ভালোবাসার হাতছানি

ভালোবাসার হাতছানি

— ইমন তুমি আবারো সিগারেট নিয়েছো?
— তো?
— তোমাকে না কতোবার নিষেধ করলাম
— বাহ ভালো বলেছো, তুমি নিষেধ করলেই আমাকে শুনতে হবে?
— আচ্ছা তুমি কালকে ভার্সিটি আসোনি কেনো?
— ইচ্ছা হয়নি তাই
— নোট টা করেছো?
— না
— আজিব তুমি এমন কেনো, সামনে এক্সাম আর তুমি এখন এমন করলে হবে?
— ……….
— চুপ করে আছো কেনো?আজকেই নোট টা বানাবে তুমি আর ক্লাস ও গ্যাপ করবেনা বুঝছো?
— বাই
— ওই দাড়াও কথা শেষ না করে যাও কই
— আমার কথা শেষ
— কোথাও যাবেনা তুমি ক্লাসে চলো ওমনি হ্যাচকা টান দিয়ে ইমনকে ক্লাসে নিয়ে গেলো রিদিমা। রিদিমার কাজই সারাক্ষণ ইমন কে চোখে চোখে রাখা।

ইমনের উল্টা পাল্টা লাইফ স্টাইলে রিদিমা খুব বিরক্ত, তাই সারাক্ষণ ই শাসন করে বেড়ায়, তবে ইমন খুবই পরোপকারী একটা ছেলে কারো কোনো সমস্যা বা বিপদে  সবার আগে হাত বাড়িয়ে দেয়, কোনো  কিছুর পরোয়া করেনা ,, ওর এই স্বভাবটার জন্যই রিদিমা ওকে এতো পছন্দ করে ফ্রেন্ডসিপ ছাড়া বলার মতো তেমন কোনো সম্পর্ক নেই ওদের। রিদিমা বরাবরই তাদের বন্ধুত্ব টাকে ভালোবাসায়  রুপ দিতে চেয়ে এসেছে,  কিন্তু ইমনকে সে ঠিক বুঝে উঠতে পারেনা। ঠিকমতো কোনোদিন মনেহয় রিদিমার  দিকে তাকায়ওনি ইমন, সব সহ্য করা গেলেও রিদিমা সিগারেট টা  একদম ই সহ্য করতে পারেনা,  সেখানে ইমন হচ্ছে একেবারে  চেইন স্মোকার , বকা দিয়ে ভালোবাসা দিয়ে অনেকভাবে  চেষ্টা করেও ইমনের সিগারেট  ছাড়াতে পারেনি রিদিমা,  রিদিমা আজকে ক্যাম্পাসে এসেই দেখলো  ইমন ফ্রেন্ডদের সাথে আড্ডা দিচ্ছে হাতে সিগারেট, প্রচন্ড রাগে রিদিমা ইমনের সামনে গিয়ে দাড়ায়,,,,,

— ইমন দিস ইজ টু মাচ, আর কতো বার বলতে হবে?জীবনেও এসব ছাড়তে পারবেনা তুমি
— জানোই যখন তো বারবার একই কথা কেনো বলো?
— হোয়াট তার মানে তুমি ডিটার মাইন্ড যে সিগারেট তুমি ছাড়বানা?
— হুম ( বলেই আবার সিগারেট এ টান দিলো)
— রাবিস ( টান দিয়ে ইমনের হাত থেকে সিগারেট টা ফেলে দিলো)
— ঠাসসসসসস ( প্রচন্ড রেগে গিয়ে )

এই তোমাকে কি কেউ জব দিসে  আমার পিছনে লেগে থাকার জন্য?  তুমি কে হু আর ইউ? তোমার কথা আমি কেনো শুনবো ? তোমার এসব বা**** কেয়ারিং আমার অসস্হি লাগে  পেইন লাগে, ইউ গো টু হেল  তোমাকে আমার দরকার নেই বাট সিগারেট ছাড়া আমি চলতে পারবোনা  চলে যাও আমার লাইফ থেকে রাইট নাউ মেয়েটাও আর এক মুহূর্ত দাড়ায়নি সেখানে, প্রচন্ড কাঁদে সেদিন মেয়েটি, ইমনের বিহেভ অবিশ্বাস্য মনে হচ্ছে,  কিন্তু কেঁদে কি লাভ ইমনের লাইফে ওর  অবস্হান  শুধুই পেইন, ওকে ওর মতো ছেড়ে দেয়াই বেটার। সপ্তাহ খানেক পর…..

— রিদিমা আমার বায়োলজি নোট টা করতে পারিনি প্লিজ একটু হেল্প করো না?
— আমি তো বিজি আছি তুমি আসিফ ,অয়ন, রুম্পা ওদেরকে বলো
— ওদেরকে বললে তো আর তোমার কাছেই আসতামনা
— আমি পারবোনা এখন আরেকটা

নোট তৈরি করতে হবে বাই ইমনের খারাপ লাগে, মেয়েটা এমন করলো কেনো? ঐ দিন থাপ্পড় দেয়ার দুদিন পরেই ইমন রিদিমাকে সরি বলে, রাগের মাথায় এসব বলেছে  সেদিনের পর ইমন আবার আগের মতোই হয়ে যায় কিন্তু বদলে যায় রিদিমা  আগের মতো কোনো একস্ট্রা এট্রাক্সন নেই ইমনের প্রতি,  কোনো কিছুতে বাধা দেয়না কোনো হেল্প ও করেনা। ওর থেকে সব সময় দূরত্ব বজায় রাখার চেষ্টায় থাকে, কিন্তু অবাক ব্যাপার হলো,,ইমনের  এখন খুব রাগ হয়, রিদিমা কেনো ওর  থেকে দুরে সরে যাচ্ছে, সেদিনের  ব্যাবহারের জন্য তো অনেকবার সরি বলেছে  তবুও কি ও রেগে থাকতে হবে?

সিগারেট টা হাতে নিয়েও কেনো জানি  ওটাতে মন নেই ইমনের , এখন তো কেউ  তাকে বাধা দেয়না তবুও কেনো জানি আজকাল ভালো লাগেনা,  ভাবতে ভাবতে হাতের সিগারেট হাতেই শেষ হয়ে যায় মুখে দিতে ইচ্ছা হয়নি একবারও, যদিও প্রায় পাঁচ ছয়দিন থেকে ইমন  সিগারেট এর আশেপাশে ও যায়নি, কিন্তু আজকে  রিদিমা এদিকে আসছে দেখেই একটা সিগারেট ধরালো, যাতে রিদিমা রেগে গিয়ে তাকে কিছু বলে, কিন্তু না রিদিমা পাশ কাটিয়ে চলে যায়  কিন্তু কিছুই বলেনা, কয়েকদিন ই এমনটা করে ইমন কিন্তু  রিদিমার কোনো রিয়েক্ট নাই। খারাপ লাগছে অনেক, অস্বস্হিকর ফিলিংস জেকে বসেছে, এখন বুঝতে পারছে সেদিনের কথাগুলো মিথ্যা ছিলো, ইমন সিগারেট ছাড়া ঠিকই চলতে পারছে কিন্তু  রিদিমার কেয়ারিং আর শাসন ভরা ভালোবাসা ছাড়া চলতে পারছেনা। আজ ২৭ অক্টোবর ইমনের বার্থডে ,  সকাল থেকে সবাই উইশ করছে, কেউ ফোনে কেউ ফেবুতে কেউ ভার্সিটি আসার পর , কিন্তু ইমন যার থেকে সবার আগে আশা করেছিলো সেই করেনি,  মন খারাপ তাই কারো সাথে কথা বলতে ইচ্ছা করছেনা ইমনের, হঠাৎ…..

— কি হলো বার্থডে বয় এখানে একা কেনো ? মন খারাপ নাকি?
— এতক্ষণে বার্থডে বয় এর কথা মনে পড়লো আপনার?
— মনে ছিলো তো ক্লাসে ছিলাম, এনিওয়েস হ্যাপি বার্থডে
— লাগবেনা তোমার উইসিং
— ওহহ আচ্ছা ঠিক আছে করবোনা আসি কেমন? বাই
— এই দাড়াও
— কি?
— মানুষ এতোটা চেইন্জ হয় কি করে বলতে পারো?
— মানে?
— তুমি এমন বদলে গেলে কেনো রিদি?
— কই নাতো!
— আগের মতো আমাকে একটুও কেয়ার করোনা, আমার অগোছালো জীবনটাকে গুছিয়ে  দেয়ার মানুষটা এখন আমাকে পুরোটা সময় এড়িয়ে চলে,  আমি খুব কষ্ট পাচ্ছি রিদিমা,  প্লিজ ব্যাক টু মাই লাইফ।

— এটা আর হবার নয় ইমন
— কেনো নয়?তুমি চাইলেই সব হয়
— কেনো তোমার লাইফে তো আমি পেইন, কারো লাইফে  পেইন হয়ে বিরক্তির কারন হয়ে থেকে কি লাভ?
— প্লিজ এভাবে বলোনা,, সরি বলেছি তো, আবারো বলছি আ’ম সরি
— …… ( নিশ্চুপ)
— ভালোবাসি তোমাকে, অনেক ভালোবাসি

তোমাকে ছাড়া এক মুহুর্ত চলবেনা আমার, কিন্তু এটা বুঝতে অনেক দেরি করে ফেলেছি আমি, এইজন্য আবারো সরি,  তোমার অগোছালো পাগলটাকে আর একটা চান্স দাও প্লিজ। আবেগে ছলছলে হয়ে ওঠে রিদিমার চোখ, নির্বাক দুজনেই,  যেনো এক মিষ্টি নিষ্পাপ, ভালোবাসার হাতছানি।

গল্পের বিষয়:
ভালবাসা
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

সর্বাধিক পঠিত