–আই লাভ ইউ(আমি)
–থাপ্পর খাবি কিন্তু(অধরা)
–কেন আমাকে একটু ভালোবাসলে কি হয়(আমি)
–তোকে বলছি না।আমরা শুধু ফ্রেন্ড এর বেশী কিছু না(অধরা)
–কিন্তু আমি যে তোকে অনেক ভালোবাসি।
–তুই যদি এমন করিস তাহলে কিন্তু আর তোর সাথে কথা বলব না।
–আচ্ছা আর বলব না।
–হুম।চল এবার বাসায় যাই
–হুম চল।
তারপর চলে আসলাম বাসায়।আমার আর ওর বাসা এক সাথেই তাই আমরা একসাথেই কলেজে যাওয়া আসা করি। আপনাদের তো আমার পরিচয় দেওয়াই হল না।আমি জাহিদ এবার ইন্টার ১ম বর্ষ।আর যার সাথে কথা হলো সে হলো অধরা আমরা একসাথেই পড়ি।এখন আপাতত এটুকু জানলেই চলবে।
রাতে শুয়ে আছি আর ভাবতেছি।অধরা কেন আমাকে ভালোবাসে না কি দোষ আমার। সেই ছোট বেলা থেকেই একসাথে খেলা করা,দুষ্টামি,খাওয়া,পড়া সব করে আসতেছি। ছোট থাকতে বুঝতাম না কিন্তু যখন বুঝতে শিখলাম তখন থেকেই ওকে ভালোবাসি। কিন্তু সে নাকি আমাকে ওর বন্ধু ছাড়া কিছুই ভাবে না।যদি ও অন্য ছেলেকে ভালোবাসতো বা ওর বিএফ থাকতো তাহলে অন্য কথা।কিন্তু ওর তো বিএফ নাই। আর আমাকেও অন্য মেয়েদের সাথে মিশতে দেয় না।আবার ভালোবাসার কথা বললে বলে আমাকে নাকি ভালোবাসে না।বুঝি না কিছু।আসলে মেয়েদের বোঝতে গেলে হয় আপনি পাগল হয়ে যাবেন না হয় তাকে ভালোবেসে ফেলবেন। যেটা আমার হয়েছে। এসব ভাবতে ভাবতে কখন যে ঘুমিয়ে পড়েছি বুঝতেই পারি নাই।সকালে ঘুৃম ভাঙ্গলো মায়ের ডাকে। উঠে ফ্রেস হয়ে নাস্তা করে কলেজ যাওয়ার জন্য বের হলাম।দেখলাম অধরা দাড়িয়ে আছে রিকশার জন্য।তাই বললাম,,
–কিরে কলেজ যাবি না(আমি)
–শয়তান তোর জন্য এতক্ষন দাড়িয়ে আছি। আর তুই বলতেছিস কি না কলেজ যাব না(রাগি মুডে)
–তো এখানে না থেকে বাসায় তো গেলেই পারতি।
–কার বাসায়
–আরে আমাদের বাসায়।
–আরে না।
–আচ্ছা চল এবার।
–হুম চল
তারপর কলেজ এ আসলাম।ক্লাস এখনও শুরু হয়নি তাই মাঠে বসে আছি।এমন সময় দেখলাম একটা মেয়ে গেট দিয়ে কলেজে আসতেছে।আমি তাই অধরাকে রাগানোর জন্য বললাম।
–ওই দেখ দেখ কত্তো কিউট একটা মেয়ে(আমি)
–কই কোথায়(অধরা)
–আরে ওইযে দেখ গেট দিয়ে আসতেছে কলেজ এ।
–কিহহহহ ওইটা কিউট মেয়ে।ওইটা তো দেখতে একদম পেত্নী।
–হক পেত্নী। আমি প্রেম করব ওর সাথে(অভিনয়)
–শালা আরেক বার প্রেম করার কথা বললে তোর খবর আছে।আঙ্কেল কে গিয়ে সব বলে দিব।(রাগি কন্ঠে)
–আমার সাথে এমন করতে পারলি(অভিমানী সুরে)
–হ্যা পরলাম।আর তোকে না বলছি আমাকে ছাড়া অন্য কোন মেয়ের দিকে তাকাবি না।
–কেন তাকাবো না হাজার বার তাকাবো।
তোকে কতবার বলছি আমি তোকে ভালোবাসি কিন্তু তুই কি বলছিস আমি তোর ফ্রেন্ড এর বেশী কিছু না(একটু জরে বললাম)
–তো কি বলব আমি তোকে ভালোবাসি।জানু, মানু সোনা,ময়না।
–হ্যা দরকার হলে বলবি।
–তোকে আমি ভালোবাসি না ব্যাস।
–তাহলে আমিও অন্য মেয়ের দিকে তাকাবো।
–আর একবার তাকিয়ে দেখ।তোর চোখ তুলে ফেলবো আমি।(রাগি সুরে)
–আচ্ছা ঠিক আছে। তাকাবো না চল এবার ক্লাস করতে।
–হুম চল।
তারপর ক্লাস করে বাসায় আসলাম এমন করেই চলতে থাকলো।আমিও অধরাকে ভালোবাসার কথা বলি।আর মেয়েটাও আমাকে বার বার ফিরে দেয়।কিন্তু আমাকে কোন মেয়ের দিকে তাকাতে দিবে না।আর এমন ভাবে আমার কেয়ার করে যেন আমি ওর বর।কিন্তু আমি এখনও বুঝতে পারি না।মেয়েটা কেন আমাকে বলে ভালোবাসি না।ওর কাজ কর্মে সব পরিষ্কার বুঝা যায় যে ও আমাকে ভালোবাসে।কিন্তু মুখে বলে না।এভাবে চলতে চলতে কেটে গেলো আরও এক বছর এখন আমরা দুজনেই ২য় বর্ষে পড়ি। একদিন বিকেলে ছাদে বসে আছি।এমন সময় দেখলাম অধরা আসলো।
–কিরে কি করিস(অধরা)
–দেখতেই তো পাচ্ছিস কি করতেছি(আমি)
–কিছুক্ষন নিরবতা। তারপর আমিই আগে বললাম।
–কিরে কিছু বলবি নাকি
–নারে এমনিতেই আসলাম।
–ওহহ।
–হুমমমমমমম।
–আচ্ছা আমি যে তোকে এত্তো ভালোবাসি তুই বুঝিস না কেন।
–আবার শুরু করলি
–বলনা কেন ভালোবাসিস না আমাকে।
–আচ্ছা আমাকে যে তুই ভালোবাসিস।আমার জন্য কি করতে পারবি।
–তুই বললে আমার জীবনটাও দিয়ে দিতে পারি।
–হইছে হইছে সময় হলেই সব দেখা যাবে।
–হুম দেখা যাবে।
তারপর আরও কিছুক্ষন কথা বলার পর চলে আসলাম দুজনেই। চলতে থাকলো এভাবে বেশ কিছুদিন। তো একদিন কলেজে আমরা বসে আড্ডা দিচ্ছিলাম।আমরা বলতে আমি অধরা আর রানা।এরাই আমার ফ্রেন্ড আর কেউ তেমন নাই।আড্ডা দিতে দিতে হঠ্যাৎ অধরা বললো
–জাহিদ আমার খারাপ লাগতেছে আমি বাসায় যাব।(অধরা)
–কি হইছে বলনা(আমি)
–আমার খুব খারাপ লাগতেছে প্লিজ বাসায় চল তাড়াতাড়ি।
আমিও আর দেরি না করে বাসায় নিয়ে আসলাম ওকে।তারপর ওকে ওর বাসায় রেখে আমি আমার বাসায় আসলাম। তারপর সন্ধ্যার দিকে ওর একটু খোঁজ খবর নিলাম।ভালোই আছে নাকি এখন শুনলাম। রাতে খেয়ে দিলাম এক ঘুম।সকাল বেলা আম্মুর ডাকে ঘুম ভাঙ্গলো। ফ্রেস হয়ে যখন নাস্তা করতে যাব তখন আম্মু বললো।
–জাহিদ।অধরাকে হসপিটালে নিয়ে গেছে। আমি ওখানেই যাচ্ছি।তোর আব্বু সকালেই গেছে হসপিটালে।
–অধরাকে হসপিটালে নিয়ে গেছে মানে। কি হয়েছে ওর আবার।
–জানি না রে বাবা।তুই নাস্তা করে নিসস।আমি যাচ্ছি হসপিটালে।
–আমিও যাব আম্মু।
–ওকে চল তাহলে।
অনেকটাই অবাক হলাম কারন, কালকেই তো শুনলাম মেয়েটা ভালো আছে রাতেই মধ্যেই আবার হঠ্যাৎ করে কি হলো।হসপিটালে গেলাম গিয়ে দেখি আঙ্কেল, আন্টি,আব্বু সবাই আছে। তাই আমি আঙ্কেলকে গিয়ে জিজ্ঞাসা করলাম
–আঙ্কেল কি হয়েছে অধরার(আমি)
–(নিশ্চুপ)
–কি হলো আঙ্কেল কিছু বলুন।
–(এবার ধরে কেঁদেই দিলো)
–কি হয়েছে আঙ্কেল আমাকে বলুন।
–বাবা অধরার কিডনি ডেমেজ হয়ে গেছে। যদি সময় মতো কিডনি না পাওয়া যায় তাহলে আর আমার মেয়েটাকে বাচানো যাবে না।(আঙ্কেল)
–এবার আর আমি নিজেকে কন্টোল করতে পারি নাই।আমিও কেঁদে ফেলেছি। তবে নিজেকে একটু শক্ত করে বললাম।
–আপনি কোন চিন্তা করবেন না। আমি দেখতেছি কি হয়। আমি যেখান থেকেই হোক কিডনি মেনেজ করে আনবো।
তারপর অধরাকে বাইরে থেকে একটু দেখে বের হয়ে আসলাম হসপিটাল থেকে। রানাকে ফোন দিয়ে সব বললাম।তারপর দুজন মিলে কিডনি খুঁজতে বের হলাম। এক হসপিটাল থেকে আরেক হসপিটাল এভাবে সারাটা দিন কেটে গেলো।কিন্তু পড়াকপাল কিডনি আর পেলাম না। হতাশ হয়ে যখন হসপিটালে ফিরলাম তখন আঙ্কেল আমাকে দেখে দৌড়ে আমার কাছে এসে বললো।
–বাবা কিডনি পেয়েছো(আঙ্কেল)
–(নিশ্চুপ)
–কি হলো কিছু বলছো না যে
–আসলে আঙ্কেল
–কি বলো
–কিডনি পাওয়া যায়নি।
–ওহহহহ(হতাশ হয়ে)
–ডাক্তার কি বললো আঙ্কেল
–ডাক্তার বলছে কালকের মধ্যে যদি কিডনি না পাওয়া যায় তাহলে আর রোগিকে বাচানো সম্ভব না।(কেঁদে কেঁদে বললো)
–আমি কি বলব কিছুই বুঝতে ছিলাম না।আমার ওনাকে সান্তনা দেওয়ার মতো ভাষা নেই।আমি এতোটাই হতভাগা যে যাকে ভালোবাসলাম তারর ভালোবাসা তো পেলাম না।কিন্তু তাকে বাচাতেও পারার কোন উপায় পেলাম না।
অবশেষে সিদ্ধান্ত নিলাম যে আমি কিডনি দিব।আমার কিডনি দিয়েই আমি ওকে বাঁচাবো।আমাকে ও না ভালোবাসুক কিন্তু আমি তো ওকে ভালোবাসি।তাউ ডাক্তারের কাছে গেলাম গিয়ে বললাম।
–ডাক্তার সাহেব আমি অধরাকে আমার কিডনি দিব।
–না এটা হতে পারে না।রোগীর ২টা কিডনিই ডেমেজ তাকে কিডনি দিলে তুমি নিজে বাঁচবে না(ডাক্তার)
–এছাড়া আরর কোন পথ নাই।আপনি দয়া করে আমার কিডনি নিয়ে অধরাকে বাঁচান।
–এটা সম্ভব না।আমরা একজনকে বাঁচাতে আরেক জনকে মরতে দিতে পারি না।
–আপনার দুই পায়ে পরি প্লিজ না করবেন না
–কিন্তু।
–কোন কিন্তু না।
–ওকে।
–তবে ডাক্তার আমার এই কিডনি দেওয়ার বিষয়টা কাউকে জানাবেন না।
–কেন।
–আপনি সেটা পরে জানাবেন।
–আচ্ছা ঠিক আছে।
তারপর শেষবারের মতো একবার মেয়েটাকে দেখে আসলাম।আর রানাকে সব বললাম।সব কিছু শুনে রানা কাঁন্না করতে করতে আমাকে জড়িয়ে ধরে বলেছিলো।
–দোস্ত এমন করিস না।তোকে ছাড়া আমি থাকব কি করে(রানা)
–কাঁদিস না দোস্ত।আমি উপর থেকেই তোদের কে না হয় দেখব।(আমি)
তারপর আমার অপারেশন করতে নিয়ে গেলো ডাক্তার। ওইদিকে ডাক্তার অধরার আব্বুকে জানালো যে কিডনি পাওয়া গেছে।আর আজকেই অপারেশন হবে। সবশেষে অপারেশন করতে নিয়ে গেলো ডাক্তার অধরাকে অপারেশন থিয়েটারে। এইদিকে তো সবাই চেনশন করতেছে। অনেক সময় পর ডাক্তার অপারেশন থিয়েটার থেকে বের হলেন।আর সবাইকে জানালেন যে অপারেশন ভালোই হয়েছে। আজ এক সপ্তাহ পর অধরা সুস্থ হয়েছে।সবাই তাকে দেখতে এসেছে।সবাই অধরাকে দেখে গেলো কিন্তু জাহিদ আসলো না।তাই অধরা তার আম্মুকে বললো।
–আম্মু আমাকে কিডনি কে দিয়েছে।আর জাহিদ কই ওকে দেখছি না যে। তার আম্মু কান্না করতে করতে চলে গেলো। অধরা তখন ডাক্তারকে বললেন।
–ডাক্তার সাহেব আমাকে কিডনি কে দিয়েছে। ডাক্তার তখন একটা চিঠি দিলো অধরার হাতে এবং বললো….
–তোমার সব প্রশ্নের উত্তর তুমি এখানেই পাবে। তাই অধরা চিঠিটা পড়তে লাগলো…
প্রিয়,অধরা
প্রথমেই কি বলবো বুঝতেছি না।তবে এটা বলি যে আমি তোকে খুব ভালোবাসতাম রে। কিন্তু তুই সেটা বুঝলি না।তুই একদিন বলেছিলিস যে আমি তোর জন্য কি করতে পারব।সেদিন আমি বলেছিলাম তোর জন্য আমার জীবনটাও দিতে পারি।হ্যা আমি এটাই করেছি।অনেক খোঁজার পরও যখন কিডনি পাওয়া যায়নি।তখন আমার কিডনি দিয়েই তোকে বাঁচালাম।তোকে একটু বেশী ভালোবাসি তো তাই সব করতে পারি।তুই না হয় আমাকে নাই বা ভালোবাসলি কিন্তু আমি তো তোকে ভালোবাসি।আর শুন নিজেকে কখনও একলা ভাববি না।আমি আছি তোর সাথে তোর নিশ্বাসে তোর প্রশাসে।আমি তোর মধ্যেই আছি।শুধু একটু খুঁজে দেখিস।আমাকে সব সময় তোর সাথে পাবি। আর কি বলব। শেষে এটাই বলবো ভালো থাকিস।
ইতি
জাহিদ
চিঠিটা পরেই অধরা কাঁদতে লাগলো।আর বললো।
–পাগল কেন করলি তুই এমনটা।আমি কি তোকে ভালেবাসি না।তুই কি কখনও আমাকে বুঝতে পারিস নাই।আমিও তোকে ভালোবাসতাম কিন্তু কখনও প্রকাশ করিনি।
আমাকে ছেড়ে একা চলে গেলি।আমি কি নিয়ে থাকব এখন। এসব বলতে ছিলো আর কাঁদতেছিলো অধরা। কিন্তু এখনতো আর কেঁদে কোন লাভ নাই। কারন,জাহিদ তো চলে গেছে না ফেরার দেশে। আজ জাহিদের জন্মদিন।এইদিনটাতে অধরা নিজ হাতে এতিম,গরীব-দুঃখি মানুষদের সবাইকে খাওয়ায়।তারপর জাহিদের কবরের পাশে গিয়ে চোখের জল ফেলে। এখন অধরা একদম বুড়ি হয়ে গেছে।তার সব চুল পেকে গেছে।কিন্তু আজও মেয়েটা বিয়ে করেনি।কারন,সেও যে জাহিদ কে মনে প্রাণে ভালোবাসতো।
সমাপ্ত