সেই তুমি

সেই তুমি

নিলয় হঠাৎ করে আমাকে ফোন দিয়ে বলে পরশুদিন পালাতে হবে আমি অনেকটা অবাক হয়

— পালাতে হবে মানে..
— পরশু আমি তোমাকে নিতে আসবো, রেডি থেকো
— কি বলছো এসব..মাথা ঠিক আছে তো
— আমার মাথা একদম ঠিক আছে..যা বলছি তাই করো
— এটা সম্ভব না..আমি পালিয়ে বিয়ে করতে পারবো না
— আজ না হয় কাল আমাদের পালাতেই হবে কারন আমি বেকার কিছু করিনা তোমার ফ্যামিলি আমাদের সম্পর্ক কোনদিন মেনে নিবেন না
— কেন মানবে না আমার তো এখনি বিয়ে হচ্ছে না তুমি ততদিন চেষ্টা করো কিছু করতে পারো কিনা..
— তুমি আসবে না তাই তো..আমি বেকার বলে তোমার আজ এতো প্রবলেম
— তুমি বুঝতেছ না
— থাক আমাকে আর বোঝাতে হবে না রাগ করে ফোন কেটে দিলো নিলয় নিলয় আমার রিলেশন সাড়ে তিনবছরের এখনো আমরা দুজন দুজনকে সামনা সামনি দেখিনি,

ভালোবাসা তো আর মুখ দেখে হয়না তবে হ্যাঁ আমি নিলয়-র ছবি দেখছি, ও আমার ছবি আসলে আমাদের রিলেশন টা ফেবুতে হয় হঠাৎ করে নিলয়ের এরকম একটা সিদ্ধান্ত নেওয়ার কারন টা আমি নিজেই ..কিছুদিন ধরে আমাদের সম্পর্ক টা ভালো যাচ্ছিলনা..ও হয়তো আমাকেহারানোর ভয়ে পালিয়ে বিয়ে করতে চাচ্ছে কিন্ত আমি তা পারবো না..পালিয়ে বিয়ে করলে হয়তো আমি নিলয় দুজনেই সুখে থাকবো একটা পরিবার গড়তে আমি আরেকটা পরিবার ভাঙ্গতে পারবো না আমি জানি পালিয়ে গেলে আমার পরিবার ভেঙ্গে পরবে আমি কিছুতেই নিলয় কে সবটা বুঝাতে পারছি না আমার কোন কোথায় ও এখন শুনতে রাজি না

— তুমি এতো পাগলামো করছো কেন..তুমি কি আমার প্রবলেম টা বুঝতে পারছো না
— অামি বেকার এটাই প্রবলেম তাই তো..আর পরিবারের কথাই যদি ভাবতে হয় তাহলে রিলেশন করছিলা কেন

— একটা মেয়ের কাছে যেমন তার ভালোবাসার মানুষের মুল্য আছে তেমনি তার পরিবারের তুমি বেকার জেনেই তো ভালোবেসেছি..মেয়েরা যখন কাউকে ভালোবেসে তার হাত ধরে তখন সত কষ্টে সেই হাত ধরে রাখার চেষ্টা করে তাকে নিয়েই সুখের থাকার কথা ভাবে সেদিন আমার নিলয়ের মধ্যে অনেক কথা কাটাকাটি হয় নিলয় আমাকে নানাভাবে অপমান করে..এই তিন বছরে যা ও কোনদিন আমাকে বলেনি..নিজেকে খুব বেশি অসহায় মনে হচ্ছিলো একদিকে পরিবারের সম্মান অন্যদিকে ভালোবাসা..নিলয় আমাকে বুঝলো না আমি পরিবারকেও কষ্ট দিতে পারব না আর নিলয়কেও না তাই নিজেকে শেষ করে ফেলার কথা ভাবলাম রাতে খাবার টেবিলে আমি অসহায় দিষ্টিতে আম্মুর দিকে তাকিয়ে আছি

— কি রে, হ্যাঁ করে তাকিয়ে আছিস কেন (আম্মু)
— না এমনি..খেতে ইচ্ছে করছে না
— দিন দিন তো শুটকি মাছের মতো হয়ে যাচ্ছিস..না খেয়ে উঠে দেখ আজ আমার হাত মার খাবি।। (আম্মু)

— তুমি আমাকে সত্যি মারবে..আম্মু আমাকে মারো না প্লিজ ..একটা থাপ্পড় দাও বলেই কেঁদে দিলাম পাশের রুম থেকে ছোট বোন দৌড়ে এসে আমার কান্না দেখে বললো..আই আপু, আজ আমি তোকে খাইয়ে দিয় যে বোনের সাথে দিনরাত ঝগড়া- মারামারি করছি..সেই বোন আমার কান্না দেখে চোখের পানি মুছিয়ে দিয়ে খাইয়ে দিচ্ছে কাঁদতে কাঁদতে খাবার টেবিল থেকে উঠে আসলাম না আমি মরতে পারবো না..আব্বু, আম্মু আমি আমার ছোট বোন কে নিয়ে সুখের সংসার আমাদের আমার কিছু হলে আম্মু বাঁচবে না.. আমি মরলেই সব সমস্যার সমাধান হবে না, অনেক ভেবে নিলয় কে ফোন দিলাম

— কাল একটু আমার সাথে দেখা করতে পারবে
— না, পারবো না যদি একেবারে আসতে চাও তাহলে তোমায় আনতে যেতে পারি
— প্লিজ নিলয় আমার লাস্ট রিকুয়েস্ট টা রাখো..একবার দেখা করে আমার কথা শুনো তারপর যদি তোমার মনে হয় আমাদের পালানো উচিত তাহলে আমি রাজি আছি
— অকে পরেরদিন
— কি বলার আছে বলো
— গম্ভীর কন্ঠে নিলয় কথাটি বললো আজ আমাদের প্রথম দেখা হলো তবুও নিলয়ের মুখে কোন হাসি নেই আমি নিলয়ের হাতটা ধরলাম নিলয় মুখ ঘুরিয়ে রাখছে আমার চোখের পানি নিলয়ের হাতে পরতেই নিলয় আমার দিকে তাকালো চোখের পানি মুছে দিয়ে নিলয় আমার হাত টা আরো শক্ত করে ধরলো, হয়তো আমার কষ্ট টা ও অনুভব করতে পারলো।।।

— প্লিজ তুমি আমার কষ্টটা বোঝার চেষ্টা করো আমি তোমাকে অনেক ভালোবাসি আমরা পালিয়ে বিয়ে করলে কোনদিন সুখিহতে পারবো না..সবাইকে ফেলে যদি তোমার হাত ধরে পালায় তাহলে আমি সংসারে মন দিতে পারবো না, সংসারে অশান্তি শুরু হবে আমি বলছি না তুমি আমাকে অনেক টাকা এনে দাও ,দামি শাড়ি, গাড়ি দাও শুধু চাই তুমি নিজে কিছু একটা করো..আমার পরিবারের সামনে গিয়ে আমি উচু গলায় বলতে পারি তুমি নিজে রোজগার করে আমাকে খাওয়াতে পারবে আমাকে তুমি তিনমাস সময় দাও।। এই তিনমাসের মধ্যে যদি তোমার চাকরি না হয় তাহলে আমরা পালিয়ে বিয়ে করবো নিলয় আমার কথা গুলো শুনলো, কিছু না বলে উঠে পরলো আমি কি নিলয়কে বুঝাতে পারলাম না।।। মাথা নিচু করে কাঁদছি হঠাৎ কেমন যানি শব্দ শুনতে পেলাম অবাক হয়ে তাকালাম নিলয়ের হাতে লাল কাঁচের চুড়ির শব্দ

— বেকার মানুষ..এর থেকে বেশি কিছু আনতে পারলাম না…তোমার পছন্দের লাল চুড়ি ..শাড়ি টা তোলা থাকলো বিয়ের জন্যে।।। হ্যাঁ করেই থাকবে নাকি চুড়ি নিবে

— পড়িয়ে দাও।..(মুচকি হেসে)
— আমিও অনেক ভেবে দেখলাম আমি যা করতে যাচ্ছিলাম তা ঠিক হতো না ..তোমার কথা টা ঠিক..হুট করে কোন সিদ্ধান্ত নিলে তার ফল ভালো কখনো ভালো হয় না…তুমি চিন্তা করো না যা হওয়ার তিন মাস পর হবে
— অকে..থ্যাংকস ..আমাকে বোঝার জন্যে নিলয় আমার কথামত চাকরি খু্জতে লাগলো দেখতে দেখতে তিন মাস কেটে গেল।।। তিনমাস পর “নিলয়ের ফোন ”

— রেডি থাকবে
— কেন.???
— বিয়ে করতে হবে না..
— হুম..কিন্ত কোন কিছু না বলেই ফোন কেটে দিলো… পরেরদিন ভার্সিটি থেকে বাসায় এসে দেখি মধ্য বয়সী একজন আম্মুর সাথে কথা বলছে।।

— একটু এদিকে আয় তো (আম্মু)
— কি বলো??
— নিলয় নামে তুই কাউকে চিনিস
— ও আল্লাহ ..আম্মু নিলয়ের কথা জানলো কিভাবে ভয়ে গলা আমার শুকিয়ে গেছে
— কি রে চুপ করে আছিস কেন
— হ্যাঁ ..কেন
— আমি কি এতটাই খারাপ মা..আমাকেতো একবার বলে দেখতে পারতি।। তোর সুখিই তো আমাদের সুখ
— আম্মুর মাথা ঠিক আছে তো..এত তাড়াতাড়ি সব মেনে নিবে আমি ভাবিনি..আমি শুধু শুধুই ভয় পেতাম নিলয়ের ম্যাসেজ .. ‘সারপ্রাইজ ‘
— এসব তুমি করছো
— হুম..আমার মামা গেছে তোমাদের বাসায় বিয়ের কথা বলতে..আমার চাকরি হয়ে গেছে
— এই সুখবর টা তুমি আমাকে আগে দাওনি কেন
— ভাবছিলাম তোমার আম্মু রাজি হলে সব জানাবো..আগে আমার মামা কথা বলছে তারপর আমি তোমার আম্মুর সাথে কথা বলছি..
— সবকিছু কেমন স্বপ্নের মত ঘটছে তিনমাস আগে যে ছেলে পালাবে ভেবেছিলো আজ সে আমার বাসায় বিয়ের প্রস্তাব পাঠাইছে এত ভাগ্যবতী আমি..

— লাল শাড়ি পরে অপেক্ষা করবে আমি পালকি নিয়ে আসবো
— পালকি না আনলে কিন্তু বউ যাবেনা
— বউ আসবে না মানে..তুলে নিয়ে আসবো
— তাই
— হুম

গল্পের বিষয়:
ভালবাসা
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

সর্বাধিক পঠিত