাকার প্রব্লেম তাই। (আবিদ)
~ অবন্তীকে বল।
– নারে! আচ্ছা এখন যাই।
আবিদ কানে হেডফোন গুজে দিয়ে হাটতে লাগল। কিছুদূর যাবার পর কে যেন কান থেকে হেডফোন খুলে দিল। আবিদ ঘুরে দেখল অবন্তী। মেয়েটার দিকে আবিদ বেশিক্ষণ তাকাতেই পারে না। অবন্তীর মায়াবী চেহারায় আবিদ দুর্বল হতে চায় না। যদিও তারা কলেজের বেস্ট যুগলদের মধ্যে অন্যতম। ইদানিং ধরে আবিদ এই সম্পর্কের ইতি চাচ্ছে। কারণ আবিদ নিজেকে অবন্তীর যোগ্য মনে করে না।
> এই তোমাকে না বলেছি রাস্তায় হাটার সময় কানে হেডফোন লাগাবা না। কথার কোনো দাম নাই নাকি?
– লাগালে কি হয়?
> যেকোনো রকম দুর্ঘটনা ঘটতে পারে।
– তাহলে তো ভালই। সব কষ্ট শেষ হয়ে যাবে।
> কি বললা! ও, তার মানে আমি তোমাকে খুব কষ্ট দেই তাই তো! আসলে আমি খুব খারাপ তাই না? (কেদে কেদে বলল) মেয়েটি যখন কান্না করে তখন তাকে জলপরী মনে হয়। কিন্তু আবিদ অবন্তীর কান্না সহ্য করতে পারে না।
– আরে আমি কি তা বলেছি!
> ডুকরে ডুকরে কেদেই চলছে।
– আচ্ছা ভুল হয়েছে আর কখনোই বলব না।
> প্রমিজ (কান্না জড়িত কণ্ঠে)
– প্রমিজ প্রমিজ প্রমিজ।
> কই তুমি?
– এইতো আসতেছি।
> ওকে।
আবিদ এসে কিছুক্ষণ বসে রইল। তারপর অবন্তী আসল। আবিদ মনে মনে প্রস্তুত হল আজ ব্রেকআপের কথা বলবেই।
> স্যরি লেইট হয়ে গেল।
– ইটস ওকে। অবন্তী তার কথার ঝুড়ি নিয়ে বসল। সে কথা বলেই যাচ্ছে। হঠাৎ অবন্তী লক্ষ্য করল আবিদকে চিন্তিত মনে হচ্ছে।
> কি হল তোমার! কেমন জানি চিন্তিত মনে হচ্ছে। কোনো সমস্যা?
– আসলে কিভাবে বলব তা বুঝতে পারছিনা।
> যা বলার খুলে বলো।
– আসলে অবন্তী আমি আমাদের এই রিলেশন আর রাখতে পারছিনা। কথা বলার পর আবিদকে বুকটা মুচড়ে গেল। কিন্তু কথাটা শুনে অবন্তী অট্টহাসি হাসি দিতে লাগল। আবিদ সেই হাসির জগতে হারিয়ে গেল।
> তুমি ব্রেকআপ করবা! তুমি! এতো সুন্দর জোক কিভাবে বললা? তুমি, যেই ছেলের কল দুএকবার না ধরলেই বাসার নিচে চলে আসো, একটু রাগ করলে সারাদিন সেই রাগ ভাঙ্গানোর জন্য উঠেপড়ে লেগে থাকো সেই তুমি ব্রেকআপ করবা!!! আমায় ছাড়া একদিন থাকতে পারবা? মনের অজান্তেই আবিদ অবন্তীকে জড়িয়ে ধরল।
> হয়েছে হয়েছে। এবার চল সন্ধ্যা হয়ে আসল। আজও আবিদ পারলনা। কলেজে
> এই রাজু এদিকে আয়
~ হ্যা বল।
> আবিদকে এই বইটা দিবি আর বলবি সেমিস্টার পরীক্ষার জন্য এই বইটাই কিনতে।
~ ও তো পরীক্ষা দিচ্ছে না।
> সবসময় ফাজলামো কেন করিস?
~ আমি সত্যিই বলছি। কেনো ও তোকে বলেনি? ওর কাছে সেমিস্টার ফি নেই। আর এবার নাকি ওর বাবার কৃষিও কাজ ভাল হয়নি। তাই বাবার থেকেও খুজে নি।
> ও আচ্ছা bye. পরে কথা হবে
অবন্তী অফিস রুমে গিয়ে আবিদের সেমিস্টার ফি দিয়ে এডমিট কার্ড নিয়ে রাজুকে দিয়ে বলল, এই নে। আর ওকে বলবি ও যেনো আমার সামনে আর কখনোই না আসে। অবন্তী কাদতে কাদতে চলে গেল। রাতে অবন্তী বেডরুমে শুয়ে শুয়ে কাদছে আর মনে মনে বলছে, আমি এতোটাই পর যে তুমি তোমার নিজের মনের কষ্ট আমাকেও বললে না। ওদিকে আবিদ কল দিয়েই যাচ্ছে কিন্তু অবন্তী রিসিভ করেনি। পরের দিন কলেজে
– তুমি কি রাগ করছ?
> আমি তো তোমার কেউ না। আমার সাথে কোনো কথাই বলবা না। (অভিমানী স্বরে)
– আমি জানি তুমি কেন অভিমান করেছ। কিন্তু তুমি হয়তো আমার পরিস্থিতি বুঝতাছো না।
> বুঝি বুঝি।
তুমি কারো করুণা নিতে চাইছিলে না। তাই তো? কিন্তু আমি যদি তোমার জন্য কিছু করি তবে সেটাকে যদি তুমি করুণার নাম দাও। তবে সেটা আমার ভালবাসার অপমান করা হবে। ভালবাসা মানেই হল সুখেদুখে পাশে থাকা। কিন্তু তুমি আমাকে তোমার আপন ভাবই নাই। যাও যাও এখন তুমি মুক্তি। ব্রেকআপ তোমার সাথে। আবিদ অবন্তীকে জড়িয়ে ধরল কেদে উঠলো। অবন্তীও কেদে দিল।
– স্যরি আর কখনো এমন হবে না।
> জানো যখন রাজুর থেকে শুনার পর আমার কতটা খারাপ লেগেছিলো! প্রমিস করো আর কখনো এমন করবে না? (কেদে কেদে)
– না করব না। (কেদে)
> কান্না থামাও। চল লেকের ধারে যাই।
– হুম।
তাদের যাত্রা এভাবেই চলছে।