–অবন্তি শোনো ডাক শুনে পেছনে তাকালো অবন্তি ।
–আপনি ?এখনও দাড়িয়ে আছেন ?
–কি করবো আমার উত্তরটা তো পেলাম না ।
–উত্তর ?কিসের উত্তর ?
–আমার চিঠির
–নাম্বারটা দিন ভেবে রাতে জানাবো ।
রাফছান তো সেই খুশি । একটা লাফ দিতে ইচ্ছা করতেছে । হুম এই নাও 01783****** আচ্ছা ঠিক আছে এখন আমি আসি ।(অবন্তি) আচ্ছা । বিদায় নিয়ে চলে যায় অবন্তি রাফছান তো খুশিতে লাফালাফি করতেছে । হঠাৎ করে মাথায় একটা কথা ঘুরতে লাগলো । কোনো মেয়ে কিভাবে এত সহজে একটা ছেলের নাম্বার নিয়ে যায় । আচ্ছা ও ফোন দিবে তো ? নাকি ফাজলামো করতেছে । আচ্ছা যাই হোক অপেক্ষা করে দেখি কি হয় । রাত প্রায় ১ টা । এখনও ঘুমাচ্চে না রাফছান । ফোনটা হাতে নিয়ে এখও পায়চারি করছে । ক্রিং ক্রিং মোবাইলে রিংটোন বেজে উঠলো ।
–হ্যালো (রাফছান)
_ কোনো শব্দ নেই ।
–অবন্তি কথা বলো
–আপনি আমায় চিনলেন কিভাবে ?
আমিতো কোনো কথাই বলিনি আর বল্লেও তো চেনার কথা না কারন আগে আপনি কখনও ফোনে আমার কন্ঠ শোনেন নি । আমার নাম্বারও তো আপনার কাছে নেই । তাহলে কিভাবে বুঝলেন এটা আমি ?
–আমার মন বল্লো এটা তুমিই হবা
— ও তা আপনার মন আর কি বলে ?
–অনেক কিছু ।
–ওহহ তাই ?
–হুম ।আমার উত্তরটা ?
–উত্তরের কি খুবই প্রয়োজন ?
–হুম
–আমি আপনার সাথে সম্পর্ক করতে পারি তবে একটা শর্ত আছে ।
–কি শর্ত ?আমি তোমার যে কোনো শর্ত মানতে প্রস্তুত
–একটাই শর্ত ।আপনাকে বদলাতে হবে । সব গুন্ডামি ,রংবাজি ,আড্ডা ,নেশা সব ছেড়ে দিতে হবে ।
–দেবো তোমার জন্য সব ছেড়ে দিতে পারবো ।শুধু বলো তুমি রাজি ?
–আচ্ছা আগে ছাড়ুন তারপর দেখা যাবে । কিন্তু সময় মাত্র এক সপ্তাহ ।
–মাত্র এক সপ্তাহ ?আচ্ছা ঠিক আছে ।
টুট টুট টুট ফোনটা কেটে দেয় অবন্তি রাফছান ভাবছে কি করে মাত্র এক সপ্তায় সব ছেড়ে দিবে সে । কিন্তু তাকে তো পারতেই হবে । পরের দিন সকাল বেলা এলাকার সব ছেলেপুলেকে ডাকলো রাফছান ।
–শোন আজকের পর থেকে তোরা নিজেরাই নিজেদের রক্ষা করবি । আমার আর এসব ভাল্লাগেনা ।
–ভাই আপনে চলে গেলে আমগো কি হবে ? আমগো কে দেখবে ?(পাশ থেকে একটা ছেলে )
–শোন বেশি পেচাল পারিছ না তোরা এহনও শিশু না ।(রাফছান)
যেহেতু বড় ভাই তার মুখের ওপর কথা বলার সাহস কারো নাই । তাদের সাথে কথা বলে চলে এলো রাফছান । দেখতে দেখতে এক সপ্তাহ শেষ । রাফছান এখন পুরোপুরি বদলে গেছে । রাস্তা দিয়ে হাটলে সবাই তাকিয়ে থাকে । এদিকে বর্ধিত সময় শেষ হওয়ায় রাফছানকে ফোন দেয় অবন্তি।
–হ্যালো অবন্তি
–চিনতে পারছেন তাইলে
–তোমাকে চিনবো না তা আবার হয় নাকি
–হুমম ।তা আপনার সময় তো শেষ হলো ।নিজেকে বদলাতে পেরেছেন ?
–সেটা তুমি এসে নিজের চোখেই দেখো
–আচ্ছা কালকে বিকেলে কলেজের সামনে দাড়াবেন।
–আচ্ছা
ফোন কাটার পর অবন্তিরও খুব ভাল লাগছিল কারন এই এক সপ্তাহ রাফছানকে ফলো করেছিল সে । অবন্তির এটা ভেবে খুব ভালো লাগছে যে একটা ছেলের জিবন বদলে দেয়ার পেছনে তার অবদান রয়েছে । তার জন্য আজ একটা ছেলে অন্ধকার থেকে আলোর পথে । এসব ভাবতে ভাবতে ঘুমিয়ে পড়ে অবন্তি। সকাল বেলা ঘুম থেকে উঠে রেডি হয়ে কলেজে যায়। আজ কেমন জেনো একটা ভালো লাগা কাজ করতেছে । কলেজ ছুটি হলে কলেজের ক্যাম্পাসে দাড়ায় অবন্তি পেছন থেকে ডাক দেয় রাফছান ।
–অবন্তি এদিকে আসো । রাফছানের কন্ঠ শুনে পেছনে তাকায় অবন্তি। নিজের চোখকে যেন বিশ্বাস করতে পারছে না সে। এই কি সেই রাফছান যে কিনা সারাদিন জঙ্লিদের মতো থাকতো । আজ সে কতো পরিপাটি । যাই হোক তার সামনে গেলো
–কি মিষ্টার আয়নায় নিজের মুখটা দেখছেন একবারো ?
–হুমমম দেখছি একটা জঙ্লি ভূত
–মোটেও না এখন একদম ভদ্র ছেলের মতো লাগতেছে যেমনটা আমি চেয়েছিলাম ।
–তার মানে তুমি রাজি ?
–কি মনে হয় ?
–মন তো অনেক কিছুই বলে ।
–কি বলে মন ?
–মন বলে তুমি আমার
–তাই বুঝি
–হুমমমম
–আচ্ছা আমার হাত ধরো
–কেন ?
–আরে ধরই না
অনেক কষ্টে রাত্রির হাতটা ধরলো রাফছান । এই প্রথম কোনো মেয়ের হাত ধরলো সে । এভাবেই ভালোই কাটছিল তাদের সম্পর্ক । একদিন ভোরবেলা অবন্তি ফোন দেয় রাফছানকে
–হ্যালো রাফছান
–জ্বি
–কি করো ?
–ঘুমাইতেছি ।এত সকাল সকাল কি আর করবো ।
–কি তুমি এখনও ঘুমাইতেছো ?
–হুমমম তো কি করবো ?
–কি করবা মানে ফজরের নামাজ কে পরবে ?
–এই জন্যই ফোন দিছো ?
–হুমমম নামাজ পড়বা না উঠো ।
–এখন উঠবো না একটু ঘুমাই
–তুমি নামাজ পরবা না ?
–না মানে ইয়ে মানে
–হইছে তোমার আর মানে মানে করতে হবে না।
তুমি ঘুমাও ভাবছিলাম তুমি ভালো হয়ে গেছো কিন্তু না তুমি বদলাও নি । আজকের পর থেকে আর তোমার সাথে কোনো যোগাযোগ রাখতে চাই না । ভালো থেকো । কথাগুলো এক নিশ্বাসে বলে ফোনটা কেটে দিল দিল অবন্তি । রাফছান আবার কল ব্যাক করে কিন্তু ফোন বন্ধ ।
–সকাল সকাল মেয়েটার আবার কি হলো (রাফছান) নাহ আর ঘুম হলো না ।
উঠে বেরিয়ে পড়লো । অবন্তিদের বাসার সামনে দাড়িয়ে আছে অনেকক্ষন হলো কিন্তু অবন্তির কোনো দেখাই মিললি না । বাসায় গিয়ে ফ্রেস হয়ে খাওয়া শেষ করে আবার ফোন দিল কিন্তু না ফোন বন্ধ । অবন্তির কলেজের সামনে গিয়ে দাড়িয়েও ছিলো অনেকক্ষন কিন্তু অবন্তির কোনো দেখাই নেই বান্ধবিদের কাছ থেকে জানতে পারলো সে আজ কলেজে আসেনি । এভাবে প্রায় ৮ দিন কেটে গেলেও অবন্তির কোনো যোগাযোগ করেনি রাফছানের সাথে । এদিকে রাফছান প্রায় পাগলের মতো হয়ে গেল । অনেক চেষ্টা করেও অবন্তির সাথে দেখা করতে পারেনি । একদিন দুপুর বেলা কেউ একজন ফোন দিয়ে
–হ্যালো রাফছান ভাই আপু তো কলেজে আসছে।
–কি বলছ সত্যি ?
–জ্বি ভাই একদম সত্যি ।আপনার সাথে কি আর মিছা কথা কমু । খবর শুনে রাফছান দৌড়ে গেল কলেজে । কলেজ ছুটি হইছে । হঠাৎ অবন্তিকে দেখেই দৌড় দেয় রাফছান ।
–অবন্তি শুনেও না শোনার ভান করে চলে যাচ্ছে সে । দৌড়ে সামনে গিয়ে দাড়ায় রাফছান ।
–অবন্তি আমার কথাটা একটু বোঝার চেষ্টা করো আমি তোমার সব কথা শুনবো ।
–সত্যি তো ?
–হুমমম
–আচ্ছা চলো আমার সাথে
অবন্তি জানতো যদিও এভাবে জোড় করে কাউকে নামাজে আনা সম্পুর্ন নিষিদ্ধ কিন্তু সে এটাও জানতো যে প্রথম প্রথম তার কথায় নামাজ পড়লেও একসময় রাফছানের নামাজের প্রতি মায়া জমে যাবে । ঠিক তাই এখন রাফছানকে আর নামাজের জন্য ডাকতে হয়না বরং রাফছানই এখন নামাজ পড়ার জন্য অবন্তিকে ঘুম থেকে জাগায় । অবন্তি তার ভালোবাসা দিয়ে বদলে দিয়েছে রাফছানের পুরোটা জিবন । একটা অমানুকে মানুষ করেছে । আজকালকার সম্পর্কে দেখা যায় শুধুই সময় ব্যয় আর আনন্দ ফুর্তি করা । এগুলোই কি ভালোবাসা ? নাকি অবন্তি আর রাফছানের সম্পর্কটা ? বেচে থাক তাদের এই পবিত্র ভালোবাসা …